দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বাংলাদেশ ব্যাংকের বিক্ষুব্ধ একদল কর্মকর্তা তাদের শীর্ষ কয়েক কর্মকর্তার পদ ছাড়ার দাবি জানালে তারা সেই দাবিতে সাড়া দিয়েছেন। তবে তাদের নিয়োগ চুক্তিভিত্তিক ও এই পদত্যাগের বিষয়ে সরকারের সম্মতিরও প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক।
বুধবার সকালে অফিস চালু হওয়ার পর একদল কর্মকর্তা ও কর্মচারী কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ফ্লোরে এসে জড়ো হয়ে চুক্তিভিত্তিক কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার পদত্যাগের দাবি তোলেন। এ সময় তারা গভর্নর, চার ডেপুটি গভর্নর, উপদেষ্টা ও আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটের প্রধানসহ চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্তদের পদত্যাগ দাবি তুলে স্লোগান দেন।
তবে গভর্নর অফিসে না থাকায় একপর্যায়ে ডেপুটি গভর্নর-১ পদে থাকা কাজী ছায়েদুর রহমানকে সাদা কাগজে সই করতে বাধ্য করেন তারা। পরে ওই কাগজে কাজী ছায়েদুর রহমান পদ থেকে অব্যহতি নিচ্ছেন বলে লিখে বিভিন্ন সোশাল মিডিয়ায় তা ছড়িয়ে দেওয়া হয়। সেখানে কাজী ছায়েদুরের নামের বানানও ভুলভাবে লেখা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মকর্তা সকাল সন্ধ্যাকে এসব তথ্য জানিয়েছেন। তবে চাকরির নিরাপত্তার স্বার্থে তারা নাম প্রকাশ করতে রাজী হননি। তবে বিক্ষোভ করা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে বিএনপি ও জামায়াতপন্থী কর্মীও ছিলেন বলে তারা দাবি করেন। তবে এ ধরনের কারও রাজনৈতিক পরিচয় তারা জানাতে চাননি।
এদের একজন বলেন, চার ডেপুটি গভর্নর ও বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান বিক্ষুব্ধ কর্মকর্তাদের দাবির মুখে পদত্যাগ করতে রাজি হয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় থেকে বেরিয়ে যান। এ সময় সেনাসদস্যরা ওই কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা দেন।
গত সোমবার প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে যাওয়ার পর মঙ্গলবার ব্যাংক খুললেও ওই দিন থেকেই অফিসে আসছেন না গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, দুই শতাধিক কর্মকর্তা–কর্মচারী বুধবারের এই বিক্ষোভে যোগ দেন। তাদের অনেকেই পদোন্নতি বঞ্চিত বা বদলি নিয়ে সন্তুষ্ট নয়। এসময় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে মোতায়ন থাকা সেনাসদস্যরা পরিস্থিতি শান্ত রাখতে চেষ্টা করেন।
বিক্ষুব্ধ কর্মকর্তা–কর্মচারীরা ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহারের কক্ষে গিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করলে তিনি কার্যালয় ছেড়ে চলে যান। বাকি দুই ডেপুটি গভর্নর মো. খুরশীদ আলম ও মো. হাবিবুর রহমান কার্যালয়ে ছিলেন না। কর্মচারীরা তাদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করলে তারা অফিসে আসবেন না বলে জানিয়ে দেন। একইভাবে ব্যাংকের উপদেষ্টা আবু ফরাহ মো. নাসের ও বিএফআইইউ মাসুদ বিশ্বাসও জানান, তারা আর ব্যাংকে আসবেন না। বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ এসব কর্মকর্তা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছিলেন।
এই ঘটনার পরপরই উপস্থিত সাংবাদিকদের নিয়ে একটি সংবাদ সম্মেলন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক।
এ সময় তিনি যে প্রক্রিয়ায় পদত্যাগের কথা হচ্ছে, তা গ্রহণযোগ্য নয় বলে জানান।
মেজবাউল হক বলেন, তারা পদত্যাগপত্র কার কাছে দিয়েছেন? তাদের নিয়োগ দিয়েছে সরকার। পদত্যাগপত্র দিতে হলে সরকারের কাছেই দিতে হবে। অন্য কারও কাছে তারা পদত্যাগপত্র দিতে পারেন না।
এক প্রশ্নর জবাবে মেজবাউল হক বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকে দুই ধরনের কাজ হয়; প্রথমত, দৈনন্দিন কার্যক্রম; দ্বিতীয়ত, নীতিগত। দৈনন্দিন কার্যক্রম বিভাগীয় প্রধানরাই চালিয়ে নিতে পারেন। কিন্তু সরকার না থাকলে বড় ধরনের নীতিগত সিদ্ধান্ত হয় না। এখন মূলত দৈনন্দিন কার্যক্রমই চলবে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মচারীরা প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের কাছে বিভিন্ন দাবি দাওয়া উত্থাপন করেছেন। যেমন পূর্ণাঙ্গ স্বায়ত্তশাসন, পে স্কেল, সরকারের অযাচিত হস্তক্ষেপ বন্ধ ইত্যাদি।
এ বিষয়ে মেজবাউল হক বলেন, “এসব কিছু এখন নির্ভর করছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ওপর। তারা যে নির্দেশনা দেবে, তার ওপর।”