অন্তর্বর্তী সরকারের নির্বাহী আদেশে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ ঘোষণার পর বিএনপির প্রথম সারির কোনও নেতা হিসেবে এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।
বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক আলোচনায় তিনি দলের নেতাকর্মীদের প্রতি প্রশ্ন রেখে বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকার ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করেছে, এটা খুবই দুঃসাহসিক কাজ। এতে আমরা আপত্তি করছি না। আমরা খুশি হয়েছি। কিন্তু বিএনপিকে যদি নিষিদ্ধ করে তখন আমরা কী করব?”
এমন সময় গয়েশ্বর চন্দ্র এ বক্তব্য দিলেন যখন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে সরানো নিয়ে সরকারের সঙ্গে বিএনপির এক ধরনের দূরত্ব দেখা যাচ্ছে।
এর আগে সরকার সন্ত্রাস বিরোধী আইন, ২০০৯ এর ধারা ১৮ এর উপ-ধারা (১) অনুযায়ী বুধবার বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করে সরকার। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম এই সংগঠনকে নিষিদ্ধ করার জন্য কারণ হিসেবে হত্যা, নির্যাতন, গণরুম কেন্দ্রিক নিপীড়ন, ছাত্রাবাসে সিট বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নসহ নানাবিধ জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে।
জাগ্রত বাংলাদেশ নামের একটি সংগঠনের উদ্যোগে ‘দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও রাজনৈতিক দলের করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। সেখানেই ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের বিষয়ে কথা বলেন তিনি।
জামায়াতে ইসলামীর প্রসঙ্গ টেনে বিএনপির এই নেতা বলেন, “জামায়াতের অনেক লোককে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে এবং অত্যাচারও করেছে। এরপরেও জামায়াত কিন্তু শেখ হাসিনার মতো একজন ফ্যাসিস্টকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেনি।”
নিজের বক্তব্যে নির্বাচন প্রসঙ্গেও কথা বলেন গয়েশ্বর। তিনি বলেন, “নির্বাচন করার জন্য যতটুকু সময় দেওয়া দরকার আমরা ততটুকু সময় দেব। কিন্তু সেই সময়টা অতিক্রম হয়ে গেলে জনগণের মালিকানা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি ঘরে বসে থাকবেন না।
“অতীতে রাজপথে থেকে যেভাবে সংগ্রাম করেছি, ভবিষ্যতেও করব। আমরা শুধু একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে জনগণের ভোটের মাধ্যমে সরকার গঠন করতে চাই।”
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, “যারা বিভিন্ন সংগঠনের নামে মানুষকে হত্যা, গুম, নির্যাতন করেছে তারা তো আরামে আছে। তাদের ধরে ধরে বিচার করেন। অন্যায় করলে তার পরিণাম কী হয় সেটির দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।”
এসময় অনেক অভিযুক্ত কীভাবে সীমান্ত পেরিয়ে বিদেশে চলে গেল, সেই প্রশ্নও রাখেন গয়েশ্বর। কারা অপরাধীদের বিদেশে যাওয়ার সুযোগ করে দিল, তার জবাব চান সরকারের কাছে।
গয়েশ্বর বলেন, “জনগণ তো তাদের (অন্তর্বর্তী সরকারকে) আল্লাহ-ভগবানের মতো বিশ্বাস করে দায়িত্ব দিয়েছে। তারা যদি অনন্তকাল ক্ষমতায় থাকতে চান আমরা তখন কী করব? আমরা কিছুদিন দেখি, এরপর অতীতে যা করেছি ভবিষ্যতেও তা করব।
“আমরা যেহেতু মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত আছি, তাই আমাদের মারতে আর পারবে না। এ সরকার আমাদের বিশ্বাস ও জনগণের আস্থা ভঙ্গ করুক সেটা চাই না।”