বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের ওপর হামলা ও মন্দির ভাংচুরের ঘটনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে ভারতের পার্লামেন্টে।
সাম্প্রতিক সময়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন ও মন্দিরে হামলার বিভিন্ন ঘটনার কথা উল্লেখ করে এসব ঘটনার প্রেক্ষাপটে মানবাধিকার লঙ্ঘনের আশঙ্কায় ভারতীয় পার্লামেন্ট লোকসভার সদস্যরা বেশ কয়েকটি প্রশ্ন উত্থাপন করেন বলে বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে এনডিটিভি।
জবাবে ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কীর্তি বর্ধন সিং পার্লামেন্ট বলেন, “সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজনসহ বাংলাদেশের সকল নাগরিকের জীবন ও স্বাধীনতা রক্ষা করার দায়িত্ব প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশের সরকারের ওপরেই বর্তায়।”
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্মীয়ভাবে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে।
এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে উদ্বেগ জানানোর পাশাপাশি হিন্দু সম্প্রদায়সহ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজনের নিরাপত্তা নিশ্চিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
তবে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের হামলার বিষয়টিকে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে অতিরঞ্জিত করা হচ্ছে।
গত ৫ সেপ্টেম্বর ভারতের সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছিলেন, বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর আক্রমণের ঘটনাগুলো অনেক ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেখানো হচ্ছে, আর সে কথা তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদীকেও জানিয়েছেন।
ড. ইউনূসের যুক্তি, বাংলাদেশে হিন্দুরা মূলত আওয়ামী লীগ সমর্থক এমন একটা ধারণা আছে– আর অভ্যুত্থানের পর যেহেতু শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের সমর্থকদের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত ক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছে, তাই হিন্দুদেরও কেউ কেউ এ ধরনের রাজনৈতিক হামলার শিকার হয়েছেন।
এরপর অতি সম্প্রতি বাংলাদেশের তথ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বিবিসি হিন্দকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে সে দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব তাদের সরকারের, এটা নিয়ে ভারতের বিচলিত বা উদ্বিগ্ন না হলেও চলবে।
এর মধ্যে বাংলাদেশ সনাতনী জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার ও কারাগারে পাঠানোকে কেন্দ্র করে গত মঙ্গলবার চট্টগ্রাম আদালত এলাকায় বিক্ষোভ করেন তার অনুসারীরা। একপর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও আইনজীবীদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় চিন্ময়ের অনুসারীদের। এতে এক আইনজীবী নিহত হন।
এই ঘটনা ঘিরে চট্টগ্রামে অন্তত তিনটি মন্দিরে হামলা-ভাংচুর হয়েছে বলে বৃহস্পতিবার এনডিটিভির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
এমন প্রেক্ষাপটেই বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর হামলা ও মন্দির ভাংচুরের বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে ভারতের পার্লামেন্টে প্রশ্ন তোলেন সদস্যরা।
এনডিটিভি জানিয়েছে, ভারতের পার্লামেন্টের কয়েকজন সদস্য দেশটির সরকারের কাছে জানতে চান, বাংলাদেশে হিন্দু মন্দির ও দেব-দেবীর প্রতিমা ভাংচুরের ঘটনা বেড়েছে কিনা এবং এই বিষয়টি নিয়ে ভারত সরকার প্রতিবেশী বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে কোনও আলোচনা করেছে কিনা।
এছাড়াও এ ধরনের ঘটনা বন্ধে বাংলাদেশের সরকারের পদক্ষেপ সম্পর্কেও ভারত সরকারের কাছে তথ্য জানতে চেয়েছেন ভারতের পার্লামেন্ট সদস্যরা।
পার্লামেন্ট সদস্যদের এসব প্রশ্নের জবাবে ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কীর্তি বর্ধন সিং এসব বিষয়ে অবগত থাকার কথা উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, “গত কয়েক মাসে বাংলাদেশে হিন্দু মন্দির ও দেব-দেবীর প্রতিমা ভাংচুরের একাধিক ঘটনা ঘটেছে। দুর্গা পূজার সময়ে ঢাকার তাঁতীবাজারে পূজা মণ্ডপে হামলা ও সাতক্ষীরার যশোরেশ্বরী কালী মন্দিরে চুরির ঘটনার বিষয়ে ভারত সরকার গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
এর পাশাপাশি সকল সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজনের এবং তাদের উপাসনালয়ের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য ভারত সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে বলেও পার্লামেন্টকে জানান দেশটির পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।