এই ভোটে ক্ষমতায় পরিবর্তন আসবে, এমন কোনো ইঙ্গিত নেই; তারপরও গত কয়েকদিন ধরেই আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে উঠে আসছে বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন।
এর কারণ হিসেবে দেখা যায় অভ্যন্তরীণ সংকটের পাশাপাশি ভূ-রাজনৈতিক কারণে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠা।
সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির বিষয়টি ব্যাখ্যা করছেন এভাবে, বৈশ্বিক রাজনীতিতে স্বার্থের যে পালাবদল ঘটছে, তার আঞ্চলিক দৃষ্টিভঙ্গীর কম্পন ধরা পড়ছে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে।
এমন অবস্থার মধ্যেই ৭ জানুয়ারি, রোববার বাংলাদেশে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হচ্ছে। এই নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সরকার গঠনের রায় দিতে পারছেন ১২ কোটি ভোটার। সকাল ৮টায় শুরু হয়ে ভোট চলবে বিকাল ৪টা পর্যন্ত।
প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে আয়োজিত এই নির্বাচনে ৪২ হাজার কেন্দ্রে প্রায় ১০ লাখ ব্যক্তি যুক্ত থাকছেন ভোট গ্রহণে, পাহারায় থাকবে বিভিন্ন বাহিনী ৮ লাখ সদস্য, যার মধ্যে সেনাও রয়েছে।
তবে সব দলের অংশগ্রহণ ঘটছে না এই নির্বাচনে। নির্দলীয় সরকারের অধীনে না হওয়ায় নির্বাচন বয়কট করে হরতাল ডেকেছে বিএনপি। আরও কয়েক দলও ভোট বর্জন করছে।
২০১৪ সালে বয়কটের পাশাপাশি ভোট ঠেকানোর ঘোষণা দিয়ে নেমেছিল বিএনপি, এবার হরতাল ডাকলেও ঠেকানোর ঘোষণা না দিয়ে জনগণকে ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
তবে গত দুই মাসের হরতাল-অবরোধের মধ্যে অনেক যানবাহন পোড়ানোর পাশাপাশি অন্তত চার বার ট্রেনে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ভোটের দুদিন আগেও ঢাকায় আগুন দেওয়া হয় একটি ট্রেনে, যাতে নিহত হন চারজন। বিক্ষিপ্তভাবে অন্তত ১০টি ভোটকেন্দ্রও পোড়ান হয়েছে সারাদেশে।
এমন প্রেক্ষাপটে ভোটের ১৩ ঘণ্টা আগে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, “বিরোধী পক্ষ ভোট বর্জনের পাশাপাশি প্রতিহত করার চেষ্টা করছে। এতে ভোট শান্তিপূর্ণভাবে উঠিয়ে আনা দুরূহ হবে।”
ভোটের দিনের আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে তার এই বক্তব্য, তবে প্রায় প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন এই নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ যদি টানা চতুর্থবার সরকার গঠনও করে, তারপর কী হবে, তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে অনেকেরই।
তেমনই একজন সাবেক নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম। তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “ইলেকশনের পর কী হবে? অদ্ভুত ধরনের শঙ্কা কাজ করছে।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের চোখে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এবারের মতো বিদেশি চাপ অতীতে আর কখনও দেখা যায়নি।
পশ্চিমা দেশগুলো নানাভাবে আওয়ামী লীগ সরকারের কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। যুক্তরাষ্ট্র তো এমন নীতিই নিয়েছে যে বাংলাদেশে অবাধ নির্বাচনে যারা বাধা হয়ে দাঁড়াবে, তাদের ভিসা দেবে না ওয়াশিংটন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরাসরিই বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র তাকে হয়ত তাকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না।
বৈশ্বিক রাজনীতিতে তিন পরাশক্তি চীন, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের ওপর দক্ষিণ এশিয়ার বড় দেশ ভারতের প্রভাবের কথাও আসে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের আলোচনায়। বাংলাদেশ নিয়ে ওয়াশিংটন-মস্কোর পাল্টাপাল্টি বক্তব্যও দেখা গেছে।
সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির সকাল সন্ধ্যাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “চীন গত ৪০ বছর ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রায় সাজুয্যপূর্ণ অবস্থান বজায় রেখেছে। এখন আবার চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বিতা বেড়ে যাচ্ছে। এখানে আবার ভারতের সঙ্গেও চীনের প্রতিদ্বন্দ্বিতাও প্রায় উত্তেজনাকর পর্যায়ে গিয়ে হাজির হয়েছে।
“এখন আমাদের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক যে প্রেক্ষাপট, যে সঙ্কট, সেটাকে বিশ্বশক্তিগুলোর তাদের পারস্পরিক বৈশ্বিক এবং আঞ্চলিক দৃষ্টিভঙ্গির জায়গা থেকে দেখবার একটা প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।”
এটাই সাবেক নির্বাচন কমিশনার রফিকুলের শঙ্কার কারণ। তার ধারণা, নির্বাচনের পর বিদেশিদের হস্তক্ষেপের চেষ্টা আরও বাড়বে।
তৈরী পোশাক খাত এবং রপ্তানি বাণিজ্যের অনেকাংশই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের ওপর নির্ভর থাকায় তারা যদি কোনো অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, তা বাংলাদেশের জন্য গভীর সঙ্কট ডেকে আনতে পারে বলে তার আশঙ্কা।
“সেই সঙ্কট মোকাবেলার সামর্থ্য কি আমাদের আছে?” তার শঙ্কাসূচক প্রশ্ন।
যদিও তার মতো শঙ্কার কিছু দেখছেন না সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা। তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “বিরাট ক্ষতি হবে না। নির্বাচন হবে। সরকার গঠন হবে। তারপর সব স্বাভাবিক হয়ে যাবে।”
২০২৪ সাল বিশ্বজুড়েই ভোটের বছর হতে যাচ্ছে। বাংলাদেশ দিয়ে শুরু হয়ে ৪৪টির মতো দেশে নির্বাচন হবে, এর মধ্যে বিশ্বের জনবহুল ১০টি দেশের সাতটিই রয়েছে।
ভোটের এই আলোচনা ছাপিয়ে বিশ্বে গণতন্ত্রের হাল নিয়েও রয়েছে বিভিন্ন মহলের উদ্বেগ। ফলে বাংলাদেশের পরই তাইওয়ানে অনুষ্ঠেয় নির্বাচন এই মুহূর্তে রয়েছে পশ্চিমা দেশগুলোর আগ্রহের কেন্দ্রে।
বাংলাদেশের নির্বাচন নজরে রাখতে এরই মধ্যে ৭৬ জন বিদেশি সাংবাদিক পৌঁছেছেন ঢাকায়। নির্বাচন পর্যবেক্ষণে বিদেশ থেকে এসেছেন ১৫৮ জন পর্যবেক্ষকও। দেশের ২০ হাজার ৭৭৩ জন পর্যবেক্ষকও ভোট পর্যবেক্ষণে ইসির অনুমতি নিয়েছে।
শনিবার তাদের মুখোমুখি হন সিইসি, সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি নিয়ে জাপানি এক সাংবাদিকের প্রশ্নের সামনে পড়তে হয় তাকে।
সরাসরি উত্তর এড়িয়ে হাবিবুল আউয়াল বলেন, “আমরা নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করছি না। আমরা জানি না, কারা আগুন দিচ্ছে, মানুষ হত্যা করছে। আমরা আমাদের জায়গায় থেকে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের চেষ্টা করছি। আমরা এটা নিয়ে চিন্তিত নই। কারণ এটা আমাদের বিষয় নয়। ভিসা কী, পাসপোর্ট কী, অর্থনীতি কী-তা আমি বুঝি না।”
নিরাপত্তার শঙ্কা কতটা?
ভোট ঘিরে নিরাপত্তা জোরদার করা হলেও ভোটের দুদিন আগে ট্রেনে আগুনের ঘটনার পর সিইসির বক্তব্য সমালোচনার দৃষ্টিতে দেখছেন কেউ কেউ।
শান্তিপূর্ণ ভোট দুরূহ হবে, তার এমন কথায় সবাই বিভ্রান্তিতে পড়বে বলে মনে করেন নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী বেসরকারি সংগঠন ফেমার সভাপতি মুনিরা খান।
তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “সিইসির আজকের কথাটা সবাইকে বিভ্রান্ত করবে। সবাই কনফিউজড হয়ে যাবে। তার বক্তব্য ভোটারদের মনে নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি করবে।”
পর্যবেক্ষকদের সামনে অমন বক্তব্য দিলেও শনিবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে কড়া বার্তাই দেন সিইসি হাবিবুল আউয়াল।
তিনি বলেন, ভোট অবাধ ও সুষ্ঠু করতে ইসি সামর্থ্যের সব দিয়েই চেষ্টা করবে। অনিয়মের তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিকভাবে ভোট বন্ধ করে দেওয়া হবে, প্রার্থীর প্রার্থিতাও বাতিল করা হবে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সজাগ থাকার পরামর্শ দেন তিনি। ভোটারদেরও আহ্বান জানান, উৎসবের মেজাজে যেন ভোটকেন্দ্রে আসে।
ভোটের তফসিল ঘোষণার পর সারাদেশে দেড় শতাধিক সহিংস ঘটনা ঘটে। এতে আহত হয় প্রায় দুই শতাধিক। নিহত হয় অন্তত তিনজন।
ইসির কর্মকর্তাদের কাছ থেকে জানা যায়, নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় থাকবেন বিভিন্ন বাহিনীর ৮ লাখ ৩২ হাজার ১৪০ জন সদস্য। পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, কোস্টগার্ড ও আনসার ও সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা রয়েছেন মাঠে।
আনসার ৫ লাখ ১৪ হাজার ২৮৮ জন, পুলিশ (র্যাবসহ) ১ লাখ ৭৪ হাজার ৭৭৬ জন, বিজিবির ১১৫৮ প্লাটুনে ৪৫ হাজার ১৮৬ জন, কোস্টগার্ডের ৭৫ প্লাটুনে ২৫২০ জন সদস্য নিয়োজিত রয়েছেন। সেনা সদস্যরা থাকবেন স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে।
এবার গুরুতর আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনায়ও নির্বাচন কমিশন প্রার্থীদের বিরুদ্ধে কঠিন কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি। বিশেষ করে কুমিল্লা-৬ আসনের নৌকার প্রার্থীকে চারবার শোকজ শেষে অর্থদণ্ড, বরগুনা-২ আসনের নৌকার প্রার্থীকে চারবার শোকজ শেষে একই রূপ অর্থদণ্ড, ঝিনাইদহ-২ আসনের নৌকার প্রার্থী ও সমর্থকের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে চারটি মামলা করেই দায় সেরেছে কমিশন।
নির্বাচনী আচরণবিধি প্রতিপালন নিশ্চিতের পাশাপাশি নির্বাচনী এলাকার সার্বিক আইন শৃঙ্খলা রক্ষা, অপরাধ প্রতিরোধ এবং মোবাইল কোর্ট ও স্ট্রাইকিং ফোর্স বিশেষ করে বিজিবি, কোস্টগার্ড ও সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের দিক-নির্দেশনা দেওয়ার লক্ষ্যে প্রশাসন ক্যাডারের ২ হাজার ৭৬ কর্মকর্তাকে নির্বাহী হাকিমের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে পারবেন।
ভোটে আচরণবিধি প্রতিপালন নিশ্চিত করতে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে ৩০০ ‘নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি’ গঠন হয়েছে। এই কমিটিই তফসিল ঘোষণার পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৭৪৬ জনকে শোকজ করেছে। পাশাপাশি তাৎক্ষণিক বিচারকাজ সম্পন্ন করতে মাঠে নেমেছেন ৬৫৩ বিচারিক হাকিম। ভোটের আগে-পরে পাঁচ দিন তারা নির্বাচনী এলাকায় দায়িত্ব পালন করছেন।
এই হাকিমরা গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী অপরাধ আমলে নিয়ে ব্যালট পেপার ছিনতাই, ব্যালট পেপার ধ্বংস করা, ব্যালট বাক্স ছিনতাই, ভোটদানে বাধা দেওয়া বা বাধ্য করা, ভোটকেন্দ্রের পরিবেশ ভোটের উপযোগী না রাখা–এসব অপরাধের তাৎক্ষণিকভাবে বিচার করে ৩-৭ বছরের দণ্ড দিতে পারবেন।
এক নজরে ভোট
ভোটকেন্দ্র: ৪২ হাজার ২৪টি
ভোটকক্ষ: ২ লাখ ৬০ হাজার ৮৫৮
মোট ভোটার: ১১ কোটি ৯৩ লাখ ৩৩হাজার ১৫৭ জন
পুরুষ ভোটার: ৬ কোটি ৫ লাখ ৯২ হাজার ১৬৯জন
নারী ভোটার: ৫ কোটি ৮৭ লাখ ৪০হাজার ১৪০ জন
হিজড়া ভোটার ৮৪৮
অংশগ্রহণকারী দলের সংখ্যা: ২৮
মোট প্রার্থী: ১ হাজার ৯৬৯
রাজনৈতিক দলের প্রার্থী: ১ হাজার ৫৩৪
স্বতন্ত্র প্রার্থী: ৪৩৭
ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা: প্রায় ১০ লাখ
ভোট স্থগিত: নওগাঁ-২ আসন (এক প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে)
স্বতন্ত্র চমক?
বিএনপি বর্জনের ঘোষণায় দেওয়ায় দৃশ্যত নির্বাচনে প্রথাগত আমেজ আনতে দলের প্রার্থীদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার পথে বাধা দেয়নি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ফলে এবার শতাধিক আসনে নৌকার সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বিতা আশা করা হচ্ছে। প্রতিদ্বন্দ্বিতা জমজমাট করতে ভোটারদের কেন্দ্রমুখী করতে আওয়ামী লীগকে নানা উদ্যোগ নিতে দেখা যাচ্ছে।
তারপরও এই নির্বাচন প্রতিযোগিতমূলক হচ্ছে না বলে মনে করছেন সাবেক সিইসি নূরুল হুদা। ২০১৪ সালের ভোট বর্জন করলেও ২০১৮ সালের ভোটে বিএনপি অংশ নিয়েছিল, সেই কমিশনের নেতৃত্বে ছিলেন তিনি।
এবারের ভোট নিয়ে নূরুল হুদা বলেন, “সেরকম প্রতিযোগিতা হবে না। প্রতিযোগিতামূলক হবে না, এটা স্বাভাবিক।”
সাবেক নির্বাচন কমিশনার রফিকুলও আওয়ামী লীগের সঙ্গে কোনো বিরোধী দল না দেখার কথা জানিয়েছেন, যদিও সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ভোটের মাঠে রয়েছে। তারা আবার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতাও করেছে।
স্বতন্ত্র প্রার্থীদের তৎপরতায় ভিন্ন কিছু দেখার আশা করছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার রফিকুল। তিনি বলেন, “গণতন্ত্রের ইতিহাসে এমন ঘটনা খুব কম ঘটেছে যে স্বতন্ত্ররাই বিরোধী দল হয়ে দল গঠন করেছে। এবার এরকম কিছু হতে পারে। এটা আমাদের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে না।”
এবার নিবন্ধিত ২৮টি রাজনৈতিক দলগুলোর ১ হাজার ৫৩৪ জন প্রার্থীর সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছে ৪৩৭ জন। এদের অধিকাংশই আওয়ামী লীগের নেতা।
দলগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ২৬৫ জন, জাতীয় পার্টির ২৬৪ জন, তৃণমূল বিএনপির ১৩৫ জন, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ১২২ জন, ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশের ৩৯ জন, ইসলামী ঐক্যজোটের ৪২ জন, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের ৩০ জন, গণফোরামের ৯ জন, জাতীয় পার্টি-জেপির ১৩ জন, জাসদের ৬৬ জন, বিকল্পধারার ১০ জন, কল্যাণ পার্টির ১৬ জন, ওয়াকার্স পার্টির ২৬ জন।
ইসির নিবন্ধিত ৪৪টি দলের মধ্যে ১৬টি নির্বাচন বয়কট করছে।
ব্যালট সকালে, চালু অ্যাপ
‘রাতের ভোটের’ দুর্নাম ঘোচাতে এবার দুর্গম ৭২টি উপজেলা ছাড়া সারাদেশে ভোটের দিন সকালে ব্যালট পেপারসহ নির্বাচনী সরঞ্জাম পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় ইসি।
ভোট কেন্দ্রের তথ্য ও ভোটের দিন কেন্দ্রে ভোটের হার জানাতে এবারই প্রথম ‘স্মার্ট ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট বিডি’নামের একটি অ্যাপ চালু করেছে ইসি।
২১ কোটি টাকা ব্যয়ের এই অ্যাপে দুই ঘণ্টার পরপর আসনভিত্তিক ভোট পড়ার হার ও প্রার্থীর ছবিসহ তথ্যও পাওয়া যাবে।
এবারের সংসদ নির্বাচনের ব্যয় শুরুতে দেড় হাজার কোটি টাকা ধরা হয়েছিল। ধীরে ধীরে এই ব্যয় বেড়ে ২ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। নির্বাচন পরিচালনা ও আইনশৃঙ্খলা খাত মিলিয়ে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছিল। পরে বরাদ্দের চাহিদা বেড়ে সব মিলিয়ে ব্যয় ২০০০ থেকে ২২০০ কোটি টাকায় দাঁড়াতে পারে।
এর মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চাহিদা অনুযায়ী সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ২২৫ কোটি ৬২ লাখ টাকা। নির্বাচন পরিচালনা খাতে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৫০ কোটি ৬০ লাখ টাকা।