ঝাড়খণ্ড, বিহার, ওড়িশাসহ অন্য রাজ্যগুলোতে আলু রপ্তানি করতে না দেওয়ায় ফের ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের আলু ব্যবসায়ীরা।
তারা বলছেন, আলু রপ্তানি ঘিরে জটিলতা না কাটলে সোমবার রাত থেকে তারা ফের ধর্মঘটে নামবেন। এতে পরদিন থেকে আলুর দাম বাড়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এর আগে গত আগস্টে একই কারণে আলু ব্যবসায়ীদের ধর্মঘটের জেরে বাজারে আলুর সংকট দেখা দিলে দাম বেড়ে যায় আলুর।
এ বছর আলুর দাম বেশ চড়া দেখছে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ। সেখানকার বাজারে এখন কেজি প্রতি আলুর দাম ৩৫ রুপি। নিত্য প্রয়োজনীয় এই পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে সম্প্রতি অন্য রাজ্যে আলু রপ্তানিতে কড়াকড়ি করে রাজ্য সরকার।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে সচিবালয় নবান্নে রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলু ব্যবসায়ীদের বৈঠকও হয় বলে আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
বৈঠকের পর সরকার ও ব্যবসায়ী দু’পক্ষই আলুর দাম কমাতে উদ্যোগী হয়। তাতে বাইরের রাজ্যে আলু পাঠানোর ক্ষেত্রে কড়াকড়ি কিছুটা শিথিলও হয়। তবে সম্প্রতি আবার নতুন করে কড়াকড়ি চালু হয়েছে বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের।
এ পরিস্থিতিতে শনিবার হুগলির তারকেশ্বরে আলু ব্যবসায়ী সমিতি ভবনে হিমঘর মালিকদের সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক শেষে সোমবার থেকে রাজ্যজুড়ে ধর্মঘটের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।
হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, হিমঘর থেকে বের হলেও রপ্তানি করতে না পারায় আলু পচে যেতে পারে এই আশঙ্কায় রাজ্য সরকারকে সেগুলো কিনে নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন আলু ব্যবসায়ীরা। কিন্তু তাতে সাড়া দেয়নি রাজ্য সরকার।
ধর্মঘটের বিষয়ে প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক লালু মুখোপাধ্যায় আনন্দবাজারকে বলেন, “রাজ্যের কৃষি বিপণনমন্ত্রী বেচারাম মান্নার নির্দেশে কেজি প্রতি ২৬ রুপি দরে কলকাতাসহ সংলগ্ন বাজারগুলোতে আলু সরবরাহের ফলে ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছিল আলুর দর।
“কিন্তু তারপরও গত ৩/৪ দিন ধরে ঝাড়খণ্ড, বিহার, ওড়িশা, ছত্তিশগড় ও আসাম সীমান্তে আলুর ট্রাক আটকে দিচ্ছে রাজ্যের পুলিশ। আলুবাহী ট্রাকের চালকদের বিরুদ্ধে মামলাও করা হচ্ছে।
“এ অবস্থায় আমরা ব্যবসা করতে পারছি না। হিমঘর থেকে আলু নামিয়ে তা বাজারে বিক্রি করতে পারছি না। এরই প্রতিবাদে আমরা বাধ্য হয়ে সোমবার রাত থেকে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছি। আশা করছি, রাজ্য সরকার আমাদের অবস্থা বিবেচনা করে সোমবারের আগেই পদক্ষেপ নেবে।’’
বাংলাদেশেও চড়া আলুর দাম
দেশের বাজারেও গত এক বছরে আলুর দাম বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। ঢাকার বাজারগুলোতে খুচরায় আলু কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৭০-৭৫ টাকায়।
এর কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, চলতি বছর আলুর ফলন কিছুটা কম। এ কারণে মৌসুমের শুরু থেকেই আলুর দাম কিছুটা বাড়তি।
এমন পরিস্থিতিতে গত রবিবার থেকে দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আলু রপ্তানির স্লট বুকিং নেওয়া বন্ধ করে দেয় পশ্চিমবঙ্গ সরকার।
হিলি বন্দর সূত্রে জানা যায়, গত রবিবার দুপুর থেকেই আলুর পাশাপাশি পেঁয়াজ রপ্তানির স্লট বুকিং বন্ধ করে দেয় পশ্চিমবঙ্গ সরকার। পশ্চিমবঙ্গে উৎপাদিত আলু ও পেঁয়াজ বিদেশে রপ্তানির ফলে বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় এ সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য সরকার।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তরকে না জানিয়ে সেখান থেকে অন্য রাজ্যে এবং বাংলাদেশে আলু ও পেঁয়াজ রপ্তানি করা হচ্ছিল। ফলে সেখানে আলুসহ পেঁয়াজের দাম হু হু করে বাড়ছে। এমন অভিযোগ তুলে ধরে গত ২১ নভেম্বর সংবাদ সম্মেলন করে আলু ও পেঁয়াজ রপ্তানি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সেই বার্তার পরই ২২ নভেম্বর নবান্নে বৈঠকে বসে টাস্কফোর্স কমিটি। মুখ্য সচিবের সঙ্গে টাস্কফোর্সের এই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় মুখ্যমন্ত্রীর পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত ভিন্ন রাজ্যসহ বাংলাদেশে আপাতত আলু ও পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ থাকবে।