সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তার বিরুদ্ধে হওয়া গণহত্যার মামলায় বিচারের মুখোমুখি হবেন বলে আশা করছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।
তিনি বলেন, ক্ষমতায় থাকাকালে শেখ হাসিনা তার বিরোধীদের সাহস থাকলে দেশে এসে বিচারের মুখোমুখি হওয়ার আহ্বান জানাতেন। যেহেতু এটি তার দর্শন ছিল, তাই হয়ত এখন তিনি সেটাই করবেন।
রবিবার নিজের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন মো. আসাদুজ্জামান। মূলত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে কথা বলছিলেন তিনি, কথা প্রসঙ্গেই শেখ হাসিনার বিচার ও দেশে ফেরার বিষয়টি সামনে আসে।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “অতীতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া বক্তব্যগুলো এক্সামিন করলে দেখবেন উনার নিজের বক্তব্য ছিল, ‘সাহস থাকলে আদালতে বিচারের মুখোমুখি হতে’। এখন আদালতে বিচারের মুখোমুখি হওয়া উনার জন্যও ভালো। এটা উনার দর্শন ছিল, উনি হয়ত তা করবেনও।”
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “প্রত্যেক আসামির উচিৎ আদালতের সামনে এসে বিচারের মুখোমুখি হওয়া। প্রসিকিউশন যদি আসামির অবস্থান নিশ্চিত হন সেক্ষেত্রে তাকে ফিরিরে আনতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
“ইন্টারপোলের সহযোগিতা নিয়েও ফিরিয়ে আনা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে দেখতে হবে সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে ইন্টারপোলের আসামি ফেরানোর এখতিয়ার রয়েছে কিনা।”
তীব্র ছাত্র-গণআন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। সেদিন জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান বলেছিলেন, পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন শেখ হাসিনা।
পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ৮ আগস্ট দেশ পরিচালনার দায়িত্বে নেয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
নতুন সরকার গঠনের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অংশ নিয়ে নিহতদের হত্যার ঘটনায় একের পর এক মামলা হতে থাকে। যেগুলোয় আসামি হিসেবে উল্লেখ করা হয় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হওয়া গণহত্যার মামলাও হয়েছে তার বিরুদ্ধে। যে মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি হয়েছে।
শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে বিচারের মুখোমুখি করার কথা শুরু থেকেই বলে আসছিলেন অন্তর্বর্তী সরকার সংশ্লিষ্টরা। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হওয়ার পর বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় আসে।
অন্যদিকে, যেদিন তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয় সেদিনই অর্থাৎ গত বৃহস্পতিবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়াল সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের শেখ হাসিনা বিষয়ক প্রশ্নের জবাব দেন। সেখানে তিনি বলেন, “সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ভারতে চলে আসার বিষয়ে আগেই জানানো হয়েছিল। নিরাপত্তার কারণে অল্প সময়ের নোটিসে তিনি ভারতে চলে এসেছিলেন। তিনি এখনও আছেন, থাকবেন।”
সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় প্রসঙ্গে
এসময় এক প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় বহালের মধ্য দিয়ে বিচারবিভাগ স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালনের সুযোগ পেল।
তিনি বলেন, “অবশ্যই আজকের রায়টি বিচার বিভাগের প্রকৃত স্বাধীনতার ক্ষেত্রে মাইলফলক ও ঐতিহাসিক হয়ে থাকবে। আজকের এই রায়ের ফলে বিচারবিভাগ স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালনের একটা জায়গায় গেল এবং বিচারবিভাগ দুর্বৃত্তায়ন ও রাজনীতি থেকে বেরিয়ে এল।”
বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছ থেকে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলে ফেরায় কাউন্সিল ঐতিহাসিক একটি দায়িত্ব পেল বলেও মনে করেন রাষ্ট্রের প্রধান এই আইন কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, “সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর রায় ‘রিভিউ’ আবেদন অনেক আগেই ফাইল করা হয়। রিভিউতে ৯৪ টি গ্রাউন্ড পেশ করা হয়। আমরা এই ৯৪ টি গ্রাউন্ড এক্সামিন করেছি, পূর্ণাঙ্গভাবে পড়েছি। আমাদের কাছে মনে হয়েছে ৯৪ টি গ্রাউন্ডের মধ্যে একটি গ্রাউন্ডও মামলা রিভিউ হওয়ার মতো গুড গ্রাউন্ড না। আমরা আদালতকে বলেছি এ গ্রাউন্ডগুলো আমরা উপস্থাপন করব না।”
এর আগে, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অপসারণের বিধান সংক্রান্ত সংবিধানের বহুল আলোচিত ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা ‘রিভিউ’ আবেদন পর্যবেক্ষণসহ নিষ্পত্তি করে দেয় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ থেকে বাতিল ২ থেকে ৮ উপ-অনুচ্ছেদ পুনর্বহাল (রিস্টোর) করে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে আপিল বিভাগ এ রায় দেন। এই রায়ের ফলে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় বহাল রইল এবং বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছ থেকে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কাছে ফিরল।