Beta
মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
Beta
মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

পশ্চিমবঙ্গের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মারা গেছেন

পশ্চিমবঙ্গের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। ছবি: আনন্দবাজার পত্রিকা।
পশ্চিমবঙ্গের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। ছবি: আনন্দবাজার পত্রিকা।
Picture of সকাল সন্ধ্যা ডেস্ক

সকাল সন্ধ্যা ডেস্ক

ভারতের বর্ষীয়ান বাম নেতা ও পশ্চিমবঙ্গের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মারা গেছেন।

পশ্চিমবঙ্গে ৩৪ বছরের বামফ্রন্ট শাসনের দ্বিতীয় ও শেষ মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেবের বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। ২০০০ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত টানা ১১ বছর তিনি রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন।

বৃহস্পতিবার সকালে বুদ্ধদেবের মৃত্যুর খবর জানান তার সন্তান সুচেতন ভট্টাচার্য। তিনি আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, আজ সকালে নাশতা করার পরই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। সকাল ৮টা ২০ মিনিটে পাম অ্যাভিনিউয়ের বাড়িতেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। খবর পেয়ে সুচেতন সেখানে পৌঁছেছেন।

আনন্দবাজার জানিয়েছে, বুধবার রাতে বুদ্ধদেবের শ্বাসকষ্ট চরমে উঠেছিল। কিন্তু সেটা রাতে সামাল দেওয়া হয়েছিল। তখনই ঠিক করা হয়েছিল, বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা নাগাদ উডল্যান্ডসের চিকিৎসকরা এসে তাকে পরীক্ষা করবেন। প্রয়োজনে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হবে, যদিও তিনি হাসপাতালে যেতে চান না।

তাই চিকিৎসকদের পরামর্শের কথা ভাবা হয়েছিল, সেই মতোই বিষয়টি এগোচ্ছিল। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন বুদ্ধদেব। সকালে উঠে নাশতার পর চা-ও খেয়েছিলেন। তারপর আবার অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাকে নেবুলাইজ়ার দেওয়ার চেষ্টা হয়।

সেই সময়ই তিনি হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হন। চিকিৎসকদের খবর দেওয়া হয় দ্রুত। তারা এসে বুদ্ধদেবকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

বুদ্ধদেব তার পূর্বসূরি জ্যোতি বসুর মতোই মরণোত্তর দেহদান করে গেছেন। সেই প্রক্রিয়া কোথায় ও কীভাবে সম্পন্ন হবে, তা নিয়ে আলাপ-আলোচনা শুরু করেছেন সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব। বুদ্ধদেবকে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর বিষয়টি নিয়েও তারা আলোচনায় বসবেন।

বুদ্ধদেব পলিটব্যুরোর সদস্য ছিলেন। ফলে তার দলের দিল্লির নেতাদেরও তার শেষযাত্রায় একটা ভূমিকা থাকবে। আপাতত পাম অ্যাভিনিউয়ের দুই কামরার ফ্ল্যাটেই তার মরদেহ রাখা আছে।

গত বছরের ৯ অগস্ট হাসপাতাল থেকে বিপদমুক্ত হয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন বুদ্ধদেব। গত ২৯ জুলাই আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে ভর্তি করানো হয়েছিল দক্ষিণ কলকাতার আলিপুরের এক বেসরকারি হাসপাতালে। বেশ কয়েক দিন তাকে ভেন্টিলেশন (ইনভেনসিভ) সাপোর্টে রাখেন চিকিৎসকরা।

বুদ্ধদেব নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ছিলেন। তার ফুসফুস ও শ্বাসনালিতে মারাত্মক সংক্রমণ ধরা পড়ে। হাসপাতালে প্রথম কয়েক দিন মূলত অজ্ঞান অবস্থাতেই ছিলেন তিনি। তবে ক্রমশ তিনি চিকিৎসায় সাড়া দেন। ১২ দিনের মাথায় ছেড়ে দেওয়া হয় তাকে। বাড়িতে ফিরিয়েও অবশ্য কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে রাখা হয়েছিল তাকে।

দীর্ঘ দিন ধরেই গুরুতর শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় (সিওপিডি) ভুগছিলেন বুদ্ধদেব। অসুস্থতার কারণে শেষ কয়েক বছর কার্যত গৃহবন্দিই ছিলেন। আগেও একাধিকবার হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয় তাকে। ২০২০ সালের ডিসেম্বরেও প্রবল শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। সেই সময়ও কয়েক দিন ভেন্টিলেশনে রাখতে হয় তাকে। সেখান থেকে বিপদমুক্ত হয়ে বাড়ি ফেরেন।

এরপর ২০২১ সালের মে মাসের মাঝামাঝি তিনি কোভিডে আক্রান্ত হন। অবস্থার অবনতি হওয়ায় ১৮ মে ভর্তি করানো হয় হাসপাতালে। একই সময় কোভিডে আক্রান্ত হয়েছিলেন তার স্ত্রী মীরা ভট্টাচার্যও। একই হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় মীরাকে। দুজনই কোভিড নেগেটিভ হয়ে ফেরেন কিছু দিনের মধ্যে।

২০২২ সালের ২৫ জানুয়ারি বুদ্ধদেব সংবাদের শিরোনামে আসেন পদ্মভূষণ প্রত্যাখ্যান করে। কেন্দ্রীয় সরকার তার নাম মনোনীত করলেও তিনি এই রাষ্ট্রীয় সম্মান নিতে অস্বীকার করেন।

বুদ্ধদেবের ১১ বছরের শাসনকালের শেষ পাঁচ বছর বাংলার রাজনীতিতে চলছিল নানা দিক থেকেই এক সরগরম পর্ব। এই রাজনৈতিক উত্তাপের গোটাটাই ছিল তার শিল্পায়ন-নীতিকে ঘিরে। যে শিল্পায়নকে বুদ্ধদেব বাজি ধরেছিলেন, সেই শিল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণের পদ্ধতিই বুদ্ধদেবের পায়ের তলার জমি সরিয়ে দিয়েছিল।

২০০৬ সালে ২৩৫ আসনে জিতে ক্ষমতায় ফেরা এই মুখ্যমন্ত্রীকে পাঁচ বছর পরই শোচনীয় পরাজয়ের মুখে পড়তে হয়। ২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গে অবসান হয় সাড়ে ৩৪ বছরের একটানা বাম শাসনের।

২০১১ সালের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস রাজ্যটির বাম-শাসনের অবসান ঘটিয়ে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সঙ্গে যৌথভাবে ২২৭টি আসনে জয়লাভ করে (এককভাবে ১৮৪টি আসনে) সরকার গঠন করে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত