Beta
শনিবার, ১২ জুলাই, ২০২৫
Beta
শনিবার, ১২ জুলাই, ২০২৫

গুজরাটে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার কারণ কি পাখি

দুই শতাধিক আরোহী নিয়ে গুজরাট বিমানবন্দর থেকে ওড়ার পরপরই বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে এয়ার ইন্ডিয়ার উড়োজাহাজটি।
দুই শতাধিক আরোহী নিয়ে গুজরাট বিমানবন্দর থেকে ওড়ার পরপরই বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে এয়ার ইন্ডিয়ার উড়োজাহাজটি।
[publishpress_authors_box]

বোয়িং খানিকটা বিপাকে আছে তাদের ৭৩৭ মডেলের উড়োজাহাজগুলো নিয়ে। ভেঙে পড়াসহ নানা ‍দুর্ঘটনায় ক্রেতাদের অভিযোগ নিয়ে ঝঞ্ঝাটেই রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিটি।

কিন্তু ১৪ বছর আগে আনা ৭৮৭ মডেলের ড্রিমলাইনার নিয়ে কোনও সমস্যা পোহাতে হচ্ছিল না বোয়িংকে। এটি কোনও দুর্ঘটনা ঘটনায়নি, ক্রেতাদের কোনও অভিযোগও ছিল না।  

কিন্তু এয়ার ইন্ডিয়ার কেনা এই মডেলের একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়ে ঝামেলায় ফেলে দিল কোম্পানিটিকে। খবরটি চাউর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের পুঁজিবাজারে বোয়িংয়ের শেয়ারে ধস নেমেছে।

বৃহস্পতিবার দুপুর ১টা ৩৯ মিনিটে গুজরাটের আহমেদাবাদের সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ে থেকে টেক অফ অর্থাৎ উড্ডয়নের কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে এআই১৭১ ফ্লাইটটির সঙ্গে কন্ট্রোল টাওয়ারের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

তার পরপরই এটি বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে। বিমান চলাচল পর্যবেক্ষণকারী ওয়েবসাইট ফ্লাইটরাডার২৪ এর তথ্য বলছে, ভেঙে পড়ার সময় বিমানটি মাটি থেকে ৬২৫ ফুট উচ্চতায় ছিল।

এটি দ্রুত গতিতে নিচের দিকে নেমে এসে বিমানবন্দরের সঙ্গে মেঘানিনগরে জনবসতিতে ভেঙে পড়ে, যেখানে রয়েছে চিকিৎসকদের একটি হোস্টেল।

এই ফ্লাইটটি গুজরাট থেকে যুক্তরাজ্যে যাচ্ছিল। লন্ডনের গ্যাটউইক বিমানবন্দরগামী ফ্লাইটটিতে মোট আরোহী ছিলেন ২৪২ জন। তার মধ্যে ১৬৯ জন ভারতীয়, ৫৩ জন ব্রিটিশ, একজন কানাডীয় ও সাতজন পর্তুগিজ।

এই ড্রিমলাইনারের ককপিটে যারা ছিলেন, তারা সবাই অভিজ্ঞ বৈমানিক। ১০ হাজার ঘণ্টা উড্ডয়নের অভিজ্ঞতা রয়েছে তাদের।

অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের হাতে থাকা আধুনিক এই উড়োজাহাজটি কেন দুর্ঘটনায় পড়ল, তা কৌতূহলের জন্ম দিয়েছে বিমান সংশ্লিষ্টদের মনে।

ভারতের বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এআই-১৭১ ফ্লাইটে প্রধান পাইলট ছিলেন ক্যাপ্টেন সুমিত সাভারওয়াল। তার রয়েছে ৮ হাজার ২০০ ঘণ্টার উড্ডয়ন অভিজ্ঞতা।

ককপিটে সুমিতের সঙ্গে ছিলেন ফার্স্ট অফিসার ক্লিভ কুন্দর। তার সঙ্গে ১ হাজার ১০০ ঘণ্টার উড্ডয়ন অভিজ্ঞতা।

ফলে তাদের সামর্থ্য কিংবা অভিজ্ঞতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই।

তবে কি যান্ত্রিক কোনও ত্রুটি?

উড্ডয়নের সঙ্গে সঙ্গে ককপিট থেকে ‘মে ডে’ কল এসেছিল বলে সংবাদমাধ্যমে খবর এসেছে। বিমান সংশ্লিষ্টদের কাছে এটি পরিচিত একটি শব্দ। ফরাসি ভাষায় যার মানে- ‘সাহায্য চাই’। বিমানের পাইলট যখন কোনও দুর্বিপাকে পড়েন, তখন কন্ট্রোল টাওয়ারে রেডিও সঙ্কেত পাঠান ‘মে ডে’ শব্দে।

কোনও এক সমস্যায় পড়েছিলেন ক্যাপ্টেন সুমিতসহ তার সহকর্মীরা, যে কারণে তাদের ‘মে ডে’ কল পাঠাতে হয়েছিল, বলছেন বিমান চলাচল বিশেষজ্ঞ জুরিয়ান ব্রে।

তিনি যুক্তরাজ্যে স্কাই নিউজকে বলেন, “আমার মনে হয়, পাইলট যখন মে ডে কল পাঠালেন, তার মানে কোনও কিছুতে সমস্যা পেয়েছিলেন তিনি।”

ভারতের ডিরক্টরেট জেনারেল অব সিভিল এভিয়েশন-ডিজিসিএ- জানিয়েছে, “ফ্লাইট এআই১৭১ থেেক মে ডে কল পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল যোগাযোগ করেছিল, কিন্তু ওই দিন থেকে কোনও সাড়া পাওা যায়নি।”

কী সমস্যা দেখা দিয়েছিল, সে বিষয়টি নিশ্চিত জন্য কয়েক ঘণ্টা সময় বেশ কম; যদিও এরই মধ্যে নানা গুঞ্জনের আনাগোনা শুরু হয়েছে সোশাল মিডিয়ায়।

বিমানটির টেকঅফ দেখে ফ্লাইটরাডার২৪ এতে যান্ত্রিক কোনও ত্রুটির আভাস দেখতে না পাওয়ার কথাই জানিয়েছে। এর উড্ডয়ন স্বাভাবিকই দেখা গেছে। আর আবহাওয়াও প্রতিকূলে ছিল, তেমনটা বলার সুযোগ নেই।

তাহলে কী নিয়ে সমস্যায় পড়েছিলেন পাইলটরা?

হতে পারে পাখি, বলছেন ভারতের অভিজ্ঞ পাইলট সৌরভ ভাটনগর। এই বিমান দুর্ঘটনা নিয়ে নিজের ধারণার কথা এনডিটিভিকে জানিয়েছেন তিনি।

ক্যাপ্টেন সৌরভ বলেন, “অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, একাধিক পাখির ধাক্কার ঘটনা ঘটেছে। যার ফলে বিমানটির দুটি ইঞ্জিনই অকার্যকর হয় পড়ে।”

এআই১৭১ এর টেক অফ বা উড্ডয়ন নিখুঁতই মনে হয়েছে অভিজ্ঞ পাইলট সৌরভের কাছে।

তিনি বলেন, “আমার মনে হয়, গিয়ার তোলার ঠিক আগে বিমানটি নিচে নামতে শুরু করে, যা কেবল ইঞ্জিন শক্তি হারালে বা বিমান ওপরে ওঠার শক্তি হারালে ঘটতে পারে।”

“ভিডিও দেখে মনে হচ্ছে উড্ডয়ন নির্বিঘ্ন ছিল। পাইলট মে ডে কল করেছিলেন, যার অর্থ এটি একটি বিপদের পরিস্থিতি হয়েছিল। এখন তদন্তেই তা জানা যাবে।”

বিমান চলাচল বিশেষজ্ঞ সঞ্জয় লাজারও এই বিষয়ে একমত পোষণ করেন ক্যাপ্টেন সৌরভের সঙ্গে।

তিনি এনডিটিভিকে বলেন, “কেন বিমানটি ওপরে ওঠার শক্তি হারিয়েছিল, তার এটাই (পাখির সঙ্গে সংঘর্ষ) সম্ভাব্য কারণ হতে পারে।”

বিমানবন্দর লাগোয়া জনবসতি ঘিরে পাখির বিচরণ থাকার বিষয়টিও তুলে ধরেন তিনি।

পাখি এর আগেও বিশ্বে বহু বিমান দুর্ঘটনার কারণ হয়ে ছিল।

“আমাদের মনে রাখতে হবে এটি তুলনামূলকভাবে নতুন একটি বিমান, মাত্র ১১ বছর বয়সী। এমনটা নয় যে এতে প্রযুক্তিগত সমস্যা ছিল,” বলেন সঞ্জয়।

যুক্তরাষ্ট্রের বোয়িং কোম্পানি থেকে ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে এই ড্রিমলাইনারটি কিনেছিল ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত বিমান সংস্থা এয়ার ইন্ডিয়া। নির্মাণের পর ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে এটি সর্বপ্রথম আকাশে ওড়ে।

বোয়িং থেকে আরও উড়োজাহাজও কিনছে ভারত। শুধু ভারতই নয়, বাংলাদেশের জাতীয় পতাকাবাহী বিমান সংস্থা বাংলাদেশ বিমানের বহরের বেশিরভাগই পূরণ করেছে বোয়িং।

বিশ্বের আকাশে উড়তে থাকা ৭৮৭ ড্রিমলাইনারগুলোর মধ্যে ভারতেই প্রথমটি দুর্ঘটনায় পড়ল। আর এর পরপরই বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের পুঁজিবাজারে বোয়িংয়ের শেয়ার দর ৮ শতাংশ কমে যায়।

বোয়িং এক বিবৃতিতে বলেছে, কেন এই দুর্ঘটনা ঘটল, তার কারণ অনুসন্ধান করে দেখছে তারা।

তথ্যসূত্র: এনডিটিভি, স্কাইনিউজ, রয়টার্স

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত