তখনও টেস্ট অভিষেক হয়নি। ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন ডেভিড ওয়ার্নার। ওই সময় বীরেন্দর শেবাগের সঙ্গে কথা হয় তার। ভারতীয় সাবেক ওপেনার তাকে বলেছিলেন, “টেস্ট ক্রিকেটে মনোযাগী হও। তুমি অনেক দূর যাবে।” শেবাগের পরামর্শ মেনেছেন ওয়ার্নার। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্টেই সেঞ্চুরি। এরপর শুধুই এগিয়ে যাওয়া।
সেই পথটা আজ (শনিবার) শেষ হলো। টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসরে গেলেন ওয়ার্নার। যাওয়ার আগে রেখে গেলেন অনুপ্রেরণামূলক সব ইনিংস। পাঁচ দিনের ক্রিকেটে আক্রমণাত্মক মনোভাবে খেলে গেছেন পুরোটা সময়। বিদায়বেলাতেও রাজার মতোই প্রস্থান তার। ক্যারিয়ারের শেষ ইনিংসে খেলেছেন ৭৫ বলে ৫৭ রানের ইনিংস। ৭ বাউন্ডারিতে সাজানো ইনিংসে বিদায়ের আবেগ-অনুভূতির কোনও ছাপ ছিল না। দেখে আসা খুনে ওয়ার্নারকেই খুঁজে পাওয়া গেল সেখানে।
ওয়ার্নারের শেষটাও হলো জয়ে রাঙানো। সিডনি টেস্ট ৮ উইকেটে জিতেছে অস্ট্রেলিয়া। দ্বিতীয় ইনিংসে পাকিস্তান ১১৫ রানে অলআউট হলে অস্ট্রেলিয়ার টার্গেট ঠিক হয় ১৩০। শুরুতে উসমান খাজা আউট হলেও ওয়ার্নারের চমৎকার ব্যাটিংয়ে সহজেই লক্ষ্য পেরিয়ে যায় স্বাগতিকরা। জয় যখন হাতছোঁয়া দূরত্বে, তখনই ৫৭ রান করে বিদায় নেন ওয়ার্নার। ৬২ রানে অপরাজিত ছিলেন মার্কাস লাবুশেন। এই জয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করল অস্ট্রেলিয়া।
সিডনি টেস্ট জিতে ওয়ার্নারকে বিদায় বলতে চেয়েছিল প্যাট কামিন্সরা। তারা পেরেছেন। বিজয় উৎসবের মাঝে ৩৭ বছর বয়সী ওপেনারের বিদায় রাঙিয়েছেন। ওয়ার্নার নিজেও খুব খুশি। কিন্তু লাল বলের ক্রিকেটকে বিদায় বলতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত আবেগ ধরে রাখতে পারেননি।
পরিবারকে নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ওয়ার্নার বলেছেন, “আমার পরিবারটা দারুণ। তাদের সঙ্গে প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করি। তাদের নিয়ে বেশি কথা বলব না, কারণ আবেগতাড়িত হয়ে পড়ব। তবে ক্যানডিস (ওয়ার্নারের স্ত্রী) আমরা জন্য যা করেছে, সেটির জন্য তাকে ধন্যবাদ। তুমিই আমার পৃথিবী।”
আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে সবসময় ক্রিকেটপ্রেমীদের বিনোদন দিয়েছেন ওয়ার্নার। তার কাছে এটিই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি, “রোমাঞ্চকর ও বিনোদন দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আমার মনে হয় যেভাবে খেলেছি, তাতে মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে পেরেছি। আশা করি তরুণরাও আমাকে অনুসরণ করবে।”
তরুণদের উদ্দেশ্যে তার পরামর্শ, “সাদা বল থেকে টেস্ট ক্রিকেট- এটাই আমাদের খেলার শীর্ষ জায়গা। এ কারণে কঠোর পরিশ্রম করো এবং লাল বলের ক্রিকেট খেলো। কারণ, এটাও মজার।”
টেস্টের সঙ্গে ওয়ানডে ক্রিকেট থেকেও অবসর নিয়েছেন ওয়ার্নার। তবে আন্তর্জাতিক ও ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি চালিয়ে যাবেন তিনি। টেস্ট ক্রিকেটে ১১২ ম্যাচে ৪৪.৫৯ গড়ে ওয়ার্নারের রান ৮ হাজার ৭৮৬। ২৬ সেঞ্চুরি ও ৩৭ হাফসেঞ্চুরিতে সাজানো ক্যারিয়ারে সর্বোচ্চ ইনিংস হার না মানা ৩৩৫ রানের।