Beta
শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৫
Beta
শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৫

স্রোতের বিপরীতে ভোটের মাঠে উর্মি

SS-Urmi-06-01-24
[publishpress_authors_box]

অবস্থা এমন যে, উর্মির ভাত খাওয়ারও সময় নেই, গল্প করার সময়তো দূরের কথা। দিন-রাত চলছে জনসংযোগের কাজ। হেঁটে হেঁটে মানুষের কাছে যাচ্ছেন, হাত ধরে দোয়া চাইছেন, ভোট দেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছেন।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাজীপুর ৫ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন উর্মি। তৃতীয় লিঙ্গের এই সদস্য এবারই প্রথম কোনও ভোটে অংশ নিচ্ছেন। তাও আবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। ফলে গাজীপুরের মানুষও প্রথমবারের মতো দেখছেন প্রচলিত ধারার বাইরে গিয়ে ভোটে দাঁড়ানো এক প্রার্থীকে।

উর্মির বাড়ি গাজীপুরের পুবাইলে। গাজীপুর ৫ আসনের নির্বাচনে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন মেহের আফরোজ চুমকির সঙ্গে। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী, মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং সাবেক সংসদ সদস্য মেহের আফরোজ। এই আসনেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আরেক রাজনীতিবিদ আখতারুজ্জামান।

এমন দুজন ঝানু রাজনীতিবিদের সঙ্গে জাতীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো সাহসী কী করে হলেন জানতে চাইলে উর্মি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “কাউকে না কাউকে, কখনও না কখনও সাহসী হতে হয়, স্রোতের বিপরীতে গিয়ে দাঁড়াতেই হয়। সে সাহসটাই করে ফেলেছি এবার। আর কিছু নয়।”

এর আগে কখনও রাজনীতি করেননি উর্মি। প্রথমবারেই সরাসরি জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়ে তিনি বলেন, “আমি এত বছর মানুষের সঙ্গে মিশেছি, তাদের সঙ্গে আমার সম্পর্ক অনেক ভালো। যদিও জানি, রাজনীতির হিসাবনিকাশ এত সহজ নয়।”

ভোটে উর্মি লড়াই করছেন বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির হয়ে। এখন পর্যন্ত নিজের অবস্থান ভালো বলেই মনে করছেন তিনি। উর্মি বলেন, “সাধারণ মানুষের ভালো সাড়া পাচ্ছি। মানুষ আগ্রহ দেখাচ্ছে। খুব ছোট ছোট কিছু ঘটনা ছাড়া বড় কোনও সমস্যার মুখোমুখি এখনও হইনি।”

অন্যান্য প্রার্থীরাও তাকে ইতিবাচকভাবে নিয়েছেন জানিয়ে উর্মি বলেন, “নির্বাচনের মাঠে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মেহের আফরোজ চুমকিসহ বাকীদের সঙ্গেও দেখা হচ্ছে। চুমকি আপা বরং উৎসাহ দিচ্ছেন, পিঠ চাপড়ে দিচ্ছেন।“

সাধারণত নিজ বাড়িতে থাকতে পারেন না তৃতীয় লিঙ্গের সদস্যরা, জীবনভর শিকার হতে হয় নানা ধরনের বৈষম্য-বঞ্চনার। তাদের জন্যই বাড়ি করেছেন উর্মি। ভোটে নির্বাচিত হতে পারলে নিজ জনগোষ্ঠীর মানুষকে নিয়ে এগিয়ে যেতে যান তিনি। তৃতীয় লিঙ্গের প্রতি সমাজের বৈষম্য, বঞ্চনার অবসান করতে চান। সেই শুরুটাই করতে চান নিজে জয়ী হয়ে।

উর্মির মতোই স্রোতের বিপরীতে চলা আরেক প্রার্থীর নাম আনোয়ারা ইসলাম রানী। রংপুর ৩ সংসদীয় আসনে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন তিনি। উর্মির তুলনায় তাকে কিছুটা বেশি সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছে। এমনকি অন্য প্রার্থীদের হামলার শিকারও হয়েছেন বলে অভিযোগ তার।

রংপুরে নির্বাচনী প্রচারে তৃতীয় লিঙ্গের আনোয়ারা ইসলাম রানী। ছবি: সকাল সন্ধ্যা

রানী বলেন, “লাঙ্গল প্রার্থী আমাকে মিছিল করতে দেয়নি, পোস্টার ছিঁড়ে নিজেদের পোস্টার লাগিয়েছে, আমার মাইক কেড়ে নিয়েছে।

“আমি নির্বাচন কমিশনে এ নিয়ে অভিযোগও করেছি। কিন্তু কোনও সুরাহা হয়নি।”

যদি ঠিকমতো জনসংযোগ ও নির্বাচন করতে দেওয়া হতো তাহলে এখানকার ফল ভিন্ন কিছু দেখতেন মন্তব্য করে রানী বলেন, “আমি কখনও রাজনীতি করিনি, আগের অভিজ্ঞতা নেই। কিন্তু নিজের এলাকা বলে জানি, এতদিন যারা নির্বাচিত হয়েছেন, ভোটের পর তাদেরকে আমরা পাই না, মানুষ নিজের কথা বলতে পারে না।”

‘যারা এলাকার মানুষের সমস্যার কথা, দুঃখ কষ্টের কথা জানেন না, তারা কিভাবে জনপ্রতিনিধি হয়’ প্রশ্ন তুলে রানী বলেন, “কেউ প্রতিবাদ করছে না। ভাবলাম, কাউকে না কাউকে তো এগিয়ে আসতেই হবে, তাই এগিয়ে এলাম।

“আমি নির্বাচিত হলে এলাকায় থাকব, কারণ আমি জানি এলাকার কোথায় কী সমস্যা।”

তবে রানীর পথচলাটা ফুলের নয়, বরং কাঁটায় ভরা। গত ২২ ডিসেম্বর ‘লাঙ্গল বাহিনী’ হামলা করেছে, গণসংযোগ চলাকালে মাইক কেড়ে নিয়েছে, ভোট না করার জন্য ভয় দেখিয়েছে, শহরে থাকা পোস্টার ছিঁড়ে ফেলেছে বলে জানান রানী।

 রানী বলেন, “এরপরও আমি চলছি কারণ সাধারণ মানুষ আমার সঙ্গে রয়েছে, তারা আমাকে উৎসাহ দিচ্ছেন। বাকিটা নির্ভর করছে ভোটের উপর।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত