সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসা শিক্ষার্থীরা তাদের আন্দোলন থেকে সরে আসছে না বলে জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম।
মঙ্গলবার বিকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা জানান।
সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে সরকার কোটার বিষয়ে প্রজ্ঞাপন দিয়েছে মন্তব্য করে নাহিদ বলেন, “এই প্রজ্ঞাপনের সাথেই কিন্তু এবার আমাদের আন্দোলনটি সম্পৃক্ত নয়। আমরা কিন্তু আন্দোলন থেকে সরে আসছি না।”
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে সংঘাত-সহিংসতায় প্রাণহানির ঘটনাগুলোর বিচার না হওয়া পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চলবে বলেও জানান তিনি।
সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহাল করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় রবিবার বাতিল করে দেয় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ থেকে সহিংসতায় শতাধিক মানুষের মৃত্যুর পর কারফিউ জারি করে সেনা মোতায়েনের মধ্যে রবিবার সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটির দিনে আপিল বিভাগ শুনানি নিয়ে এই আদেশ দেয়।
সর্বোচ্চ আদালত হাইকোর্টের রায় বাতিলের পাশাপাশি কোটার অনুপাত ঠিক করে দিয়ে তার আলোকে অতি দ্রুত প্রজ্ঞাপন জারি করতে সরকারকে নির্দেশ দেয়।
তাতে সরকারি চাকরিতে নিয়োগে ৯৩ শতাংশ পদ মেধার ভিত্তিতে বরাদ্দ রাখতে বলা হয়েছে। বাকি ৭ শতাংশের মধ্যে ৫ শতাংশ কোটা মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য, ১ শতাংশ অনগ্রসর নৃগোষ্ঠীর জন্য এবং ১ শতাংশ কোটা প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য রাখতে বলা হয়েছে।
তবে এই নির্দেশনা ও আদেশ সত্ত্বেও সরকার প্রয়োজনে নির্ধারিত কোটা বাতিল, সংশোধন বা সংস্কার করতে পারবে বলেও বলা হয়েছে আদালতের রায়ে ।
রায়ের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সরকার মঙ্গলবার আদালতের নির্দেশনা অনুসরণ করে সরকারি চাকরিতে নিয়োগে কোটার নতুন অনুপাত রেখে প্রজ্ঞাপন জারি করে।
প্রজ্ঞাপন জারির পর মঙ্গলবার আয়োজিত সংবাদ সম্মলেন নাহিদ বলেন, “মহামান্য আদালত শিক্ষার্থীদের পক্ষে রায় দিয়েছে, সে অনুযায়ী সরকার প্রজ্ঞাপন দিয়েছে। কিন্তু সরকার এই প্রজ্ঞাপন দিতে যত রক্ত মাড়িয়েছে, যত লাশ পড়েছে, সেটা অনাকাঙ্ক্ষিত। এর জবাব আমরা চাচ্ছি।”
তিনি বলেন, “প্রজ্ঞাপনের আগে শিক্ষার্থী এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের সাথে নীতিনির্ধারণী সংলাপ প্রয়োজন ছিল। এ ধরনের সংলাপ ছাড়া প্রজ্ঞাপনকে আমরা চূড়ান্ত সমাধান হিসেবে গ্রহণ করব না।”
যথাযথ সংলাপের পরিবেশ তৈরি করে এবং সকল স্টেকহোল্ডারদের সমন্বয়ে একটি নীতিনির্ধারণী সংলাপের দাবি জানিয়ে নাহিদ বলেন, “কোটা নিয়ে যাতে ভবিষ্যতে কোনও সমস্যা না হয় সেজন্য আমরা একটি স্বাধীন কমিশন গঠন করার আহ্বান জানাচ্ছি।”
শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলবে জানিয়ে তিনি বলেন, “যারা জনগণ আমাদের সাথে জড়িয়েছে, তাদের বক্তব্য, তাদের দাবি-দাওয়া, তাদের যে হতাহত– তার সুষ্পষ্ট সমাধান এবং বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন কিন্তু অব্যাহত থাকবে।”