যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোটের বাকি আর মাত্র দুই দিন। ৫ নভেম্বরের ভোট ঘিরে এখন শেষ মুহূর্তের প্রচারে ব্যস্ত মূল প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থী কমলা হ্যারিস ও ডোনাল্ড ট্রাম্প। দুই শিবিরই জোর তৎপরতা চালাচ্ছে ভোটারদের নিজের দিকে টানতে, বিশেষ করে সেই অঙ্গরাজ্যগুলোতে, যেখানে ভোটাররা এখনও ঠিক করতে পারেননি যে তারা কাকে ভোট দেবেন।
এই যখন পরিস্থিতি, তখন ডেমোক্রেট প্রার্থী কমলা হ্যারিসের শিবিরকে আরেকটি বিষয়েও পরিকল্পনা সাজাতে হচ্ছে। আর সেই পরিকল্পনা সাজাতে হচ্ছে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্ভাব্য একটি ‘কৌশল’কে মাথায় রেখে।
২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফল ঘোষণার আগেই নিজেকে বিজয়ী ঘোষণা করে এক ধরনের ভজঘট পাকিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেই নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত জো বাইডেন বিজয়ী হলেও এখন পর্যন্ত পরাজয় স্বীকার করেননি ট্রাম্প। তার দাবি, ব্যাপক জালিয়াতির মাধ্যমে তার বিজয় কেড়ে নেওয়া হয়েছিল।
এবারের নির্বাচনেও ট্রাম্প একই ধরনের কোনও ‘কৌশল’ অবলম্বন করতে পারেন বলে আশঙ্কা করছে কমলা শিবির। আর তেমন কিছু ঘটলে তা মোকাবেলায় তাদের জোর প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কমলা হ্যারিসের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস মিলছে। এখন পর্যন্ত যেসব জরিপের ফল এসেছে, তাদের দুইজনের মধ্যে ব্যবধান খুবই সামান্য।
যুক্তরাষ্ট্রের ভোট শেষ হওয়ার পর নির্বাচনী কর্মকর্তাদের দেওয়া ভোট গণনার তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে দেশটির বড় মিডিয়া আউটলেটগুলো সাধারণত বিজয়ী প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে থাকে। অনেক সময় এ ধরনের ঘোষণা আসার আগেই কোনও কোনও প্রার্থীর নিজেকে বিজয়ী ঘোষণার নজির রয়েছে, তবে সেসব ক্ষেত্রেও তাদের বিজয়ের বিষয়টি অনেকটাই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল।
২০২০ সালে চূড়ান্ত ফল আসার আগেই নিজেকে বিজয়ী দাবি করেছিলেন ট্রাম্প। এবারও ভোটের দিনই নিজেকে বিজয়ী ঘোষণা করার ব্যাপারে সাংবাদিকদের কাছে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন রিপাবলিকান পার্টির এই প্রার্থী। যেখানে নির্বাচনী বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, ভোটের চূড়ান্ত ফল জানতে কয়েকদিনও লেগে লাগতে পারে, বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ কিছু এলাকায় ভোট পুনরায় গণনার প্রয়োজন দেখা দিলে।
কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প যদি আগেভাগে নিজেকে বিজয়ী ঘোষণা করেই দেয়, সেক্ষেত্রে কী করবে কমলা হ্যারিসের নির্বাচনী শিবির?
এ বিষয়ে জোর প্রস্তুতি নিয়ে রাখার কথা জানালেও তারা ঠিক কীভাবে এমন পরিস্থিতি মোকাবেলা করবে সে বিষয়ে তাদের পরিকল্পনা প্রকাশ করেনি ডেমোক্রেট শিবির।
ডেমোক্র্যাট শিবিরের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ট্রাম্প যদি আগেভাগে নিজেকে বিজয়ী ঘোষণা করে বসেন, তবে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে তারা যাতে সোশাল মিডিয়া ও টেলিভিশনের মাধ্যমে শান্তি ও ধৈর্যের বার্তা ছড়িয়ে দিতে পারে, সে জন্য প্রস্তুতি আছে তাদের।
বুধবার সংবাদমাধ্যম এবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারেও এ বিষয়ে প্রস্তুত থাকার কথা জানিয়েছেন ডেমোক্রেট পার্টির প্রার্থী ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস।
তিনি বলেন, “বিষয়টি দুঃখজনক হলেও আমরা প্রস্তুত রয়েছি যদি তিনি এমনটি করেন, আমরা যদি জানতে পারি যে তিনি যদি আসলে সংবাদমাধ্যমকে প্রভাবিত করতে এবং আমেরিকান জনগণের মতামতকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন… আমরা তা মোকাবেলায় প্রস্তুত।”
এক্ষেত্রে কী ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে সে বিষয় অবশ্য বিস্তারিত ধারণা দেননি কমলা হ্যারিস। তবে ডেমোক্রেট পার্টির ছয় নেতা ও হ্যারিসের প্রচারদলের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রাথমিক লড়াইটি জনমতের আদালতে হবে। তারা পরিকল্পনা করছেন সোশাল মিডিয়া ও টেলিভিশনের মাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণা চালিয়ে যাবেন যাতে বিজয় ঘোষণা করার আগে সব ভোট গণনা নিশ্চিত করা হয়।
ডেমোক্রেট জাতীয় কমিটির এক শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “যে মুহূর্তে তিনি (ট্রাম্প) মিথ্যা জয়ের ঘোষণা দেবেন, আমরা টিভিতে উঠে সত্য প্রকাশ করতে এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিদের মাধ্যমে তা মোকাবেলায় প্রস্তুত।”
কমলা হ্যারিসের প্রচারদলের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা শুক্রবার সাংবাদিকদের বলেন, তারা মোটামুটি নিশ্চিত যে সব ভোট গণনা পুরোপুরি শেষ হওয়ার আগেই ট্রাম্প মঙ্গলবার রাতে মিথ্যা বিজয়ের দাবি করবেন।
“তিনি আগেও এটি করেছিলেন এবং ব্যর্থ হয়েছিলেন। যদি তিনি আবার এটি করেন, এটি আবারও ব্যর্থ হবে”, বলেন ওই কর্মকর্তা।
এদিকে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত হোয়াইট হাউসের সাবেক প্রধান কৌশলবিদ স্টিভ ব্যানন বলছেন, ট্রাম্পের উচিত হবে দ্রুত নিজের বিজয় ঘোষণা করা।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল হিলে ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারিতে হামলার ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে চার মাস জেলখাটার পর কারাগার থেকে বেরিয়েই গত মঙ্গলবার নিউ ইয়র্ক টাইমসকে ব্যানন বলেন, “তাকে উঠে দাঁড়িয়ে বলতে হবে, ‘আমি জিতেছি’।”
ট্রাম্পের প্রচার দল রয়টার্সকে জানিয়েছে, ভোট শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী প্রতিটি ভোটের জন্য লড়বেন। তবে ফল ঘোষণার আগেই ট্রাম্প নিজেকে বিজয়ী ঘোষণার পরিকল্পনা করছেন কি-না– এমন প্রশ্নের সরাসরি জবাব দেয়নি তার প্রচারদল।
রিপাবলিকান পার্টির বাধা নেই
২০২০ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প ফল ঘোষণার আগেই নিজেকে বিজয়ী দাবি করে ডেমোক্র্যাটদের পাশাপাশি অনেক হাই-প্রোফাইল রিপাবলিকানের নিন্দার মুখে পড়েছিলেন। তবে এবার পরিস্থিতি ভিন্ন হতে পারে।
গত কয়েক বছরে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রিপাবলিকান পার্টির ওপর প্রায় সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছেন, যার অর্থ অনেক প্রভাবশালী রক্ষণশীল রিপাবলিকানও তার দাবির সঙ্গে তাল মেলাতে পারেন– এমনটাই মনে করছেন কয়েকজন রাজনৈতিক কৌশলবিদ।
দীর্ঘদিন ধরে রিপাবলিকান পার্টির কৌশলবিদের ভূমিকায় থাকা এবং ট্রাম্পের সমালোচক হিসেবে পরিচিত চিপ ফেলকেল বলেন, “রিপাবলিকান পার্টি যে ট্রাম্পের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে তার পর্যাপ্ত প্রমাণ আমরা দেখেছি… এবং আমরা এমন কোনও প্রমাণ দেখিনি যে পার্টির কর্মকর্তা বা নির্বাচিত কর্মকর্তাদের কেউ তার বিরোধিতা করছে।”
নির্বাচনে হেরে গেলে তার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য ট্রাম্প ও তার রিপাবলিকান মিত্ররা অনেকদিন ধরেই ভিত্তি তৈরি করছেন। এক্ষেত্রে তারা দাবি করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক নয়– এমন ব্যক্তিরা ডেমোক্র্যাটিক পার্টির জন্য ভোট দিতে চেষ্টা করতে পারে। এর পাশাপাশি নির্বাচনের ফলকে আদালতে চ্যালেঞ্জ জানাতে তারা আইনজীবীদের একটি বাহিনীও প্রস্তুত করেছেন।