বিএনপির কর্মী মকবুল হত্যার অভিযোগে করা মামলায় গ্রেপ্তার গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীকে আদালতে তোলা হয় শুক্রবার।
শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম মেহেরা মাহবুবের আদালত তাকে ৫ দিন হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেয়।
আদালতে আসামি পক্ষের আইনজীবী আবু সুফিয়ান রিমান্ড বাতিল ও জামিন চেয়ে শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী তার জামিনের বিরোধিতা করেন।
ওমর ফারুক ফারুকী জামিনের বিরোধিতা করে বলেন, “আসামি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। তিনি শেখ হাসিনা সরকারের সচিব ছিলেন। ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে ক্ষমতায় থাকতে তিনি সহযোগিতা করেছেন। তার প্রতি খুশি হয়ে শেখ হাসিনা তাকে মন্ত্রীত্ব উপহার দিয়েছেন।
“মন্ত্রী থাকাকালে তিনি রাম-রাজত্ব কায়েম করেছেন। অবৈধভাবে প্লট বরাদ্দ দিয়ে তিনি হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করে পাচার করেছেন। মানুষ হত্যা, খুন, ঘুম করতে সহযোগিতা করেছেন।”
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, “রাষ্ট্রের কর্মচারীর কাজ জনগণকে সহযোগিতা করা, সেটা তা তিনি করেননি। শেখ হাসিনাকে খুশি করার জন্য ‘শেখ’ নামে একটি প্রজেক্ট পর্যন্ত তৈরি করেছেন।
শুনানিতে এই পিপি আরও বলেন, সোশ্যাল মিডিয়াতে দেখা গেছে গত ১৩ জুলাই আসামি কোটাবিরোধী বক্তব্য পর্যন্ত দিয়েছে। আসামির সর্বোচ্চ রিমান্ডের প্রার্থনা করছি।
এরপর আসামি পক্ষের আইনজীবী আবু সুফিয়ান বলেন, “তিনি কোটা সংস্কার আন্দোলনের পক্ষে ছিলেন। তিনি ফ্যাসিস্টের কোনও সহযোগিতা করেননি। একজন মুক্তিযোদ্ধা, দেশের জন্য লড়াই করেছেন। দেশের উন্নয়নের জন্য তিনি অনেক কাজ করেছেন। তিনি কোনও অবৈধ কাজে জড়িত নন। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তার কোনও সংশ্লিষ্টতা নেই।”
এসময় তার শারিরীক অবস্থা তুলে ধরে আইনজীবী বলেন, “২০২১ সালে মোকতাদিরের হার্টে ৫০ শতাংশ ব্লক ধরা পড়েছে। তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ। মানবিক দিক বিবেচনা করে আসামির জামিন প্রার্থনা করছি।”
এরপর বিচারক প্রশ্ন করেন, আর কারও কিছু বলার আছে?
তখন আসামি পক্ষের আইনজীবী আবু সুফিয়ান বলেন, তিনি নির্বাচিত সংসদ সদস্য। জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন।
এই কথার বিরোধীতা করে এপিপি নয়ন বলে ওঠেন, আসামি ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে অবৈধভাবে নির্বাচিত মন্ত্রী।
এক পর্যায়ে দুই পক্ষ বাকবিতণ্ডায় জড়ায়। এতে আদালতে উত্তেজিত পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
তখন বিচারক বলে ওঠেন, “কোর্টে মান সম্মানটা বজায় রাখেন। আপনারা সকলেই বললেন কোন গ্রাউন্ডে আসামির জামিন বা বাতিল চেয়েছেন।”
এসময় রাষ্ট্রপক্ষে পিপি ওমর ফারুক ফারুকীকে উদ্দেশ করে বিচারক বলেন, “আপনি যখন কথা বলবেন সকলেই যেন চুপ থাকে। সেই বিষয়টি আপনি নিশ্চিত করবেন। পরেরবার কোর্টের সম্মান, সিনিয়রদের সম্মান বজায় রাখবেন।”
এরপর বিচারক আবারও জিজ্ঞাসা করেন, কারও কিছু বলার আছে? তখন পিপি ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, আমি কিছু বলতে চায়?
এরপর পিপি বলেন, “আসামি কোটা আন্দোলনের পক্ষে যে বক্তব্য দিয়েছে তা আমি কোথাও দেখেনি। এখানে মিডিয়া কর্মীরাও আছেন তারাও দেখেননি। আসামি আন্দোলনের পক্ষে ছিলেন না। তিনি সব সময় ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে সহযোগিতা করেছেন। আসামির সর্বোচ্চ রিমান্ড চাচ্ছি।”
উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত তার পাঁচ দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।
বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকার মিরপুর এলাকা থেকে সাবেক মন্ত্রী উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করার কথা জানায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।
যে মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সেই মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর বিএনপি একদফা দাবি আদায়ের কর্মসূচি ঘোষণা করে। ৭ ডিসেম্বর ডিবি পুলিশের হারুন অর রশীদ, মেহেদী হাসান ও বিপ্লব কুমার বিএনপির নয়াপল্টন কার্যালয়ে অভিযান চালায়, কার্যালয়ে ভাংচুর চালায়। কার্যালয়ের পাশে থাকা হাজার হাজার নেতাকর্মীর ওপর হামলা চালায়। এতে মকবুল হোসেন নামে এক কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। এ ঘটনায় মাহফুজুর রহমান নামের এক ব্যক্তি গত ৩০ সেপ্টেম্বর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ২৫৬ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন।
উবায়দুল মোকতাদির ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। গত ৫ আগস্টের পর থেকে তিনি আত্মগোপনে ছিলেন। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়েছে।