রাজধানীতে পূর্বঘোষিত প্রতিবাদ সমাবেশের জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত আছেন বলে জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের। একইসঙ্গে ভয় না পেয়ে যে যেখানে আছে সেখান থেকে বেরিয়ে আসার জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
শুক্রবার দুপুরে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বনানীর কার্যালয়ে আয়োজিত জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই আহ্বান জানান।
ঢাকার বিজয়নগরে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার হামলা, ভাংচুর ও আগুন দেওয়ার প্রেক্ষাপটে এই জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে দলটি।
অন্যদের মধ্যে জাপার মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু, অতিরিক্ত মহাসচিব রেজাউল করিম, শামীম হায়দার পাটোয়ারী এবং দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও চেয়ারম্যানের স্ত্রী শেরিফা কাদের সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিতি ছিলেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র, শ্রমিক ও জনতা’ ব্যানারে একদল লোক মিছিল নিয়ে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দিয়ে যায়। এ সময় সেখানে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে আগুন দেওয়া হয় জাপার কার্যালয়ে।
পাশাপাশি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ জাতীয় পার্টিকে ‘পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন’ করার হুঁশিয়ারি দেন।
বৃহস্পতিবারের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে জিএম কাদের বলেন, “গতকাল (বৃহস্পতিবার) একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। ছাত্র-জনতার নামে কিছু মানুষ এসে হামলার চেষ্টা করে। কর্মীরা তাদের প্রতিহত করে। পরে রাজু ভাস্কর্য থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নাম করে অগ্নিসংযোগ করা হয়। তারা নাগরিক কমিটির সক্রিয় সদস্য বলে জানা গেছে।”
এই ঘটনার আগেই জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও মহাসচিবসহ দলটির নেতাদের নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের দাবিতে শনিবার রাজধানী ঢাকায় সমাবেশ এবং বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দিয়েছিল দলটি।
যেকোনো ধরনের ঝুঁকি নিয়ে এই প্রতিবাদ সমাবেশের জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত আছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান জাপা চেয়ারম্যান। এ সময় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “আপনারা যে যেখানে আছেন বেরিয়ে পড়ুন, ভয় করবেন না। কত লোক মারতে চায় মারবে, আমরা দেখতে চাই কত লোক মারতে পারে।”
সমাবেশ ও সংগঠন করা অধিকার সাংবিধানিক অধিকার– একথা উল্লেখ করে জিএম কাদের বলেন, “জাতীয় পার্টি একটি নিবন্ধিত দল। আমরা সংগঠন করার অধিকার প্রাপ্ত। কিছু শর্ত রয়েছে, আমরা সমাবেশের অনুমতি চাইলে ডিএমপি কমিশনার অনুমতি দিয়েছে।”
তিনি বলেন, “জাতীয় পার্টি কখনও সন্ত্রাস করে না, আমরা সবসময় শান্তির পক্ষে, আমরা কখনও টেন্ডারবাজি-দখলবাজি করিনি।”
নির্বাচনে যেতে বিগত সরকার চাপ দিত
নির্বাচনে অংশ নিতে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার চাপ প্রয়োগ করত বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠন থেকে হত্যার হুমকি দেওয়া হতো বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
জিএম কাদের বলেন, “সরকার যেমন নির্বাচনে যেতে চাপ দিত, তেমনি অন্যদিক থেকেও জোর করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠন থেকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছিল।”
জাতীয় পার্টির কখনও সন্ত্রাসের আশ্রয় নেয়নি দাবি করে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, “আমরা সবসময় আলাপ-আলোচনা করে চলার চেষ্টা করেছি।”
‘নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেই কেন অপরাধ হবে’
নির্বাচনে অংশগ্রহণ করাকে সাংবিধানিক অধিকার হিসেবে উল্লেখ করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে অপরাধ কেন হবে– সেই প্রশ্নও সংবাদ সম্মেলনে তোলেন জাপা চেয়ারম্যান কাদের।
তিনি বলেন, “নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেই কেন অপরাধ হবে? সাংবিধানিক অধিকার এটা।”
শেষ তিনটি নির্বাচন নিয়ে তথ্য ও ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, “২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে সবাই আওয়ামী লীগকে বৈধতা দিয়েছিল। ২০১৪ ও ’২৪-এর নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে জোর করে নির্বাচন করতে বাধ্য করেছিল।”
বিএনপি ও আওয়ামী লীগের হামলা, মামলা ও দলীয় বিভক্তির রাজনীতির শিকার জাতীয় পার্টি হয়েছে বলেও দাবি করেন জিএম কাদের।
জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে
জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে অভিযোগ করে জিএম কাদের সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “আমরা আওয়ামী লীগের কোনও অপরাধের সঙ্গী ছিলাম না। আমাদের বিরুদ্ধে বড়-ছোট লেভেলে ষড়যন্ত্র চলছে।”
তিনি বলেন, “১৯৯০ সাল থেকে আমাদেরকে শেষ করার যে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছিল, এখনকার জাতীয় পার্টির নিয়ে যা হচ্ছে তা সেই ষড়যন্ত্রের অংশ।
“গত কিছুদিন ধরে একটা ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী জাতীয় পার্টিকে আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদের দোসর বলে নানা অপ্রচার করছে। আমরা শুরুতে ভেবেছিলাম অন্তর্বর্তী সরকার এলে এটা বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু সেটা এখনও চলছে।”
জিএম কাদের বলেন, “আমাদেরকে বলা হয় আওয়ামী লীগের দোসর। ২০০৮ সালে নির্বাচনে আমরা আওয়ামী লীগের সঙ্গে মহাজোট করে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলাম। সেই শেখ হাসিনার সরকারে আমি মন্ত্রী ছিলাম। তাই বলে আমরা শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদ ও অন্যায়ের ভাগীদার হব কেন?
“সেই সরকারের বেসামরিক বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী থাকাকালে হজযাত্রীদের খারাপ বিমানে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে তার প্রতিবাদে আমি পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছিলাম।
“তখন এ নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। সেই তদন্ত প্রতিবেদনে আমি যে সঠিক ছিলাম তা উঠে এসেছিল। যার কারণে আমাকে পদত্যাগ করতে দেয়নি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।”