Beta
মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
Beta
মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

আইসিসি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দিলে কী হবে নেতানিয়াহু ও হামাসের

বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও ইয়োভ গ্যালান্ত।
বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও ইয়োভ গ্যালান্ত।
[publishpress_authors_box]

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) এক কৌঁসুলী ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও হামাসের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেন।

সোমবার আইসিসির প্রধান কৌঁসুলি করিম খানের করা ওই আবেদনের পর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান নেতানিয়াহু। কৌঁসুলীর ওই পদক্ষেপকে তিনি ‘ঐতিহাসিক মাত্রায় নৈতিক অপরাধ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

তার মতে ইসরায়েল হামাসের বিরুদ্ধে ন্যায়সঙ্গত যুদ্ধ করছে। হলোকাস্টের পর ইহুদিদের উপর সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা চালানোর অভিযোগে তিনি হামাসকে অভিযুক্ত করেন।

শুধু তাই নয়, নেতানিয়াহু কৌঁসুলী করিম খানকে ব্যক্তিগত পর্যায়ে আক্রমণ করে তাকে ‘আধুনিক সময়ের মহান ইহুদি বিদ্বেষীদের একজন’ বলেন।

নেতানিয়াহু তার দপ্তর থেকে প্রকাশিত ভিডিওটিতে ইংরেজিতে কথা বলেছেন। কারণ তিনি তার বার্তাটি তার সবচেয়ে কাছের ও গুরুত্বপূর্ণ মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের কাছে পৌঁছাতে চান।

সেখানে নেতানিয়াহু বলেন, “ইহুদিদের মৌলিক অধিকার অস্বীকার এবং হলোকাস্টকে সমর্থন করা নাৎসি জার্মানির বিচারকদের মতোই একজন ব্যক্তি করিম খান। তার এই আবেদন ‘বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া ইহুদিবিদ্বেষের আগুনে নির্মমভাবে পেট্রল ঢেলে দেওয়ার মতো ঘটনা’।”

আইসিসির প্রধান কৌঁসুলি করিম খান সোমবার বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও তার প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ত এবং হামাসের সর্বোচ্চ নেতা ইসমাইল হানিয়া, গাজা শাখার প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ার ও সামরিক শাখা কাস্সাম ব্রিগেডের প্রধান মোহাম্মদ দিয়াব ইব্রাহিম আল-মাসরি বা মোহাম্মদ দেইফের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেন।

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রধান কৌঁসুলী করিম খান।

ইসরায়েলে হামাসের হামলা এবং এর প্রতিক্রিয়ায় গাজায় চলমান যুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে এ আবেদন জানান করিম খান। করিম খান যুক্তরাজ্যের রাজা চার্লসেরও একজন আইনী পরামর্শক।

করিম খান এক বিবৃতিতে সতর্ক আইনী ভাষায় হামাসের তিন শীর্ষ নেতার পাশাপাশি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনেছেন।

বিবিসি বলছে, খানের বক্তব্যে আন্তর্জাতিক আইন ও সশস্ত্র সংঘাত আইন সকল পক্ষের ওপর সমানভাবে প্রয়োগের দৃঢ় সংকল্প ফুটে ওঠে। সেখানে পক্ষ যে বা যারাই হোক না কেন। বক্তব্যে তিনি তার গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আবেদনের ন্যায্যতাও তুলে ধরেছেন।

গাজায় ২০০ দিনের ধ্বংসযজ্ঞ

তিনি বলেন, “কোনও পদাতিক সৈনিক, কমান্ডার, এমনকি কোনও বেসামরিক নেতাও আইনের বাইরে কাজ করতে পারবে না। যদি আইনকে বেছে বেছে প্রয়োগ করা হয়, সেক্ষেত্রে তা আইনের ভেঙে পড়ার পরিস্থিতি তৈরি করবে।”

তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মতে, এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আবেদন ‘আপত্তিজনক’। তার ভাষায়, ইসরায়েল ও হামাসের আচরণের মধ্যে ‘কোনও সামঞ্জস্যতা নেই’।

হামাসও তার নেতাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আবেদন প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে। হামাসের অভিযোগ, আইসিসির কোঁসুলিরা “ভুক্তভোগীকে ঘাতকের সঙ্গে একই পাল্লায় মাপছেন”। গাজায় হামলার সাত মাস পর এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদনকে অনেকটা দেরি হিসেবে দেখতে হামাস। তাদের মতে, কয়েক হাজার অপরাধ করার পর ইসরায়েলের বিরুদ্ধে এমন আবেদন করা হলো।

গাজার ধ্বংসস্তুপ থেকে পালাচ্ছেন স্থানীয়রা।

করিম খান অবশ্য দুই পক্ষের মধ্যে সরাসরি কোনও তুলনা করেননি। তিনি শুধু দাবি করেছেন, উভয়পক্ষই একাধিক যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত।

তিনি আরও জানান, গাজা যুদ্ধ “ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে একটি আন্তর্জাতিক সশস্ত্র সংঘর্ষ এবং ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে একটি অ-আন্তর্জাতিক সশস্ত্র সংঘর্ষের’ প্রেক্ষাপটে এসেছে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসাবে বিবেচনা করে কারণ দেশটি জাতিসংঘে পর্যবেক্ষকের মর্যাদা পেয়েছে। এর অর্থ দেশটি রোম সংবিধি তথা যে আন্তর্জাতিক চুক্তির মাধ্যমে আইসিসি তৈরি হয়েছিল তাতেও সাক্ষর করার এবং সদস্য হওয়ার যোগ্য।

ইসরায়েল সরকার যেভাবে হামাসকে সন্ত্রাসী হিসেবে দেখে সেভাবে না দেখে আইসিসির কোঁসুলি যে উভয় পক্ষের জন্যই সমানভাবে আইন প্রয়োগ করতে চাইছেন, এজন্য মানবাধিকার সংস্থাগুলোও তাকে সাধুবাদ জানিয়েছে।

বে’তসেলেম নামে একটি নেতৃস্থানীয় ইসরায়েলি মানবাধিকার সংস্থা বলেছে, এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আবেদন থেকে প্রমাণিত হয়, “নৈতিকভাবে ইসরায়েল অতল গহ্বরে তলিয়ে যাচ্ছে।”

সংস্থাটি আরও বলছে, “আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ইসরায়েলকে ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, তারা আর জবাবদিহিতা ছাড়া সহিংসতা, হত্যা ও ধ্বংসের নীতি বজায় রাখতে পারবে না।”

মানবাধিকার সংস্থাগুলো বহু বছর ধরেই অভিযোগ করে আসছে, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন শক্তিশালী পশ্চিমা দেশগুলো ইসরায়েলের আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের প্রতি চোখ বন্ধ করে রাখে। অথচ তাদের পক্ষে না থাকা দেশগুলোর মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে নিন্দা জানায় ও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

দ্য হেগে অবস্থিত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)।

মানবাধিকার সংস্থাগুলো আরও মনে করে, করিম খান ও তার দল এখন যে পদক্ষেপগুলো নিচ্ছেন তা আরও অনেক আগেই নেওয়া উচিৎ ছিল।

করিম খান বলেন, “ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা, জিম্মি, ধর্ষণ ও নির্যাতনের আদেশ দিয়ে হামাসের তিন প্রধান নেতা যুদ্ধাপরাধ করেছেন।”

তাদের তদন্তের অংশ হিসেবে করিম খান ও তার দল ইসরায়েলে হামাসের গত ৭ অক্টোবরের হামলার শিকার এবং বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদেরও সাক্ষাৎকার নেন।

করিম খান বলেন, “হামাস মৌলিক মানবিক মূল্যবোধকে আঘাত করেছে। তারা ইসরায়েলের কোনও পরিবারের বাবা-মা আবার কোনও পরিবারের সন্তানদের হত্যা করে যে চরম নিষ্ঠুরতা ও নির্মমতা চালিয়েছে তা অকল্পনীয় যন্ত্রণার সৃষ্টি করেছে।

“অন্যদিকে ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার থাকলেও তা ‘ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক মানবিক আইন মেনে চলার বাধ্যবাধকতা থেকে মুক্তি দেয়নি’। হামাসের ‘অসংবেদনশীল অপরাধের’ প্রতিক্রিয়ায় তারাও যা খুশি তা করতে পারে না।”

আন্তর্জাতিক মানবিক আইন মেনে চলার ব্যর্থতা, যেমন- অবরোধ দিয়ে কৃত্রিম খাদ্য সংকট সৃষ্টি করে গাজার বেসামরিক মানুষদের অনাহারে রাখা, হত্যা, নির্মূল এবং বেসামরিকদের উপর ইচ্ছাকৃত আক্রমণসহ বিভিন্ন অপরাধের জন্য নেতানিয়াহু ও তার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্তের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করাও যুক্তিযুক্ত বলে মনে করেন করিম খান।

তিনি তার ব্যাখ্যাটি পরিষ্কার করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, “ইসরায়েল গাজায় যুদ্ধের লক্ষ্য অর্জনের জন্য অপরাধমূলক উপায় বেছে নিয়েছে- অর্থাৎ, বেসামরিকদের ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা, অনাহারে রাখা, দুর্ভোগ এবং গুরুতর আঘাত করা।”

আইসিসির বিচারকদের একটি প্যানেল এখন গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হবে কিনা তা বিবেচনা করে দেখছেন। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলে, আইসিসির রোম সংবিধিতে স্বাক্ষর করা দেশগুলো সুযোগ পেলে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করতে বাধ্য থাকবে।

ফিলিস্তিনিদের পক্ষে বিক্ষোভরত ইহুদিদের একাংশ।

রোম চুক্তিতে যে ১২৪ টি দেশ স্বাক্ষর করেছে তাদের মধ্যে রাশিয়া, চীন ও যুক্তরাষ্ট্র নেই। ইসরায়েলও এতে স্বাক্ষর করেনি।

কিন্তু আইসিসি রায় দিয়েছে, গাজা যুদ্ধে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের বিচার করার আইনগত ক্ষমতা তাদের রয়েছে, কারণ জাতিসংঘের পর্যবেক্ষক সদস্য হিসেবে ফিলিস্তিন এখন আইসির চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী একটি দেশ। এ ছাড়া গত ১০মে ফিলিস্তিনকে জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্যপদ দেয়ার জন্য নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি আহবান জানিয়ে একটি প্রস্তাবও পাস হয়েছে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে।

এখন আইসিসি যদি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে, তাহলে এর অর্থ হবে ইসরায়েলের সবচেয়ে দীর্ঘ মেয়াদী প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু গ্রেপ্তারের ঝুঁকি ছাড়া বিভিন্ন ঘনিষ্ঠ পশ্চিমা মিত্র দেশে ভ্রমণ করতে পারবেন না।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক বলেন, “আইসিসির পদক্ষেপ যুদ্ধ থামাতে, হামাসের হাতে থাকা জিম্মিদের উদ্ধার করে আনা বা গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছাতে সহায়ক হবে না। কিন্তু যদি পরোয়ানা জারি করা হয়, তাহলে ব্রিটেন নেতানিয়াহুকে গ্রেপ্তার করতে বাধ্য হবে, যদি না তারা সফলভাবে যুক্তি দিতে পারে যে, নেতানিয়াহুর কূটনৈতিক দায়মুক্তি রয়েছে।”

নেতানিয়াহু ও ইয়োভ গ্যালান্তের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যতিক্রম হল যুক্তরাষ্ট্র। হোয়াইট হাউস বিশ্বাস করে, গাজা যুদ্ধে আইসিসির কোনও এখতিয়ার নেই। তবে হোয়াইট হাউসের এমন অবস্থান গাজা যুদ্ধ নিয়ে জো বাইডেনের ডেমোক্রেটিক পার্টির ভেতরে বিভেদ বাড়াতে পারে।

প্রগতিশীলরা ইতিমধ্যেই আইসিসির পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে। ডেমোক্রেটদের মধ্যে ইসরায়েলের কট্টর সমর্থকরা আইসিসির কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা বা যুক্তরাষ্ট্রে তাদের নিষিদ্ধ করার জন্য আইন পাসে রিপাবলিকানদের পদক্ষেপকে সমর্থন করতে পারে।

আইসিসির কৌঁসুলিদের এই আবেদনের কয়েক সপ্তাহ আগে যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান সেনেটরদের একটি দল করিম খান ও তার কর্মীদের এমন হুমকি দিয়েছে যা অনেকটা সিনেমার ভিলেনের দেওয়া হুমকির মতো।

রিপাবলিকান সেনেটররা আইসিসির কোঁসুলিদের হুমকি দেয়, “আপনার ইসরায়েলকে টার্গেট করলে আমরা আপনাদেরকে টার্গেট করব। আপনাদেরকে সতর্ক করা হলো।”

গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলে ইয়োভ গ্যালান্তও স্বাধীনভাবে ভ্রমণ করতে পারবেন না। ইসরায়েল গাজা অবরোধ করবে ঘোষণা করার সময় তিনি যে শব্দগুলো ব্যবহার করেছিলেন ইসরায়েলের আচরণের সমালোচকরা প্রায়ই সেগুলোর উল্লেখ করেন।

গাজার রাস্তায় ইসরায়েলি ট্যাংক ও সাজোয়া যানের বহর।

৭ অক্টোবর হামাসের হামলার দুই দিন পর গ্যালান্ত বলেছিলেন, “আমি গাজার ওপর সম্পূর্ণ অবরোধ আরোপের নির্দেশ দিয়েছি। সেখানে বিদ্যুৎ থাকবে না, খাবার থাকবে না, জ্বালানি থাকবে না, সবকিছু বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আমরা মানব পশুদের সঙ্গে লড়াই করছি এবং আমরা সেই অনুযায়ী কাজ করছি।”

করিম খান তার বিবৃতিতে লিখেছেন, “ইসরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবে এবং পরিকল্পিতভাবে গাজার সমস্ত অংশে বেসামরিক জনগণকে মানুষের বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য বিভিন্ন বস্তু থেকে বঞ্চিত করেছে। ফলে গাজার কিছু অংশে দুর্ভিক্ষ শুরু হয়ে গেছে এবং অন্যান্য অঞ্চলেও দুর্ভিক্ষ আসন্ন।”

অন্যদিকে, হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলে তাকে সিনিয়র আরব নেতাদের সঙ্গে দেখা করার জন্য তার নিয়মিত ভ্রমণের বিষয়ে আরও সতর্ক হতে হবে। এতে তাকে হয়তো কাতারে তার ঘাঁটিতেই বেশিরভাগ সময় বসে কাটাতে হবে। কাতারও ইসরায়েলের মতো রোম সংবিধিতে স্বাক্ষর করেনি।

অন্য দুই অভিযুক্ত হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার ও মোহাম্মদ দেইফ গাজার অভ্যন্তরে কোথাও লুকিয়ে আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তাদের ওপর খুব বেশি চাপ বাড়াবে না। কারণ গত সাত মাস ধরে এমনিতেই ইসরাইল তাদের হত্যার জন্য হন্যে হয়ে খুঁজছে।

রাফায় সর্বাত্মক হামলায় হামাস নির্মূল হবে না : ব্লিনকেন

নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও লিবিয়ার প্রয়াত প্রেসিডেন্ট কর্নেল মুয়াম্মার গাদ্দাফির কাতারে চলে যাবেন।

ইউক্রেন যুদ্ধের সময় দেশটি থেকে শিশুদের বেআইনিভাবে রাশিয়ায় নির্বাসন এবং স্থানান্তরের দায়ে পুতিনের বিরুদ্ধেও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আইসিসি।

নিজ দেশের বিদ্রোহীদের হাতে নিহত হওয়ার আগে কর্নেল গাদ্দাফির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছিল নিরস্ত্র বেসামরিকদের হত্যা ও নিপীড়নের জন্য।

বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুও তাদের কাতারে পড়ে গেলে তা তার জন্য ভালো কিছু হবে না।

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাঁক্রো আইসিসির পক্ষে বক্তব্য দেন।

আইসিসির কোঁসুলিদের ফ্রান্সের স্বাগত

শক্তিধর পশ্চিমা দেশগুলোর কেউই এখনো আইসিসি কোঁসুলিদের এই পদক্ষেপের প্রতি সমর্থন না জানালেও ফ্রান্স একে স্বাগত জানিয়েছে।

ফরাসি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সোমবার এক বিবৃতিতে বলেছে, “ফ্রান্স আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত, এর স্বাধীনতা এবং সমস্ত পরিস্থিতিতে অপরাধের দায়মুক্তির বিরুদ্ধে এর লড়াইকে সমর্থন করে।”

প্যারিস বলেছে, তারা কয়েক মাস ধরেই আন্তর্জাতিক মানবিক আইনগুলো কঠোরভাবে মেনে চলার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে এবং বিশেষত গাজায় বেসামরিক নাগরিকদের হতাহতের অগ্রহণযোগ্য স্তর এবং মানবিক সহায়তার প্রবেশাধিকারের অভাব সম্পর্কে সতর্ক করে আসছে।

ফ্রান্স এই অবস্থান নেওয়ার মাধ্যমে তার পশ্চিমা মিত্র তথা যুক্তরাজ্য, ইতালি, জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে নিজেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছে।

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটোর সমালোচনা করা এবং অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির পক্ষে ওকালতি করাসহ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণে ইচ্ছুক কয়েকটি পশ্চিমা দেশের মধ্যে ফ্রান্স অন্যতম।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত