কলকাতার একটি হাসপাতালে কর্তব্যরত অবস্থায় এক নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় ভারতজুড়ে চিকিৎসক-জনতার বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। তিন দিন আগে শুরু হওয়া সেই বিক্ষোভ ক্রমান্বয়ে আরও তীব্র আকার ধারণ করছে।
প্রায় এক সপ্তাহ আগে পূর্ব কলকাতার সরকারি আর জি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে। তার জেরে বুধবার রাতে হাসপাতালটিতে ভাঙচুরও করা হয়।
নারীবাদী সংগঠনগুলো বুধবার রাতে কলকাতায় ‘রিক্লেইম দ্য নাইট’ বা ‘রাত পুনরুদ্ধার করো’ শিরোনামে রাস্তায় প্রতিবাদ সমাবেশ করে। শহরের বিভিন্ন অংশে নারীদের এ কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা জানাতে যোগ দেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
দৃঢ়তার সঙ্গে প্রতিবাদী চিহ্ন নিয়ে মিছিল করেন তারা। মোবাইল ফোন, মোমবাতির আলো ও টর্চের আলোয় আলোকিত ছিল তাদের মুখ। কারও কারও হাতে ছিল জাতীয় পতাকা। এক সাংবাদিক বলেন, “শহরে রাতের বেলা নারীদের এত বড় জমায়েত আমরা আগে কখনও দেখিনি।”
ভারতের স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে কলকাতার পাশাপাশি রাজধানী দিল্লিসহ বিভিন্ন শহরেও এদিন নারীরা রাস্তায় নেমে এসেছিলেন। মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটির ক্যাম্পাসেও চলে অবস্থান কর্মসূচি ও বিক্ষোভ।
৩১ বছর বয়সী ওই তরুণী চিকিৎসকের মরদেহের ময়নাতদন্তে চরম যৌন লাঞ্ছনার প্রমাণ মিলেছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ গোটা ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করায় সমাজের সর্বস্তরের মানুষ কার্যত ফুঁসে উঠেছে।
গত সোমবার পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় শুরু হওয়া বিক্ষোভ মঙ্গলবার সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। রাজধানী নয়াদিল্লি, কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল চণ্ডীগড়, উত্তর প্রদেশের রাজধানী লখনউ ও প্রয়াগরাজ শহর, বিহারের রাজধানী পাটনা এবং দক্ষিণের রাজ্য গোয়াতেও চিকিৎসকদের বিক্ষোভ হয়েছে।
সেদিন ঠিক কী ঘটেছিল
গত শুক্রবার ভোরে কলকাতার আর জি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে মৌমিতা দেবনাথ নামে এক তরুণী শিক্ষানবীশ ডাক্তারের মরদেহ পাওয়া যায়। ওই তরুণী সেখান থেকেই এমবিবিএস পড়ার পর পোস্টগ্র্যাজুয়েট শেষ করে হাসপাতালে যোগ দেন।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাতে তিনি টানা ৩৬ ঘণ্টার ‘অন-কল’ ডিউটিতে ছিলেন। ডিউটি শেষে সহকর্মীদের সঙ্গে অনলাইনে আনানো খাবার খেয়ে তিনি চারতলায় পালমোনোলজি বিভাগের সেমিনার হলে কিছুক্ষণের জন্য বিশ্রাম নিতে যান।
পরদিন সকালে সহকর্মীরা ওই হলের ভেতরেই তার অর্ধনগ্ন মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেন। নিহত তরুণীর গোপনাঙ্গের পাশেই পড়ে ছিল মেয়েদের মাথার চুলের একটি ক্লিপ।
কলকাতার শহরতলীতে সোদপুর এলাকার একটি অতি সাধারণ নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে ছিলেন তিনি।
পরিবারের অভিযোগ, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ তাদের প্রথমে জানিয়েছিল তাদের মেয়ে ‘আত্মহত্যা’ করেছে। পরে ময়নাতদন্তে ধরা পড়ে তাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে।
এই খবর প্রকাশের পর সোমবার কলকাতার রাস্তায় নেমে আসেন হাজার হাজার চিকিৎসক। তারা এই হত্যাকাণ্ডের বিচারসহ চিকিৎসকদের নিরাপত্তায় আরও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।
আর জি কর মেডিকেল কলেজের প্রিন্সিপাল সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধেও অভিযোগ উঠেছে, বিষয়টি তিনি আত্মহত্যা বলে ধামাচাপা দিতে চেয়েছিলেন। এমনকি তিনি বলেছিলেন, “রাতের বেলায় একা একা সেমিনার হলে গিয়ে মেয়েটি দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ করেছে।”
পরে আন্দোলনরতদের চাপের মুখে অভিযুক্ত ওই প্রিন্সিপাল নিজের পদ ও সরকারি চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। কিন্তু এই ঘটনায় দোষীদের শাস্তির দাবিতে উত্তাল হয়ে ওঠে কলকাতাসহ পুরো ভারত।
সোমবার ফেডারেশন অব রেসিডেন্ট ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন (ফোরডা) কেন্দ্রীয় সুরক্ষা আইন দৃঢ় করা এবং চিকিৎসা পেশাদারদের সহিংসতা থেকে রক্ষার জন্য একটি কেন্দ্রীয় আইন কার্যকর করার দাবি জানায়।
২০২২ সালে পার্লামেন্টে আইনটি প্রস্তাব করা হয়েছিল, কিন্তু এখনও কার্যকর করা হয়নি। অর্থমন্ত্রী জগত প্রকাশ নাড্ডা তাদের দাবি মেনে নিয়েছেন। শিগগিরই আইনটি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু হবে বলেও জানানো হয়েছে।
দাবি মেনে নেওয়ার পরও চিকিৎসকরা আন্দোলনে কেন
ডাক্তারদের অন্যান্য ফেডারেশন এবং হাসপাতালগুলো বলছে, ডাক্তারদের ওপর হামলা রোধে কেন্দ্রীয় আইনসহ একটি সুনির্দিষ্ট সমাধান না পাওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন করবেন।
আন্দোলনরতদের মধ্যে রয়েছে, ফেডারেশন অব অল ইন্ডিয়া মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (এফএআইএমএ), দিল্লি ভিত্তিক অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেস (এআইআইএমএস) এবং ইন্দিরা গান্ধী হাসপাতাল।
এআইআইএমএস রেসিডেন্ট ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক রঘুনন্দন দীক্ষিত বলেছেন, কেন্দ্রীয় সুরক্ষা আইন বাস্তবায়নের লিখিত গ্যারান্টিসহ তাদের দাবিগুলো পূরণ না হওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট চলবে।
ভারতের চিকিৎসা পেশাজীবীরা এমন একটি কেন্দ্রীয় আইন চান, যা ডাক্তারদের বিরুদ্ধে সহিংসতাকে জামিন অযোগ্য, শাস্তিযোগ্য অপরাধ গণ্য করবে। যাতে ডাক্তারদের ওপর এই ধরনের সহিংস অপরাধ বন্ধ হয়।
ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের জুনিয়র ডক্টরস নেটওয়ার্কের ন্যাশনাল কাউন্সিলের সদস্য ডা. ধ্রুব চৌহান প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়াকে (পিটিআই) বলেছেন, “এখনই ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নিলে নারী আবাসিক ডাক্তাররা কখনও ন্যায়বিচার পাবেন না।”
সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ নিয়ে গড়িমসি
ওই তরুণী ডাক্তারের মরদেহ উদ্ধারের চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই পুলিশ সঞ্জয় রায় নামে এক ব্যক্তিকে আটক করেছে। সঞ্জয় কলকাতা শহরের পুলিশ বাহিনীতে ‘সিভিক ভলান্টিয়ার’ বা সহযোগী কর্মী হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। তাকেই এই ঘটনায় প্রধান সন্দেহভাজন আসামি মনে করা হচ্ছে।
‘সিভিক ভলান্টিয়ার’ হলো এমন একটি পদ যা পশ্চিমবঙ্গে মমতা ব্যানার্জীর রাজ্য সরকার চালু করেছে। এই পদধারীরা সরাসরি পুলিশ বা ট্র্যাফিক পুলিশের সদস্য না হলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে তাদের সাহায্য করে থাকেন। বিনিময়ে রাজ্য সরকারের কাছ থেকে মাসিক ভাতা পান।
পুলিশ জানিয়েছে, আর জি কর মেডিকেল কলেজের সেদিন রাতের সিসিটিভি ফুটেজ দেখেই অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়কে চিহ্নিত করা হয়েছে। ওই তরুণীর ওপর পাশবিক নির্যাতনের কিছুক্ষণ ঠিক আগে অভিযুক্তকে হাসপাতালে ঢুকতে দেখা যায় এবং তার খানিকক্ষণ পরে বেরিয়ে যেতে দেখা যায়।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে বলা হচ্ছে, আটক ওই ব্যক্তির বিকৃত যৌনাচারে লিপ্ত হওয়ার এবং নির্যাতন ও চাঁদাবাজিতে যুক্ত থাকার অতীত ইতিহাস আছে।
তবে আন্দোলনরত চিকিৎসকরা ও পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলগুলো বারবার দাবি জানানো সত্ত্বেও হাসপাতালের কোনও সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ করা হয়নি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, পালমোনোলজি বিভাগ ও সেমিনার হলের সিসিটিভি সেদিন কাজ করছিল না।
মূল অভিযুক্ত আটক সঞ্জয় রায় ২০১৯ সালে কলকাতা পুলিশের ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট গ্রুপে একজন স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে যোগ দেন।
পরে রাজনৈতিক প্রভাব কাজে লাগিয়ে তিনি বদলি নেন কলকাতা পুলিশের ‘ওয়েলফেয়ার সেল’ বা কল্যাণ সমিতিতে। সেই সুবাদেই আর জি কর হাসপাতাল কমপ্লেক্সে তারা অবাধ যাতায়াত ছিল।
এমনকি, পুলিশ বাহিনীর সদস্য না হওয়া সত্ত্বেও ওই ব্যক্তি থাকতেন কলকাতা পুলিশের ফোর্থ ব্যাটেলিয়নের চত্বরেই। চলাফেরা করতেন কলকাতা পুলিশের স্টিকার লাগানো একটি মোটরবাইকে।
অভিযোগ উঠেছে, যেভাবে বিষয়টিকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে, তাতে বোঝা যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার কাউকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে।
পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদারেরও অভিযোগ, মমতার সরকার বিষয়টি নিয়ে নীরব। ডাক্তারদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের একটি চ্যাটের স্ক্রিনশটের সূত্র ধরে তিনি এর সঙ্গে মাদক ও যৌন চক্রের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ করেন।
সুকান্ত বলেন, “ডাক্তারদের একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে এই জাতীয় অনেক বিষয় উঠে এসেছে, এর কিছু স্ক্রিনশটও আমাদের কাছে পৌঁছেছে, যেমন, মাদক চক্র, যৌন চক্র। একজন তৃণমূল সাংসদ এবং তার ভাতিজার নাম বারবার উঠে আসছে, আমি জানি না কী হয়েছে, তবে যেটাই হোক সেটা ভুল হয়েছে।”
তবে বিরোধীরা বলছেন, বিজেপির এই অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। কারণ পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস সরকার কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপি-বিরোধী জোটের অংশ।
ভারতে যৌন সহিংসতা কমছে না কেন
২০১২ সালে দিল্লিতে নির্ভয়া নামের ২২ বছর বয়সী এক তরুণীকে একটি বাসে দলবব্ধ ধর্ষণের পর তার গোপনাঙ্গে রড ঢুকিয়ে হত্যা করা হয়। ওই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর ভারতে যৌন সহিংসতার বিরুদ্ধে আইনগুলো আর কঠোর করা হয়।
কিন্তু তারপরও ভারতে যৌন সহিংসতা কমছে না। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০২২ সালেও ভারতে গড়ে প্রতিদিন ৯০টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে।
ভারতীয় আইনজীবী এবং নারী অধিকারকর্মী বৃন্দা গ্রোভার আল জাজিরাকে বলেন, কঠোর আইন করলেও তা প্রয়োগে আন্তরকিতার অভাবের কারণেই ধর্ষণ কমছে না।
বৃন্দা গ্রোভার অতীতে ভারতে যৌন সহিংসতার শিকারদের জন্য মামলায় লড়েছেন। ২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গার সময় দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার মুসলিম নারী বিলকিস বানো এবং ছত্তিশগড় রাজ্যের উপজাতি কর্মী সোনি সোরির মামলাসহ বিভিন্ন ধর্ষণ মামলা পরিচালনা করেছেন।
নিজের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বলেন, বেশিরভাগ কর্মক্ষেত্রেই যৌন সহিংসতাবিরোধী আইনের কঠোর প্রয়োগের দিকে খুব কম মনোযোগ দেওয়া হয়। প্রতিরোধমূলক কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয় না বলেও তার অভিযোগ।
তারা ভাষায়, “কোনও নারী যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়ার পর এবং প্রায়শই মারা যাওয়ার পরই সরকার এবং প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিক্রিয়া জানায়, যা খুবই দুঃখজনক।”
ভারতে অনেক ধর্ষণের ঘটনায় অপরাধীদের জবাবদিহি করা হয়নি। ২০০২ সালে বানোকে ধর্ষণ করার দায়ে ১১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ২০২২ সালে বিজেপি সরকার তাদের মুক্তি দিয়ে দেয়। এমনকি মুক্তির পর তাদের করতালি ও ফুলের মালা দিয়ে স্বাগতও জানানো হয়েছিল।
পরে অবশ্য জনরোষের মুখে সুপ্রিম কোর্ট তাদের ক্ষমা বাতিল করে এবং জেলে ফেরত পাঠায়।
গ্রোভারের মতে, যৌন সহিংসতা ভারতীয় সমাজের গভীরে শেকড় গেড়ে বসে আছে। তার সমাধান না করে শুধু মৃত্যুদণ্ড দিয়ে ধর্ষকদের আটকানো যাবে না।
গ্রোভার বলেন, “পিতৃতন্ত্র, বৈষম্য এবং অসমতা আমাদের ঘর, পরিবার, সাংস্কৃতিক চর্চা, সামাজিক রীতিনীতি এবং ধর্মীয় ঐতিহ্যের মধ্যে শেকড় গেড়ে আছে। ফলে যেকোনও পরিবর্তনের জন্য আগে বৃহত্তর সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। সামাজিকভাবে মোকাবিলা করতে হবে।”
ভারতের অন্যান্য শহরের তুলনায় কলকাতায় সাধারণত ধর্ষণ কম ঘটে। যে কারণে এই ঘটনায় এবার এত তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর (এনসিআরবি) এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, ভারতের ১৯টি মেট্রোপলিটন শহরের মধ্যে ২০২১ সালে কলকাতায় সর্বনিম্ন সংখ্যক ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। সে বছর কলাকাতায় মোট ১১টি ধর্ষণ মামলা হয়েছে। অন্যদিকে, নয়াদিল্লিতে সে বছর ১ হাজার ২২৬টি ধর্ষণ মামলা রেকর্ড করা হয়।
তথ্যসূত্র: আল জাজিরা, বিবিসি, টাইমস অব ইন্ডিয়া ও হিন্দুস্তান টাইমস