বন্ধু ট্রাম্পের শুল্ক থাবা থেকে রক্ষায় পায়নি মোদীর ভারত। বন্ধুত্বের পরোয়া না করেই অন্য সব দেশের সঙ্গে ভারতের ওপরও শুল্ক বসিয়েছিলেন। এরপরই তড়িঘড়ি করে ভারতের উদ্যোগে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুরু হয় বাণিজ্য আলোচনা।
আর সেই আলোচনার সূত্র ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভান্সের ভারত সফর। এরই মধ্যে ভান্স ও মোদীর মধ্যে দিল্লিতে সাক্ষাৎ হয়েছে। তবে তাদের মধ্যে কোন কোন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, এর কোনও আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
দুই নেতার আলোচনার পরই এক ঘোষণায় বলা হয়, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ফলপ্রসু আলোচনা হয়েছে। বাণিজ্যিক আলোচনা অবশ্য হয়েছে দুই দেশের বাণিজ্য প্রতিনিধিদের মধ্যে।
ভান্স বর্তমানে তার স্ত্রী ও তিন সন্তানকে নিয়ে চার দিনের সফরে ভারতে আছেন।
সোমবার রাতে সাক্ষাতের পর প্রধানমন্ত্রী মোদী সোশাল মিডিয়া এক্সে লেখেন, “আমরা পারস্পরিকভাবে লাভজনক সহযোগিতার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এর মধ্যে বাণিজ্য, প্রযুক্তি, প্রতিরক্ষা, জ্বালানি এবং মানুষে-মানুষে বিনিময় রয়েছে।”
মোদী ভ্যান্স ও তার পরিবারকে নিজ বাসভবনে নৈশভোজেও আপ্যায়ন করেন।
ভারত ছাড়াও আরও কিছু দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা করছে। এই আলোচনা চলছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষিত ৯০ দিনের উচ্চ শুল্ক বিরতির সময়কালে। এই বিরতি শেষ হবে ৯ জুলাই।
এই বিরতি ঘোষণার আগে ভারতের জন্য ২৭ শতাংশ শুল্ক নির্ধারণ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। সেই থেকে দিল্লি ও ওয়াশিংটন দ্রুত চুক্তির লক্ষ্য অর্জনে একসঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী মোদী ও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মধ্যে ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিগত সম্পর্ক রয়েছে। ট্রাম্প দ্বিতীয় দফায় দায়িত্ব গ্রহণের পর মোদী প্রথম কয়েকজন বৈশ্বিক নেতার মধ্যে ছিলেন যিনি তাকে দেখতে গিয়েছিলেন।
তবে ট্রাম্প বহুবার ভারতের উচ্চ শুল্কের সমালোচনা করেছেন। তিনি ভারতকে “ট্যারিফ কিং” ও বাণিজ্য সম্পর্কে “বড় ধরনের অপব্যবহারকারী” বলে আখ্যা দিয়েছেন।
সোমবারের সাক্ষাতের পর যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমিসন গ্রিয়ার এক বিবৃতিতে বলেন, “ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্কে পারস্পরিকতা খুবই কম।”
ভারত গত কয়েক মাসে বেশ কিছু পণ্যে শুল্ক কমিয়েছে। ট্রাম্পকে শান্ত রাখতে আরও বড় পরিসরে শুল্ক কমানোর বিষয়টিও বিবেচনায় রেখেছে বলে জানা গেছে। তবে কৃষি খাত একটি জটিল বিষয় হয়ে আছে। যুক্তরাষ্ট্র এই খাতে আরও প্রবেশাধিকার চায়। কিন্তু ভারত এটিকে জোরালোভাবে সুরক্ষা দিয়ে যাচ্ছে।
বাণিজ্য ছাড়াও দুই নেতা প্রতিরক্ষা, কৌশলগত প্রযুক্তি ও জ্বালানি খাতে সহযোগিতা নিয়েও আলোচনা করেন বলে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর জানিয়েছে।
নরেন্দ্র মোদী আরও বলেন, তিনি এ বছর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ভারতে স্বাগত জানানোর অপেক্ষায় রয়েছেন। চলতি বছরের শেষ দিকে দিল্লিতে কোয়াড সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সেখানে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অংশগ্রহণের সম্ভাবনা রয়েছে।
দুই নেতার মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর প্রতিনিধি পর্যায়ের আলোচনা হয়। পরে প্রধানমন্ত্রী মোদী ভান্স ও তার পরিবারকে নৈশভোজে আপ্যায়ন করেন।
ভাইস-প্রেসিডেন্ট ভান্স সোমবার ভারতে পৌঁছান। তার সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী উষা ভান্স এবং তাদের তিন সন্তান। উষার পিতা-মাতা ভারতের অন্ধ্র প্রদেশ রাজ্য থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন করেন। বিভিন্ন গণমাধ্যম জানিয়েছে, ভান্স ও তার স্ত্রী তাদের সন্তানদের ভারতীয় শিকড়ের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে আগ্রহী।
ভারতে আসার সময় ভান্স দম্পতির তিন সন্তানকে ভারতীয় পোশাকে দেখা যায়। দুই ছেলে পরেছিল কুর্তা-পায়জামা এবং তিন বছর বয়সী মিরাবেল পরেছিল লেহেঙ্গা। এই ছবি ভারতীয় সংবাদপত্র ও ওয়েবসাইটে বেশ গুরুত্বসহকারে প্রকাশিত হয়।
ভান্সের সফরের বাকি অংশ মূলত ব্যক্তিগত। মোদীর সঙ্গে সাক্ষাতের পর তারা পরিবার নিয়ে জয়পুরে যান। মঙ্গলবার তারা ঐতিহাসিক আমের দুর্গ পরিদর্শন করেন। ভান্স সেখানে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক নিয়ে একটি বক্তৃতা দেওয়ারও কথা রয়েছে। বুধবার তারা আগ্রার ঐতিহাসিক তাজমহল দর্শন করবেন। এর পরদিন যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যাবেন।
বিবিসি বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্টদের মতো বিনীত রাজনীতিক নন ভান্স। ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে তাকে।
হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের পাশে বসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে ছবক শেখানো কিংবা যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে বাক স্বাধীনতা নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছিলেন ভান্স।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ভান্সের এমন তৎপরতা রিপাবলিকানরা যেমন পছন্দ করছেন, তেমনি ট্রাম্পেরও ভালো লাগছে। এ কারণেই কেউ কেউ তাকে ট্রাম্পের উত্তরসূরি হিসেবে দেখছেন।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাবিষয়ক প্যারিস সম্মেলনে ভাইস প্রেসিডেন্ট ভান্সের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। এই বৈঠকটিকে আন্তরিক করে তুলতে ভান্সের দুই ছেলে ও এক মেয়ের জন্য উপহার নিয়ে গিয়েছিলেন মোদী।
তথ্যসূত্র : বিবিসি।