হঠাৎ করেই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতির পদ থেকে অপসারণ করা হয়েছে ফারুক আহমেদকে। কিন্তু তাকে সরানোর পেছনে কোনও দুর্নীতি বা আর্থিক অনিয়মের বিষয়গুলো বড় করে দেখেনি সরকার। বরং তাকে সরানো হয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে তার পারফরম্যান্সের অবনতি দেখে।
পল্টন শহীদ ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী জাতীয় হ্যান্ডবল স্টেডিয়ামে শনিবার হয়েছে ৩৫তম জাতীয় পুরুষ হ্যান্ডবল প্রতিযোগিতার ফাইনাল। এই ফাইনাল শেষে ফারুক আহমেদের অপসারণ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এমনটাই বলেন। তিনি বলেন, “প্রথমত এটা যেভাবে যাচ্ছে এটা কোনো শাস্তি বা এরকম কিছু না। আমরা দেখেছি বিগত ৯ মাসে বিসিবিতে নতুন নেতৃত্ব আসার পর ক্রিকেটে যে প্রত্যাশা ছিল আমাদের, সেই অনুযায়ী ক্রিকেটের উন্নয়ন আমরা দেখিনি। এই সরকার আসার পর পাকিস্তানের সঙ্গে ঐতিহাসিক টেস্ট সিরিজ জিতে এল বাংলাদেশ। তার পর থেকে আমরা ক্রমাবনতি দেখছি। খুবই দুঃখজনক যে নতুন নেতৃত্ব এসেছিল আমি দশ জনের সঙ্গে কথা বলে মনে করেছি, সবাই যার কথা বলেছেন উনি ভালো চালাতে পারবেন। তাদেরকেই বোর্ডের বাকি সদস্যরা নির্বাচিত করেছিলেন। কিন্তু বিগত সময়ে আমাদের যে অভিজ্ঞতা হয়েছে বিপিএল থেকে শুরু করে সর্বোপরি বাংলাদেশের ক্রিকেটের অবস্থা ভালো নয়। আমাদেরকে তো বিচার করতে হবে পারফরম্যান্স দিয়ে। সেই পারফরম্যান্সটা আশানুরুপ না।”
এরপর তিনি বাফুফের উদাহরণ দিয়ে বলেন, “আপনারা দেখেছেন কোনো একটি স্পোর্টসের ডেভলপমেন্টের পথে যেতে বেশি সময় লাগে না। যেটা আসলে করেছে বাফুফে। ইতোমধ্যে বাফুফের নতুন নেতৃত্ব তা প্রমান করেছে। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় প্রতিটি স্পোর্টসকে সহযোগিতা করে আসছে তার সাধ্যমতো। সেটাকে বাফুফে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পেরেছে। আপনারা দেখছেন ফুটবলে নতুন উন্মাদনা এবং আশার সঞ্চার তৈরি করতে পেরেছে বাফুফে। সেখানে ক্রিকেটের অবস্থা দিনে দিনে আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। আমরা মনে করি বা বলি ক্রিকেট আমাদের প্রধান খেলা। সেই জায়গা থেকে বিগত সময়ের পারফরম্যান্স এবং বিপিএলের যে সত্যানুসন্ধান কমিটি ছিল আমাদের তাদের রিপোর্টে আমরা দেখেছি যে বিপিএলে আমাদের অনেকগুলো অনিয়ম এবং দ্বায়িত্ব অবহেলার কারণে বিপিএলে যে ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে সেগুলোতে ফারুক ভাইয়ের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে।”
ফারুক আহমেদের সঙ্গে বাকি পরিচালকেরা কাজ করতে চান না বলে তিনি জানান, “ এর বাইরেও বিসিবির নয় পরিচালকের মধ্যে আটজনই একটা অনাস্থা প্রস্তাব আমাদের এনএসসিকে পাঠিয়েছে। এখানে কোনো টিম হয়নি আসলে। ক্রিকেটে যেমন এগারজন মাঠে খেললে টিম হয়, বিসিবিতেও টিমের প্রয়োজনীয়তা আছে। বিসিবিতে ফ্যাসিবাদের সময় যারা ছিলেন তারা ৫ আগস্টের পরপরই পালিয়ে গিয়েছেন। তারপরে বাকি যারা ৮-৯ জন পরিচালক আছেন, তারা কেউই আসলে উনার (ফারুক) সঙ্গে কাজ করতে স্বাচ্ছ্যন্দবোধ করছেন না। এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের ক্রিকেটের ক্রমাবনতির এটার পিছনে বড় কারণ। এর সঙ্গে বাংলাদেশ ক্রিকেটের বর্তমান পরিস্থিতি এবং বিপিএল সংক্রান্ত সত্যানুসন্ধান কমিটির যে রিপোর্ট সবকিছু মিলিয়ে আমাদেরকে একটা সিদ্ধান্তে আসতে হয়েছে। এবং ফারুক ভাইয়ের সঙ্গে আমি ব্যক্তিগতভাবে কথা বলেছি। এটা এমন না যে কোনো দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেছে বা এ কারণে তাকে আমরা সরিয়েছি। এটা একেবারে পারফরম্যান্স ভিত্তিক।”