Beta
বুধবার, ৯ অক্টোবর, ২০২৪
Beta
বুধবার, ৯ অক্টোবর, ২০২৪

রাইসির মৃত্যুতে মধ্যপ্রাচ্য ও বিশ্ব রাজনীতিতে কী প্রভাব পড়বে

Raisi_Middleaest
Picture of সকাল সন্ধ্যা ডেস্ক

সকাল সন্ধ্যা ডেস্ক

হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যু বিশ্বকে একাধিক প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। ইরানের অভ্যন্তরীণ রাজণৈতিক পটপরিবর্তনে থেকে শুরু করে মধ্যপ্রাচ্য ও বিশ্ব রাজনীতিতে এই ঘটনা কতটা প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে চলছে নানা আলোচনা।

মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক পর্যবেক্ষকদের মতে, রাইসির মৃত্যুর ঘটনা ইরানকে ক্ষমতাকেন্দ্রিক অনিশ্চয়তায় ঠেলে দিয়েছে। প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের হারিয়ে ইরান এখন একাধিক ফ্রন্টে অভ্যন্তরীণ এবং ভূ-রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি।

বিশ্ব রাজনীতির বিশেষজ্ঞেরা মনে করছেন, রাইসির আকস্মিক মৃত্যু ও ইরানের রাজনীতির এই টালমাটাল অবস্থায় মধ্যপ্রাচ্যে সংঘর্ষ আরও জটিল রূপ নিতে পারে।

বিশেষ করে গাজায় চলমান যুদ্ধের কারণে আঞ্চলিক উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে পরিস্থিতি এমনিতেই বেশ জটিল। তার অকালমৃত্যুতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে পুরো মধ্যপ্রাচ্যে। রাইসি এমন এক সময়ে নিহত হলেন, যখন ইতিহাসের ভয়াবহতম সংকটকাল পার করছে মধ্যপ্রাচ্য।

সিএনএনের বিশ্লেষণ বলছে, “হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের যুদ্ধ এবং গত সাত মাস ধরে গাজায় উদ্ভূত মানবিক বিপর্যয় বিশ্বব্যাপী জনমতকে উদ্দীপ্ত করেছে ও মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বাড়িয়েছে।”

ইব্রাহিম রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টারের ধ্বংসাবশেষ।

অভ্যন্তরীণ ক্ষমতার লড়াইয়ের বাইরে, ইরান আঞ্চলিক প্রতিপক্ষ, বিশেষ করে ইসরায়েলের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মুখোমুখি। ইসরায়েলের সঙ্গে হামাসের সংঘর্ষে ইরানের ভূমিকা ছিল সর্বজনবিদিত। যুদ্ধাস্ত্র, আগ্নেয়াস্ত্র, অর্থ দিয়ে তো বটেই, হামাস নেতাদের নিরাপত্তাও দিয়েছে রাইসির প্রশাসন।

শুধুমাত্র হামাসকে সমর্থনই নয়, গত মাসে সরাসরি সংঘর্ষ বাঁধে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে। এ নিয়েও উত্তপ্ত হয় মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি। ইরানের বন্ধু রাষ্ট্র সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেটে ইসরায়েলের হামলার জবাবে গত ১৩ এপ্রিল ইসরায়েলে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় তেহরান। এরপর আর সরাসরি হামলা না চালালেও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে হামাস ও হিজবুল্লাহকে সহায়তা অব্যাহত রেখেছে ইরান।

রাইসির মৃত্যু ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি এবং পশ্চিমাদের সঙ্গে তার উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্কের উদ্বেগকেও আরও বাড়িয়েছে। ইরানের পারমাণবিক বোমা তৈরিতে সক্ষমতার কাছাকাছি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ আন্তর্জাতিক নিন্দা ও পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তারের আশঙ্কা বাড়িয়ে তুলেছে। মধ্যপ্রাচ্যের বাইরে, ইউক্রেনের মতো বিরোধপূর্ণ অঞ্চলে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর প্রতি ইরানের কথিত সমর্থন তার আন্তর্জাতিক অবস্থানকে আরও জটিল করে তোলে।

দ্য অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের মতে, ইরানের প্রভাব মধ্যপ্রাচ্য ও ইসরায়েলের সঙ্গে তার প্রতিদ্বন্দ্বীতা ছাড়িয়ে বিশ্বজুড়ে বিস্তৃত। পশ্চিমা দেশগুলো ও ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরেই তেহরানের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচির আড়ালে পরমাণু অস্ত্র বানানোর চেষ্টার অভিযোগ করে আসছে। ইসরায়েলকে মধ্যপ্রাচ্যের একমাত্র পারমাণবিক শক্তিধর দেশ বলে মনে করা হয়। তবে দেশটি কখনোই এ ধরনের অস্ত্র থাকার কথা স্বীকার করেনি। ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যেও ইরান রাশিয়ার প্রধান মিত্র হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।

তেহরানের দক্ষিণে অবস্থিত বুশেহের নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টর।

গাজায় যুদ্ধের আগে থেকেই ইসরায়েল ও ইরান পরস্পরের বিরুদ্ধে বছরের পর বছর ধরে গোপন অভিযান এবং সাইবার আক্রমণের ছায়া যুদ্ধে লিপ্ত ছিল। গত মাসে এটি সরাসরি সামরিক সংঘর্ষে রুপ নেয়। ইসরায়েল ও হামাসের চলমান সংঘাতে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে ইরানের মিত্ররাও জড়িয়ে পড়েছে। ফলে প্রতিটি আক্রমণ এবং পাল্টা আক্রমণ পশ্চিম এশিয়ায় একটি বৃহত্তর সংঘাতে পরিণত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি করেছে। আঞ্চলিক বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, রবিবারের মারাত্মক দুর্ঘটনার ফলে এই অস্থিতিশীল পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।

সোমবার, ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কৌশলগত কাউন্সিল বলেছে, ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান তার সর্বোচ্চ নেতা খামেনির অধীনে ‘নিশ্চিতভাবে তার পররাষ্ট্র নীতির এজেন্ডা অনুসরণের’ পরিকল্পনা করেছে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “পররাষ্ট্র নীতির অঙ্গনে তাদের সক্রিয় উপস্থিতির সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ও তার শীর্ষ কূটনীতিক ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করতে যা যা করা সম্ভব তা করেছেন।” এ থেকে বোঝা যায় ইরান তাদের পররাষ্ট্রনীতিতে খুব একটা বদল আনবে না।

বিশ্লেষকরা বলছেন, রাইসির মৃত্যুর পর স্বল্পমেয়াদে ইরানে স্থিতিশীলতা বজায় রাখার চেষ্টাকে প্রাধান্য দেবে এবং আয়াতুল্লাহ খামেনির নির্দেশনায় বিদ্যমান নীতিগুলো অব্যাহত রাখবে। মধ্যমেয়াদে, ইরানের পরবর্তী প্রেসিডেন্টের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করবে। তেহরান আঞ্চলিক উত্তেজনা বৃদ্ধি না করে তার কৌশলগত উদ্দেশ্যগুলো অর্জন বা সুসংহত করতে চাইবে। তবে দীর্ঘমেয়াদে ইরান পশ্চিম এশিয়ায় বড় শক্তি হয়ে ওঠার লক্ষ্য থেকে পিছু হটবে না।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত