Beta
মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০২৪
Beta
মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০২৪

আবার
এল যে
ট্রাম্প

বিশ্বজুড়ে বছরটি ঐতিহাসিক নির্বাচনের বছর। শুরু থেকেই এটা স্পষ্ট ছিল যে, বৈশ্বিক গণতান্ত্রিক বিকাশে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। বিভিন্ন দেশ এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রবণতার মানুষ যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক মেরুকরণ ক্রমেই তীব্রতর হওয়া এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার সম্ভাবনা বাড়তে থাকায় গভীর উদ্বেগে তাকিয়ে ছিলেন। এসব মানুষ স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও আইনের শাসনকে মূল্য দেয়; এদের মধ্যে সরকার প্রধান, বিরোধী দলের নেতা, নাগরিক সমাজের সদস‍্য, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক ও সাধারণ নাগরিকরা আছেন। নির্বাচনে ট্রাম্পের নিশ্চিত বিজয়ের পর যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘ গণতান্ত্রিক যাত্রার প্রশংসাকারীরা – যদিও তারা দেশটির সব বৈশ্বিক নীতি সমর্থন করেন না – এখন ভাবছেন সামনে কী আসছে এবং বিশ্বজুড়ে গণতন্ত্রের ওপর তার প্রভাব কী হতে পারে।

যেভাবে বিশ্বকে বদলাবেন ট্রাম্প

দুটি প্রধান বিষয় স্পষ্ট। প্রথমত, ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের মতোই (সব প্রেসিডেন্টের প্রশাসনের মতোই), কর্মীরাই নীতি নির্ধারণে ভূমিকা রাখবে এবং বিভিন্ন গোষ্ঠী প্রভাব বিস্তারে প্রতিযোগিতা করবে। কিছু গোষ্ঠী প্রশাসনিক কাঠামো ও আমেরিকার পররাষ্ট্রনীতিতে আমূল পরিবর্তনের ধারণা পোষণ করবে, আর কিছু থাকবে প্রচলিত মতামতের দিকে। তবে এবার, অধিকতর চরম গোষ্ঠীগুলোর প্রভাব বেশি থাকবে। তারা তাদের সুবিধা কাজে লাগিয়ে আরও মধ্যপন্থী কণ্ঠগুলোকে সরিয়ে দিতে, তারা যাদের "গভীর রাষ্ট্র" হিসেবে দেখে সেই বেসামরিক ও সামরিক পেশাজীবীদের স্তরগুলোকে ফাঁকা করতে চেষ্টা করবে। এমনকি সরকারের ক্ষমতা ব্যবহার করে ট্রাম্পের বিরোধী ও সমালোচকদের বিরুদ্ধে লাগার চেষ্টাও করতে পারে।

দ্বিতীয়ত, ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতির মূল ধারা—পরিষ্কার লাভ-লোকসানের হিসাব—অপরিবর্তিত রয়েছে। কিন্তু এবারের পরিপ্রেক্ষিত তার প্রথম মেয়াদের চেয়ে অনেক ভিন্ন : আজকের বিশ্ব অনেক বেশি বিপজ্জনক। ট্রাম্পের প্রচারণার ভাষা বিশ্বকে এক প্রলয়ঙ্করী রূপে চিত্রিত করেছে, যেখানে তিনি ও তার দলকে কঠোর বাস্তববাদী হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে যারা বিপদটি বোঝেন। কিন্তু তাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতিতে বাস্তবতার তুলনায় কল্পনাবিলাস অনেক বেশি। এতে ছিল কিছু অলৌকিক দাবি ও সাধারণ কথাবার্তা যাতে যুক্তরাষ্ট্রের সত্যিকারের হুমকিগুলোর কোনো বোঝাপড়া নেই। ট্রাম্প ও তার দল কত দ্রুত এই প্রচারণার কল্পচিত্রটি ছেড়ে দিয়ে বাস্তবের মুখোমুখি হতে পারেন, তার ওপরই হয়তো নির্ভর করবে তারা এই জটিল পরিস্থিতিতে আমেরিকান স্বার্থ রক্ষা করতে সক্ষম হবে কি না।

মিত্র ও প্রতিদ্বন্দ্বীরা

আমেরিকান ভোটাররা তাদের পছন্দ জানিয়েছেন। ওয়াশিংটনের সরকার-যন্ত্র ট্রাম্পের সাথে যে কোনোভাবে খাপ খাইয়ে নিতে বাধ্য হবে। কিন্তু বাকি বিশ্ব? অধিকাংশ মার্কিন মিত্র দেশ ট্রাম্পের বিজয়ে আতঙ্কিত। তারা মনে করছে এটি আমেরিকার ঐতিহ্যবাহী বৈশ্বিক নেতৃত্বের একটি চূড়ান্ত পরাজয় হিসেবে প্রমাণিত হবে। আমেরিকান পররাষ্ট্রনীতির সমালোচনার যথেষ্ট কারণ আছে এবং মার্কিন মিত্ররাও কখনোই তাদের অভিযোগ প্রকাশ করতে বিরত থাকেনি। তবু তারা বুঝেছে যে যুদ্ধ-পরবর্তী সময় তাদের জন্য পূর্ববর্তী সময়ের - যখন ওয়াশিংটন তার দায়িত্ব এড়িয়ে চলেছিল এবং লাখ লাখ মানুষকে চূড়ান্ত মূল্য দিতে হয়েছিল - তুলনায় অনেক ভালো ছিল।

প্রথমবার আমেরিকার জনগণ ট্রাম্পকে নির্বাচিত করার পর মার্কিন মিত্ররা বিভিন্ন সতর্কমূলক কৌশল নিয়েছিল। তবে নিজেদের অভ্যন্তরীণ সব সমস্যা এবং পুতিন ও চীনের নেতার হুমকির কারণে এবার তারা অনেক দুর্বল। মার্কিন মিত্ররা ট্রাম্পকে তুষ্ট করতে নিজনিজ দেশের আইনের সীমায় থেকে প্রচেষ্টা চালাবে। তারা ট্রাম্পকে সেই প্রশংসা ও সুবিধা দেবে যা প্রথম মেয়াদে তার কাছ থেকে অনুকূল পরিবেশ পাওয়ার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হিসেবে প্রমাণিত হয়েছিল। ট্রাম্পের স্বল্প-মেয়াদি লাভ-ক্ষতির হিসাবকেন্দ্রিক মনোভাব মিত্রদের মধ্যেও প্রতিফলিত হতে পারে। তারা নিজেদের পক্ষে যতটুকু নিতে পারে নিতে এবং বিনিময়ে কিছু না দিয়ে এড়িয়ে যেতে চাইবে। এ এমন এক ধরনের কূটনীতি যার সবচেয়ে ভাল ফল হতে পারে মিথ্যা এক পারস্পরিক সহযোগিতার পরিবেশ; আর সবচেয়ে খারাপ যেটা হতে পারে যে সমস্যাগুলো ফুলে ফেঁপে উঠবে।

পুতিন

ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তন মার্কিন প্রতিদ্বন্দ্বীদের জন্য অবারিত সুযোগের দ্বার উন্মোচিত করবে। ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে তিনি রাশিয়ার হাতে ইউক্রেনের কিছু অংশ ছেড়ে দিতে চাপ দেবেন, যা পুতিনের আগ্রাসন থেকে সুবিধা প্রাপ্তি নিশ্চিত করবে। অন্যান্য অনেক নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির বিপরীতে এটি বিশ্বাসযোগ্য। কারণ ট্রাম্প তার চারপাশ ইউক্রেন-বিরোধী ও পুতিনপন্থী পরামর্শদাতা নিয়ে ঘিরে রেখেছেন। তার ইউক্রেন পরিকল্পনাও সম্ভবত বাস্তবায়িত হবে, কারণ এটি সম্পূর্ণ প্রেসিডেন্টের বিশেষাধিকারের অধীনে পড়ে। একমাত্র প্রশ্ন হলো- পরবর্তী সময়ে ইউক্রেনের বাকি অঞ্চল দখল সুযোগ সবসময় থাকবে- এই বোঝাপড়ার ভিত্তিতে পুতিন আংশিক আত্মসমর্পণ মেনে নেবেন? নাকি তিনি ট্রাম্পের দাবিকে প্রত্যাখ্যান করে তাৎক্ষণিকভাবে পূর্ণ আত্মসমর্পণ দাবি করবেন।

চীন

চীনের জন্য সুবিধাগুলি সরাসরি নয়। কারণ ট্রাম্পের কয়েকজন প্রধান পরামর্শক এই ভাবনায় বুঁদ যে যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপে তার স্বার্থ বিসর্জন দিতে পারে এবং একই সাথে পূর্ব এশিয়ায় চীনের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধও জোরদার করতে পারে।

এশিয়ায় ট্রাম্প প্রশাসনের প্রাথমিক পদক্ষেপগুলো প্রথমে কঠোর মনে হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যদি ট্রাম্প চীনা পণ্যের উপর বিশাল শুল্ক আরোপ করতে পারেন, তাহলে চীনের অর্থনীতিতে কিছু প্রভাব পড়তে পারে। যদিও মার্কিন ভোক্তাদের ওপর তাৎক্ষণিক এবং আরও গুরুতর প্রভাব পড়বে। এবং ট্রাম্প সম্ভবত এশিয়ায় মার্কিন সামরিক শক্তি প্রদর্শন করতে চাইবেন যাতে তিনি বাইডেনের দুর্বলতার বিরুদ্ধে একটি দৃঢ় বার্তা দিতে পারেন।

কিন্তু এ সম্ভাবনা কম যে এই অতিউচ্চ শুল্ক নীতিগুলোকে অর্থবহভাবে পরিবর্তন করবে বা এই সাময়িক কঠোরতা এশিয়ায় দীর্ঘস্থায়ী সামরিক বৃদ্ধি ঘটাবে। প্রথমত, ট্রাম্প তাইওয়ানকে রক্ষায় শর্ত আরোপ করেছেন, যেটি হলো তাইপেইকে প্রতিরক্ষায় তার ব্যয় চারগুণ করতে হবে যাতে শক্তিশালী আমেরিকান সমর্থনের যোগ্য হতে পারে। এই কল্পনাপ্রসূত কৌশলটি সম্ভবত তার নিজস্ব অসংগতির কারণে ভেঙে পড়তে পারে, এবং এতে চীন-রাশিয়া জোটটি উভয় প্রধান ক্ষেত্রে মার্কিন প্রত্যাহারের সম্ভাবনা দেখতে পাবে।

যুদ্ধ বনাম শান্তি

প্রচারণার সময় ট্রাম্প ও ভ্যান্স নিজেদের শান্তির প্রতীক হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। যুদ্ধবাজ হিসেবে উপহাস করেছেন কমালা হ্যারিস ও তার মিত্রদের।

ট্রাম্পের অন্যতম বিশ্বস্ত পরামর্শদাতা স্টিফেন মিলার বিষয়টির একটি চিত্র উপস্থাপন করেন এক্সে। এক পোস্টে তিনি বলেন, "যদি আপনি কমালার জন্য ভোট দেন, তাহলে লিজ চেনি প্রতিরক্ষা সচিব হবেন। আমরা ডজন খানেক দেশ আক্রমণ করব। মিশিগানের ছেলেরা মধ্যপ্রাচ্যের ছেলেদের সাথে যুদ্ধে নামবে। লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা যাবে। আমরা রাশিয়া আক্রমণ করব। আমরা এশিয়ার দেশগুলো আক্রমণ করব। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ। পারমাণবিক শীতলতা।”

ট্রাম্পকে এরকম এক শান্তিপ্রিয় নেতা হিসেবে উপস্থাপনা যে কারো জন্যই বিস্ময়কর হতে পারে, যারা তার প্রথম মেয়াদে উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে "আগুন ও ক্রোধ" হুমকি বা ইরানের শীর্ষ জেনারেলের হত্যার কথা মনে রেখেছেন। তার প্রচারণার নিখাদ বিচ্ছিন্নতাবাদী বার্তা এমন একটি বাধ হতে পারে যা সংকটময় মুহূর্তে ট্রাম্প প্রশাসনের পররাষ্ট্রনীতিকে পঙ্গু করে তুলতে পারে। কিন্তু ট্রাম্প এমন পরিস্থিতি থেকে মুক্ত হয়ে বের হয়ে আসতে সক্ষম

ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা নীতি নির্ধারণের সুযোগ পেয়েছেন এবং তার হয়ে কাজের অপেক্ষায় থাকা পুরুষ ও নারীদের মধ্যে প্রোথিত বিশাল ক্ষমতা তার হাতে রয়েছে। ট্রাম্পের দলে আত্মবিশ্বাসের অভাব নেই। বিশ্ব শিগগিরই জানতে পারবে তাদের যথেষ্ট প্রজ্ঞাও আছে কি না।

যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়াই গণতন্ত্র?

বিশ্বজুড়ে বছরটি ঐতিহাসিক "নির্বাচনের বছর"। শুরু থেকেই এটা স্পষ্ট ছিল যে, বৈশ্বিক গণতান্ত্রিক বিকাশে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। বিভিন্ন দেশ এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রবণতার মানুষ যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক মেরুকরণ ক্রমেই তীব্রতর হওয়া এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার সম্ভাবনা বাড়তে থাকায় গভীর উদ্বেগে তাকিয়ে ছিলেন। এসব মানুষ স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও আইনের শাসনকে মূল্য দেয়; এদের মধ্যে সরকার প্রধান, বিরোধী দলের নেতা, নাগরিক সমাজের সদস‍্য, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক ও সাধারণ নাগরিকরা আছেন।

নির্বাচনে ট্রাম্পের নিশ্চিত বিজয়ের পর যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘ গণতান্ত্রিক যাত্রার প্রশংসকারীরা - যদিও তারা দেশটির সব বৈশ্বিক নীতি সমর্থন করেন না - এখন ভাবছেন সামনে কী আসছে এবং বিশ্বজুড়ে গণতন্ত্রের ওপর তার প্রভাব কী হতে পারে।

গত দেড় দশক ধরে বিশ্বজুড়ে স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের উত্থান গণতান্ত্রিক সমর্থকদের চরম সতর্ক অবস্থায় রেখেছে। গত বছর অগণতান্ত্রিক আন্দোলন ও সরকারগুলিকে প্রতিহত করার সফল প্রচেষ্টা এই দীর্ঘায়িত "গণতান্ত্রিক মন্দা" উল্টানোর সম্ভাবনা তৈরি করেছিল। কিন্তু ট্রাম্পের বিজয় সেই আশাকে আঘাত করেছে। ইলেকটোরাল কলেজ ও জনপ্রিয় ভোটে তার বিজয় যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক বন্ধু ও মিত্রদেরকে এই প্রশ্নের মুখে ফেলেছে : ট্রাম্পের রাষ্ট্রপতিত্ব কি তাদের কাছ থেকে আরও বোঝা ভাগাভাগি দাবি করবে, না কি তাদের একেবারে পরিত্যাগ করবে? যুক্তরাষ্ট্র কি উদার গণতন্ত্র হিসেবে টিকে থাকবে, না কি এর প্রতিষ্ঠানগুলো ধীরে ধীরে এমনভাবে ক্ষয়ে যাবে যে সেগুলি আর চেনা যাবে না বা মেরামত করা যাবে না?

প্রাথমিক বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে যে ট্রাম্পের বিজয় অর্থনীতি এবং অভিবাসন সংক্রান্ত ইস্যুগুলির প্রতি সমর্থনের ফলাফল হতে পারে, তার স্বৈরতান্ত্রিক প্রবণতাগুলির প্রতি সমর্থনের জন্য নয়। তবে যে কারণেই আমেরিকানরা ট্রাম্পকে সমর্থন করুক না কেন, তার প্রচারণা স্পষ্ট করেছে যে, তার এবং তার প্রশাসনের অগণতান্ত্রিক প্রবণতাগুলির ওপর কোনো বৈশ্বিক নিয়ন্ত্রণ থাকবে না।

গত দশকে অন্যান্য পিছু হটতে থাকা গণতন্ত্রগুলোর ক্ষেত্রে যেমন দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রে গণতান্ত্রিক নিয়মকানুনের রক্ষাকবচগুলো রক্ষা দায়িত্ব কংগ্রেস, রাজ্য ও স্থানীয় সরকার, নাগরিক প্রশাসন, সশস্ত্র বাহিনী ও স্থানীয় পুলিশ, ব্যবসা, নাগরিক প্রতিষ্ঠান এবং সম্ভবত সর্বোপরি আদালতের ওপর নির্ভর করবে। সংবিধান ও আইনের শাসন ধরে রাখার ক্ষেত্রে তাদের সফলতা বা ব্যর্থতার ওপরই আসন্ন বছরগুলোতে বৈশ্বিক গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ অনেকাংশে নির্ভর করবে।

উত্থান ও পতন

বিশ্বজুড়ে স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের প্রসারে সমর্থন কোনও নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের ওপর নির্ভর করেনি। ১৯৭০-এর দশকের শেষ থেকে, প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের বৈশ্বিক মানবাধিকারের ওপর গুরুত্বারোপ থেকে শুরু করে একুশ শতকের প্রথম দশকে জর্জ ডব্লিউ বুশের মেয়াদ পর্যন্ত, বিশ্বের বিভিন্ন গণতান্ত্রিক দল, রাজনীতিবিদ এবং আন্দোলন ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান উভয়ের সহযোগিতায় এগিয়েছে। এই অগ্রগতি সবচেয়ে বেশি দৃশ্যমান হয়েছিল দু'জন রিপাবলিকান (রোনাল্ড রেগান ও জর্জ এইচ. ডব্লিউ. বুশ) এবং একজন ডেমোক্র্যাট (বিল ক্লিনটন) প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন।

তবে বুশের দ্বিতীয় প্রেসিডেন্সির শেষের দিকে বৈশ্বিক গণতান্ত্রিক অগ্রগতি থেমে যায়। ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যর্থ হস্তক্ষেপ, যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুরু হওয়া বৈশ্বিক আর্থিক সংকট এবং চীন ও রাশিয়ার মতো স্বৈরতান্ত্রিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের শক্তি ও আত্মবিশ্বাসের উত্থান বৈশ্বিক রাজনীতিকে স্বৈরতন্ত্রের দিকে ঠেলে দেয়।

ফ্রিডম হাউজের বার্ষিক জরিপ অনুসারে, ২০০৬ সাল থেকে স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের পতন শুরু। কর্তৃত্ববাদী জনতুষ্টকারীরা নির্বাচনে জয়ী হয়েছে। তাদের ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে নিয়ন্ত্রণ ও ক্ষমতার ভারসাম্য ধ্বংস করেছে এবং প্রতিপক্ষকে দমন করেছে।

শতকের শুরু থেকে তুরস্ক ও ভেনেজুয়েলাতে এই প্রক্রিয়া শুরু হয় যেখানে উদীয়মান এবং এমনকি দৃঢ় গণতন্ত্রের দেশগুলোতে জনতুষ্টিবাদী নেতাদের উত্থান দেখা যায়। তারা নিজেদের "দুর্নীতিগ্রস্ত অভিজাত" ও "অভ্যন্তরীণ শত্রুদের" বিরুদ্ধে "জনগণের রক্ষক" হিসেবে উপস্থাপন করেছেন।

বৃহত্তর কিছু দেশ, যেমন ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মেক্সিকো, এবং ফিলিপাইনেও গণতন্ত্রের উল্লেখযোগ্য পশ্চাদপসরণ হয়েছে। যদিও দেশগুলো এখনও নির্বাচনী গণতন্ত্রের ন্যূনতম মানদণ্ডে পৌঁছায় কি না তা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা একমত নন।

অন্যদিকে শ্রীলঙ্কার মতো দেশগুলোতে গণতন্ত্র ও দুর্নীতিপরায়ণ জনতুষ্টীবাদী নেতাদের মাঝে দোলাচল দেখা গিয়েছে, যেখানে পর্যায়ক্রমে গণতন্ত্রপন্থী প্রেসিডেন্ট এবং জনতাবাদী নেতারা ক্ষমতায় এসেছে।

নিঃশব্দে বিদায়?

যদিও এই “নির্বাচনের বছর” এখন পর্যন্ত গণতন্ত্রের জন্য মিশ্র ফলাফল বয়ে এনেছে, এতে অনেক আশা দেখার সুযোগও তৈরি হয়েছে। দেশের রাজনৈতিক বিভাজন কাটিয়ে ওঠার জন্য “বৈপ্লবিক ভালোবাসা”র সাহসী কৌশলের ওপর ভিত্তি করে তুরস্কের রাজনৈতিক বিরোধীরা মার্চ মাসে পৌর নির্বাচনে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে। একই মাসে সেনেগালে দুই মেয়াদ পূর্ণ করা প্রেসিডেন্ট মাকি সল মেয়াদ সীমা প্রত‍্যাহারে ব্যর্থ হওয়ার পর, বিরোধী প্রার্থী ৪৪ বছর বয়সী বাসিরু দিওমায়ে ফায়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে গণতান্ত্রিক পশ্চাদপসরণ থামিয়েছেন। মে মাসে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রমবর্ধমান দুর্নীতিগ্রস্ত শাসক দল আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস (এএনসি) নির্বাচনে পরাজিত হয়ে পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায় এবং প্রধান বিরোধী দল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্সের সাথে জোট গঠনে বাধ্য হয়। ভারতের শক্তিশালী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এপ্রিল ও মে মাসে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে তৃতীয় মেয়াদে জয়ী হলেও তার বিজেপি দলের সংসদীয় আসন উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে।

সবচেয়ে চমকপ্রদ বিষয় হলো, ভেনেজুয়েলার গণতান্ত্রিক বিরোধীরা ব্যাপক দমন-পীড়ন, ভীতি ও সম্পদের অভাব সত্ত্বেও তাদের নিজেদের বিভাজন কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয় এবং জুলাইয়ের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নিকোলাস মাদুরোকে পরাজিত করে। মাদুরো পরাজয় স্বীকার করতে অস্বীকার করলে, বিরোধীরা নজরকাড়া তৎপরতা ও সংগঠন প্রদর্শন করে। তারা দেশের ৮০ শতাংশেরও বেশি ভোটকেন্দ্রের ফলাফলের কপি উপস্থাপন করে প্রমাণ করে যে তাদের প্রার্থী এডমুন্ডো গঞ্জালেস বিশাল ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছেন।

এই ফলাফলগুলো—এবং আগস্টে বাংলাদেশের ছাত্র-নেতৃত্বাধীন বিপ্লব, যা শেখ হাসিনার শাসনকে উৎখাত করেছে, যিনি বিশ্বের একমাত্র নারী স্বৈরশাসক হিসেবে পরিচিত—গণতান্ত্রিক সংকটের অবসান ঘটাতে পারেনি। তবে সব মিলিয়ে পরিস্থিতি একটি মোড়ের কাছাকাছি গেছে। এই মোড়টি আরও কাছে আসে অক্টোবরের শেষের দিকে, যখন বতসোয়ানার প্রধান বিরোধী দলীয় জোট দুর্নীতিগ্রস্ত ও নিপীড়নমূলক শাসক দল বতসোয়ানা ডেমোক্রেটিক পার্টিকে পরাজিত করে; যারা ১৯৬৬ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে নিরবচ্ছিন্নভাবে ক্ষমতায় ছিল। এই ফলাফলটি আফ্রিকার অনেক দেশে আলোড়ন সৃষ্টি করে, যেখানে বতসোয়ানা দীর্ঘদিন ধরে একটি সফল উন্নয়নের মডেল হিসেবে বিবেচিত হয়েছে, যদিও এটি আকারে ছোট।

দৃষ্টি যুক্তরাষ্ট্রে

কিন্তু পুরো ২০২৪ জুড়ে বিশ্বের দৃষ্টি নিবদ্ধ ছিল যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের দিকে। একে বৈশ্বিক গণতন্ত্রের ভবিষ্যতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সূচক হিসেবে দেখা হচ্ছিল। তখনো স্পষ্ট ছিল না যে রিপাবলিকান পার্টি কোন পথে এগোবে: ট্রাম্পের মতো এক জনতুষ্টীবাদী অগণতান্ত্রিক নেতার দিকে, নাকি নিকি হ্যালির মতো রোনাল্ড রিগানের আদর্শে আন্তর্জাতিকতাবাদী কোনও রিপাবলিকানের দিকে?

রিপাবলিকান প্রাইমারিতে ট্রাম্পের সাফল্যের পর প্রশ্ন উঠল, ট্রাম্প কি অসহিষ্ণুতা, বিদেশিদের প্রতি বিদ্বেষ এবং ষড়যন্ত্র তত্ত্বের দিকে ঝুঁকবেন? না কি ইতিবাচকভাবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও জাতীয় শক্তি বিষয়ে মনোযোগ দিয়ে নিজের সমর্থন ভিত্তি বিস্তৃত করবেন? গণতন্ত্রপন্থী কর্মীরা হতাশা ও উদ্বেগের সঙ্গে দেখলেন যে, ট্রাম্প প্রথম পথটি বেছে নিয়েছেন—বর্ণবাদ ও ভীতির গভীরে ডুব দিয়ে প্রতিশোধ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেন।

তবে, যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনকে সরাসরি স্বৈরাচারের পক্ষে ভোট হিসেবে দেখা ঠিক হবে না। মাত্র ১ কোটি ৭০ লাখ আমেরিকান রিপাবলিকান প্রাইমারিতে ট্রাম্পের পক্ষে ভোট দিয়েছেন—যা তার প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিপক্ষে নিরঙ্কুশ বিজয় হলেও, এটি নিবন্ধিত ভোটারের মাত্র ১০ শতাংশ এবং যোগ্য ভোটারের ৭ শতাংশ।

নির্বাচনের আগের সপ্তাহে ১ লাখ ২০ হাজার ভোটারের ওপর পরিচালিত এপি জরিপে দেখা যায়, ট্রাম্পের পক্ষে সমর্থনের মূল কারণগুলো ছিল অর্থনীতি নিয়ে উদ্বেগ, বিশেষ করে মুদ্রাস্ফীতির প্রভাব এবং অভিবাসন। অর্থনৈতিক উদ্বেগ বিশেষভাবে তরুণ এবং সংখ্যালঘু ভোটারদের মধ্যেও অপ্রত‍্যাশিতভাবে তার জনপ্রিয়তা বাড়িয়েছে।

এ ধরনের নীতি বিষয়ক উদ্বেগ এতটাই শক্তিশালী ছিল যে, যেসব ভোটারের মধ্যে অধিকাংশই মনে করতেন ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট হওয়ার নৈতিক যোগ্যতা নেই, তাদের মধ্যে দশ শতাং তাকে ভোট দিয়েছেন। প্রায় অর্ধেক ভোটার, যারা বলেছিলেন তারা "খুব উদ্বিগ্ন" যে ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সি যুক্তরাষ্ট্রকে স্বৈরাচারের দিকে নিয়ে যাবে, তাদেরও ১০ শতাংশ তাকে ভোট দিয়েছেন।

কয়েক মাস ধরে বিশ্লেষকরা বলে আসছিলেন, এটি একটি "পরিবর্তনের নির্বাচন" যেখানে দুই-তৃতীয়াংশ ভোটার বিশ্বাস করছিলেন যে দেশ ভুল পথে এগোচ্ছে। ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস উচ্চ মূল্য, অপ্রাপ্য আবাসন এবং ভালো চাকরির সুযোগ কমে যাওয়ার বিষয়ে ভোটারদের উদ্বেগ কমানোর মতো নীতি প্রস্তাব দিতে ব্যর্থ হন। তিনি জনসাধারণকে বিশ্বাস করাতে পারেননি যে তিনি প্রকৃত পরিবর্তন আনবেন, কারণ তিনি জো বাইডেনের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

যখন ভোটাররা কৌশলগত কারণে স্বৈরাচারী মনোভাব সম্পন্ন নেতাদের নির্বাচন করেন, তখন তারা সাধারণত তাদের প্রার্থীজীবনের নীতিগত প্রতিশ্রুতির সাথে যুক্ত প্রতিশোধ, ভীতি এবং ক্ষমতার লোভের বোঝা লাভ করেন।

যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র টিকবে?

২০২৪ সালের একটি ক্রমবর্ধমান অন্ধকার নির্বাচনী প্রচারের মধ্যে, ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে বিচার বিভাগ, অন্যান্য ফেডারেল এজেন্সি এবং এমনকি সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করবেন তার সমালোচকদের শাস্তি দেওয়ার জন্য, শত্রু মিডিয়াকে শাস্তি দিতে, সিভিল সার্ভিসকে নির্মূল এবং রাজনৈতিককরণের জন্য, এবং অভিবাসীদের ব্যাপকভাবে ধরে তাদের দেশ থেকে বহিষ্কার করার জন্য।

এই সমস্ত কাজই স্বৈরাচারীরা তাদের ক্ষমতা জয় করার পর করে। ভেনিজুয়েলায় হুগো চাভেজ, হাঙ্গেরিতে অর্বান এবং তুরস্কে এরদোয়ান এই পথ অনুসরণ করেছিলেন যখন তারা ক্ষমতায় আসেন।

যারা নিজেদের দেশকে স্বৈরাচারী আকাঙ্ক্ষার কাছে নত হতে দেখেছেন, তারা জানেন যে ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রকে আরো গুরুতর পরীক্ষায় ফেলবে। যদি ট্রাম্প সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তে উৎসাহিত হয়ে তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিগুলি পূর্ণ করার কাছাকাছি চলে যান; এবং তার মিত্রদের প্রকল্প ২০২৫ অনুযায়ী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেন, তবে যুক্তরাষ্ট্র ভারসাম‍্য ও নাগরিক স্বাধীনতার ওপর তার শান্তিকালীন ইতিহাসের সবচেয়ে তীব্র আক্রমণ দেখতে পাবে। এটি ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের তুলনায় অনেক বেশি সুপরিকল্পিত, ব্যাপক ও নিরলস আক্রমণ হবে।

বিশ্বব্যাপী নির্বাচনের বছরে সব উৎসাহজনক লক্ষণ সত্ত্বেও, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি হলো, যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র কি চার বছর ধরে এটিকে বিপর্যস্ত করার চেষ্টার বিরুদ্ধে টিকে থাকতে পারবে? এর উত্তর জানতে কয়েক বছর লাগতে পারে।

ট্রাম্পের বিজয় এবং রাজনৈতিক পুনরুত্থান

২০২৪ সালের ৬ নভেম্বর, ট্রাম্প সেই মুহূর্ত উদযাপন করেন যা তিনি দীর্ঘদিন ধরে প্রত্যাশা করেছিলেন, যা তার প্রথম মন্ত্রিপরিষদের অশান্তি সত্ত্বেও ক্ষমতায় ফেরার ইঙ্গিত দেয়।

ট্রাম্পের পুনঃনির্বাচন ছিল অনেকগুলো কৌশলগত সিদ্ধান্তের ফল। যেমন অর্থনীতি ও অভিবাসনকে গুরুত্ব দেওয়া, আর তার পূর্ববর্তী মেয়াদের বিশৃঙ্খলা এবং বিতর্কিত ইস্যুগুলিকে হালকা করা।

তার ফিরে আসা ছিল অনন্য, যেখানে তিনি অপরাধমূলক অভিযোগ এবং রাজনৈতিক বিপর্যয়ের পরেও জয়লাভ করেন।

মুহূর্ত

ট্রাম্পের প্রচার স্লোগান পুরুষ ভোটারদের, বিশেষত তরুণদের কাছে পৌঁছানোর জন্য কাজের ছিল। তারা বাইডেনের নেতৃত্বে হতাশ হয়েছিল, বিশেষত অর্থনৈতিক ইস্যুগুলির কারণে।

ট্রাম্প লাতিন পুরুষদের, স্যুইং রাজ্যে কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারদের, এবং প্রথমবারের মতো ভোট দেওয়া ভোটারদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সমর্থন লাভ করেন।

অর্থনীতি, অভিবাসন ও অপরাধের মতো পুরুষকেন্দ্রিক ইস্যুতে প্রচারের ফোকাস ট্রাম্পের সমর্থন শক্তিশালী করেছে।

প্রচার কৌশল

ট্রাম্প একটি অপ্রচলিত মিডিয়া কৌশল গ্রহণ করেন। তিনি মূলধারার মিডিয়া এড়িয়ে ডানপন্থী পডকাস্ট ও সামাজিক মাধ্যম প্ল্যাটফর্ম যেমন এক্স ব্যবহার করেন। সেখানে তিনি তরুণ পুরুষ ভোটারদের সাথে সংযোগ স্থাপনে সক্ষম হন।

তার প্রচারে মামলাগুলিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আক্রমণ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। এবং ইলন মাস্কের মতো বাইরের সমর্থকরা স্যুইং রাজ্যে তার প্রচারে সহায়তা করে।

তারুণ্য

ট্রাম্পের প্রচার দলের মধ্যে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ছিল। বিশেষত তার কিছু উপদেষ্টা, যেমন কোরি লেওয়ানডোস্কির সাথে, আরও আক্রমণাত্মক কৌশল চাইছিলেন।

সমাবেশে ট্রাম্পের বক্তৃতা এবং গর্ভপাত বিষয়ে অবস্থান প্রচারে বড় ধরনের উদ্বেগ সৃষ্টি করেছিল। তবে শেষ পর্যন্ত ট্রাম্প কিছু চরম অবস্থান থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নেন।

কমলা হ্যারিসের জন্য বাড়তি সমর্থন নিয়ে উদ্বেগ সত্ত্বেও ট্রাম্পের প্রচার দল আত্মবিশ্বাস ফিরে পায়।

চ্যালেঞ্জ

মার্কিন ব‍্যতিক্রমিতার সমাপ্তি

ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্পর্কে একমাত্র তর্কাতীত বিষয়টি হলো কীভাবে তিনি এই জয় পেলেন। ২০১৬ সালের তুলনায় এবার ট্রাম্প জনপ্রিয় ভোট ও ইলেকটোরাল কলেজ দুটোতেই জয়ী হয়েছেন। প্রায় সব স্তরের জনগণের মধ্যে তার ভোট বেড়েছে। বিশ্বের বাকি দেশগুলোর জন্য ছবিটি স্পষ্ট : আগামী চার বছরের জন্য ট্রাম্পের "মেক আমেরিকা গ্রেট অ‍্যাগেইন" (MAGA) আন্দোলন হবে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির ভিত্তি।

MAGA

এবার ট্রাম্প বিশ্ব রাজনীতি মোকাবেলায় আরও আত্মবিশ্বাসী হবেন। বিশ্বকে তার "আমেরিকা প্রথম" ব্র্যান্ড মানিয়ে নিতে কতটা সফল হবেন সেটা ভিন্ন বিষয়। তবে যে বিষয়টি নিশ্চিত তা হলো, মার্কিন ব‍্যতিক্রমিতার যুগ শেষ। ট্রাম্পের অধীনে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি আর দীর্ঘদিনের আমেরিকান আদর্শ প্রচার করবে না। এর সঙ্গে দুর্নীতিগ্রস্ত পররাষ্ট্রনীতি যুক্ত হয়ে যুক্তরাষ্ট্র সাধারণ একটি মহাশক্তি হিসেবে পরিচিত করবে।

আমেরিকা প্রথম

ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতি দৃষ্টিভঙ্গি তার রাজনীতিতে প্রবেশের সময় থেকেই স্পষ্ট। তার বিশ্বাস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সৃষ্ট মুক্তবাজার আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা সময়ের সাথে সাথে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কাজ করেছে। এই বৈষম্য পরিবর্তন করতে, ট্রাম্প অর্থনৈতিক প্রবাহ যেমন আমদানি ও অভিবাসন সীমিত করতে চান (যদিও বিদেশি সরাসরি বিনিয়োগে তিনি আগ্রহী)। তিনি চান তার মিত্ররা নিজেদের প্রতিরক্ষার দায়িত্ব আরো বেশি করে নিক।

মুক্তবাজার

তিনি বিশ্বাস করেন যে, তিনি রাশিয়ার ভ্লাদিমির পুতিন বা উত্তর কোরিয়ার কিম জং উনের মতো স্বৈরাচারীদের সাথে চুক্তি করতে সক্ষম। যার মাধ‍্যমে বিশ্বের সংকটপূর্ণ এলাকায় উত্তেজনা কমবে, আর সুযোগ পাওয়া যাবে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মনোযোগ দেওয়ার।

পুতিন/কিম
ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনৈতিক অর্জনের পদ্ধতিও পরিষ্কার। তিনি অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার মতো বলপ্রয়োগের মাধ্যমে অন্য দেশগুলিকে চাপে রাখতে বিশ্বাসী। তিনি "পাগল মানুষ তত্ত্ব"-তে বিশ্বাসী, যেখানে তিনি অন্য দেশগুলির বিরুদ্ধে বিশাল শুল্ক বৃদ্ধির বা "আগুন ও তীব্রতা"র হুমকি দিয়ে মনে করেন যে এর ফলে দেশগুলি বেশি সুবিধা দিতে বাধ্য হবে। তবে ট্রাম্প পররাষ্ট্রনীতিতে একটি লেনদেনমূলক দৃষ্টিভঙ্গি অনুসরণ করেন।
পাগল তত্ত্ব
মার্কিন সাময়িকী ফরেইন অ্যাফেয়ার্সে প্রকাশিত কয়েকটি লেখার ভিত্তিতে এই আয়োজন

প্রচ্ছদ : মোতাসিম বিল্লাহ পিন্টু