Beta
বৃহস্পতিবার, ২৭ মার্চ, ২০২৫
Beta
বৃহস্পতিবার, ২৭ মার্চ, ২০২৫

স্বজন হারানোর বেদনাহত ব্যক্তিকে যে ৫ কথা বলতে নেই

five things not to say grieving friend
[publishpress_authors_box]

রাশেদের মায়ের মৃত্যুর পর বন্ধুরা একের পর এক সান্ত্বনা দিয়েই যাচ্ছিল। ভাল লাগা দূরে থাক, উলটো ভয়ানক বিরক্ত লাগছিল রাশেদের। মনে মনে বলছিল ‘এরা চুপ করতে পারেনা!’ আত্মীয়স্বজন আরও এক কাঠি বাড়ন্ত। একটু পরপর বলে যাচ্ছিল কী খাবে, এটা লাগবে কিনা ওটা লাগবে কিনা- এসব।

সত্যি বলতে কোন কথার উত্তর দেওয়ার মন মানসিকতাই যেখানে নেই, সেখানে ‘কী খাবে’ আর ‘কিছু লাগবে কিনা’ এসব তো ভাবনার অতীত। রাশেদ অবশ্য এ-ও বুঝতে পারছিল, সান্ত্বনা যারা দিচ্ছে তারা সত্যিই আন্তরিক। কিন্তু এমন বেদনা ভারাক্রান্ত মানুষকে কী বলে সান্ত্বনা দেওয়া যায়, সে ভাষাও অনেকের জানা নেই। আসলে এটাই স্বাভাবিক। তাদেরও খুব বেশি দোষ দেওয়া যায়না।

আমরা অনেকেই আপনজন হারা বন্ধুদের সহানুভূতিশীল কথা বলি তাদের পাশে দাঁড়ানোর ইচ্ছা থেকে। কিন্তু ভাষার ব্যবহারে সচেতন না হবার কারণে সেই চাওয়া অসংবেদনশীল হতে পারে। এমনকি সম্পর্কেও এর প্রভাব পড়তে পারে।

তাই জেনে নেওয়া উচিত এমন ৫টি কথা, যেগুলো সদ্য আপনজন হারানো ব্যক্তিকে কখনও বলতে নেই।

কেমন আছো?

যে বন্ধু সদ্যই আপনজন হারিয়েছে তাকে কখনই জিজ্ঞাসা করতে নেই- সে কেমন আছে। এই প্রশ্ন বরং তার ভেতর দুঃখবোধকে উসকে দিতে পারে। সত্যি বলতে দুঃখ কিংবা বেদনায় ভারাক্রান্ত মানুষের ‘কেমন আছো’ ধরনের প্রশ্নের উত্তর দেয়ার মানসিক অবস্থা একেবারেই থাকে না। আপনজন হারানো মানুষের কাছে প্রতিটি মুহূর্ত অত্যন্ত কঠিন। প্রতিটি মুহূর্ত পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য তারা রীতিমতো সংগ্রামে লিপ্ত হয়। প্রতিটি মুহূর্ত ভালো থাকার চেষ্টাটাই তাদের কাছে তখন মুখ্য হয়ে দাঁড়ায়। এক মুহূর্ত ভালো বোধ হলে আবার পরের মুহূর্তেই প্রিয়জনের স্মৃতি তাদের আচ্ছন্ন করে ফেলে। এক নিরন্তর মানসিক সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে যায় একজন আপনজন হারা মানুষ। তাই ‘কেমন আছো’ প্রশ্নটি তাদের কাছে খুব চ্যালেঞ্জিং। তার চেয়ে বরং আলাপের তাগিদে এমন প্রশ্ন করা যায়, যেগুলো তাকে যথেষ্ট চিন্তায় ফেলে দেবে না। যেমন- গতকাল রাতে খেয়েছিল কিনা বা আজ সকালে নাস্তা করেছে কিনা।

আমি তোমার জন্য কী করতে পারি?

শোকাহত মানুষের প্রায়ই এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার মানসিক অবস্থা থাকেনা। একজন শোকাহত মানুষের পক্ষে কি আদৌ সম্ভব আপনি তার কিভাবে কাজে লাগবেন তার উত্তর ভেবে বের করা? উত্তর হলো- না। আসলে চরম শোকাহত মানুষের পক্ষে আদৌ ভেবে বের করা সম্ভব নয় তার সহায়তা দরকার আছে কিনা।

তাই সবচেয়ে কাজের হলো, শোকগ্রস্ত বন্ধুর বাড়িতে ভালো-মন্দ রান্না করে নিয়ে যাওয়া। আর এই ব্যাপারটি আমাদের সমাজে সমবেদনা জানানোর সুন্দর একটি উপায়। প্রায়ই দেখা যায় শোকসন্তপ্ত পরিবারের জন্য, এমনকি স্বল্প পরিচিত প্রতিবেশিও কিছু না কিছু রেঁধে পাঠান।

শোকসন্তপ্ত পরিবারে থাকে অনেক মানুষের আনাগোনা। এমন অবস্থায় কিচেনের সিঙ্কে জমা হতে থাকে প্রচুর থালা-বাসন। দেখা যায়, এসব পরিষ্কার করার মতো মানসিক অবস্থা ওই পরিবারের সদস্যদের থাকে না। ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা কিন্তু এই কাজটি অনায়াসে করে দিতে পারেন।

কী করতে পারি- এই প্রশ্নের চেয়ে বরং শোকগ্রস্ত ব্যক্তির কিংবা পরিবারের জমে থাকা কাজগুলো করে দেওয়াই হতে পারে সবচেয়ে কাজের।


তোমার পরিস্থিতি আমার পক্ষে বোঝা কঠিন

সমবেদনা জানাতে গিয়ে আমরা এই কথাটি কখনো কখনো বলে ফেলি। কিন্তু সত্যিটা হলো, এমন কথা শোকগ্রস্ত মানুষকে উলটো বিচ্ছিন্নতার ভেতর ঠেলে দেয়। এমন কথায় সে মনে করতে পারে, “আমার পরিস্থিতি বোঝার মতো কেউ নেই”। সত্যি বলতে, স্বজন হারানোর বেদনা উপলোব্ধি করতে পারার ক্ষমতা আমাদের সকলেরই আছে। কারণ আমাদের বেড়ে ওঠার প্রক্রিয়াতেই নিকটজন হারানোর অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়।

তারচেয়ে বরং নিজের নিকট আত্মীয় কিংবা পরিবারের সদস্য হারানোর অভিজ্ঞতা শেয়ার করে শোকগ্রস্ত বন্ধুকে বলা উচিত ‘আমি তাই তোমার কষ্ট বুঝিৱ’।

দিস ইজ সো আনফেয়ার

এই কথাটি বলাই যাবে না। কারণ কাছের মানুষ হারানো কাউকে এই কথা বলা মাত্রই তিনি বা তারা নিজের ভাগ্যকে দোষ দিতে শুরু করবেন। এই কথা শুনে যে কোন দুঃখভারাক্রান্ত ব্যক্তির মনে- ‘আমার সঙ্গে কেন এমন হলো?’, ‘কেন আমার ভাগ্য এমন?’- এই জাতীয় কথাগুলো ভিড় করতে পারে। এই ধরনের কথা পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। তাই সমবেদনার নামে এমন বক্তব্য দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে

আমরা মনে করি, সমবেদনা জানাতে গিয়ে এমন কিছু বলাটা বোধ হয় ভদ্রতা। কিন্তু এই কথাটি নিকটজন হারান ব্যক্তির দুঃখ মোচনে কোন কাজেই আসেনা। যিনি অপার দুঃখে ভারাক্রান্ত, তাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করাই সমবেদনা জানানোর ভালো উপায়। শোকগ্রস্ত ব্যক্তির সঙ্গে তাই মৃদু হাসিমুখ নিয়ে কথা বলাই শ্রেয়।

যদি কোন কথাই না থাকে!

সমবেদনা জানানোর যদি কোন ভাষাই না থাকে তবে বিচলিত হবার কোন কারণ নেই। অসংবেদনশীল কথা বলার চাইতে বরং শোকগ্রস্ত ব্যক্তির পাশে চুপচাপ বসে থাকা ঢের ভালো। তবে মৌখিকভাবে সমবেদনা জানানোর সত্যিই যদি কিছু খুঁজে পাওয়া না যায়, তবে ই-মেইল অথবা টেক্সট মেসেজে বন্ধুকে সমবেদনা জানানো যায়।

সিএনএন অবলম্বনে   

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত