Beta
বুধবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
বুধবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০২৫

স্মারকলিপিতে কী বার্তা দিল বিএনপি

2
[publishpress_authors_box]

বাংলাদেশে জনপরিসরে ভারতবিরোধী দল হিসাবে দেখা হয় বিএনপিকে। আওয়ামী লীগকে গত ১৫ বছর ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার জন্য ভারতকে দায়ী করে খোলাখুলি বক্তব্যই আসছিল বিএনপি নেতাদের মুখ থেকে। কিন্তু ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর ভারত বিরোধিতায় বিএনপি দৃশ্যত পেছনে পড়ে গেছে।

গত অগাস্টে ক্ষমতা নেওয়া ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক টানাপড়েনের মধ্যে জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছে। অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা ভারতের বিরুদ্ধে সরব।

তার মধ্যেই বিএনপির সহযোগী তিনটি সংগঠন রবিবার ঢাকায় ভারতীয় হাই কমিশন অভিমুখে পদযাত্রা করে স্মারকলিপি দিয়ে এল। বিএনপি সরাসরি কর্মসূচি না দিলেও সহযোগী সংগঠনগুলোর এই কর্মসূচির শুরুর সমাবেশে বক্তব্য দিয়েছেন দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

নয়া পল্টন থেকে তাদের মিছিল পুলিশ অনেক আগে আটকে দিলেও দুপুর সোয়া ১টায় ভারতীয় হাই কমিশনে গিয়ে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের ৬ জন প্রতিনিধি তাদের স্মারকলিপি জমা দিয়ে আসেন।

ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলায় বাংলাদেশ মিশনে হামলা, জাতীয় পতাকার অবমাননা এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির অপচেষ্টার প্রতিবাদে সংগঠন তিনটি এই স্মারকলিপি দেয়।

স্মারকলিপিতে যা ছিল 

স্মারকলিপির শুরুতেই অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য ভারতের সমালোচনা করা হয়।

এতে বলা হয়, “দুনিয়া কাঁপানো ছাত্র-জনতার অভাবনীয় তুমুল আন্দোলনে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা আপনার দেশে পালিয়ে যাওয়ার পর আপনারা তাকে আশ্রয় দিয়েছেন। অতঃপর আপনার দেশের অতি উগ্রবাদী নেতৃবৃন্দ এবং বিশেষ করে কতিপয় সংবাদমাধ্যম ও মিডিয়া বাংলাদেশের এই গণশত্রু হাসিনা ওয়াজেদকে পুনরায় পুনর্বাসন এবং বাংলাদেশের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ অস্থিতিশীল করবার নিমিত্তে একের পর এক অজ্ঞ-অর্বাচীনের ন্যায় কাজ করে যাচ্ছে।

“যাতে স্পষ্টত প্রতীয়মান হয়, আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র ভারতের বন্ধুত্ব ছিল হাসিনার সাথে, বাংলাদেশের জনগণের সাথে নয়। হাসিনা এখন বাংলাদেশের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার বিরুদ্ধে হুমকি হয়ে উঠেছে। একদিকে তিনি বাংলাদেশের ভিন্ন দলমতের মানুষদের ঘরবাড়ি সম্পত্তি জ্বালিয়ে দেওয়ার হুকুম দিচ্ছেন। অপরদিকে যারা তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে তাদেরকে হত্যা করার হুমকি দিচ্ছেন। ভারতের নিরাপদে আশ্রয়ে থেকে বাংলাদেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার এই অপচেষ্টা বাংলাদেশের জনগণ ইতিবাচকভাবে নিচ্ছে না।”

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত আগস্ট থেকেই ঢাকা-দিল্লি সম্পর্কে টানাপড়েন চলছে। গত মাসে হিন্দু ধর্মীয় নেতা চিন্ময় ব্রহ্মাচারী গ্রেপ্তার হওয়ার পর উত্তেজনা বাড়ে।

চিন্ময়ের মুক্তি দাবিতে ত্রিপুরায় হিন্দু সংগঠনের বিক্ষোভ থেকে বাংলাদেশের সহকারী হাই কমিশনে হামলার পর দুই দেশেই পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি চলছে।

আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে হামলার সময় তখন ভারতের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নীরব দর্শকের ভূমিকার সমালোচনাও করা হয় স্মারকলিপিতে।

“প্রাপ্ত বিবরণগুলো চূড়ান্তভাবে প্রমাণ করে যে, পূর্বপরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের প্রধান ফটক ভেঙে বিক্ষোভকারীদের প্রাঙ্গণে আক্রমণ করার সম্মতি দেওয়া হয়েছিল। এই প্রক্রিয়ায়, স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের উপস্থিতিতে, তারা জাতীয় পতাকার খুঁটি ভাংচুর করে, বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অবমাননা করে এবং সহকারী হাইকমিশনের অভ্যন্তরে সম্পত্তিরও ক্ষতি করে। দুঃখজনকভাবে, প্রাঙ্গণ রক্ষার দায়িত্বে থাকা স্থানীয় পুলিশ সদস্যদের শুরু থেকেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় না থাকতে দেখা গেছে। এটি কূটনৈতিক নিয়ম এবং আন্তর্জাতিক আইনের একটি গুরুতর লঙ্ঘন। একই সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের ভিয়েনা কনভেনশন, ১৯৬১ এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এমন ন্যাক্কারজনক বিস্ময়কর ঘটনাসমূহের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলেও আপনার সরকারের নীরবতায় বাংলাদেশের জনগণ হতাশ।”

ভারতের সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর নিয়ে স্মারকলিপিতে বলা হয়, “আমরা পরস্পরের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি গভীরভাবে শ্রদ্ধাশীল। আমাদের দুই দেশের সম্পর্কের ভিত্তি হবে সমতা, পরস্পরের প্রতি আস্থা, বিশ্বাস এবং সম্মান প্রদর্শনের ওপর। সার্বভৌম কোনও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের শামিল। ভারতের সাম্প্রতিক ঘটনা প্রবাহ বাংলাদেশের জনগণের প্রতি অবজ্ঞাস্বরূপ বলে আমরা চাই ভারত সরকার ভারতীয় মিডিয়া আউটলেটগুলোকে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে এবং বস্তুনিষ্ঠ সংবাদের মাধ্যমে ভারতীয় সংবিধানের ৫৫ অনুচ্ছেদে বর্ণিত আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার আদর্শ প্রচার করতে পরামর্শ দেবে। আমরা আশা করি, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার, অপতথ্য বন্ধ করতে ভারতীয় সরকার কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।”

দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য দেশগুলোর মধ্যে একটি স্থিতিশীল সম্পর্ক থাকার ওপর বিএনপিও জোর দিচ্ছে জানিয়ে স্মারকলিপিতে বলা হয়, “বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল জাতিসংঘের সনদের নীতির উপর ভিত্তি করে ‘সকল সদস্যের সার্বভৌম সমতার’ ভিত্তিতে আমাদের দুই দেশের মধ্যে শক্তিশালী ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের পক্ষ থেকে এই স্মারকলিপির মাধ্যমে আপনাকে অবগত করছি এবং অনুরোধ জানাচ্ছি যে, জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের অবস্থান ও মতামত ভারতীয় সরকারের নিকট পৌঁছে দেওয়ার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।”

‘ষড়যন্ত্র রুখে দেব’

স্মারকলিপি দেওয়ার পরে বিএনপির সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতারা বলেছেন, তারা কোনও অশান্তি চান না। তবে যে কোনও ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দেবেন তারা।

নয়া পল্টন থেকে তাদের এই পদযাত্রা শুরু হয়। তবে রামপুরা সেতুর কাছে তাদের আটকে দেয় পুলিশ। এরপর সংগঠন তিনটির ছয়জন প্রতিনিধি গুলশানে গিয়ে ভারতীয় হাই কমিশনে স্মারকলিপিটি জম দিয়ে আসে।

প্রতিনিধি দলে ছিলেন- যুবদলের সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম নয়ন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী ও সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দীন নাসির।

স্মারকলিপি দেওয়ার পরে যুবদলের সভাপতি মুন্না সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা ভারতীয় হাইকমিশনে স্মারকলিপি দিয়েছি। আমরা কোনও প্রকার অশান্তিতে বিশ্বাসী না। বাংলাদেশের মুসলমানরা শান্তিপ্রিয়। তারা অত্যন্ত ধৈর্যশীল। আমাদের কোনও প্রভু নেই। আমাদের বন্ধু আছে। আমরা আগ্রাসীতে বিশ্বাসী নই।”

যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নয়ন বলেন, “বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যে কোনও ষড়যন্ত্র আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দেব।”

ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির বলেন, “ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর শান্তিরক্ষা মিশন বিষয়ে জ্ঞান না থাকলেও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়েছেন। যা বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি ও বরখেলাপ বলে আমরা মনে করি। বাংলাদেশের জনগণের কথা যুবদলের, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের কথা আমাদের শান্তিপূর্ণ অবস্থানের কথা আমরা জানিয়ে দিয়েছি।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত