Beta
বৃহস্পতিবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৪
Beta
বৃহস্পতিবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৪

ইলন মাস্ক রাজনীতি থেকে আসলে কী চান

Elon_Musk_Trump_Money_2
[publishpress_authors_box]

ডোনাল্ড ট্রাম্পকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট করতে কোমর বেঁধে নেমেছেন বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ক। তার পক্ষে সমাবেশে যোগ দেওয়ার পাশাপাশি দানের হাতও দিয়েছেন খুলে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প না কমলা হ্যারিস- যে রাজ্যগুলোর ভোটাররা এখনও সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না, দোদুল্যমান সেই রাজ্যগুলোতে ট্রাম্প সমর্থকদের মধ্য থেকে প্রতিদিন একজনকে ১০ লাখ ডলার করে পুরস্কার দিচ্ছেন মাস্ক।

গত শনিবার থেকে মাস্ক এই কার্যক্রম শুরু করে তিনি বলেছেন, ৫ নভেম্বর নির্বাচন পর্যন্ত তিনি এটা চালিয়ে যাবেন।

গত জুলাইয়ে ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন ঘোষণার পর মাস্ক ‘অ্যামেরিকা পলিটিক্যাল অ্যাকশন কমিটি (আমেরিকা প্যাক)’ প্রতিষ্ঠা করেন। সেখানে তিনি ৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার তহবিল জুগিয়েছেন।

অ্যামেরিকা প্যাক থেকে একটি পিটিশন তৈরি করে মাস্ক তাতে ট্রাম্প সমর্থকদের স্বাক্ষর সংগ্রহ করছেন। পিটিশনটি বাক স্বাধীনতা এবং অস্ত্র বহনের অধিকার সম্পর্কিত।

পিটিশনটিতে লেখা আছে, সংবিধানের “প্রথম এবং দ্বিতীয় সংশোধনী বাক স্বাধীনতার নিশ্চয়তা এবং অস্ত্র বহনের অধিকার দেয়। আমি নিচে স্বাক্ষর করার মাধ্যমে প্রথম এবং দ্বিতীয় সংশোধনীর প্রতি আমার সমর্থন ব্যক্ত করছি৷”

ওই পিটিশনে স্বাক্ষরকারীদের থেকেই প্রতিদিন লটারির মাধ্যমে একজনকে ১০ লাখ ডলার করে দেওয়া হচ্ছে।

৭টি সুইং স্টেট— পেনসিলভেনিয়া, জর্জিয়া, নেভাডা, অ্যারিজোনা, মিশিগান, উইসকনসিন ও নর্থ ক্যারোলাইনায় পিটিশনটিতে স্বাক্ষর সংগ্রহ করা হচ্ছে।

মাস্কের রাজনৈতিক তৎপরতার লক্ষ্য কী

দ্য গার্ডিয়ানের যুক্তরাষ্ট্র শাখার প্রযুক্তি সম্পাদক ব্ল্যাক মন্টেগোমারি বলেন, “আমার সহকর্মী নিক রবিনস-আর্লি ও র‌্যাচেল লেইনগাং গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মাস্কের অনিবার্য প্রভাব সম্পর্কে একটি লেখা প্রকাশ করেছেন। নিবন্ধটি মাস্কের গত কয়েক মাসের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে।

“কিন্তু আমি বিশেষভাবে একটি প্রশ্নে মুগ্ধ হয়েছিলাম— সরকারি নিয়ন্ত্রণ কমানোই কি বিশ্বজুড়ে মাস্কের রাজনৈতিক তৎপরতার পেছনের চালিকা শক্তি? এই সব খরচ ও প্রচার কি সরকারি দপ্তরের ক্ষমতা ও সংখ্যা কমানোর জন্য?”

র‌্যাচেল ও নিক লিখেছেন-

মাস্ক সম্প্রতি একের পর এক সরকারি সংস্থার সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়েছেন। এই সময়ে তিনি সরকারি নিয়ন্ত্রণমুক্তকরণের পক্ষে অসংখ্য গণ বিবৃতি দিয়েছেন এবং ফেডারেল সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে একটি পূর্ণ-মাত্রার অডিটের আহ্বানও জানান। তার এই ধারণাটি ট্রাম্প লুফে নিয়েছেন। সেপ্টেম্বরে ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, তিনি মাস্কের নেতৃত্বাধীন একটি সরকারী এফিশিয়েন্সি কমিশন বা দক্ষতা কমিশন চালু করবেন। যার লক্ষ্য হবে ফেডারেল এজেন্সিগুলোর নিয়ন্ত্রণ ও খরচ কমানো। মাস্ক এটিকে সরকারি দক্ষতা বিভাগ বলতে চান।

পরিকল্পনাটির বিশদ বিবরণ অস্পষ্ট। এছাড়া মাস্কের কোম্পানিগুলোর ওপর যেসব সরকারি দপ্তর নজর রাখে সেগুলোতেই মাস্ককে অডিট করতে যে স্বার্থের দ্বন্দ্ব তৈরি হবে, তা কীভাবে মোকাবেলা করা হবে সে বিষয়েও কিছু বলা হয়নি।

তবে ট্রাম্প এবং মাস্ক উভয়েই বারবার ট্রাম্প নির্বাচনে জিতলে তার প্রশাসনে মাস্কের ভূমিকা রাখার ধারণা তুলে ধরেছেন।

গত রবিবার ফক্স নিউজে ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি ‘কস্ট-কাটিং সেক্রেটারি’ নামে একটি নতুন পদ তৈরি করবেন এবং মাস্ককে সেই পদে নিয়োগ করবেন।

ট্রাম্প বলেন, “তিনি এটা করতে মুখিয়ে আছেন।”

ইলন মাস্ক

বিশ্বজুড়ে মাস্ক কী চান

সরকারি নিয়ন্ত্রক সংস্থার সংখ্যা কমানোর জন্য বেসরকারি মহাকাশ গবেষণা সংস্থা স্পেসএক্সের মালিক মাস্কের লড়াই শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই সীমাবদ্ধ নয়। কখনও কখনও নিয়ন্ত্রকদের সঙ্গে তার লড়াই তাকে বিশ্বের অন্য বিলিয়নেয়ারদের বিরুদ্ধেও দাঁড় করিয়ে দেয়।

উদাহরণ হিসাবে ভারতের কথা বলা যায়, যেখানে স্যাটেলাইট ব্রডব্যান্ড বিতরণ নিয়ে নয়া দিল্লি সরকারের সঙ্গে লড়াই করছে মাস্ক এবং মুকেশ আম্বানির বিরুদ্ধে বিজয়ী হচ্ছে।

এশিয়ার সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি মুকেশ আম্বানি তার নিজের টেলিকমিউনিকেশন সাম্রাজ্যের জন্য আরও অনুকূল শর্ত চেয়েছিলেন। কিন্তু মাস্ক তাতে বাগড়া দেন।

মাস্ক নিজেকে ‘‘নিরঙ্কুশ বাক-স্বাধীনতাবাদী’ বলে ঘোষণা করেছেন এবং সরকারি নিয়ন্ত্রণ তুলে দিতে সচেষ্ট।  

গত জুলাইয়ে যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনের এক মাস পর দেশটি হিংসাত্মক জাতিগত দাঙ্গার কবলে পড়েছিল।

তখন মাস্ক টুইট করেছিলেন, ‘গৃহযুদ্ধ অনিবার্য’ এবং একটি কার্টুন শেয়ার করেছিলেন, যাতে দেখা যায়, একজন মানুষকে বৈদ্যুতিক চেয়ারে বসিয়ে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। ক্যাপশনে মাস্ক লিখেছিলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে যুক্তরাজ্যে বাক স্বাধীনতার শাস্তি হবে এটি।

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার রাজ্য সরকার এবং প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনেরও অনুরূপ সমালোচনা করেছেন মাস্ক।

সরকারি নিয়ন্ত্রণের বিরুদ্ধে তার লড়াই নিয়মিতই তাকে যে দেশেই কাজ করতে যান সে দেশের বিচার বিভাগের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দেয়।

গত মাসে একজন বিচারকের আদেশ মেনে চলতে ব্যর্থতার দায়ে ব্রাজিলে এক্সকে ব্লক করা হয়। এরপর দেশটির সরকার স্পেসএক্সের সহযোগী সংস্থা স্টারলিঙ্ককে জরিমানা করে। মাস্ক তা মেনে নেন।

নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো কি মাস্কের বিরুদ্ধে পাল্টা লড়াই করছে

সম্প্রতি কিছু নিয়ন্ত্রক সংস্থা একটি নতুন কৌশল নিয়েছে— মাস্কের একটি কোম্পানির কর্মকাণ্ডের জন্য অন্য আরেকটি কোম্পানিকে শাস্তি দিতে শুরু করেছে।

গত সপ্তাহে ইউরোপের নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো ব্রাজিলের পথ ধরে এক্স-এর আইনজীবীদের নোটিস দেয় যে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ডিজিটাল পরিষেবা আইন মেনে চলতে ব্যর্থতার জন্য তার সামাজিক মিডিয়া কোম্পানিকে জরিমানা করা হতে পারে।

এমনকি ইইউ নিয়ন্ত্রকরা শুধু এক্সের রাজস্বের ওপর ভিত্তি করে নয়, বরং মাস্কের সব ব্যবসার মোট রাজস্বের উপর ভিত্তি করে জরিমানা হিসাব করা হবে বলে জানায়। এতে এক্স বিশাল পরিমাণ জরিমানার মুখোমুখি হতে পারে, যা সামাজিক মিডিয়া প্ল্যাটফর্মটিকে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

ক্যালিফোর্নিয়ার উপকূলীয় কমিশন সান্তা বারবারা সৈকতের একটি ঘাঁটি থেকে স্পেসএক্স ও যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহিনীর আরও রকেট উৎক্ষেপণের আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছিল। ওই সিদ্ধান্তের সময় মাস্ক এক্সে ভুলভাল তথ্য প্রচার করেন বলে অভিযোগ করে কমিশন।

জবাবে মাস্ক তখন কমিশনের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক পক্ষপাত এবং প্রথম সংশোধনী লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে মামলা করেন। তিনি শুধু রকেট চালাতে ও টুইট করতে এবং শান্তিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার ব্যয় করতে চান।

তথ্যসূত্র : দ্য গার্ডিয়ান

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত