ইউক্রেন যুদ্ধে নতুন ধরনের একটি হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে রাশিয়া। গত বৃহস্পতিবার ইউক্রেনের দিনিপ্রো শহরে প্রথমবারের মতো ‘ওরেশনিক’ নামের ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়।
এক প্রতিবেদনে আল জাজিরা জানিয়েছে, নতুন এই ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার পর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন একে সফল পরীক্ষা হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং ভবিষ্যতেও এই ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, “আমরা প্রয়োজনে যুদ্ধক্ষেত্রেও এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করব, বিশেষ করে যদি রাশিয়ার নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকি তৈরি হয়।”
নতুন এই ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষায় পুতিন উচ্ছ্বসিত হলেও এ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে ইউক্রেন ও তাদের পশ্চিমা মিত্ররা। দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, “অন্য দেশকে সন্ত্রাসের জন্য ব্যবহার করে ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালানো স্পষ্টতই একটি আন্তর্জাতিক অপরাধ।”
এ ঘটনায় পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটো ইউক্রেনের সঙ্গে জরুরি বৈঠক ডেকেছে।
ওরেশনিক ক্ষেপণাস্ত্র কতটা শক্তিশালী
রাশিয়ান ভাষায় ‘ওরেশনিক’ শব্দের অর্থ ‘হ্যাজেল ট্রি’। মধ্যম-পাল্লার এই ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রটি বানানোর কথা রাশিয়া এর আগে কখনও প্রকাশ করেনি।
বলা হচ্ছে, রাশিয়ার নতুন এই ক্ষেপণাস্ত্র পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম এবং এটি মাঝআকাশে গতিপথ পরিবর্তন করতে পারে।
রাশিয়া দাবি করেছে, ওরেশনিক একটি হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র। অর্থাৎ এটি শব্দের গতির চেয়ে অন্তত পাঁচগুণ দ্রুতগতিতে ছুটতে পারে। এমন গতির কারণে রাডারের পক্ষে হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করা দুরূহ হয়ে পড়ে। একই কারণে আঘাত হানার আগেই এ ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করাও কঠিন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন বলছে, ‘আরএস-২৬ রুবেজ’ আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের (আইসিবিএম) ওপর ভিত্তি করে রাশিয়া তাদের নতুন এই ক্ষেপণাস্ত্র বানিয়েছে।
এই ধরনের আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সাধারণত এক হাজার থেকে ৫ হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত দূরত্বে আঘাত হানতে সক্ষম।
সামরিক বিশেষজ্ঞ ভিক্টর বারানেটসের মতে, ওরেশনিক ক্ষেপণাস্ত্রটি তিন থেকে ছয়টি ওয়ারহেড বহনে সক্ষম।
মস্কোভিত্তিক ন্যাশনাল ডিফেন্স জার্নালের সম্পাদক আইগর করোতচেঙ্কোর বার্তা সংস্থা তাসকে বলেছেন, ইউক্রেনে এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে হামলার যে ভিডিও প্রকাশ পেয়েছে, তাতে বোঝা যাচ্ছে– ওরেশনিক ক্ষেপণাস্ত্র একাধিক ওয়ারহেড বহন করতে পারে, যেগুলোর প্রতিটি আলাদা লক্ষ্যে আঘাত হানতে সক্ষম।
কেন এই ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালাচ্ছে রাশিয়া
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এটিএসিএমএস এবং যুক্তরাজ্যের স্টর্ম শ্যাডো ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে রাশিয়ার অভ্যন্তরে হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন।
রাশিয়া জানিয়েছে, এর প্রতিশোধ হিসেবে ইউক্রেনের দিনিপ্রো শহরে ওরেশনিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে তারা। রাশিয়া একে পশ্চিমা দেশগুলোর “দায়িত্বজ্ঞানহীন পদক্ষেপের প্রতি একটি বার্তা” হিসেবে অভিহিত করেছে।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রকে আক্রমণের ৩০ মিনিট আগে এই পরীক্ষা সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছিল। তিনি আরও বলেন, “পশ্চিমা দেশগুলোর ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ এবং তাদের সমর্থনে রাশিয়ায় হামলা চালানো কোনোভাবেই নীরবে মেনে নেওয়া হবে না।”
কী বলছে ইউক্রেন
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলাকে যুদ্ধের “নতুন ঝুঁকি” হিসেবে অভিহিত করেছেন।
তিনি জানিয়েছেন, ইউক্রেন ও তার পশ্চিমা মিত্ররা এ ধরনের হুমকির মোকাবেলায় নতুন প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তৈরির জন্য কাজ করছে।
জেলেনস্কি বলেন, “যখন কেউ অন্য দেশের মাটিতে সন্ত্রাস চালিয়ে নতুন অস্ত্র পরীক্ষা করে, এটি আন্তর্জাতিক অপরাধের সমতুল্য।”