Beta
বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
Beta
বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

রাসেলস ভাইপার নিয়ে যা বলল দুই মন্ত্রণালয়

রাসেলস ভাইপার।
রাসেলস ভাইপার।
Picture of প্রতিবেদক, সকাল সন্ধ্যা

প্রতিবেদক, সকাল সন্ধ্যা

রাসেলস ভাইপার নিয়ে দেশজুড়ে চলেছে আলোচনা-সমালোচনা। সঙ্গে বেড়েছে আতঙ্ক। গণমাধ্যম থেকে শুরু করে সোশাল মিডিয়াও রাসেলস ভাইপার সংক্রান্ত বিভিন্ন কনটেন্টে সয়লাব।

পরিস্থিতি বিবেচনায় দেশের বিভিন্ন জেলায় এই সাপ নিয়ে আতঙ্কের পর সচেতনতামূলক নির্দেশনা দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়।

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রাসেলস ভাইপার (চন্দ্রবোড়া, বোড়া বা উলুবোড়া) দেখতে পাওয়ার ঘটনায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় জননিরাপত্তা ও জনকল্যাণ নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় তথ্য ও দিকনির্দেশনা দিয়েছে।

নির্দেশনায় বলা হয়, রাসেলস ভাইপারের উপস্থিতি উদ্বেগজনক হলেও মানুষের সঙ্গে এর মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা কম। এই সাপ সাধারণত নিচু ভূমির ঘাসবন, ঝোঁপজঙ্গল, উন্মুক্ত বন, কৃষি এলাকায় বাস করলেও মানববসতি এড়িয়ে চলে। সাপটি মেটে রঙের হওয়ায় মাটির সঙ্গে সহজে মিশে যেতে পারে।

মানুষ খেয়াল না করে সাপের খুব কাছে গেলে এটি বিপদ দেখে ভয়ে আক্রমণ করে। রাসেলস ভাইপার দক্ষ সাঁতারু হওয়ায় নদীর স্রোতে ও বন্যার পানিতে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিস্তৃত হয়েছে। তাই সবাইকে সাবধানতা অবলম্বনের অনুরোধ জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।

সাপের কামড় এড়াতে করণীয়

যেসব এলাকায় রাসেলস ভাইপার দেখা গেছে, সেখানে চলাচলের ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশনা দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এতে আরও বলা হয়-

লম্বা ঘাস, ঝোঁপঝাড়, কৃষি এলাকায় হাঁটার সময় সতর্ক থাকুন। গর্তের মধ্যে হাত-পা ঢুকাবেন না। সংশ্লিষ্ট এলাকায় কাজ করার সময় বুট ও লম্বা প্যান্ট পরুন। রাতে চলাচলের সময় অবশ্যই টর্চ লাইট ব্যবহার করুন। বাড়ির চারপাশ পরিস্কার ও আবর্জনামুক্ত রাখুন।

পতিত গাছ, জ্বালানি লাকড়ি, খড় সরানোর সময় বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করুন। সাপ দেখলে তা ধরা বা মারার চেষ্টা করবেন না। প্রয়োজনে জাতীয় হেল্পলাইন ৩৩৩ নম্বরে ফোন করুন বা নিকটস্থ বন বিভাগের অফিসকে জানান।

সাপের কামড়ের ক্ষেত্রে করণীয়

দংশিত অঙ্গ নড়াচড়া করা যাবে না। পায়ে দংশনে- বসে যেতে হবে, হাঁটা যাবে না। হাতে দংশনে- হাত নড়াচাড়া করা যাবে না। হাত পায়ের গিড়া নাড়াচাড়ায় মাংসপেশীর সংকোচনের ফলে বিষ দ্রুত রক্তের মাধ্যমে শরীরে ছড়িয়ে বিষক্রিয়া করতে পারে।

আক্রান্ত স্থান সাবান দিয়ে আলতোভাবে ধুতে হবে অথবা ভেজা কাপড় দিয়ে মুছতে হবে। ঘড়ি বা অলঙ্কার বা তাবিজ, তাগা ইত্যাদি থাকলে খুলে ফেলুন। দংশিত স্থানে কাঁটবেন না, সুই ফোটাবেন না। কিংবা কোন রকম প্রলেপ লাগাবেন না বা অন্য কিছু প্রয়োগ করা উচিত নয়।

সাপে কাটলে ওঝার কাছে গিয়ে অযথা সময় নষ্ট করবেন না। যত দ্রুত সম্ভব নিকটবর্তী হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে যান। আতঙ্কিত হবেন না। রাসেলস ভাইপারের বিষ প্রতিষেধক বা অ্যান্টিভেনম নিকটবর্তী সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে পাওয়া যায়।

রাসেলস ভাইপারের প্রাদুর্ভাব কমাতে করণীয়

বেজি, গুইসাপ, বাগডাশ, গন্ধগোকুল, বন বিড়াল, মেছো বিড়াল, তিলা নাগ ঈগল, সারস, মদন টাক এবং কিছু প্রজাতির প্রাণী রাসেলস ভাইপার খেয়ে এদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখে। এসব বন্যপ্রাণীকে মানুষের নির্বিচারে হত্যার কারণে প্রকৃতিতে রাসেলস ভাইপার বেড়ে যাচ্ছে। তাই বন্যপ্রাণী দেখলেই অকারণে তা হত্যা, এদের আবাসস্থল ধ্বংস করা থেকে বিরত থাকুন।

রাসেলস ভাইপার বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২ এর ৬(১) ধারা অনুযায়ী সংরক্ষিত প্রাণী উল্লেখ করে বন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রাসেলস ভাইপার ইঁদুর খেয়ে যেমন ফসল রক্ষা করে, তেমনি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই সাপের বিষ হতে অনেক জীবন রক্ষাকারী ঔষধ তৈরি হয়। সাপ মারা দণ্ডনীয় অপরাধ, সাপ মারা হতে বিরত থাকুন।

নির্দেশনায় বলা হয়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরীর নির্দেশনায় বাংলাদেশ বন বিভাগ পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। স্থানীয়ভাবে সচেতনতামূলক কর্মসূচি বাস্তবায়নে স্থানীয় বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ ও সচেতন সমাজের প্রতি অনুরোধ জানানো হলো। পরিস্থিতি সক্রিয়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী আপডেট দেওয়া হবে।

অ্যান্টি ভেনম রাখার নির্দেশ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ও শনিবার রাসেলস ভাইপার নিয়ে বার্তা দিয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন বিষয়টি নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার অনুরোধ করেছেন।

শনিবার সারা দেশের সিভিল সার্জন, পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, বিভাগীয় পরিচালক, মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালকসহ স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। এ সময় বিভিন্ন এলাকায় সর্পদংশন ও রাসেলস ভাইপার নিয়ে কথা বলেন তিনি।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণ বিষ প্রতিষেধক বা অ্যান্টিভেনম আছে। সব জায়গায় হাসপাতালগুলোতে অ্যান্টিভেনম রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”

এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, “স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে আমি বলব, আপনারা আতঙ্কিত হবেন না। রাসেলস ভাইপারে দংশনের ওষুধ আমাদের হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত মজুদ আছে। আমি পরিষ্কার নির্দেশ দিয়েছি, কোনও অবস্থাতেই অ্যান্টিভেনমের ঘাটতি থাকা যাবে না।”

সর্পদংশনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে রোগীকে দ্রুত ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া।

বিষয়টি নিয়ে সামন্ত লাল বলেন, “সাপের কামড়ের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে রোগীকে দ্রুত ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া। অনতিবিলম্বে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলে যথাযথ চিকিৎসার মাধ্যমে রোগীকে সম্পূর্ণ সুস্থ করে তোলা সম্ভব।

“একই সঙ্গে সাপে কামড়ের বিষয়ে জনগণকে সচেতন করা খুবই জরুরি। রোগীকে হাসপাতালে আনতে যাতে দেরি না হয়, সে বিষয়ে আমাদের সবাইকে সচেতন ও উদ্বুদ্ধ করতে হবে।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত