Beta
শনিবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৫
Beta
শনিবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৫

সিলেট-সুনামগঞ্জে নামছে পানি, হবিগঞ্জ-মৌলভীবাজারে বন্যার বিস্তৃতি  

সিলেট অঞ্চলের অনেক এলাকা থেকে নামতে শুরু করেছে বন্যার পানি। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
সিলেট অঞ্চলের অনেক এলাকা থেকে নামতে শুরু করেছে বন্যার পানি। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
[publishpress_authors_box]

সিলেট ও সুনামগঞ্জে কমতে শুরু করেছে নদ-নদীর পানি। নতুন করে বৃষ্টি না হওয়ায় বন্যা পরিস্থিতিরও কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারে বন্যার বিস্তৃতি ঘটেছে।

সুরমা, কুশিয়ারাসহ প্রতিটি নদীর পানি কমলেও বিভিন্ন এলাকায় নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। দুর্গত  এলাকায় দেখা দিয়েছে নানা ধরনের পানিবাহিত রোগ। সিলেট জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিশুদ্ধ পানির জন্য চালু করা হয়েছে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট। 

সিলেট শহরের উঁচু এলাকাগুলো থেকে পানি নেমে গেলেও সিটি করপোরেশনের ৪২টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৩টি এখনও বন্যা কবলিত। যেখানে পানিবন্দি অবস্থায় বাস করছেন অন্তত ৩০ হাজার মানুষ।

সিলেট

পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের তথ্য অনুযায়ী, শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ২৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। যা শুক্রবার ছিল ৫২ সেন্টিমিটার। একই নদীর পানি সিলেট পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, যা গতকাল একই সময়ে বইছিল বিপৎসীমার ৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে।

কুশিয়ারা নদীর পানি ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে  বিপৎসীমার ১০১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, যা আগের দিন একই সময়ে বিপৎসীমার ১০৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছিল।

জকিগঞ্জের অমলসিদে পয়েন্টে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমার ১৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, যা গতকাল বইছিল ৩৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে। বিয়ানীবাজারের শেওলায় কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমার ৬৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে যা গতকাল ছিল  বিপৎসীমার ৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে।    

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে শনিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত সিলেটে বৃষ্টি হয়েছে ২ মিলিমিটার। আগের ২৪ ঘণ্টায় যা ছিল ২০ মিলিমিটার।

শনিবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পরিমাপ করা যায় এমন বৃষ্টি হয়নি বলে জানান সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মোহাম্মদ সজীব হোসাইন।

নগরের বন্যাকবলিত ২৩টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১০টি ওয়ার্ড থেকে বন্যার পানি নেমে গেছে। তবে এখনও নগরের ১৩টি ওয়ার্ডের ৫৭ টি আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন ৭ হাজার ৭০০ জন মানুষ। নগর এলাকায় বন্যা আক্রান্ত জনসংখ্যা ৩০ হাজার।

বিকালে সিলেট নগরের বৈটাখাল ছড়া পরিদর্শন করেন সিটি করপোরেশনের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন সাবেক মেয়র ও বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরী।

আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, “নগরের ভেতর ২৩টি ছড়া আছে। ১৯৫৬ সালের ম্যাপ ধরে নগরের সব ছড়া উদ্ধার ও খনন করব। সাবেক মেয়র কোথায় কোথায় প্রতিবদ্ধকতার সম্মুখীন হয়েছেন সেগুলো আমাকে জানিয়েছেন। সে অনুযায়ী কাজ করব।”

বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর শুরু হয়েছে পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর শুরু হয়েছে পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান। ছবি : সকাল সন্ধ্যা

নগরীর অধিকাংশ এলাকা থেকে বন্যার পানি নেমে যাওয়ায় এখন পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালাচ্ছে সিটি করপোরেশন। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোয় রান্না করা খাবার, বিশুদ্ধ পানি, খাবার স্যালাইন ও ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে।

সিলেটের ১৩ উপজেলার বেশিরভাগ ইউনিয়নই বন্যা কবলিত হয়েছিল। সবচেয়ে বেশি আক্রান্তের সংখ্যা ওসমানীনগর উপজেলায়। এই উপজেলায় বন্যা আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ৮৫ হাজার। আশ্রয়কেন্দ্রেও সবচেয়ে বেশি এই  উপজেলার মানুষ। ৪৫ টি আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন ২ হাজার ৭৪১ জন।

জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, জেলার ১৩ উপজেলার ১ হাজার ৫৭০টি গ্রামে বন্যায় আক্রান্ত জনসংখ্যা ৯ লাখ ৩৪ হাজার ৪৬৫ জন। সিলেট নগরে ৫৭টিসহ মোট ৩৬২টি আশ্রয়কেন্দ্রে বর্তমানে রয়েছেন ২২ হাজার ৬২৩ জন। যা গতকালের রাতেও ছিল ২৫ হাজার ১৫৫ জন।

জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “গত দুই দিনে প্রায় ছয় হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে নিজের বাড়িতে ফিরে গেছেন। প্রতিটি উপজেলাতেই বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তবে আশ্রয়কেন্দ্র ও বাড়িতে পানিবন্দি দুর্গতদের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ অব্যাহত রয়েছে।”

সুনামগঞ্জ

সুনামগঞ্জেও বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। সুরমা নদীর পানি সুনামগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ১২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শহরের নদী তীরবর্তী এলাকা থেকেও পানি নামতে শুরু করেছে।

বেশির ভাগ এলাকা থেকে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। স্বাভাবিকভাবেই বেড়েছে পানিবাহিত রোগের পরিমাণ।

জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, সুনামগঞ্জের ১২টি উপজেলার মধ্যে ১১টি উপজেলা বন্যা কবলিত হয়েছে। জেলার ১ হাজার ৩০২ টি গ্রামে বন্যা আক্রান্তের সংখ্যা ৭ লাখ ৯২ হাজার ৭৫৭ জন। শুক্রবার আশ্রয়কেন্দ্রে ছিলেন ২২ হাজার ৬৩৭ জন। শনিবার ৫৭৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন ২০ হাজার ১২৬ জন।

বন্যা দুর্গত মানুষের হাতে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে ত্রাণসহ নানা সহায়তা। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
বন্যা দুর্গত মানুষের হাতে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে ত্রাণসহ নানা সহায়তা। ছবি : সকাল সন্ধ্যা

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ রেজাউল করিম সকাল সন্ধ্যাকে জানান, অভ্যন্তরীন নদীগুলোর পানি কমে জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। মানুষ আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে বাড়ি ফিরছে।

তবে দুর্গত এলাকায় মেডিকেল টিমের চিকিৎসা সেবা এবং ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রয়েছে।

মৌলভীবাজার

মৌলভীবাজারে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ায় বন্যা আক্রান্ত ও আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। জেলার জুড়ি, বড়লেখা কুলাউড়া, রাজনগর, মৌলভীবাজার সদর, কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল উপজেলার ৪৯ টি ইউনিয়নের ৫৬২ টি গ্রাম প্লাবিত অবস্থায় আছে।

জেলা প্রশাসন থেকে পাওয়া সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি কুলাউড়া উপজেলার ১১৬টি গ্রামে ১ লাখ ৪ হাজার মানুষ বন্যায় আক্রান্ত। সবচেয়ে বেশি আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছে বড়লেখা উপজেলার মানুষ। এই উপজেলার ৩৩টি আশ্রয়কেন্দ্রে ২ হাজার ২০৪ জন মানুষ রয়েছেন।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. আব্দুস সালাম চৌধুরী জানান, জেলার কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল ছাড়া পাঁচটি উপজেলায় ১০ হাজার ৪৯৫ জন আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। এসব কেন্দ্রে প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনো খাবার ও রান্না করা খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। বন্যা উপদ্রুত এলাকায় মেডিকেল টিমের সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে।  

হবিগঞ্জ

হবিগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির বিস্তৃতি ঘটেছে। জেলার ৯ উপজেলার মধ্যে ছয়টি উপজেলার ১৩ ইউনিয়নে বন্যা দেখা দিয়েছে। কুশিয়ারা নদীর পানি তিনটি পয়েন্টে বিপৎসীমার উপর  দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।  সবচেয়ে বেশি নবীগঞ্জ উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের প্রায় ২০ গ্রামের মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছেন।

নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনুপম দাস অনুপ সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, উপজেলার ৮টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৩০০ পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন। এরই মধ্যে বন্যার্তদের মধ্যে ১৭ মেট্রিকটন চাল বিতরণ করা হয়েছে। কিছু শুকনো খাবারও পাঠিয়েছে জেলা প্রশাসন, সেগুলোও বিতরণ করা হয়েছে।

জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, নবীগঞ্জ ও বাহুবল উপজেলায় ৬৭৫টি পরিবার পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে। দুই উপজেলায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা ২ হাজার ৭৮৫ জন।

হবিগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক প্রভাংশু সোম মহান সকাল সন্ধ্যাকে জানিয়েছেন, এরই মধ্যে ৫১০ মেট্রিকটন চাল, ২ হাজার ৩০০ প্যাকেট শুকনো খাবার উপজেলাগুলোয় উপবরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত