গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত নির্বাচন, আর সেই বছর বিশ্বে ৪০টিরও বেশি দেশে তা হতে যাচ্ছে। বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল ১০টি দেশের সাতটিতেই এই ভোটের আয়োজন থাকছে। ভোট তো হচ্ছে, কিন্তু প্রশ্ন থাকছে গণতন্ত্র কি সমুন্নত থাকছে।
গণতন্ত্রের জয়গানেই শুরু হয়েছিল এই শতক, কিন্তু দুই দশক পেরিয়ে এখন তা ক্ষয়ের মুখে বলেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের পর্যবেক্ষণ।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাময়িকী ফরেন পলিসি দেখাচ্ছে, মাত্র আটটি দেশে গণতন্ত্র বহাল রয়েছে। ২১টি দেশে যে গণতান্ত্রিক চর্চা রয়েছে, তাকে মেকি গণতন্ত্র বলা যায়। নয়টি দেশে গণতন্ত্র রয়েছে স্বৈরতন্ত্রের লেবাসে। আর ১৫টি দেশে চলছে কর্তৃত্ববাদী শাসন।
২০২৪ সালে নির্বাচন শুরু হচ্ছে বাংলাদেশ দিয়ে, ৭ জানুয়ারি এই ভোট হবে। ফরেন পলিসি বাংলাদেশকে রেখেছে মেকি গণতন্ত্রের কাতারে, যেখানে ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ আফ্রিকা, ইন্দোনেশিয়াও রয়েছে।
পাকিস্তানে গণতন্ত্রের ছদ্মাবরণে স্বৈরশাসন চলছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সাময়িকীটির পর্যবেক্ষণ।
ইরান, রাশিয়া, ভেনেজুয়েলার মতো দেশগুলোকে কর্তৃত্ববাদী শাসনের দেশে রেখেছে ফরেন পলিসি।
ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর ডেমোক্রেসি অ্যান্ড ইলেক্টোরাল অ্যাসিস্ট্যান্সের (আইডিইএ) ‘গ্লোবাল স্টেট অফ ডেমোক্রেসি ২০২৩’ প্রতিবেদনেও একই সুর।
গত ২ নভেম্বর প্রকাশিত সেই প্রতিবেদনে বলা হয়, পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি, তুরস্ক, স্লোভাকিয়া, ইসরায়েল এবং যুক্তরাষ্ট্রের নেতাদের দাবি, তারা জনগণের হয়ে কথা বলেন। কিন্তু এসব দেশেই গণতান্ত্রিক নীতিমালা সবচেয়ে বেশি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়েছে।
আইডিইএ ১৯৭৫ সাল থেকে গণতন্ত্রের সূচক প্রকাশ ও সংরক্ষণ করে আসছে। তাদের সূচক বলছে, এই সময়ের মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘ ক্রমাগত অবমননের সময়কাল (ছয় বছর) পার করছে গণতন্ত্র। বিভিন্ন সূচকে দেশগুলোর মধ্যে উন্নতির চেয়ে অবনমনের ঘটনাই বেশি।
আর এমন বাস্তবতা নিয়েই শুরু হয়েছে ২০২৪ সাল। এবছর যে দেশগুলোতে জাতীয় নির্বাচন হবে, সে দেশগুলোতে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৪১ শতাংশের বসবাস। পাশাপাশি বৈশ্বিক জিডিপির ৪২ শতাংশের জোগানও আসে এখান থেকে।
যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও যুক্তরাজ্যের মতো সবচেয়ে ক্ষমতাবান ও ধনী দেশগুলোর পাশাপাশি দুর্বল গণতন্ত্রের দেশ দক্ষিণ সুদানেও ভোট হতে যাচ্ছে। আবার রাশিয়া ও ইরানের মতো কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্রেও নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন, চীনের চাপে থাকা তাইওয়ানেও নির্বাচন হবে।
যুক্তরাজ্যের দৈনিক গার্ডিয়ান বলছে, এক্ষেত্রে কিছু নির্বাচন মুক্ত, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। কিন্তু অধিকাংশেই তা হবে না। আবার কিছু জায়গায় নির্বাচন অবাধও হবে না।
ভোট উৎসবের আমেজ নিয়ে আসে। কিন্তু এবার তা এমন এক সময়ে এসেছে, যখন একদিকে চীনের শি জিনপিং এবং রাশিয়ার ভ্লাদিমির পুতিন, অন্যদিকে হাঙ্গেরির অতি-ডানপন্থি জাতীয়তাবাদী জনপ্রিয় দল ফিদেজ। আবার ভেনেজুয়েলা থেকে শাদ পর্যন্ত অভ্যুত্থান-পাল্টা অভ্যুত্থান ও ইসলামপন্থিদের আস্ফালন চলছে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি স্বাধীন পর্যবেক্ষক সংস্থা গ্লোবাল ফ্রিডম। সংস্থাটির মতে, টানা ১৭ বছর ধরে বিশ্বে স্বাধীন মত প্রকাশের সুযোগ ক্রমাগত সঙ্কুচিত হয়েছে।
তাদের ২০২৩ সালের প্রতিবেদন বলছে, “মস্কোর আগ্রাসী যুদ্ধ ইউক্রেনে ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্ম দিয়েছে। বুরকিনা ফাসোতে নতুন অভ্যুত্থানের কারণে সেখানকার প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার আরও দুর্বল হয়েছে। তিউনিশিয়া, পেরু ও ব্রাজিলে অস্থিতিশীলতা চলছে। গিনি, তুরস্ক, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডসহ অন্য দেশে মৌলিক স্বাধীনতা হ্রাস পেয়েছে।”
গ্লোবাল ফ্রিডমের প্রতিবেদন আরও বলছে, ৩৫টি দেশে রাজনৈতিক অধিকার এবং নাগরিক স্বাধীনতা খর্ব পেয়েছে। তবে ৩৪টি দেশে সামগ্রিকভাবে এই অবস্থার উন্নতিও হয়েছে।
দুর্নীতির প্রভাবের বদলে রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণে মনোযোগ দেওয়ায় বেইজিং, মস্কো, কারাকাস বা তেহরানের কর্তৃত্ববাদী মডেলের সীমাবদ্ধতা আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে দেখা গেছে।
অধিকারকর্মী জ্যাকব মচাঙ্গামা যুক্তি দিয়ে ফরেন পলিসিকে বলেন, পুরোপুরি কার্যকর গণতন্ত্রের জন্য অপরিহার্য বাক স্বাধীনতার নীতিও এখন আক্রমণের মুখে।
“এমনকি উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোকেও ঘৃণাসূচক বক্তব্য, ভুল তথ্য, চরমপন্থা এবং জনগণের অস্থিরতাসহ একাধিক হুমকি মোকাবেলায় বিধি-নিষেধ আরোপ করতে হচ্ছে।”
তিনি উদাহরণ হিসেবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অনলাইনে নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধি ও ফিলিস্তিন সমর্থকদের বিক্ষোভের উপর নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি উল্লেখ করেন।
নির্বাচনগুলো কম-বেশি একই সময়ে হচ্ছে। বিশ্লেষকদের শঙ্কা, এসব নির্বাচনের ভূ-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব সম্ভবত একটি অস্থিতিশীল বিশ্বকে আরও অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে।
উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, ইরানের ভোটাররা ভোটের মাধ্যমে ধর্মীয় রক্ষণশীলদের বিতাড়িত করলে তা হবে অনুপ্রেরণার। কিন্তু বাস্তবতা এমন যে, সেখানে নির্বাচনের ফলাফল আগে থেকেই নির্ধারিত। দেশটিতে ইতোমধ্যেই ২৫ শতাংশের বেশি বিরোধী প্রার্থীকে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে।
তবুও আশা করা হচ্ছে অনেক ইরানি ভোট বর্জন করবে।
গত বছরের শেষে মিশরে একই ঘটনা ঘটেছিল। সেখানে সাবেক অভ্যুত্থানকারী আব্দেল ফাত্তাহ আল সিসি তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপতি পদে দাঁড়ানো একমাত্র বিশ্বাসযোগ্য ও জনপ্রিয় প্রতিপক্ষকে নিষিদ্ধ করে। একইভাবে গত মাসে হংকংয়ে জেলা নির্বাচনে ভোটদানের নিয়ম এমনভাবে পরিবর্তন করা হয়, যাতে নির্দিষ্ট কিছু মানুষের পক্ষে সুবিধা হয়। আর এই নির্দিষ্ট কিছু মানুষকে হংকংয়ের চীনপন্থি প্রশাসন সংজ্ঞায়িত করেছে ‘দেশপ্রেমিক’ নামে। এতে হংকংয়ের অনেকেই ভোট দেয়নি। মোট ভোটারের মাত্র ২৭ শতাংশ ভোট দিয়েছিল। অথচ হংকংয়ের নির্বাচনে চীনের হস্তক্ষেপের আগে সেখানে ৭১ শতাংশ পর্যন্ত ভোট পড়ার রেকর্ড রয়েছে।
এবছর সম্ভবত সবচেয়ে বড় অবৈধ নির্বাচনের তকমা রাশিয়াই পেতে যাচ্ছে। এরপরই থাকতে পারে বেলারুশ। রাজনীতির মাঠে পুতিনের প্রতিদ্বন্দ্বী বলতে কেউই নেই। যারাও আছেন তাদের অধিকাংশই হয় কারাগারে, নয়ত নির্বাসিত। এমন বাস্তবতার মধ্যেই পঞ্চমবারের মতো রাষ্ট্রপতি পদে নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করেছেন পুতিন। ২৫ বছর ক্ষমতার শীর্ষে থাকার পরেও তার ব্যক্তিগত জনসমর্থনের রেকর্ড কিন্তু বেশ উঁচু। কারণ অনেক রুশই তাকে ছাড়া অন্য কোনও নেতাকে চেনেন না। পুতিনের এই দীর্ঘ শাসনকে রাশিয়ার জার আমলের দাসপ্রথার সঙ্গে তুলনা করেছে গার্ডিয়ান।
তবে হ্যাঁ, কিছু নির্বাচন মোড় ঘোরাতেও পারে। অস্থিতিশীল পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ উভয়ই এবছর ভোটে যাচ্ছে। আর এই বসন্তে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল গণতন্ত্রের দেশ ভারতে সাধারণ নির্বাচন হবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির তৃতীয় মেয়াদের আশা ভেস্তে যেতে পারে নতুন ২৮ দলীয় বিরোধী জোটের হাতে। এই জোটের নাম ইন্ডিয়া (ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টাল ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স)।
মোদীর হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল বিজেপি (ভারতীয় জনতা পার্টি) উত্তর ও মধ্য ভারতে শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। মোদী নিজেও বিরোধী দল কংগ্রেসের নেতা রাহুল গান্ধীর বিপরীতে বেশ জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেতা হিসেবে বিবেচিত।
তবে স্বাধীন সাংবাদিকতার উপর নিষেধাজ্ঞা, বিদেশে বিরোধীদের রহস্যময় মৃত্যু এবং কাশ্মীরে সেনাবাহিনীর নিষ্ঠুর দমন-নীতির মতো মোদীর অগণতান্ত্রিক প্রবণতাগুলো আসন্ন নির্বাচনের সুষ্ঠুতা নিয়ে প্রশ্ন উঠাবে। নির্বাচনে আশ্চর্যজনকভাবে মোদী হারলে, ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। কারণ চীনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র মোদী নেতৃত্বাধীন ভারতকে অন্যতম মিত্র হিসেবে চাইছে।
স্বায়ত্তশাসিত তাইওয়ানকে চীন তাদের বিচ্ছিন্ন প্রদেশ মনে করে। অঞ্চলটিতে এ মাসে অনুষ্ঠেয় এই নির্বাচন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ শক্তিশালী বহিরাগতের চাপে তাইওয়ান কতটা স্বাধীনভাবে নির্বাচন করতে পারবে, তাই এখন দেখার বিষয়। তাইপের স্বাধীনতাপন্থী ডেমোক্র্যাটিক প্রগ্রেসিভ পার্টি ফের জিতলে বেইজিং তার স্বাভাবিক সামরিক হুমকির বাইরেও পদক্ষেপ নিতে পারে। আর এতে যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের আঞ্চলিক মিত্ররা তাইওয়ান ইস্যুতে জড়িয়ে পড়ার শঙ্কা আছে।
দক্ষিণ আফ্রিকার নির্বাচন হতে পারে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। নেলসন ম্যান্ডেলার মুক্তি ও বর্ণবৈষম্যের যুগ শেষ হওয়ার ৩০ বছর পর আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস (এএনসি) তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোর পথে। ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্সের মতো প্রতিদ্বন্দ্বীদের তীব্র চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে দলটি।
এএনসি সম্ভবত বামপন্থি ইকোনমিক ফ্রিডম ফাইটার্সের সঙ্গে জোট করে ক্ষমতায় টিকতে পারে। কিন্তু এএনসির সীমাহীন দুর্নীতি, আর্থিক কেলেঙ্কারি, বেকারত্বের হার, ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের কারণে ভোটাররা দলটিকে শাস্তি দিতে পারে। আর এমনটা হলে এএনসি স্মরণকালের সবচেয়ে কম ভোট পেতে যাচ্ছে।
আফ্রিকা মহাদেশে গণতন্ত্রের প্রতি হতাশা ব্যাপকভাবে আলোচিত একটি বিষয়। ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের কমফোর্ট ইরো এবং মুরিথি মুতিগা গত মাসে জানিয়েছিলেন, ২০২০ সালের আগস্ট থেকে ২০২৩ সালের নভেম্বর পর্যন্ত আফ্রিকার সাতজন নেতাকে তাদের নিজস্ব সেনাবাহিনী উৎখাত করেছে। এগুলো ২০০০ সাল থেকে আফ্রিকায় ১৩টি সফল অভ্যুত্থানের মধ্যে অন্যতম। নাইজার থেকে সুদান পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলকে ‘অস্থিতিশীল বেল্ট’ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
আফ্রিকার সাম্প্রতিক সামরিক অভ্যুত্থানগুলো মূলত গণতন্ত্রবিরোধী। আর এর পেছনে একাধিক কারণও আছে। এর মধ্যে রয়েছে ক্ষমতার অপব্যবহার, অর্থনৈতিক সমস্যা, দুর্নীতি, ইসলামপন্থীদের অভ্যুত্থান, নির্বাচনে জালিয়াতি এবং ব্যক্তিগত প্রতিদ্বন্দ্বিতা। তবে এটি স্পষ্ট যে, সাম্প্রতিক কিছু অভ্যুত্থান জনগণের ব্যাপক সমর্থন পেয়েছে, যেমন ২০২১ সালের মালি অভ্যুত্থান।
ইরো এবং মুতিগার মতে, “আফ্রিকার অধিকাংশ মানুষই এখনও গণতন্ত্রের প্রতি বিশ্বাস রাখে। তবে তারা এমন শাসন থেকে মুক্তি পেতে চান যারা নিজেদের গণতান্ত্রিক বলে দাবি করে, কিন্তু গণতন্ত্রের মৌলিক প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ হয়েছে।” এ বছর আফ্রিকার যে দেশগুলোতে নির্বাচন হবে এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো আলজেরিয়া, তিউনিশিয়া, ঘানা, রুয়ান্ডা, নামিবিয়া, মোজাম্বিক, সেনেগাল, টোগো ও দক্ষিণ সুদান।
যুদ্ধ ও সংঘাত স্পষ্টতই গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থাকে বাধাগ্রস্ত করে। ইউক্রেন এর একটি জলজ্যান্ত উদাহরণ। এ বছরই বসন্তে দেশটিতে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হওয়ার কথা। ভলোদিমির জেলেনস্কির পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। দেশটিতে সামরিক আইনের অধীনে নির্বাচন স্থগিত রাখা হয়েছে। কিন্তু জন উত্তেজনা ও অসন্তোষ দূর করতে একটি গণতান্ত্রিক নির্বাচন কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারে। এমনকি পুতিন যদি বোমা মেরে ইউক্রেনকে উড়িয়ে দিতে চান, তবুও নির্বাচন খুব কাজে দেবে। কারণ এতে অন্তত বোঝা যাবে, গণতন্ত্রকে হত্যা করা যায় না।
ইসরায়েল গাজায় যুদ্ধ অব্যাহত রাখলে তারা জটিল পরিস্থিতিতে পড়তে পারে। একাধিক জরিপ বলছে, সংখ্যাগরিষ্ঠ ইসরায়েলিই বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কট্টর ডানপন্থি জোটকে ত্যাগ করতে চায়। তারা মনে করছেন, গত ৭ অক্টোবরে হামাসের হামলা প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হয়েছেন নেতানিয়াহু। এসব টানাপোড়েনের মধ্যেই ইসরায়েলে নির্বাচন হবে। কিন্তু এর কোনও তারিখ এখনও ঘোষণা করা হয়নি। জনগণের পক্ষ থেকে অবশ্য নির্বাচনের জন্য চাপ অব্যাহত আছে।
পশ্চিমা দেশগুলো (প্রধানত যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ) নিজেদের গণতন্ত্রের আদি কেন্দ্র বলে মনে করে। কিন্তু সেখানেও ব্যাপকভাবে গণতন্ত্রের বর্তমান অবস্থা নিয়ে অসন্তোষ চলছে। আফ্রিকার মতোই পশ্চিমেও গণতন্ত্র নিজেই সমস্যা নয়। বরং একে যেভাবে প্রয়োগ ও অনুশীলন করা হয় সেটাই সমস্যা।
বাজার গবেষণা এবং পরামর্শক সংস্থা ইপসোসের সাম্প্রতিক জনমত জরিপ বলছে, পশ্চিমা দেশগুলোর মানুষ ব্যাপকভাবে বিশ্বাস করে যে, বর্তমান গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ধনী ও ক্ষমতাধরদের পক্ষে এবং অন্যদের উপেক্ষা করে।
প্রতি দশ জন আমেরিকানের মধ্যে সাত জনই বলেছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাদের গণতন্ত্রের অবস্থা খারাপ হয়েছে। ফ্রান্সের ৭৩ শতাংশ মানুষেরও একই মত। জরিপ মতে, যুক্তরাজ্যে প্রতি দশজনে ছয়জন মনে করেন, গত পাঁচ বছরের তুলনায় গণতন্ত্র এখন ঠিকভাবে কাজ করছে না। ক্রোয়েশিয়া, ইতালি, পোল্যান্ড এবং সুইডেনে জরিপ চালিয়েও একই মতামত পাওয়া গেছে।
পরিবর্তন হোক বা না হোক এ বছর ইউরোপে অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, ক্রোয়েশিয়া এবং ফিনল্যান্ডে নির্বাচন হবে। পাশাপাশি জুনে নির্বাচন হবে ইউরোপীয় পার্লামেন্টেও। আশঙ্কা করা হচ্ছে, ইতালি, নেদারল্যান্ডস এবং স্লোভাকিয়াতে যেভাবে জাতীয়তাবাদী-পপুলিস্ট, অভিবাসীবিরোধী, জাতিবিদ্বেষী কট্টর ডানপন্থিদের উত্থান হয়েছে, এসব নির্বাচনেও তা হতে পারে।
যুক্তরাজ্যের সমস্যা একটু আলাদা। দীর্ঘ গণতান্ত্রিক ঐতিহ্যের জন্য গর্ব রয়েছে দেশটির। অথচ এই দেশেই এক বছরেরও কম সময়ে দুইজন কনজারভেটিভরক্ষণশীল প্রধানমন্ত্রী পদে বসেছেন। তারা কেউই সাধারণ নির্বাচনে জয় পেয়ে প্রধানমন্ত্রী হননি। দলের অভ্যন্তরীণ নির্বাচনে জয় পেয়ে প্রধানমন্ত্রী হন তারা। ফলে এ বছর দেশটিতে সাধারণ নির্বাচন হবে কিনা তা নিশ্চিত নয়।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বিশ্বকে গণতান্ত্রিক ও স্বৈরতান্ত্রিক দুই শিবিরে ভাগ করেছেন। এই দুই শিবিরের লড়াইকে তিনি এই যুগের সংগ্রাম বলে আখ্যা দিয়েছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে তিনি হারলে বিশ্বের অনেকেই বিশ্বাস করতে শুরু করবেন যে, গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ অন্ধকার।