মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) পরোয়ানায় নিজ দেশে গ্রেপ্তার হলেন ফিলিপিন্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তে।
‘এশিয়ার ট্রাম্প’ হিসাবে পরিচিত দুতার্তে ২০১৬ সাল থেকে পাঁচ বছর দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশটির প্রেসিডেন্ট ছিলেন। সেই সময়ে এবং তারও আগে একটি শহরের মেয়র থাকাকালে মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা দিয়ে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে নেমেছিলেন তিনি।
প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব ছাড়ার তিন বছর বাদে মঙ্গলবার হংকং থেকে ফিলিপিন্সে ফেরার পরপরই তাকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে।
ফিলিপিন্স সরকার জানিয়েছে, মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আইসিসির পরোয়ানা থাকায় দুতার্তেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
দেশটির প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়রের সরকার ৭৯ বছর বয়সী দুতার্তেকে আইসিসির কাছে হস্তান্তর করতে পারে বলে রয়টার্স জানিয়েছে।
প্রেসিডেন্ট মার্কোস জুনিয়রের দপ্তর এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, পুলিশের আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারপোলের ম্যানিলা শাখায় মঙ্গলবার সকালেই আইসিসির গ্রেপ্তারি পরোয়ানার অনুলিপি আসে। সেই পরোয়ানাই তামিল করা হয়েছে।
“তিনি (দুতার্তে) দেশে পৌঁছনোর আগেই সেই পরোয়ানার ভিত্তিতে প্রসিকিউটার জেনারেল গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।”
দুতার্তে সরকারের হেফাজতে থাকলেও তাকে কোথায় রাখা হয়েছে, সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।
এদিকে দুতার্তেকে গ্রেপ্তারের সময়ের একটি ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছেন তার মেয়ে ভেরোনিকা দুতার্তে। সেখানে দেখা যায়, দুতার্তে তাকে গ্রেপ্তারের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন।
“এখানে আইন কোথায়? আমার কী অপরাধ?” বলছিলেন দুতার্তে।

২০১৬-২০২২ সাল পর্যন্ত ফিলিপিন্সের প্রেসিডেন্ট থাকাকালে এবং তারও আগে দাভাও শহরের মেয়র থাকার সময় মাদকবিরোধী যুদ্ধের নামে ছয় হাজারের বেশি মানুষকে হত্যার অভিযোগ রয়েছে দুতার্তের বিরুদ্ধে। এই কর্মকাণ্ডের জন্য তিনি কখনও ক্ষমা চাননি।
২০১৬ সালে দুতার্তের মাদকবিরোধী অভিযানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলে আইসিসি। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক এই আদালত তদন্তেও নামে।
এর প্রতিক্রিয়ায় ২০১৯ সালে আইসিসি থেকে ফিলিপিন্সের সদস্যপদ প্রত্যাহার করে নেন দুতার্তে।
মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় সম্প্রতি দুতার্তের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির সময় আইসিসির পক্ষ থেকে বলা হয়, ফিলিপিন্স আইসিসি থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে ২০১৯ সালে। আর মাদকবিরোধী অভিযানে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড তার আগেই ঘটে। সেই হিসেবে আন্তর্জাতিক এই আদালতের ওই সময়কার হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের বিচার করার এখতিয়ার আছে।
আইসিসি এখতিয়ারের দাবি করলেও তা মানতে নারাজ প্রেসিডেন্ট থাকাকালে দুতার্তের একসময়ের মুখপাত্র সালভাদর পানেলো।
তিনি সাবেক প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা এবং এর জেরে তাকে গ্রেপ্তার করাকে ‘বেআইনি’ বলছেন।
পানেলোর প্রশ্ন, ২০১৯ সাল থেকে ফিলিপিন্স আইসিসির সদস্যদেশ নয়। সেক্ষেত্রে তারা দুতার্তের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করতে পারে কি না?
এদিকে সাবেক প্রেসিডেন্টের গ্রেপ্তারের ঘটনায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন ফিলিপিন্সের মানবাধিকার কর্মীরা, যারা দীর্ঘদিন ধরে দুতার্তের মাদকবিরোধী অভিযানের সমালোচনা করে আসছিলেন। ওই অভিযানে হাজার হাজার মানুষকে হত্যার নিন্দাও জানিয়ে আসছিলেন তারা।
ফিলিপিন্সের মানবাধিকার সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল কোয়ালিশন ফর হিউম্যান রাইটস ইন দ্য ফিলিপিন্স (আইসিএইচআরপি) এক বিবৃতিতে বলেছে, দুতার্তের মাদকবিরোধী যুদ্ধে প্রাণ হারানো নিরপরাধ মানুষ ও তাদের স্বজনদের কাছে তার গ্রেপ্তার একটি ‘ঐতিহাসিক মুহূর্ত’।
আইসিএইচআরপির চেয়ারপারসন পিটার মারফি বলেন, “নৈতিক বিশ্বের পথ দীর্ঘ, কিন্তু আজ তা ন্যায়ের দিকে বাঁক নিয়েছে। দুতার্তের গ্রেপ্তার তার নিষ্ঠুর শাসনামলে সংঘটিত গণহত্যার ঘটনার জবাবদিহিতার শুরু।”



