দাম্পত্য সম্পর্কে একজন আরেকজনের কথা শোনা খুবই জরুরি। সঙ্গী কী বলতে চাচ্ছে না শুনলে কি আর বোঝাপড়া থাকে? কিন্তু দাম্পত্য তো আর বিশেষ কোন সূত্র মেনে চলেনা যে, যখন যেমন চাই আর তখন ঠিক তাই হবে।
উলটো কখনো কখনো এমন হতেই পারে যে এক পক্ষ মন দিয়ে কথা শুনছেন না। ফলে আরেকপক্ষে বাড়ছে দ্বিধা আর শঙ্কা । তবে কি সঙ্গীর মন অন্যদিকে?
বিষয়টা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হয়তো এমন নয়। কিন্তু সঙ্গীর এমন দশায় কী করা উচিৎ? তার কানের কাছে চিৎকার করে তাকে কথা শুনতে বাধ্য করা উচিত? একেবারেই নয়। এতে বরং হিতে বিপরীত হতে পারে।
শিকাগোর নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভারসিটির ফ্যামিলি ইন্সটিটিউটের থেরাপিস্ট রেবেকা কুপারসস্মিথের মতে, “হয়তো সঙ্গী কথাটা ঠিক স্পষ্ট বুঝতে পারছে না অথবা এমনভাবে বলা হচ্ছে যে সে শুনতেই পাচ্ছে না।”
সুতরাং, আপনার সঙ্গী আপনাকে ‘শুনছে না’ এর অর্থ নানারকম হতে পারে।
হতে পারে সম্পর্কে একঘেয়েমী চলে এসেছে অথবা সম্পর্ক হয়ে পড়েছে গতিহীন ক্লিশে। সুতরাং কোন সম্পর্কে কেউ যদি মনে করেন তার সঙ্গী তার কথা যথেষ্ট মনযোগ দিয়ে শুনছেন না তবে নিচের কৌশলগুলো মেনে চলা যেতে পারে।
কথা বলার আগে যোগাযোগ স্থাপন করুন
একেবারে মৌলিক কিছু কাজ দিয়ে শুরু করতে হবে। হতে পারে সঙ্গী কোন কাজে ভীষণ ব্যস্ত। এক্ষেত্রে লস অ্যাঞ্জেলেসের সোশ্যাল সাইকলোজিস্ট স্যারা নাসারজেডের পরামর্শ হলো চট করে কোন আলাপ শুরু না করা। শুরু করলেই যেটা হবে, অপর পক্ষ কথা তো মন দিয়ে শুনবেইনা বরং এটা হবে দেওয়ালের সঙ্গে কথা বলার নামান্তর মাত্র। এইসব ক্ষেত্রে সঙ্গীকে জিজ্ঞাসা করা যেতে পারে তার হাতে কথা শোনার মতো পর্যাপ্ত সময় আছে কিনা। না থাকলে, কখন আছে তা জেনে নেওয়া।
উপযুক্ত সময় নির্বাচন
কথোপকথনের জন্য যদি একেবারেই সময় না হয় তবে ভিন্ন কিছু করুন। উদাহরণস্বরূপ, সঙ্গীকে জিজ্ঞাসা করুন তার কাজের পরে দুজনে মিলে সন্ধায় একটু হাঁটতে বের হওয়া যায় কিনা।
থেরাপিস্ট কুপারস্মিথের মতে, কখনো কখনো ভিন্ন কিছুই হতে পারে সহজ সমাধান। হতে পারে সঙ্গী অথবা সঙ্গীনি খুব সকাল সকাল কাজে চলে যায় ফলে কথা বলার জন্য তাকে পাওয়া কঠিন। এমন ক্ষেত্রে সন্ধ্যায় নিরিবিলি পথ চলতে চলতে আলাপ সেরে নেওয়া বেশ কাজের।
নিজেকে প্রশ্ন করুন
প্রশ্ন করুন নিজেকে। কোন কথাটি বললে সঙ্গী আপনার প্রতি মনযোগী হবে। এটা হতে পারে, তাকে ভালোবাসার কথা জানানো। হতে পারে জীবনে তার গুরুত্ব কতখানি তা তুলে ধরে তার সঙ্গে আলাপচারিতা শুরু করা।
সঙ্গীকে ইতিবাচক বার্তা দেওয়া
সঙ্গী কথায় মন দিচ্ছেনা, তাই তার কাছে অভিযোগের ডালি খুলে বসা সবসময় খুব কাজের জিনিস নয়। তার চেয়ে সঙ্গী কথা শুনলে এবং মনোযোগ দিলে কী দারুণ অনুভূতি হয় তাই তুলে ধরা উচিত।
সঙ্গীর প্রতি একগাদা অভিযোগ উলটো তার কথা শোনার আগ্রহকে দমিয়ে দিতে পারে।
কাউন্সেলিং সহায়তা
যদি দুপক্ষই বুঝতে সক্ষম হন যে একে অপরের অথবা যে কোন একজনের আলাপ আলোচনায় মন একেবারেই নেই, তবে বিষয়টিকে বেশ গুরুত্বের সাথেই নিতে হবে। এসব ক্ষেত্রে প্রয়োজন কাউন্সেলিং থেরাপি। দম্পতি এবং পরিণয়সূচক সম্পর্কে আবদ্ধ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে দুজনকেই এই থেরাপি সহায়তার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। থেরাপিস্ট উভয় পক্ষের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা নির্ণয় করেন এবং কিছু চর্চা বাতলে দেন।
নিজের পরিবর্তন
সঙ্গী কথা শুনছেনা বলে অনেকেই মনে করেন সমস্যা বোধয় কেবল সঙ্গীর। এমনও হতে পারে যে বিশেষ কোন আচরণ, পূর্বের রাগ অথবা অতীত ট্রমার কারণে সঙ্গী কথা শোনার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। তাই সবসময় একপেশে অভিযোগ নয়, তাকাতে হবে নিজের দিকে। এমনও তো হতে পারে যে সমস্যাটা আপনার।