নির্বাচনসংক্রান্ত যেসব বিধি-বিধান আছে, তা পর্যালোচনা ও মূল্যায়ন করে করণীয় কী—সে বিষয়ে সুপারিশ দেবে সংস্কার কমিশন। পাশাপাশি যেসব প্রতিষ্ঠান নির্বাচনের সঙ্গে যুক্ত, যেগুলো কীভাবে কর্যকর করা যায়, সে বিষয়েও সুপারিশ তুলে ধরবে তারা।
বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার সাংবাদিকদের এসব কথা জানান।
কমিশনের আনুষ্ঠানিকভাবে করা দ্বিতীয় এই বৈঠকে ৮ সদস্যের মধ্যে ৭ জন উপস্থিত ছিলেন। বাকি একজন ছাত্র প্রতিনিধি কে হবেন, তা এখনও নির্ধারণ হয়নি বলে জানানো হয়।
সংবাদসম্মেলনে বদিউল আলম মজুমদার কমিশনের সদস্যদের পরিচয় করিয়ে দেন। প্রত্যেক সদস্যদের পূর্বের কাজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে সবার প্রশংসা করেন তিনি।
বদিউল আলম মজুমদার সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, “এখন থেকে আমরা কিন্তু শ্রোতা। আপনাদের কথাই শুনব। আপনাদের থেকে তথ্য পাব। নতুন নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হবে। আমরা কথা কম বলব, শুনব বেশি। এটাই হবে আমাদের ভূমিকা।
“আমরা এভাবে ব্রিফিং করতে অভ্যস্ত নই। আমরা খোলামেলা কথা বলি। … (এতদিন) আমরা টেবিলের অন্যদিকে ছিলাম। আমরা বক্তা ছিলাম, আপনারা শ্রোতা ছিলেন। আমরা মূলত যে কাজগুলো করার চেষ্টা করব। আপনাদের থেকে শুনব। আপনাদের অভিজ্ঞতা নেব। আমরা এই অভিজ্ঞতা থেকে উপকৃত হতে চাই। নির্বাচন কমিশনের সদস্য আছেন, তাদের সহায়তা নেব।”
নির্বাচনের সঙ্গে সংবিধান যুক্ত- জানিয়ে কমিশন প্রধান বলেন, “অনেকগুলো আইন যুক্ত আছে। বিধি-বিধান যুক্ত আছে। সংবিধানে যে সকল নির্বাচন সংক্রান্ত বিধি-বিধান আছে, সেগুলো পর্যালোচনা করব। পর্যালোচনা করে বিধি-বিধান, কী করণীয়—সেটা নিয়ে আমরা সুপারিশ করব।
“জাতীয় নির্বাচন-সংক্রান্ত সবচেয়ে বড় আইন আরপিও (গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ)। অনেকগুলো আইন বিধি-পর্যালোচনা করব। প্রত্যেক বাক্য আমরা পর্যালোচনা করব। মূল্যায়ন করার চেষ্টা করব। ওখানে কোনও পরিবর্তন-পরির্বধন দরকার কি না?”
কিছু প্রতিষ্ঠান নির্বাচনের সঙ্গে যুক্ত জানিয়ে তিনি বলেন, “প্রতিষ্ঠানগুলোকে কীভাবে কার্যকর করা যায়—সে ব্যাপারে চেষ্টা করব। আমাদের আপনাদের অভিজ্ঞা নিয়ে সুপারিশ করার চেষ্টা করব।”
নির্বাচনের বিদ্যমান পরিস্থিতির প্রসঙ্গ টেনে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, “এসব বিষয় নিয়ে পর্যালোচনা করে এ সম্পর্কে সুপারিশ দেওয়ার চেষ্টা করব। বড় ইস্যু প্রবাসীদের ভোটের অধিকার আর অধিকারহীনতা; কী করা যায়—এ বিষয়গুলো খতিয়ে দেখব।”
নির্বাচনে নারীর অংশায়নের বিষয়ে তিনি বলেন, “জাতীয় নির্বাচনে যে সংরক্ষিত আসন আছে। স্থানীয় সরকারে যে সংরক্ষিত আসন- এগুলো নিয়ে পর্যালোচনা করব।”
অতীতের নির্বাচনগুলো খতিয়ে দেখার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন বদিউল আলম মজুমদার।
তিনি বলেন, “আমরা সেখান থেকে শিক্ষা গ্রহণ করব। আমরা পাশ্ববর্তী দেশের কিছু অভিজ্ঞাতা কাজে লাগানোর চেষ্টা করব। সর্বোপরি সকল অংশীজনের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করব। তারপর প্রতিবেদন তৈরি করে জমা দেব।
“এগুলো আমরা প্রাথমিকভাবে চিন্তা করেছি। আজকে (বুধবার) আমাদের আনুষ্ঠানিকভাবে দ্বিতীয় বৈঠক। আমরা অনানুষ্ঠানিকভাবে আরও দুইটি বৈঠক করেছি। কারণ, এই কমিশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের বারবার করে স্মরণ করে দেওয়া হচ্ছে- এই কমিশনের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে।”
নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বলেন, “এই কমিশনের কাজের ওপর নির্ভর করে পরবর্তী নির্বাচনী রোডম্যাপ তৈরি এবং নির্বাচনের দিনক্ষণ নির্ধারণ করা। এটা আমাদের জন্য পবিত্র দায়িত্ব- দেশের জন্য একটা নির্বাচনব্যবস্থাকে পর্যালোচনা করে এটা একটা শক্ত ভিত্তির ওপর দাড় করিয়ে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথ প্রশস্ত করা। এটা আমাদের দায়িত্ব।
“এই দায়িত্ব সততার সঙ্গে, নিষ্ঠার সাথে আন্তরিকতার সাথে, আমরা যাতে শহীদ রক্তের ঋণ শোধ করতে পারি—সে লক্ষ্যে আমরা সর্বশক্তি নিয়োগ করব।”
সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “চটকদার ভাইরাল হওয়া- ওটার শিকার না হয়ে তথ্য দিয়ে আলো ছড়ানোর চেষ্টা করি। আমাদের সহায়তা করার জন্য অনুরোধ করব।’’
নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের জন্য সমতল মাঠ করার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, “আমরা সবকিছুর মৌলিক পরিবর্তনের কথা বলেছি। আইন-কানুন, বিধি-বিধান সবকিছু পর্যালোচনা করব, বিবেচনা করব; যাতে সহায়তা হয় সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনা করার জন্য। অতীতে যা ঘটেছে, অতীত। আমরা নতুন করে শুরু করতে চাই।”
রাজনৈতিক দল সুশীল সমাজের সঙ্গে আলাদা আলাদা সংলাপ করবেন কি না—জানতে চাইলে কমিশনের সদস্য অধ্যাপক তোফায়েল আহেমেদ সাংবাদিকদের বলেন, “বিশেষ করে আপনাদের সঙ্গে আলাদা করে বসব। আমাদের জন্য সংলাপের চেয়ে ডকুমেন্ট করা আমদের কাজ। ডায়লাগ সরকারই করবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে।
“আমার তো নির্বাচন কমিশন না। নির্বাচন কমিশনকে সরকার কীভাবে চায় বা করতে পারে- সেই মতামতটা দেব। পলিটিক্যাল পার্টিগুলোর সঙ্গে বড় ধরনের সংলাপ করতে পারব বলে মনে হয় না; সময় সবকিছু মিলিয়ে।”