Beta
শনিবার, ১৭ মে, ২০২৫
Beta
শনিবার, ১৭ মে, ২০২৫

ট্রাম্প শুল্কে বিপাকে চীনের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা

china
[publishpress_authors_box]

পূর্ব চীন সাগরের তীরঘেঁষা ঝেজিয়াং প্রদেশের ছোট্ট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সোরবো টেকনোলজি। চারশ’র মতো মানুষ এখানে কাজ করে। তাদের মশা তাড়ানোর পণ্যের বেশ চাহিদা যুক্তরাষ্ট্রে।

এই কিছুদিন আগেও সোরবো টেকনোলজির মসকিউটো রিপেলেন্ট কিট পশ্চিমা দেশটির খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান ওয়ালমার্টের সবচেয়ে বেশি বিক্রিত পণ্য ছিল।

তবে পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। ট্রাম্প শুল্কের তাণ্ডবে মশা তাড়ানোর এই পণ্য এখন গুদামে পড়ে আছে।

যতক্ষণ পর্যন্ত না যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট চীনের পণ্যের ওপর ১৪৫ শতাংশ শুল্ক বাতিল করছেন, ততদিন পর্যন্ত সেগুলো গুদামেই পড়ে থাকবে।

এজন্য ‘নষ্টের গোড়া’ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের উদ্দেশে ক্ষোভ ঝাড়েন সোরবো টেকনোলজির মালিক লাওনেল শু।

তিনি বলেন, “ট্রাম্প উন্মাদ। তার কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতি আমাদের জন্য ভীষণ কঠিন হয়ে পড়েছে।

“আমরা ব্যবসায়ীরা উদ্বেগের মধ্যে দিন কাটাচ্ছি। ট্রাম্প যদি তার মত না বদলান, তাহলে আমাদের কারখানাগুলো জটিল পরিস্থিতির মুখে পড়বে।”

মেলায় বেচা-কেনায় মন্দা       

শুল্ক নিয়ে চীনা ব্যবসায়ীদের উদ্বেগের মধ্যেই বাণিজ্যিক কেন্দ্র গুয়াংজো শহরে শুরু হয়েছে বার্ষিক মেলা, যাতে স্টল দিয়েছেন লাওনেল শুর মতো অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী।

এবছর এই মেলায় ৩০ হাজারের বেশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে, যারা নিজেদের পণ্য প্রদর্শনের জন্য এসেছে।

এই মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে কয়েকটি বিশাল হলজুড়ে, যেগুলোর একেকটির আকার প্রায় ২০০টি ফুটবল মাঠের সমান।

মেলায় লাওনেল শুর দেওয়া স্টলের কাছেই গুয়াংডং সেইলিং ট্রেড কোম্পানির হয়ে আইসক্রিম মেকার বিক্রি করছেন এমি। যুক্তরাষ্ট্র তারও প্রধান ক্রেতা।

ব্যবসার পরিস্থিতি নিয়ে হতাশ এই নারী বিবিসিকে বলেন, “আমরা এরই মধ্যে উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছি। আমাদের সব পণ্য গুদামে রাখা।”

বাণিজ্য মেলায় ঘোরাঘুরি করে মোটামুটি এমন চিত্রই দেখা গেছে। উৎপাদকরা চিন্তিত। ট্রাম্প শুল্ক প্রত্যাহার করা হবে, না কি তাদের অন্য ক্রেতা দেখতে হবে-এনিয়ে তারা সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারছেন না।

স্টলের সামনে লাওনেল শু।

তাদের কেউ কেউ ট্রাম্প শুল্কের জেরে বেইজিং-ওয়াশিংটনের বাণিজ্য যুদ্ধ থামানোর অপেক্ষায় আছেন, কেউবা লাওনেল শুয়ের মতো নতুন বাজারের সন্ধানে তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছেন।

লাওনেল শু জানান, মেলায় অস্ট্রেলিয়ান কয়েকজন ক্রেতার সঙ্গে তার কথা হয়েছে। তারা চীনাদের সঙ্গে দর কষাকষি করে পণ্যের দাম কমানোর আশা করছে।

তিনি বলেন, “আমার মনে হয়, শুল্ক নিয়ে ট্রাম্প পিছু হটবেন। হয়তো আগামী এক বা দুই মাসের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।”

গত ২ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি করা সব পণ্যের ওপর সর্বজনীন ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন ট্রাম্প।

পাশাপশি প্রায় ৬০টি দেশের ওপর অতিরিক্ত হারে রিসিপ্রোকাল বা পাল্টা শুল্ক আরোপ করেন তিনি।

পাল্টা শুল্কের তালিকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন দেশ ও চীনের মতো বড় অর্থনীতির দেশ রয়েছে।

ট্রাম্পের ওই ঘোষণার পরপরই বিশ্ব পুঁজিবাজারে ধস নামলে বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর আরোপিত পাল্টা শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত করা হয়।

তবে চীনের পণ্যের ওপর ৩৪ শতাংশ শুল্ক বহাল রাখেন ট্রাম্প।

এর প্রতিক্রিয়ায় চীন যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর শুল্কারোপ করলে কয়েক ধাপে শুল্ক বাড়িয়ে ১৪৫ শতাংশে উন্নীত করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট।

এর পাল্টায় আমেরিকান পণ্যে ১২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয় বেইজিং। 

গুয়াংজো শহরে আয়োজিত বার্ষিক মেলা।

গৃহস্থালী সামগ্রীর দাম বাড়তি

ওয়াশিংটন-বেইজিংয়ের মধ্যে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধ বিপাকে ফেলেছে চীনের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের।

চীনের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাণিজ্যিক কেন্দ্র গুয়াংজো শহরে আয়োজিত বার্ষিক মেলায় অংশ নিয়ে তারা হতাশা জানাচ্ছেন।

মেলায় গৃহস্থালী সামগ্রীর অংশে বিভিন্ন কোম্পানি তাদের নানা ধরনের পণ্য সাজিয়েছে। ওয়াশিং মেশিন থেকে শুরু করে কাপড় শুকানোর যন্ত্র, ইলেকট্রিক টুথব্রাশ, জুসার- কী নেই তাতে।

বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ক্রেতারা মেলায় এসেছেন নিজের চোখে পণ্যগুলো দেখতে এবং সেগুলোর জন্য সরাসরি চুক্তি করতে।

তবে ট্রাম্প শুল্কের প্রভাবে ফুড মিক্সার, ভ্যাকুয়াম ক্লিনারসহ অন্যান্য চীনা পণ্য এখন এতটাই ব্যয়বহুল হয়ে গেছে যে, বেশিরভাগ আমেরিকান কোম্পানির পক্ষে সেই খরচ তাদের গ্রাহকদের ওপর চাপানো সম্ভব হচ্ছে না।

ভোগান্তির শিকার আমেরিকান ব্যবসায়ীরাও  

বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্প শুল্কের জেরে বিশ্বের দুটি বৃহৎ অর্থনীতির দেশের ব্যবসায়ীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।  

দেশ দুটির মধ্যে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধের প্রভাব কেবল ব্যবসা-বাণিজ্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই, এর প্রভাব পড়ছে সাধারণ মানুষের জীবনেও।

বিশেষ করে আমেরিকানদের এখন চীনা গৃহস্থালী সামগ্রী- যেমন ফুড মিক্সার, ভ্যাকুয়াম ক্লিনার উচ্চ মূল্যে কিনতে হচ্ছে, যেটা আগে সস্তায় পাওয়া যেত।

অন্যদিকে পণ্যের দাম বেড়ে চাহিদা কমে যাওয়ায় ক্রেতা পাচ্ছেন না চীনা ব্যবসায়ীরা।

মেলায় পণ্য পরখ করে দেখে নেন এক ক্রেতা।

অনড় চীন

এমন পরিস্থিতিতে নিজেদের অনড় অবস্থান ধরে রেখেছে চীন সরকার। তারা ঘোষণা দিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধ শেষ পর্যন্ত লড়ে যাবে তারা।

গুয়াংজো শহরে আয়োজিত মেলায় অংশ নেওয়া চীনা ব্যবসায়ীদের একাংশও মনে করছে, যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত লড়াই জারি রাখা উচিৎ চীন সরকারের। 

নিজের কোম্পানির জন্য ইলেকট্রিক ওভেন কিনতে মেলায় আসা চীনা নাগরিক হাই ভিয়ান ট্রাম্প শুল্কের প্রভাবকে গুরুত্ব না দিয়ে বলেন, “যদি তারা আমাদের পণ্য নিতে না চায়, তাহলে তারা অপেক্ষা করুক।

“চীনে আমাদের নিজস্ব বাজার তো আছেই। আমাদের সেরা পণ্যগুলো আগে চীনারাই পাবে। বাইরের দেশ পাবে পরে।”

তথ্যসূত্র : বিবিসি

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত