শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণের চার দিনের মাথায় আওয়ামী লীগ নিয়ে এক বক্তব্যের জন্য সমালোচনার মুখে এখন এম সাখাওয়াত হোসেন।
শেখ হাসিনাকে হটানোর মূল কারিগর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে হুঁশিয়ার করে দেওয়া হয়েছে তাকে। এই আন্দোলনের কর্মীদের পক্ষ থেকে তার পদত্যাগের দাবি উঠেছে।
বিভিন্ন স্থানে তার পদত্যাগের দাবিতে মিছিলও হয়েছে। তা হয়েছে বিএনপি সমর্থকদের উদ্যোগে।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা দেশে ছেড়ে ভারতে চলে যাওয়ার তিন দিন পর গত ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শপথ নেয়।
এই সরকারে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদ পেয়েছেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা সাখাওয়াত। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্বে পেয়েছিলেন তিনি।
শেখ হাসিনার দেশত্যাগে আওয়ামী লীগের ছন্নছাড়া অবস্থা চললেও তিনি আবার দেশে ফিরে দলের দায়িত্ব নেবেন বলে তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় জানান।
দেশে যখন আন্দোলনকারীদের ক্ষোভের কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ, তখন এবিষয়ে সোমবার উপদেষ্টা সাখাওয়াতের প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়েছিল সাংবাদিকরা।
সাখাওয়াত যা বলেছিলেন
“আপনি (শেখ হাসিনা) আসবেন। এটা আপনার দেশ। আপনি আসেন না কেন? হু স্টপস ইউ? নাগরিকত্ব তো কারও যায়নি। ২১ বছর প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। আপনি স্বেচ্ছায় চলে গেছেন। কেউ যেতে বলে নাই। আপনি স্বেচ্ছায় গেছেন। আপনি ভালো থাকেন। আবার আসেন। আমরা সবাই আপনাকে শ্রদ্ধা করি। অশ্রদ্ধা করছি না। আওয়ামী লীগ একটি বড় রাজনৈতিক দল। প্রচুর ভালো ভালো নেতা আছে। আমি এখনই নাম বলতে পারি, কারা ভালো নেতা। এ দলটা একসময় বাঙালিদের সেকুলারপন্থি দল ছিল মিডল ক্লাসের। মুসলিম লীগ ছিল আপার ক্লাসের। মিডল ক্লাসের দল ছিল আওয়ামী লীগ। যেজন্য তৎকালীন মিডল ক্লাস ইনটেকেলচুয়াল যারা-ইউনিভার্সিটির, এখানের ওখানের- তারা এখনও আছে। অ্যাকটিভ না থাকলেও তারা সাপোর্ট করে। এতবড় একজন মানুষের (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান) দল, যিনি এদেশ স্বাধীন করেছেন। এতে তো কোনও সন্দেহ নাই। কারোর সন্দেহ থাকার কথা নয়। উনি স্বাধীনতার নেতৃত্ব দিয়েছেন। উনার নামে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে, স্বাধীনতা এসেছে। তারপরেরটা বাকি দিক। সেই দল এরকমভাবে ভেঙে পড়ে যাবে, লোকে এখন লুকিয়ে লুকিয়ে বেড়াচ্ছে যে, আবার পেলে কী জানি কী হয়। আমি উনাদেরকেও আশ্বাস দিচ্ছি, কথা দিচ্ছি, আপনারা দল গুছিয়ে নেন। আপনাদের দলকে তো কেউ ব্যান করে নাই। আর ব্যান করাটা আনলেস যদি ওই ধরনের জঙ্গি না হয়, যে কোনও রাজনৈতিক দলকে ব্যান করা ব্যাড কালচার, ভেরি ব্যাড কালচার। অনেকে বলে, জার্মানিতে নাৎসি পার্টি ব্যান করা হয়েছিল। হ্যাঁ, সেটা করা হয়েছিল ইন দ্যা কনস্টিটিউশান যে নাৎসি পার্টি বলে কোনও পার্টি বিশ্বে কোথাও হবে না। ইন জার্মান কনস্টিটিউশান। তার মানে কেউ নাৎসিদের ফ্ল্যাগ, তাদের সিম্বল, তাদের কোনোকিছু যদি ধারণ করলে হি শুড বি পানিশড। আমাদের দেশে তো এটা করে নাই। বঙ্গবন্ধুর ১৯৭২ সালের সংবিধানে কোনও পার্টির নাম তো ছিল না- যে এই পার্টি ব্যান করতে হবে। ওই পার্টি থাকবে না। মুসলিম লীগও তো ছিল। পলিটিক্যাল পার্টিকে ব্যান করা-এটা পলিটিক্যাল ফায়দা হাসিল করার জন্য। আজকে আমি যেটা বলতে চাই না, আরেক পার্টিকে যদি বলা হয় ‘তুমি এই করেছো, তুমি ওই করেছো-তোমাকে ব্যান করব’-চিন্তা করেন। পলিটিক্যাল পার্টি উইল ফাংশন লাইক পলিটিক্যাল পার্টি। আপনি তাকে দিয়ে, একে দিয়ে গণ্ডগোল করাবেন। আমি আসছি, আমি যাব। আপনি আসবেন। এটা আপনার দেশ। আপনি আসেন না কেন? হু স্টপস ইউ? আপনি স্বেচ্ছায় চলে গেছেন। কেউ যেতে বলে নাই। আপনি ভালো থাকেন। আবার আসেন। আমরা সবাই আপনাকে শ্রদ্ধা করি। অশ্রদ্ধা করছি না। কিন্তু গণ্ডগোল পাকানোর তো কোনও মানে হয় না। গণ্ডগোল পাকিয়ে তো কোনও লাভ হবে না। বরং লোকজন আরও ক্ষেপে উঠবে। দ্যাটস নট হাউ ইউ ডু ইট।”
তার এই বক্তব্যের পর সোমবারই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিল থেকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পক্ষ থেকে প্রতিক্রিয়া আসে, যারা শেখ হাসিনার শাসনকালকে ‘ফ্যাসিবাদী শাসন’ হিসাবে দেখে; এই আন্দোলনে কয়েকশ মানুষ নিহত হওয়ার জন্য শেখ হাসিনাকে দায়ী করে তার বিচারের দাবি করে।
সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, “আমরা উপদেষ্টাদের মনে করিয়ে দিতে চাই, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আপনারা উপদেষ্টা হয়েছেন, আপনারা বক্তব্য দেওয়ার আগে ৫ আগস্টের গণভবনের চিত্র মনে রাখবেন।
“খুনিদের পুনর্বাসনের বিষয়ে সতর্ক করে দিতে চাই, আমরা যেভাবে স্বৈরাচারকে ক্ষমতা থেকে নামিয়েছি, ঠিক একইভাবে স্বৈরাচার পুনর্বাসনের চেষ্টাকারীদেরও নামাতে সময় লাগবে না।”
সোমবার রাতে সাখাওয়াত হোসেনের পদত্যাগ দাবিতে কুষ্টিয়ায় ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল করে বলে সকাল সন্ধ্যার আঞ্চলিক প্রতিবেদন জানিয়েছেন।
কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মোজাক্কের রহমান রাব্বী বলেন, “স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আওয়ামী লীগের চাটুকারিতা করছেন। তিনি আওয়ামী লীগেক আবার সংগঠিত হতে বলছেন। কিন্তু এই আওয়ামী লীগের হাতে এখনও ছাত্র হত্যার রক্ত লেগে আছে। যারা হত্যা করলো তাদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে, তাদের সংগঠিত হতে বলছে। এইজন্য তার পদত্যাগের দাবি করছি।”
শপথ নেওয়ার পরদিন আরেক বক্তব্যের জন্য সমালোচনায় পড়েছিলেন সাখাওয়াত। তিনি বলেছিলেন, চাটুকারিতা করলে মিডিয়া বন্ধ করে দেওয়া হবে।
পরে সমালোচনার মুখে তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, তিনি রাগের মাথায় ওই কথা বলেছিলেন। মিডিয়া বন্ধ করা তার কাজ না।