Beta
শনিবার, ১৭ মে, ২০২৫
Beta
শনিবার, ১৭ মে, ২০২৫

কী এই ওয়াকিং নিউমোনিয়া যাতে আক্রান্ত হচ্ছে ৫ -১৫ বছর বয়সীরা

Walking Pneumonia
[publishpress_authors_box]

শীত আসি আসি করছে। ঠিক এই সময়টাতেই বেড়ে যায় সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়ার সংক্রমণ। তবে ভিন্ন ধরনের এক নিউমোনিয়া আছে যা কিনা সাধারণত শিশুদেরই আক্রান্ত করে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলে ‘ওয়াকিং নিউমোনিয়া’।

উপসর্গগুলো সাধারণ সর্দি জ্বরের মতোই। কিন্তু পরীক্ষা করালে পাওয়া যাচ্ছে নিউমোনিয়ার জীবাণু। বিশেষজ্ঞরা বলছেন সাধারণ সর্দি-কাশির উপসর্গ নিয়ে বাসা বাঁধা এই নিউমোনিয়া তেমন মারাত্মক নয়। তবে সতর্ক থাকা প্রয়োজন। শীতের আগমনী গান যখন বেজে উঠছে, ঠিক সে সময় এই ধরনের নিউমোনিয়া ছড়িয়ে পড়ছে ।

‘ওয়াকিং নিউমোনিয়া’ স্বরূপ সন্ধানে

‘ওয়াকিং নিউমোনিয়া’ হলো নিউমোনিয়ার একটি মৃদু রূপ। সাধারণ নিউমোনিয়ায় কেউ আক্রান্ত হলে ফুসফুসে সংক্রমণ ঘটে। আক্রান্ত হয় শ্বাসনালী। এতে করে ফুসফুসে শ্লেষ্মা এবং পানি জমে যায়। দেখা যায় কাশি, উচ্চ মাত্রার জ্বরের মতো উপসর্গ। আক্রান্ত ব্যক্তি চলাফেরা করতে তো পারেনই না, উলটো বিছানায় পড়ে পড়েই তার দিন চলে যায়।

কিন্তু ‘ওয়াকিং নিউমোনিয়া’ হলে আক্রান্ত রোগীর গায়ে থাকে হালকা জ্বর, কাশি এবং দুর্বলতা। বিছানায় শুয়ে বসে থাকতে তো হয়-ই না বরং তার দিব্যি চলাফেরার করা যায়।  এর আরেক নাম হলো. ‘অ্যাটিপিকাল নিউমোনিয়া’।

জেনে নেওয়া যাক এই অসুখের উপসর্গগুলো-

  • গলা ব্যথা
  • ক্লান্তি
  • বুকে ব্যথা বা অস্বস্তি
  • মৃদু জ্বর (১০১ ডিগ্রি ফারেনহাইটের আশেপাশে)
  • হালকা ঠান্ডা
  • কাশি
  • হাঁচি
  • মাথাব্যথা

ওয়াকিং নিউমোনিয়ার উপসর্গ, কারণ এবং প্রতিরোধে করণীয় নিয়ে কথা হচ্ছিল স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড: চন্দ্রশেখর বালার সঙ্গে।

সকাল সন্ধ্যাকে তিনি বলেন, “অসুখটার নাম হলো ‘ওয়াকিং নিউমোনিয়া’। অর্থাৎ নামের মধ্যেই কিন্তু ধরনটা উল্লেখ আছে। কারও নিউমোনিয়া হলে সাধারণত কী হয়? সে বাড়িতে কিংবা হাসপাতালের বেডে শুয়ে থাকে। তার পুরোপুরি রেস্ট লাগে। কিন্তু ‘ওয়াকিং নিউমোনিয়া’র ক্ষেত্রে কিন্তু তা নয়। দেখা যায় এই রোগ নিয়েই রোগী চলছে -ফিরছে, বাইরে যাচ্ছে, সবই করছে।”

তিনি বলেন, “এটা খুব মৃদু মাত্রার নিউমোনিয়া। সিভিয়ার (মারাত্মক) না”

লক্ষণ সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে ডা. চন্দ্র শেখর বালা সকাল সন্ধ্যাকে জানান, “লক্ষণগুলো হলো গলা ব্যথা, হালকা জ্বর, বেশ কিছুদিন ধরে কাশি, দুর্বলতা এবং ক্লান্তি। এর সঙ্গে থাকবে ‘কিচ্ছু ভাল্লাগছেনা’ ধরণের অনুভূতি”

এই রোগ কতদিন পর্যন্ত শরীরে বসবাস করতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, তিন থেকে চার সপ্তাহ পর্যন্ত এই রোগ শরীরে থাকে।

ছবি-পেক্সেলস

তবে রোগের উপসর্গের কথা বলতে গিয়ে ডা. চন্দ্রশেখর আরও কিছু বিষয় যোগ করেন। তার মতে শিশুদের ক্ষেত্রে আরও কিছু লক্ষণ থাকে, যেমন- ঘাড়ে ব্যথা, মাথা ব্যথা, ফুশকুড়ি হওয়া, ক্ষুধা মন্দা হওয়া এবং পেটে ব্যথা ইত্যাদি।

চন্দ্রশেখর আরও বলেন, সাধারণত মাইকোপ্লাজমা নিউমোনিয়া নামের একটি ভাইরাসের কারণে এটি হয়। তবে সাধারণ ভাইরাস বা ফাঙ্গাসের কারণেও হতে পারে।

তিনি বলেন, সাধারণত বাচ্চাদেরই এই রোগটিতে আক্রান্ত হতে দেখা যায়।

কত বছর বয়সের মধ্যে এই রোগে আক্রান্ত হবার সুযোগ বেশি থাকে জানতে চাওয়া হলে শেখর জানান, “৫ থেকে ১৫ এর মধ্যে বেশি। তবে সবার হতে পারে।”

কিন্তু এই রোগে আক্রান্ত হলে করণীয় কী?

এমন প্রশ্নের জবাবে সকাল সন্ধ্যাকে চিকিৎসক চন্দ্রশেখর বলেন, “বেশি বেশি পানি, তরল খাবার, ও সুষম খাবার খেতে হবে। এন্টিবায়োটিক না-ও লাগতে পারে। রোগীকে সাধারণত নাপা দেওয়া হয়। খুব প্রয়োজন হলে এন্টি হিস্টামিন দেওয়া হয়। আর এন্টি ব্যাকটেরিয়াল তখনই দেয়া হয় যখন শরীরে ওয়াকিং নিউমোনিয়া ভাইরাসের অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া যায়।”

তিনি বলেন, “প্রশ্ন হতে পারে এটা ছোঁয়াচে কিনা। হ্যাঁ এটা ছোঁয়াচে। হাঁচি, কাশি থেকে এই রোগ ছড়াতে পারে।”

এই রোগ থেকে রক্ষা পেতে হলে কী করতে হবে তা-ও বাতলে দিলেন এই বিশেষজ্ঞ। বললেন, “কোভিড থেকে রক্ষা পেতে আমরা যেসব নিয়ম মেনে চলি সেগুলোই করতে হবে।‌ নিয়মিত হাত ধুতে হবে, বাইরে গেলে মাস্ক পড়তে হবে।”

মেডিসিনের বিশেষজ্ঞ এই চিকিৎসক বলেন, “রেস্পিরেটরি হাইজিন বলে একটা ব্যাপার আছে, সেটা মেনে চলতে হবে। মুখে মাস্ক না থাকলে হাঁচি-কাশির সময় কনুই দিয়ে ঢেকে হাঁচি-কাশি দিতে হবে। টিস্যু থাকলে তো খুব ভালো। আর বাচ্চাদের হ্যান্ড সেনিটাইজার অথবা হ্যান্ড ওয়াশ দিয়ে হাত ধুতে উৎসাহ দিতে হবে। যেখানে অনেক মানুষের জমায়েত সেখান থেকে এই রোগ ছড়ায়। ফলে অনেক মানুষের জমায়েত এড়িয়ে চললে ভালো।”

চিকিৎসক চন্দ্রশেখর এই রোগে বেশি বেশি পানি এবং তরল খাবার খাওয়ার ওপর বিশেষ ভাবে জোর দিয়েছেন। কারণ পানিশূন্যতা যে কোন ধরণের নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুর জন্য মারাত্মক হতে পারে।   

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত