মূল বিষয়
৭ জানুয়ারি ভোটের পরদিনই বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারত, রাশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতেরা শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তবে নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)।
নির্বাচন নিয়ে বিবৃতিতে আওয়ামী লীগের সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বিজয় স্বীকার করেছে যুক্তরাষ্ট্র। একইসঙ্গে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিরোধী রাজনীতিকদের গ্রেপ্তার ও নির্বাচনে অনিময়ের খবরে। নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি- অন্যান্য পর্যবেক্ষকদের এই মতের সাথেও যুক্তরাষ্ট্র একমত। সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় দুঃখও প্রকাশ করেছে দেশটি।
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নির্বাচনের অন্তত ছয় মাস আগ থেকে সরকারকে চাপ দিয়ে আসছিল যুক্তরাষ্ট্র। যার অংশ হিসেবে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্তকারী ব্যক্তিকে ভিসা নিষেধাজ্ঞায় আনার ঘোষণাও এসেছিল দেশটির পক্ষ থেকে। নির্বাচনের আগে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের তৎপরতাও ছিল চোখে পড়ার মতো।
এই সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে পশ্চিমা কয়েকটি দেশ ও ইইউর দেওয়া বিবৃতির তাৎপর্য আসলে কী?
সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবিরের মতে, দেশগুলোর এই অবস্থান বাংলাদেশের সঙ্গে সামগ্রিক সম্পর্কে বড় কোনও প্রভাব ফেলবে না।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী থিংকট্যাংক উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সিনিয়র অ্যাসোসিয়েট ও ডেপুটি ডিরেক্টর মিশেল কুগেলম্যান মনে করেন শেখ হাসিনাকে আরও সতর্ক অবস্থানে থাকতে হবে।
বাংলাদেশের নির্বাচনের বিষয়ে পশ্চিমা বিশ্বের অবস্থান নিয়ে দ্য কুইন্টে লিখেছেন কুগেলম্যান।
তিনি বলছেন, যেহেতু বাংলাদেশে এক ধরনের অর্থনৈতিক সংকট রয়েছে, তাই এসব বাণিজ্য অংশীদারদের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষায় শেখ হাসিনাকে আরও সতর্ক অবস্থানে থাকতে হবে।
কুগেলম্যান মনে করেন, নির্বাচনের আগে থেকেই নানা কৌশলে চাপ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সামনে যে কৌশল আরও কঠোর হবে না, তাও বলা যায় না।
তবে, পশ্চিমা বিশ্ব এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত বাংলাদেশকে কৌশলগতভাবে একটি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্র হিসেবে দেখছে বলে মত কুগেলম্যানের। তার মতে, এ কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বিবৃতিতে, বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারত্বে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকার কথাও বলা হয়েছে।
বাণিজ্যে নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গ
দুটি দেশের মধ্যে সম্পর্ক তিনটি স্তরে চলে; প্রথম স্তরটি হলো দেশ, এরপর সরকার এবং জনগণ- একথা মনে করিয়ে দিয়ে সাবেক রাষ্ট্রদূত কবির বলছেন, যে প্রশ্ন উঠেছে তা কিন্তু একটি প্রক্রিয়া নিয়ে, পুরো বাংলাদেশ নিয়ে নয়।
তার মতে, যুক্তরাষ্ট্র বা যুক্তরাজ্যের হয়ত বাংলাদেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কিন্তু তাতে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে কোনো অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।
যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে- নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের কোনো কোনো সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত এমন খবর বিষয়েও কথা বলেন হুমায়ুন কবির।
তিনি বলেন, “ধরুন, যখন সম্পর্ক ভালো ছিল তখনও কিন্তু শ্রমিকের অধিকার ইস্যুতে সবাই সরব ছিল। সবাইই কঠিন কঠিন কথা বলেছিল। শ্রম আইনের বিষয়টি পশ্চিমা দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ নীতিগত অবস্থানের সঙ্গে সম্পর্কিত থাকে। তাই বিষয়টি নিয়ে তারা কথা বলে। আগেও বলেছে, আগামীতেও বলবে।”
তার মতে শ্রমিক অধিকার বিষয়ে বাংলাদেশ কতটা মনোযোগী হবে তার ওপর নির্ভর করে বিষয়টি নিষ্পত্তি হবে। তা না হলে বাংলাদেশ বিভিন্ন চাপের মুখে পড়তে পারে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “পণ্য নেওয়ার ক্ষেত্রে তারা শর্ত জুড়ে দিতে পারে। অন্য যেকোনো চাপও দিতে পারে।”
আমদানিকারক হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্য দেশগুলো তুলনামূলক সুবিধাজনক অবস্থানে আছে উল্লেখ করে সাবেক এই রাষ্ট্রদূত বলেন, “তারা চাইলে, আমদানি কমিয়ে দিতে পারে। তাই সেক্ষেত্রে আমাদের উচিত বিষয়টি নিষ্পত্তি করা।”
পরবর্তী পদক্ষেপ কী
নির্বাচনের পর দেশে-বিদেশে শেখ হাসিনার অবস্থান বা সম্পর্কের ক্ষেত্রে পরবর্তী পদক্ষেপ কী হতে পারে?
মিশেল কুগেলম্যান মনে করেন, কেবল পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গেই নয়, আঞ্চলিক রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রেও শেখ হাসিনাকে কিছু চড়াই-উৎরাই পার হতে হবে।
তার মতে, শেখ হাসিনার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে নির্বাচন পরবর্তী অস্থিরতা মোকাবেলা করা। কারণ, এই নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশে রাজনৈতিক বিভাজন ‘ভয়ানকভাবে’ স্পষ্ট হয়েছে। যেখানে আওয়ামী লীগ জয় উদযাপন করছে, সেখানে বিএনপি ভীষণ সংক্ষুব্ধ। এখন বিএনপির পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে সেটি দেখার বিষয়।
কুগেলম্যান বলছেন, বিএনপির অনেক বড় নেতাই এখন কারাগারে। ফলে তাদের আন্দোলন স্তিমিত হয়ে যাবে নাকি আরও বেগবান হবে, সেটি এখন দেখার বিষয়।
আবার শেখ হাসিনার পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে, সেটি নিয়েও প্রশ্ন আছে। তিনি কি বিএনপির নেতাদের মুক্তি দেবেন? যদি তাই হয়, তাহলে বাংলাদেশের ভেতর চলা উত্তেজনার কিছুটা অবসান হবে।
মিশেল কুগেলম্যান মনে করেন, শেখ হাসিনাকে সতর্ক পদক্ষেপ নিতে হবে। কারণ বাংলাদেশের মানুষ এক ধরনের অর্থনৈতিক চাপে রয়েছে। সাধারণ মানুষের এই ক্ষোভকে কাজে লাগাতে বিএনপি আবারও পথে নামতে পারে।