Beta
বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৫
Beta
বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৫

যুদ্ধে রাশিয়াকে হারাতে যে ছক এঁটেছেন জেলেনস্কি

যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেট প্রার্থী কমলা হ্যারিসের সঙ্গে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সাক্ষাত।
যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেট প্রার্থী কমলা হ্যারিসের সঙ্গে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সাক্ষাত।
[publishpress_authors_box]

রাজনৈতিক ও সামরিক সমর্থন আদায়ে যুক্তরাষ্ট্রে সফর করছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। বৃহস্পতিবার তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের সঙ্গে দেখা করেন।

বৈঠকে তিনি রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে তার ‘বিজয় পরিকল্পনা’ নিয়ে আলোচনা করেছেন। গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই জেলেনস্কি এই পরিকল্পনার কথা বলে আসছিলেন।

জেলেনস্কির বিজয় পরিকল্পনার বিস্তারিত এখনও প্রকাশ করা হয়নি। তবে তিনি ও তার ঘনিষ্ঠরা এর কিছু অংশ প্রকাশ করেছেন। সংবাদমাধ্যমেও এর কিছু অংশ প্রকাশিত হয়েছে।

বড় দৃশ্যপট কী

ইউক্রেনের জয়ের জন্য জেলেনস্কির পরিকল্পনায় পাঁচটি দফা রয়েছে বলে মনে করা হয়। এবিসি নিউজের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি পরিকল্পনাটিকে রাশিয়ার সঙ্গে দরকষাকষিতে ইউক্রেনকে যথেষ্ট শক্তিশালী অবস্থানে নেওয়ার ‘সেতু’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। রাশিয়াকে যাতে কিয়েভের শর্তে যুদ্ধ শেষ করতে বাধ্য করা যায়, সেই বিষয়ই পরিকল্পনায় জায়গা পেয়েছে।

বিশেষ করে, জেলেনস্কি ইউক্রেনের শান্তি পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করেছেন— যেখানে মস্কোর সঙ্গে ভবিষ্যতের আলোচনায় কিয়েভের কাছে কী গ্রহণযোগ্য, তার রুপরেখা আছে। সেই পরিকল্পনার অধীনে ইউক্রেনের দাবি, রাশিয়াকে বর্তমানে তার দখলে থাকা সব ইউক্রেনীয় ভূখণ্ড— খেরসন, জাপোরিঝজিয়া, দনেতস্ক ও লুহানস্ক প্রদেশের অংশ ও ক্রিমিয়া থেকে সরে যেতে হবে।

শান্তি পরিকল্পনায় ইউক্রেনে যুদ্ধাপরাধের দায়ে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনসহ রাশিয়ার কর্ত্যাব্যক্তিদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার দাবিও রয়েছে। রাশিয়া আলোচনার জন্য সেই শর্তগুলো প্রত্যাখ্যান করেছে।

জেলেনস্কি এবিসি নিউজকে বলেছেন, ইউক্রেনের মিত্ররা তার বিজয় পরিকল্পনাকে সমর্থন দিয়ে মস্কোকে একটি শান্তি সম্মেলনে যোগ দিতে চাপ প্রয়োগে সাহায্য করতে পারে। সম্মেলনে কিয়েভের শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হবে।

ইউক্রেন বলেছে, বিজয় পরিকল্পনায় নিরাপত্তা, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উপাদানও রয়েছে।

জেলেনস্কি সাম্প্রতিক দিনগুলোতে একাধিক সাক্ষাৎকার ও বিবৃতিতে জোর দিয়ে বলেছেন, পরিকল্পনাটি পশ্চিমের উপর নির্ভর করছে। আগামী তিন মাসের মধ্যে পশ্চিমা দেশগুলোকে তার দাবির প্রতি সমর্থন দিতে হবে।

পরিকল্পনায় কী আছে

ইউক্রেনকে ন্যাটোতে যোগদানের আমন্ত্রণ

জেলেনস্কির চিফ অফ স্টাফ ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অ্যান্ড্রি ইয়ারমাক মঙ্গলবার নিউ ইয়র্কে কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসকে বলেছেন, বিজয় পরিকল্পনার একটি মূল উপাদান হল ইউক্রেনের জন্য ন্যাটো সদস্যপদের আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ। ন্যাটো মিত্ররা যুদ্ধ চলাকালীন ইউক্রেনকে কূটনৈতিক ও সামরিক সহায়তা দিয়েছে।

বর্তমান অবস্থা: ইউক্রেন বর্তমানে ন্যাটোর সদস্য না হলেও একটি অংশীদার দেশ। ইতোমধ্যে, ইউক্রেনের জন্য ন্যাটো তার কিছু পদ্ধতিগত পদক্ষেপ বাদ দিয়েছে, অন্যান্য আবেদনকারীদের সদস্যপদ সুরক্ষিত করতে এর মধ্য দিয়ে যেতে হয়। জোটটি স্পষ্ট করেছে, ইউক্রেন সদস্যপদ পাওয়ার জন্য একটি ‘অপরিবর্তনীয়’ পথে রয়েছে।

কিন্তু জোটের সদস্যরা রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্যপদ দিতে চাচ্ছে না। কারণ এতে ন্যাটো জোটের সঙ্গে রাশিয়ার সরাসরি বিরোধ শুরু হবে।

এজন্যই গত জুলাইয়ে ওয়াশিংটন শীর্ষ সম্মেলনে ন্যাটো ঘোষণা করেছিল, “মিত্ররা সম্মত হলে ও শর্ত পূরণ করলে ইউক্রেনকে জোটে যোগদানের আমন্ত্রণ জানানো হবে।”

সহজ কথায়, জেলেনস্কির বিজয় পরিকল্পনার এই উপাদানটির সঙ্গে ন্যাটো যুক্ত নেই।

রাশিয়ার অভ্যন্তরে আঘাত হানতে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র

রাশিয়ার আরও ভেতরে হামলা চালাতে ইউক্রেন দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র চায়। আগস্টে রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে নাটকীয় অনুপ্রবেশের পরে ইউক্রেন সেই আবেদন আরও বাড়িয়েছে। জেলেনস্কি বলেছেন, এই দাবি বিজয় পরিকল্পনার একটি অংশ।

বর্তমান অবস্থা: ন্যাটো এই দাবিতে বিভক্ত। কিছু মিত্র দেশ ইউক্রেনকে সমর্থন করলেও যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য এখনও বিষয়টির অনুমোদন দিচ্ছে না। তারা রাশিয়ার ভেতরে এই ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞাও এখনও তুলে নেয়নি।

বিশেষজ্ঞরা আল জাজিরাকে বলেছেন, রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার ভয়েই তারা এই অনুমোদন দিচ্ছে না।

পুতিনও সতর্ক করেছেন, রাশিয়ার অভ্যন্তরে ইউক্রেনকে দূরপাল্লার অস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার অর্থ হবে ন্যাটো রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধ করছে। অবশ্য, ইউক্রেন এরই মধ্যে ক্রিমিয়া এবং ইউক্রেনের অভ্যন্তরে অন্যান্য রুশ অধিকৃত অঞ্চলে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করছে।

অত্যাধুনিক অস্ত্রের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার পূর্ণমাত্রার আগ্রাসন শুরুর পর থেকে কিয়েভ ন্যাটো মিত্রদের সরবরাহ করা অস্ত্র এবং সামরিক প্ল্যাটফর্মের উপরই বেশি নির্ভর করেছে।

তথাপি প্রায়ই ইউক্রেনকে কয়েক সপ্তাহ ধরে নির্দিষ্ট অস্ত্র ব্যবস্থার জন্য আবেদন করতে হয়েছে। প্রাথমিকভাবে প্রত্যাখ্যানের মুখোমুখি হলেও শেষ পর্যন্ত সরবরাহের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যদের বোঝাতে সফল হয়েছে।

ইউক্রেন বলেছে, এর ফলে রাশিয়ার বিরুদ্ধে তাদের পাল্টা হামলার কার্যকারিতা হ্রাস পায়। যুদ্ধের লক্ষ্য অর্জনে দেরি হয় এবং বাড়তি প্রাণহানি ঘটে।

ব্লুমবার্গ বলেছে, জেলেনস্কির বিজয় পরিকল্পনায় ইউক্রেনের জন্য উন্নত অস্ত্রের নিরবিচ্ছিন্ন সরবরাহ ব্যবস্থার চাহিদা যুক্ত রয়েছে।

বর্তমান অবস্থা: যুক্তরাষ্ট্রসহ ন্যাটো সদস্য দেশগুলো গত দুই বছরে এই সমালোচনার জবাবে বলেছে, তারা ইউক্রেনে সামরিক সরবরাহ ত্বরান্বিত করার চেষ্টা করেছে। তবে তারা এখনও ইউক্রেনকে নিরবিচ্ছিন্নভাবে অস্ত্র সরবরাহের ব্যবস্থা করেনি। বরং ইউক্রেন যখন অস্ত্র চায় তখন তা কতটা প্রয়োজন সেটা খতিয়ে দেখেই অস্ত্র দেয়। এতে অনেক সময় অস্ত্র সরবরাহে দেরি হয় এবং যুদ্ধের ময়দানে ইউক্রেন পিছিয়ে পড়ে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যপদ (ইইউ)

ব্লুমবার্গের প্রতিবেদন মতে, ইইউ সদস্যপদ পাওয়ার একটি পরিষ্কার পথও বিজয় পরিকল্পনার অংশ। নিউ ইয়র্কারের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে জেলেনস্কি বলেছিলেন, ইউক্রেন বর্তমানে “ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ন্যাটো থেকে বাদ পড়েছে”।

বর্তমান অবস্থা: ইউক্রেন ইইউ থেকে আর্থিক সহায়তা পায় কিন্তু এখনও সদস্যপদ পায়নি। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেনে তার পূর্ণ মাত্রায় আগ্রাসন শুরুর চার দিন পরে, কিয়েভ ইইউ সদস্য হওয়ার জন্য আবেদন করেছিল। ইইউর সদস্য হওয়ার যোগ্যতা অর্জনের জন্য তাকে সাতটি ধাপ অনুসরণ করতে হবে।

২০২২ সালের জুনে ইইউ ইউক্রেনের সদস্যপদের জন্য আবেদন বিবেচনায় নেয়। সদস্যপদ পাওয়ার প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবে ইউক্রেনকে অবশ্যই ইইউ আইনগুলোকে তার দেশিয় আইনি কাঠামোতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এ বছরের জুনে ইইউ ইউক্রেনের সঙ্গে সদস্যপদ নিয়ে আলোচনা শুরু করতে সম্মত হয়।

ইউক্রেনের জন্য অতিরিক্ত অর্থনৈতিক সহায়তা

বিজয় পরিকল্পনায় অর্থনৈতিক সহায়তার অনুরোধও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। বিশ্বব্যাংকের অনুমান, দেশটির পুনর্গঠনের জন্য ৪৮০ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হবে।

বর্তমান অবস্থা: বৃহস্পতিবারের বৈঠকের আগে বাইডেন ইউক্রেনের জন্য আরও প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলার সাহায্যের ঘোষণা দিয়েছিলেন।

ইউক্রেনকে দেওয়া সাহায্যের হিসাব রাখা জার্মানির কিয়েল ইন্সটিটিউট ফর দ্য ওয়ার্ল্ড ইকোনমির হিসাব অনুযায়ী, ২০২২  সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের জুনের শেষ পর্যন্ত ইউক্রেন ইউরোপ থেকে ১১০ বিলিয়ন ইউরো (১২৩ বিলিয়ন ডলার) সহায়তা পেয়েছে। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে পেয়েছে ৭৫ বিলিয়ন ইউরো (৮৪ বিলিয়ন ডলার)।

ইউরোপ আরও ৭৭ বিলিয়ন ইউরো (৮৬ বিলিয়ন ডলার) এবং যুক্তরাষ্ট্র আরও ২৩ বিলিয়ন ইউরো (২৬ বিলিয়ন ডলার) দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত