Beta
বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০২৫

বাইডেন-শি শেষ বৈঠকে কী নিয়ে আলাপ হলো

পেরুর রাজধানী লিমায় এপেক সম্মেলনের ফাঁকে বৈঠক করে জো বাইডেন (বাঁয়ে) ও শি জিনপিং।
পেরুর রাজধানী লিমায় এপেক সম্মেলনের ফাঁকে বৈঠক করে জো বাইডেন (বাঁয়ে) ও শি জিনপিং।
[publishpress_authors_box]

যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে শেষবারের মতো বৈঠক করেছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। শনিবার পেরুতে এশিয়া-প্যাসিফিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা (এপেক) সম্মেলনের ফাঁকে বাইডেনের সঙ্গে বৈঠককালে শি যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ ব্যক্ত করেন।

বিবিসি জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট থাকাকালে দেশটির সঙ্গে চীনের সম্পর্কের ‘ওঠানামা’র বিষয়টি বৈঠকে দুই নেতাই স্বীকার করেন। একইসঙ্গে তারা দুইজনেই বাণিজ্য ও তাইওয়ানের মতো ইস্যুগুলোতে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে অগ্রগতি হওয়ার বিষয়টিও তুলে ধরেন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, দুই মাস পর ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় ফিরলে দেশটির সঙ্গে চীনের সম্পর্কের অবনতি হতে পারে। এক্ষেত্রে একাধিক কারণের একটি হচ্ছে– চীনা পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক বাড়ানোর বিষয়ে ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি।

নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট তার নির্বাচনী প্রচারের সময় চীন থেকে আমদানি করা সব পণ্যের ওপর ৬০ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এছাড়া তিনি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা দপ্তরের শীর্ষ পদগুলোর জন্য যাদের নাম ঘোষণা করেছেন, তারা চীন-বিরোধী হিসেবে পরিচিত।

প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম মেয়াদে ট্রাম্প চীনকে ‘কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বী’ বলে উল্লেখ করেছিলেন। কোভিড মহামারি চলাকালে ট্রাম্প কোভিডকে ‘চীনা ভাইরাস’ বলে অভিহিত করার পর দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের আরও অবনতি হয়।

শনিবার পেরুর রাজধানী লিমার একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত বৈঠকে চীনা প্রেসিডেন্ট বলেন, ওয়াশিংটনের সঙ্গে একটি স্থিতিশীল সম্পর্ক গড়ার যে লক্ষ্য বেইজিংয়ের রয়েছে, তাতে কোনও পরিবর্তিন আসবে না।

“যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখা, সহযোগিতা বাড়ানো এবং মতপার্থক্য কমিয়ে আনার লক্ষ্যে কাজ করতে চীন প্রস্তুত,” শি বলেন।

বৈঠকে বাইডেন বলেন, দুই বৈশ্বিক শক্তির মধ্যে কৌশলগত প্রতিযোগিতা যুদ্ধে রূপ নেওয়া উচিত নয়।

“আমাদের দুই দেশ এই প্রতিযোগিতাকে সংঘাতে পরিণত হতে দিতে পারে না। এটি আমাদের দায়িত্ব এবং আমি মনে করি, গত চার বছরে আমরা প্রমাণ করেছি যে এই ধরনের সম্পর্ক বজায় রাখা সম্ভব।”

বাইডেনের শাসনকালে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে কিছু টানাপোড়েন দেখা গেছে, যার মধ্যে একটি ছিল গুপ্তচর বেলুনের ঘটনা। এ ছাড়া তাইওয়ানের চারপাশে চীনের সামরিক শক্তি প্রদর্শনও ছিল বৈশ্বিকভাবে আলোচিত ঘটনা, যার সূত্রপাত যুক্তরাষ্ট্রের একজন সিনিয়র কর্মকর্তার তাইওয়ান সফর ঘিরে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অপ্রত্যাশিত আচরণ চীনের জন্য উদ্বেগের বড় কারণ হতে পারে।

জার্মান মার্শাল ফান্ডের ইন্দো-প্যাসিফিক প্রোগ্রামের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বনি গ্লেসার বলেন, “চীনারা আলোচনা ও সমঝোতার জন্য প্রস্তুত এবং চীন সম্ভবত ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার আগেই তার টিমের সঙ্গে যোগাযোগ করে আলোচনায় সম্পৃক্ত হতে চায়।

“তবে ট্রাম্প যদি চীনা পণ্যের ওপর বেশি হারে শুল্ক আরোপে জোর দেন, তাহলে পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণে তারাও (চীন) প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে।”

তিনি আরও বলেন, চীন সম্ভবত উদ্বিগ্ন এই কারণে যে তারা ট্রাম্পের নীতিকে প্রভাবিত করার জন্য নির্ভরযোগ্য বিকল্প চ্যানেলের অভাব বোধ করতে পারে।

শনিবারের বৈঠকে বাইডেন স্বীকার করেন, শি জিনপিংয়ের সঙ্গে সবসময়ই তার মতপার্থক্য ছিল। তবে একইসঙ্গে তিনি এটাও বলেছেন, বিভিন্ন সময়ে তাদের মধ্যে হওয়া আলোচনাগুলোতে তারা ‘খোলামনে’ই কথা বলেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর বাইডেনের সঙ্গে তিনবার মুখোমুখি বৈঠক করেছেন শি জিনপিং, যার মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ শীর্ষ সম্মেলন গত বছর সান ফ্রান্সিসকোতে হয়েছিল, যেখানে মাদকদ্রব্য ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার বিষয়ে দুইপক্ষের মধ্যে চুক্তি হয়।

তবে বাইডেনের প্রশাসন ট্রাম্পের আমলে চীনা পণ্যের ওপর আরোপিত শুল্ক অব্যাহত রেখেছিল। এর পাশাপাশি তার সরকার চীনের বৈদ্যুতিক গাড়ি, সোলার প্যানেল ও স্টিলের ওপর শুল্ক আরোপ করেছিল।

এছাড়া এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে চীনের প্রভাব বিস্তারের ক্রমবর্ধমান প্রচেষ্টা মোকাবেলার অংশ হিসেবে বাইডেন প্রশাসন তার প্রতিরক্ষা জোটগুলোর শক্তি বাড়াতে ভূমিকা রাখে। এছাড়া চীন কখনও তাইওয়ানে আক্রমণ করলে যুক্তরাষ্ট্র দ্বীপটিকে রক্ষায় এগিয়ে যাবে যাবে বলেও ঘোষণা দিয়েছিলেন বাইডেন।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত