কিন্তু পুরো ২০২৪ জুড়ে বিশ্বের দৃষ্টি নিবদ্ধ ছিল যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের দিকে। একে বৈশ্বিক গণতন্ত্রের ভবিষ্যতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সূচক হিসেবে দেখা হচ্ছিল। তখনো স্পষ্ট ছিল না যে রিপাবলিকান পার্টি কোন পথে এগোবে: ট্রাম্পের মতো এক জনতুষ্টীবাদী অগণতান্ত্রিক নেতার দিকে, নাকি নিকি হ্যালির মতো রোনাল্ড রিগানের আদর্শে আন্তর্জাতিকতাবাদী কোনও রিপাবলিকানের দিকে?
রিপাবলিকান প্রাইমারিতে ট্রাম্পের সাফল্যের পর প্রশ্ন উঠল, ট্রাম্প কি অসহিষ্ণুতা, বিদেশিদের প্রতি বিদ্বেষ এবং ষড়যন্ত্র তত্ত্বের দিকে ঝুঁকবেন? না কি ইতিবাচকভাবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও জাতীয় শক্তি বিষয়ে মনোযোগ দিয়ে নিজের সমর্থন ভিত্তি বিস্তৃত করবেন? গণতন্ত্রপন্থী কর্মীরা হতাশা ও উদ্বেগের সঙ্গে দেখলেন যে, ট্রাম্প প্রথম পথটি বেছে নিয়েছেন—বর্ণবাদ ও ভীতির গভীরে ডুব দিয়ে প্রতিশোধ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেন।
তবে, যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনকে সরাসরি স্বৈরাচারের পক্ষে ভোট হিসেবে দেখা ঠিক হবে না। মাত্র ১ কোটি ৭০ লাখ আমেরিকান রিপাবলিকান প্রাইমারিতে ট্রাম্পের পক্ষে ভোট দিয়েছেন—যা তার প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিপক্ষে নিরঙ্কুশ বিজয় হলেও, এটি নিবন্ধিত ভোটারের মাত্র ১০ শতাংশ এবং যোগ্য ভোটারের ৭ শতাংশ।
নির্বাচনের আগের সপ্তাহে ১ লাখ ২০ হাজার ভোটারের ওপর পরিচালিত এপি জরিপে দেখা যায়, ট্রাম্পের পক্ষে সমর্থনের মূল কারণগুলো ছিল অর্থনীতি নিয়ে উদ্বেগ, বিশেষ করে মুদ্রাস্ফীতির প্রভাব এবং অভিবাসন। অর্থনৈতিক উদ্বেগ বিশেষভাবে তরুণ এবং সংখ্যালঘু ভোটারদের মধ্যেও অপ্রত্যাশিতভাবে তার জনপ্রিয়তা বাড়িয়েছে।
এ ধরনের নীতি বিষয়ক উদ্বেগ এতটাই শক্তিশালী ছিল যে, যেসব ভোটারের মধ্যে অধিকাংশই মনে করতেন ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট হওয়ার নৈতিক যোগ্যতা নেই, তাদের মধ্যে দশ শতাং তাকে ভোট দিয়েছেন। প্রায় অর্ধেক ভোটার, যারা বলেছিলেন তারা "খুব উদ্বিগ্ন" যে ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সি যুক্তরাষ্ট্রকে স্বৈরাচারের দিকে নিয়ে যাবে, তাদেরও ১০ শতাংশ তাকে ভোট দিয়েছেন।
কয়েক মাস ধরে বিশ্লেষকরা বলে আসছিলেন, এটি একটি "পরিবর্তনের নির্বাচন" যেখানে দুই-তৃতীয়াংশ ভোটার বিশ্বাস করছিলেন যে দেশ ভুল পথে এগোচ্ছে। ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস উচ্চ মূল্য, অপ্রাপ্য আবাসন এবং ভালো চাকরির সুযোগ কমে যাওয়ার বিষয়ে ভোটারদের উদ্বেগ কমানোর মতো নীতি প্রস্তাব দিতে ব্যর্থ হন। তিনি জনসাধারণকে বিশ্বাস করাতে পারেননি যে তিনি প্রকৃত পরিবর্তন আনবেন, কারণ তিনি জো বাইডেনের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
যখন ভোটাররা কৌশলগত কারণে স্বৈরাচারী মনোভাব সম্পন্ন নেতাদের নির্বাচন করেন, তখন তারা সাধারণত তাদের প্রার্থীজীবনের নীতিগত প্রতিশ্রুতির সাথে যুক্ত প্রতিশোধ, ভীতি এবং ক্ষমতার লোভের বোঝা লাভ করেন।