Beta
মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
Beta
মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

আস্থাহীনতায় কমছে ভোট, বলছেন বিশেষজ্ঞরা

প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অনেক কেন্দ্রেই দেখা মিলেছে এই দৃশ্যের। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অনেক কেন্দ্রেই দেখা মিলেছে এই দৃশ্যের। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
[publishpress_authors_box]

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তুলনায় ভোটার বেড়েছিল দ্বাদশ নির্বাচনে, কিন্তু সে অনুযায়ী বাড়েনি ভোটের হার। এরই ধারাবাহিকতায় কমেছে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে ভোটের হারও।

মঙ্গলবার দ্বিতীয় ধাপে ভোটগ্রহণ হবে দেশের ১৫৬ উপজেলায়। নির্বাচন কমিশন বলছে, এই ধাপে ভোটের হার বাড়লে খুশি হবে কমিশন। তবে সেটি যদি নাও হয়, তাহলেও উদ্বিগ্ন হবে না সংস্থাটি।

অবশ্য কমতে থাকা ভোটের হার উদ্বেগ বাড়াচ্ছে বিশেষজ্ঞদের। তারা বলছেন, ভোটের হার কমে যাওয়ার অর্থ হলো, নির্বাচন প্রক্রিয়ার প্রতি আস্থা হারাচ্ছেন সাধারণ মানুষ।

দেশে যে প্রক্রিয়ায় নির্বাচন ব্যবস্থা চলে তা ভালোভাবে কাজ করছে না বলে মনে করেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম।

সকাল সন্ধ্যাকে তিনি বলেন, “প্রথমত আমাদের জাতীয় নির্বাচনের সময় যে দলগুলো অংশ নেয়নি, তারা স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও অংশ নেয়নি। দেশের বিরোধী দলের ভোট ৩০ শতাংশ আবার সরকার দলেরও ৩০ শতাংশের কাছাকাছি। অথবা ৪-৫ শতাংশের কম বেশি হবে।” 

তার হিসাবে, কোনও দলের সরাসরি সমর্থক নন এমন ভাসমান ভোটারের সংখ্যা ২০ শতাংশ এবং ভোটের সময় বিদেশে, চাকরির জন্য অন্য স্থানে বসবাস এবং মারা গেছেন কিন্তু ভোটার তালিকায় নাম আছে এমন ভোটারের সংখ্যা ২০ শতাংশ।

বিরোধী দল এবং তাদের সমমনা জোটের যে ৩০ শতাংশ ভোটার আছে তারা স্বাভাবিকভাবেই ভোট দিতে যাবেন না বলে মনে করেন রফিকুল ইসলাম।

তার মতে, মূলত ভোট হচ্ছে আওয়ামী লীগ এবং তার জোটসঙ্গী অথবা স্থানীয় কোনও আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে। যার ফলে ভাসমান ভোটারদের ভোট দিতে যাওয়ার বিষয়ে কোনও আগ্রহ নেই।

প্রথম ধাপে ৩৬ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে যে তথ্য নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, তা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেন সাবেক এই নির্বাচন কমিশনার।

তিনি বলেন, “৩০ শতাংশের বেশি হওয়ার কথা না। হয়ত এদিক ওদিক থেকে কেউ ভোট দিয়ে দিয়েছে। যেসব জায়গায় সহিংসতা দেখা দিয়েছে, গাঁটের পয়সা খরচ করে মাথায় শঙ্কা নিয়ে কে যাবেন সেখানে ভোট দিতে?”

নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা ব্রতীর নির্বাহী পরিচালক শারমিন মুরশিদের মতে, বিভিন্ন কারণে মানুষ ভোট বিমুখ হয়েছে, হতাশ হয়েছে, নির্বাচন প্রক্রিয়ার প্রতি আস্থা হারিয়েছে।

ভোটকে প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ করতে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীক দেয়নি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

দলটির এই কৌশল কাজে লেগেছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “নির্বাচন প্রক্রিয়া এতটাই নষ্ট হয়ে গেছে যে এত ছোট কোনও কৌশল কাজ করবে না। এর জন্য বড় বড় উদ্যোগ নিতে হবে।”

আগে বাংলাদেশে দেশে স্থানীয় সরকারের ভোট আনন্দের বিষয় ছিল উল্লেখ করে শারমিন মুরশিদ বলেন, “এখন সেখানে মানুষ ভোট বিমুখ। কারণ নির্বাচন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়নি।”

ভোটের হার বাড়লে খুশি হবে না হলে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীরের এই বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করলেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার।

তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “নির্বাচন কমিশনের চরমভাবে উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত। ভোটার উপস্থিতি নেই, দলগুলো ভোটে আসছে না। কমিশনের প্রতি বা প্রশাসনের প্রতি অনাস্থার কারণে মানুষ ভোটে আসছে না। এটাই হলো মূল সমস্যা।”

কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন বর্তমান কমিশনকে পক্ষপাতদুষ্ট বলে আখ্যা দিলেন সুজন সম্পাদক।

তিনি বলেন, “কোনটা যে তাদের (নির্বাচন কমিশনের) দায়িত্ব সেটাই তারা বুঝতে পারছে না।”

একপক্ষীয় হলে সেটা নির্বাচন হয় না, এমন মন্তব্য করে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, “এটাকে খেলা বলা যায়। নির্বাচন নির্বাচন খেলা। চীন আর রাশিয়ার ভোটের সঙ্গে এ ভোটের পার্থক্য নেই।”

পক্ষপাতদুষ্ট নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া সম্ভব নয় বলেও মত দিলেন তিনি।

তফসিল অনুযায়ী, মঙ্গলবার দ্বিতীয় ধাপে দেশের ১৬১ উপজেলায় ভোট হওয়ার কথা ছিল। তবে তিন উপজেলায় নির্বাচন স্থগিত হওয়ায় এবং দুই উপজেলায় তিনপদে বিনাভোটে নির্বাচিত হওয়ায় এই দফায় ভোট হবে ১৫৬ উপজেলায়।

সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত একটানা চলবে ভোটগ্রহণ।

নয় জেলার ২৪ উপজেলায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করে ভোটগ্রহণ হবে। বাকি ১৩২ উপজেলায় ভোট হবে ব্যালটে।

ভোটে তিন কোটি ৫২ লাখ ৪ হাজার ৭৪৮ জন ভোটার ১৩ হাজার ১১৬ টি ভোটকেন্দ্রে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করার সুযোগ পাবেন।

নির্বাচনে সাধারণ কেন্দ্রে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ১৭ জন সদস্য নিয়োজিত থাকবে। গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে থাকবে ১৮ জন। পার্বত্য এলাকায় এই সংখ্যা হবে ১৯ জন, গুরুত্বপূর্ণ পার্বত্য এলাকায় ২০ জন।

মোট ৪৫৮ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন থাকবে দ্বিতীয় ধাপের ভোটে। পুলিশ স্ট্রাইকিং ফোর্স মিলিয়ে ১ লাখ ৯৩ হাজার ২৮৭ জন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে।

সংসদ নির্বাচনের মতো স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচনও বর্জন করছে বিএনপি। বিএনপি না থাকলেও প্রত্যেক উপজেলায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে লড়ছেন।

নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার ঠেকাতে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের স্বজনদের প্রার্থী না হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে। তবে তা আমলে নেননি অনেকেই। দলীয় সিদ্ধান্ত ভঙ্গ করে বিএনপির অনেকে ভোটে দাড়াঁনোয় তাদের দল থেকে বহিস্কারও করা হয়েছে।

নির্বাচন কমিশন বলছে, ভোটের দিনের আবহাওয়া ও প্রার্থীর জনপ্রিয়তার ওপর ভোটের হার নির্ভর করবে। এই দফায়ও আগের মতোই শান্তিপূর্ণ ভোট হবে বলে প্রত্যাশা নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীরের।

সবশেষ ২০১৯ সালের পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে গড় ভোট পড়ে ৪১ শতাংশের বেশি। এর আগে ২০১৪ সালে চতুর্থ উপজেলায় ভোট পড়ে ৬১ শতাংশ। তৃতীয় উপজেলা ভোটে ২০০৯ সালে ৬৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ ভোট পড়ে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত