Beta
বৃহস্পতিবার, ১ মে, ২০২৫
Beta
বৃহস্পতিবার, ১ মে, ২০২৫

কী হবে পোপ ফ্রান্সিস পদত্যাগ করলে

Pope
[publishpress_authors_box]

ঘটনাটি ২০১৩ সালের ১১ ফেব্রুয়ারির। হঠাৎ করে পোপ ষোড়শ বেনেডিক্ট স্বেচ্ছায় তার পদ থেকে সরে দাঁড়ান। ওই ঘটনার আগের ৬০০ বছরে এমন কোনও পদত্যাগের খবর শোনা যায়নি। ফলে ওই ঘটনা ক্যাথলিক চার্চে ব্যাপক আলোড়ন তুলেছিল।

কিন্তু সম্প্রতি দুই সপ্তাহ হাসপাতালে নিউমোনিয়ার সঙ্গে লড়াই করার পর বর্তমান পোপ ফ্রান্সিসও তার পূর্বসূরির মতো একই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, এমন জল্পনা চলছে ভ্যাটিকানে।

পোপের জীবনী লেখক অস্টিন আইভারেইচ সিএনএনকে বলেন, “পোপ ফ্রান্সিস যদি দীর্ঘমেয়াদি কোনও দুর্বলতা বা ক্রমাবনতি ঘটবে, এমন রোগে আক্রান্ত হন, যা তাকে পোপের দায়িত্ব সম্পূর্ণভাবে পালন করতে বাধা দেয়, শুধু তখনই তিনি পদত্যাগের কথা ভাববেন।”

ভ্যাটিকান জানিয়েছে, গত শুক্রবার হঠাৎ শ্বাসকষ্ট শুরু হলে পোপকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়। এছাড়া তিনি বমি করলে এর কিছু অংশ শ্বাসনালীতে চলে যায়। এতে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে যায়। শনিবার সকালে ভ্যাটিকান জানায়, পোপ ফ্রান্সিস শান্তিপূর্ণ রাত কাটানোর পর বিশ্রাম নিচ্ছেন।

পোপের পদ থেকে সরে দাঁড়ানো কোনও কোম্পানির প্রেসিডেন্ট বা সিইওর পদ ছাড়ার মতো নয়। এখানে নির্দিষ্ট মেয়াদ নেই, কোনো পরিচালনা পর্ষদও নেই। এটি আজীবনের দায়িত্ব হিসাবে বিবেচিত হয়।

ক্যাথলিকদের কাছে পোপ হলেন সেন্ট পিটারের উত্তরসূরি, যিনি খ্রিস্টের দেওয়া দায়িত্ব পালন করেন। তবে পোপের পদ একটি দাপ্তরিক দায়িত্বও। আধুনিক চিকিৎসা ও মানুষের দীর্ঘায়ু নতুন পরিস্থিতি তৈরি করেছে। ৮৮ বছর বয়সী পোপ কতদিন হাসপাতালে থাকবেন বা তার ভবিষ্যৎ শারীরিক অবস্থা কেমন হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়।

আইভারেইচ বলেন, বৃদ্ধ বা দুর্বল হওয়া পোপের দায়িত্ব পালনে কোনও বাধা নয়। ক্যাথলিক চার্চও এমন নিয়ম চাইবে না, যেখানে নির্দিষ্ট বয়স বা অসুস্থতার কারণে পোপকে সরে দাঁড়াতে হবে। এছাড়া পোপ ফ্রান্সিস পুরোপুরি দায়িত্ব পালন করছেন এবং তিনি সীমিত পরিসরে পোপের ভূমিকা পালন করতে চান না।

ভ্যাটিকান গত মঙ্গলবার এক ঘোষণায় জানায়, পোপ ফ্রান্সিস একটি অনির্দিষ্ট তারিখে পাদ্রীদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সভা ডাকবেন।

এতে পোপ বেনেডিক্টের পদত্যাগের গুঞ্জন ভেসে ওঠে। কারণ তিনিও এমন একটি সভা থেকেই পদত্যাগ করেছিলেন।

সভার সিদ্ধান্ত পোপ ফ্রান্সিস নিয়েছেন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায়। সেখানে তিনি ভ্যাটিকানের শীর্ষ কর্মকর্তা কার্ডিনাল পিয়েত্রো পারোলিন, যিনি হলি সি’র পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আর্চবিশপ এডগার পেনা পার্রার সঙ্গে বৈঠক করেন। আর্চবিশপ পার্রা কার্যত পোপের প্রধান সহকারী হিসেবে কাজ করেন।

ভ্যাটিকান বিশ্লেষক ও ‘দ্য আনফিনিশড’ বইয়ের লেখক মার্কো পোলিতি বলেন, “র‌্যাটজিঙ্গার (ষোড়শ বেনেডিক্ট) আকস্মিক পদত্যাগের পর চার্চের কঠিন সময়ের কিছু সভা এখন রাজনৈতিক হয়ে উঠেছে। এ মুহূর্তে পোপ সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে ও জুবিলি বর্ষ সম্পন্ন করতে মনোযোগী। তবে ৮৯তম জন্মদিনে তিনি নিজেকে প্রশ্ন করবেন, তিনি কি এখনও চার্চ পরিচালনার উপযুক্ত?”

ক্যাথলিক চার্চ বর্তমানে এক বছরব্যাপী জুবিলি উদযাপন করছে, যা প্রতি ২৫ বছর পরপর অনুষ্ঠিত হয়।

পোপ ফ্রান্সিস মানুষকে আগ্রহী ও সতর্ক রাখতে পছন্দ করেন। তিনি জানতেন, সভার ঘোষণা দিলে নানা জল্পনা তৈরি হবে। তবে এমন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়ে তিনি এখনই কিছু প্রকাশ করতে চান না।

চার্চের আইন অনুযায়ী পোপের পদত্যাগ একটি স্বাধীন সিদ্ধান্ত হতে হবে, যা সঠিকভাবে প্রকাশিত হতে হবে এবং সবাইকে মেনে নিতে হবে। পোপের সিদ্ধান্ত গ্রহণে বাইরের চাপ বা জোরাজুরি চলে না।

পোপ ফ্রান্সিস বলেছিলেন, পোপের পদ ‘আদ ভিটাম’ অর্থাৎ আজীবন। এই পদ ত্যাগ করার কোনও পরিকল্পনা তার নেই। তবে তিনি কখনও পদত্যাগের সম্ভাবনা অস্বীকার করেননি এবং বলেছেন যে ষোড়শ বেনেডিক্টের সিদ্ধান্ত ভবিষ্যৎ পোপদের জন্য অবসর নেওয়ার দুয়ার খুলে দিয়েছে।

পোপের পদত্যাগের পর একটি কনক্লেভ ডাকা হয়, যেমন পোপের মৃত্যুর পর ডাকা হয়। তবে ২০১৩ সালে ষোড়শ বেনেডিক্ট আইন পরিবর্তন করে দ্রুত নির্বাচনের অনুমতি দেন।

ভ্যাটিকানের পররাষ্ট্র মন্ত্রী আর্চবিশপ পল গ্যালাঘার এ সপ্তাহে উল্লেখ করেন, পোপ ফ্রান্সিসের পদত্যাগের কোনও পরিকল্পনা নেই এবং তিনি সুস্থ হতে সবকিছু করছেন।

গ্যালাঘার আমেরিকার একটি ক্যাথলিক পত্রিকাকে বলেন, “যদি ঈশ্বর চান যে তিনি সুস্থ হোন, তা হবে দুর্দান্ত। আর যদি ঈশ্বর চান না, তবে তিনি তা মেনে নেবেন।”

তবে পোপ ফ্রান্সিস প্রায়ই অবাক করা সিদ্ধান্ত নেন। যদি তিনি পদত্যাগ করেন, তবে এটি খুব সম্ভবত এমন সময়ে হবে যখন কেউ তা আশা করছে না।

তথ্যসূত্র : সিএনএন

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত