চারপাশে হাজারো মানুষের ভিড়। এর মধ্যে কিছুতেই স্থির থাকতে চাইছে না ছোট্ট মারিয়া আক্তার মীম। কিন্তু ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে যাওয়ার ভয়ে তার হাত ছাড়তে রাজি নয় বাবা। মঙ্গলবার দুপুরে এমন দৃশ্যের দেখা মেলে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনের ১নং প্রবেশদ্বারের সামনের সড়কে।
এদিন গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। তাতে অংশ নিতে দলের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি এসেছিলেন বিভিন্ন পেশাজীবী ও সাধারণ জনগণ। সেখানেই বাবা-মার হাত ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা জানাতে এসেছিল ছোট্ট মারিয়া। সঙ্গে ছিল ৭ বছর বয়সী বড় ভাই মামুন শিকদারও।
মিম পটুয়াখালির কুয়াকাটা উপজেলা সদরের জিরো পয়েন্ট এলাকার জাকির শিকদারের মেয়ে। ছেলে-মেয়ে ও স্ত্রী নাসিমা আক্তারকে সঙ্গে নিয়ে গণভবনে এসেছিলেন ব্যবসায়ী জাকির শিকদার। সকাল সন্ধ্যাকে তিনি জানান, এর আগেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা জানাতে গণভবনে এসেছেন। এবার স্ত্রী-সন্তানরাও বায়না ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেখার। শখ পূরণে তাদের সঙ্গে নিয়েই গণভবনে এসেছেন আজ।
জাকিরের স্ত্রী নাছিমা আক্তার বলেন, “প্রধানমন্ত্রীকে কাছ থেকে দেখার জন্য গতকাল রাত ১০টায় কুয়াকাটা থেকে রওনা হয়েছিলাম। ঢাকায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে আজ সকাল ৬টা বেজে যায়। গুলিস্তানে নেমে সরাসরি গণভবনে চলে এসেছি।
“প্রধানমন্ত্রীকে দেখার পর সব কষ্ট শেষ হয়ে গেছে। আমার অনেক দিনের স্বপ্ন আজ পূরণ হলো।”
জাকির-নাসিমা দম্পতির মতোই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা জানাতে কামরাঙ্গীরচর থেকে গণভবনে এসেছিলেন সাইদুজ্জামান সজল। বেসরকারি চাকরিজীবী সজল বলেন, “আগেরবার দেরি হয়ে যাওয়ায় গণভবনে ঢুকতে পারিনি। সেই কষ্ট বয়ে বেড়িয়েছি এতদিন। আজ আর দেরি করিনি, সকাল সকাল চলে এসেছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এত কাছ থেকে দেখতে পেয়ে বহুদিনের জমানো কষ্ট দূর হয়ে গেল।”
গণভবনে তারকারা
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে এসেছিলেন বিভিন্ন অঙ্গনের তারকারাও। দুপুর সোয়া ১টার দিকে গণভবন থেকে বের হতে দেখা যায় চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাসকে। হাসিমুখে সকাল সন্ধ্যাকে তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা হয়েছে, ভালো লাগছে।” এরপর হাঁটতে হাঁটতে গণভবন থেকে বেরিয়ে রেসিডেন্সিয়াল স্কুল ও কলেজের সামনে যান এই শিল্পী। সেখান থেকে গাড়িতে উঠে এলাকা ত্যাগ করেন তিনি।
অপু বিশ্বাস বের হওয়ার কিছুক্ষণে আগে গণভবন থেকে বেরিয়ে যান চিত্রনায়ক রিয়াজ। এছাড়াও বিভিন্ন অঙ্গনের অনেক তারকাকে এদিন গণভবনে দেখা যায়।
গণভবনে ঢুকতে না পেরে হতাশ
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করার আশায় দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে হন্তদন্ত হয়ে গণভবনের প্রধান প্রবেশপথের সামনে পৌঁছান দুই বন্ধু মোরশেদুর রহমান ও বিল্লাল হোসেন। কিন্তু নির্দিষ্ট সময় পার হয়ে যাওয়ায় তাদের আর ভেতরে প্রবেশ করতে দেননি নিরাপত্তারক্ষীরা। হতাশ হয়ে কিছুক্ষণ ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে থেকে ফিরে যান তারা। ফেরার পথে সকাল সন্ধ্যা কথা বলে তাদের সঙ্গে।
মোরশেদ জানান, টঙ্গী থেকে সকাল সকালই রওনা হয়েছিলেন দুই বন্ধু। কিন্তু পথে মোটরসাইকেল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় পৌঁছাতে দেরি হয়ে গেছে। মোরশেদ ও বিল্লালের মতো আরও অনেকেই নির্দিষ্ট সময়ে পৌঁছাতে না পেরে গণভবনে প্রবেশের অনুমতি পাননি আর।
গণভবনের আশপাশের পরিবেশ
প্রধানমন্ত্রী সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে বিপুল সংখ্যক মানুষ ভিড় জমায় গণভবনের আশেপাশে। এদিন তাই গণভবন ও আশপাশের এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল চোখে পড়ার মতো। এসএসএফের পাশাপাশি পুলিশ ও এসবিসহ বিভিন্ন বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য মোতায়েন ছিলেন গণভবনের চারপাশে। কয়েক স্তরে প্রত্যেক অতিথির সারা শরীর তল্লাশির পরই তারা গণভবনে প্রবেশের অনুমতি পেয়েছেন।
কাউকেই ব্যাগ নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে দেননি নিরাপত্তাকর্মীরা। এছাড়া সঙ্গে থাকা সিগারেটের প্যাকেট, লাইটার ফটকে ফেলেই ভেতরে প্রবেশ করতে হয়েছে। গণভবনের চারপাশের সড়কেও ট্রাফিক পুলিশের বিপুল সংখ্যক সদস্যদের উপস্থিতি চোখে পড়েছে। মিরপুর রোড ও রেসিডেন্সিয়াল কলেজের আশপাশের সড়কগুলোতে ছিল অতিথিদের গাড়ির বহর। এসব সড়কের পাশে শতশত গাড়ি ও মোটরসাইকেল পার্ক করে গণভবনে প্রবেশ করেন অতিথিরা।