দোকানে একটি প্লাস্টিক চেয়ারে বসে কিংস্টন ধেওয়া, চোখ দুটি নিবিষ্ট স্মার্টফোনে, আঙুলগুলো স্ক্রিনে, অবিরত টাইপ করে যাচ্ছে। লেখার ফাঁকেফাকেই তিনি সবজি ও ফল বিক্রি করছেন।
জিম্বাবুয়ের রাজধানী হারারের দক্ষিণে একটি ব্যস্ত স্বল্প আয়ের শহরতলী বুদিরিরো ৫-এ ধেওয়ার দোকান। ক্রেতা বিদায় করেই তিনি ব্যস্ত হয়ে পড়েন ফোনে, একটি গুগল ডক-এ আবার টাইপ করা শুরু করেন।
মধ্য দুপুরে আকাশে সূর্য নির্দয় রূপে আবির্ভূত। পাশে একজন বয়স্ক নারী একটি গ্যাস ফ্রায়ারের মধ্যে খোসা ছাড়ানো এবং সুন্দরভাবে কাটা আলু ভরে দিচ্ছেন। একটি সৌর-চালিত রেডিও থেকে উচ্চস্বরে খ্রিস্টানদের ধর্মসঙ্গীত বাজছে। আর ধেওয়া লিখে চলেছেন।
লিখতে লিখতেই তিনি আল জাজিরাকে বলেন, “দোকানে ক্রেতা আসলে আমার চিন্তার ট্রেনটি থেমে যায়।”
ধেওয়া কয়েক ঘণ্টা ধরে লেখার পর অপেক্ষারত পাঠকদের কাছে তার নতুন উপন্যাসের সর্বশেষ অধ্যায়টি পাঠানোর আগে প্রুফ দেখছিলেন।
২০ মিনিটের বেশি সময় ধরে লেখাটি পুনরায় পড়ে কপি করে হোয়াটসঅ্যাপের একটি গ্রুপে পোস্ট করেন, যেখানে তার হাজারের বেশি ফলোয়ার অপেক্ষায় রয়েছে।
জিম্বাবুয়েতে হোয়াটসঅ্যাপে উপন্যাস বিক্রি করা লেখকদের একটি নতুন দলের একজন ধেওয়া।
‘লিখতে পারতাম আরও বেশি’
জিম্বাবুয়ের অনেকেই ইংরেজিতে লিখলেও ধেওয়া বেছে নিয়েছেন স্থানীয় ভাষা ‘শোনা’। এই ভাষায় লেখেন, এমন কয়েকজন তাকে নিজেদের ভাষায় লিখতে উৎসাহিত করেছিলেন। ধেওয়া তার লেখা উপন্যাসে মূলত প্রাক ঔপনিবেশিক আফ্রিকান গ্রামীণ জীবনের চিত্র ফুটিয়ে তোলেন।
৫২ বছর বয়সী ধেওয়ার লেখালেখির শুরু উচ্চ বিদ্যালয়ে থাকা অবস্থায়। ১৯৯২ সালে তিনি একটি উপন্যাস প্রকাশের চেষ্টা করেন। কিন্তু বই প্রকাশ করার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের জোগান দিতে না পারায় তা আর আলোর মুখ দেখেনি।
কোভিড-১৯ মহামারীর সময় ২০২০ সালের মার্চে দেশজুড়ে লকডাউন শুরু হলে ধেওয়া বাড়িতে আটকা পড়েন। তখন সময় কাটানোর জন্য তিনি কিছু হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে শেয়ার করা গল্প-উপন্যাস পড়েন। মহামারীর কয়েক বছর আগে থেকেই হোয়াটসঅ্যাপে গল্প-উপন্যাস লেখার চল শুরু হয়। তবে মহামারীর মধ্যে তা একটি বড় শিল্প হয়ে উঠে।
ধেওয়া রিড অ্যান্ড রাইট নামে উদীয়মান লেখক ও পাঠকদের একটি গ্রুপের সদস্য হন।
তিনি বলেন, “আমি অনুভব করলাম, গ্রুপে যাদের লেখা পড়ছি আমি নিজে তাদের চেয়ে আরও ভালো লিখতে পারব। এরপর একদিন একটি গল্প লিখে গ্রুপে জমা দিলাম। সেটি পড়ে অনেকেই আমাকে লেখা চালিয়ে যেতে উৎসাহিত করেন।”
তার প্রথম উপন্যাসটিও বেশ পাঠকপ্রিয়তা পায়। উপন্যাসটি পড়ার জন্য প্রতিজন পাঠকের কাছ থেকে তিনি ২ ডলার করে নেন। এ থেকে তিনি তার বাড়ি ভাড়া মেটানো এবং পরিবারের খাবার কেনার জন্য যথেষ্ট অর্থ উপার্জন করেন।
এরপর ধেওয়া একে একে ৪৩টি উপন্যাস লিখে হোয়াটসঅ্যাপে প্রকাশ করেছেন। উপন্যাসগুলো বেশ দীর্ঘ ছিল। প্রতিটি উপন্যাসে ৩৫ থেকে ৪৫টি করে অধ্যায় ছিল।
ধেওয়া বলেন, “একটি অধ্যায় লিখতে আমি গড়ে তিন থেকে চার ঘণ্টা ব্যয় করি। ল্যাপটপ বা কম্পিউটার থাকলে আরও বেশি লিখতে পারতাম।”
কিন্তু তিনি কম্পিউটার কেনার টাকা জমাতে পারেননি।
ধেওয়া তার গল্প-উপন্যাসগুলোর একটি করে অধ্যায় লিখে ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, “হোয়াটসঅ্যাপে আমার এখন চারটি গ্রুপ আছে, যেখানে কয়েক হাজার পাঠক আমার লেখা পড়ে।”
হোয়াটসঅ্যাপের একটি গ্রুপে ১০২৪ জনের বেশি সদস্য হতে পারে না। এ কারণে জনপ্রিয়তা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ধেওয়াকে নতুন নতুন গ্রুপ খুলতে হয়।
প্রথমে কোনও গল্প বা উপন্যাসের কয়েকটি অধ্যায় পাঠকদের আকৃষ্ট করতে এবং আগ্রহ তৈরি করতে বিনামূল্যে শেয়ার করা হয়। এর মাধ্যমে লেখকরা হোয়াটসঅ্যাপ এবং ফেইসবুকসহ সোশাল মিডিয়াতে তাদের কাজের প্রচার করেন, পাঠকদের তাদের গ্রুপ এবং চ্যানেলে যোগদান করতে উৎসাহিত করেন।
হাজার হাজার পাঠক
হারারে বুদিরিরো ৫ উপশহরের বাসিন্দা ক্লেভার পাদা হোয়াটসঅ্যাপ লেখক পামেলা এনগিরাজির অনুরাগী এবং লেখকের নতুন বইয়ের একটি অধ্যায় খুলে পড়ছিলেন।
পাদা এলাকায় একটি ছোট কনফেকশনারির দোকান চালান, দিনের বিভিন্ন সময় লোকজন জড়ো হয়। তিনি বর্তমানে ইংরেজিতে লেখা ‘প্রায়োর রেপ্লিকা’ নামে এনগিরাজির নতুন একটি বই পড়ছেন।
হোয়াটসঅ্যাপে এনগিরাজির ২১ হাজারের বেশি ফলোয়ার রয়েছে। তিনি একজন পূর্ণকালীন লেখক এবং খুবই জনপ্রিয়।
ধেওয়ার গ্রুপগুলোতে তার পাঠকরা দ্বিমুখী যোগাযোগ তথা বার্তা আদান-প্রদানও করতে পারেন। কিন্তু এনগিরাজি হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল ব্যবহার করেন, যেখানে পাঠকরা কোনও বার্তা দিতে পারেন না।
হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল একমুখী সম্প্রচারের সরঞ্জাম যার মাধ্যমে লেখা, ছবি, ভিডিও, ডকুমেন্ট ও লিঙ্ক শেয়ার করা যায়। কিন্তু দর্শক-পাঠকরা কোনও বার্তা আদান-প্রদান বা কিছু শেয়ার করতে পারেন না।
‘প্রায়োর রেপ্লিকা’ উপন্যাসটির ১ থেকে ২০ অধ্যায় পর্যন্ত এনগিরাজি বিনামূল্যেই তার চ্যানেলে শেয়ার করেছেন। কিন্তু এর পরের অধ্যায়গুলো পড়তে চাইলে পাঠকদের অর্থ দিতে হচ্ছে।
এনগিরাজির হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলের একটি বার্তায় বলা হয়েছে, “প্রায়োর রেপ্লিকা এখন ২১তম অধ্যায় থেকে শেষ অধ্যায় পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। মূল্য শোধ করার পর বুম স্টোরি অ্যাপে সেগুলো শেয়ার করা হবে।”
বুম স্টোরি অ্যাপটি ই-প্রকাশনা প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করে। এটি লেখক ও প্রকাশকদের জন্য ডিজিটাল সামগ্রী তৈরি এবং বিতরণ করা সহজ করে তোলে।
প্রায়োর রেপ্লিকা উপন্যাসটি বেশ ভালো লেগেছে পাদার। এটি একটি প্রেমের উপন্যাস এবং টান টান উত্তেজনাকর। পাদা উপন্যাসটির বাকি অংশও কিনে পড়ার পরিকল্পনা করেছেন।
পুরো একটি উপন্যাস কেনার জন্য পাঠকদেরকে মোবাইল মানি ট্রান্সফার পরিষেবার মাধ্যমে লেখককে অর্থ পরিশোধ করতে হয়। কিছু লেখক পাঠকদের মোবাইল ফোন এয়ারটাইম দিয়ে তাদের বই কেনার সুযোগ দেন।
মূল্য পরিশোধের পর লেখক সম্পূর্ণ বইটি পাঠকের কাছে সাধারণত হোয়াটসঅ্যাপে পিডিএফ ফরম্যাটে পাঠান। এতে পণ্যের দ্রুত এবং সরাসরি বিতরণ নিশ্চিত হয়।
ই-বুক বাজার
জিম্বাবুয়ের ১ কোটি ৬০ লাখ জনসংখ্যার প্রায় ৫০ লাখ মানুষ হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করে।
ডেটারিপোর্টাল গ্লোবাল ডিজিটাল ইনসাইটস প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই বছরের প্রথম দিকে দেশটিতে ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সী সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ২ লাখের বেশি। অর্থাৎ, দেশটির প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যার প্রায় ২২ দশমিক ৮ শতাংশ।
অর্থনৈতিক সংকট এবং উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির কারণে জিম্বাবুয়ের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। মোবাইল ডেটার দাম বেশি হওয়ায় হোয়াটসঅ্যাপকেই তারা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করেন।
হোয়াটসঅ্যাপ ইতোমধ্যে লেখকদের জন্য একটি ‘বর’ হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। কারণ এর মাধ্যমে তারা তাদের পরিষেবার জন্য সরাসরি মূল্য আদায় করতে সক্ষম হন। অ্যাপটির জনপ্রিয়তার সুযোগ নিয়ে তারা তাদের কাজের প্রচার এবং আয়ও করতে পারেন।
ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম এবং ডিভাইস বেড়ে চলায় জিম্বাবুয়েসহ বিশ্বজুড়ে ই-বুক এবং ই-রিডারের মতো ডিজিটাল উপায়ে পড়ার সুযোগও বাড়ছে। কিন্তু জিম্বাবুয়েতে অর্থনৈতিক সংকটের কারণে দেশটির অধিকাংশের এই ধরনের পরিষেবা এবং ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য পর্যাপ্ত আয় নেই।
উদাহরণস্বরূপ, জিম্বাবুয়েতে ২৫০ এমবি ডেটার দাম ১১ ডলার, যা দিয়ে মাত্র প্রায় তিন ঘণ্টা ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায়। কিন্তু জিম্বাবুয়েতে একজন শিক্ষক মাসে মাত্র ৩০০ ডলার আয় আয় করেন। অন্যান্য কর্মীদের উপার্জন আরও কম।
জিম্বাবুয়ের একজন লেখক ও প্রকাশক ফিলিপ চিদাভেনজি আল জাজিরাকে বলেন, “অবশ্যই, আমরা চাইলে অ্যামাজনে যেতে পারি। কিন্তু কতজন জিম্বাবুইয়ান অ্যামাজনে কেনাকাটা করতে সক্ষম?”
২০১৩ সালে আফ্রিকান ই-বুক বাজারের আয় ছিল প্রায় ১৭ কোটি ৩৭ লাখ ডলার। ব্যবহারকারী প্রতি গড় আয় ছিল ১.৪৭ ডলার।
২০২৭ সালের মধ্যে আফ্রিকায় ই-বুক পাঠকের সংখ্যা ১৪ কোটি ৭৩ লাখে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে। আর আয় বছরে ৩.৭৬ শতাংশের চক্রবৃদ্ধির হারে (সিএজিআর) বৃদ্ধি পেয়ে ২০১.৩ মিলিয়নে পৌঁছাবে। আফ্রিকান ই-বুক বাজারে ২০২৭ সালের মধ্যে ১০.৭ শতাংশ ব্যবহারকারী বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
‘আভিজাত্যবাদী’ ঐতিহ্যবাহী প্রকাশনা
হোয়াটসঅ্যাপে স্ব-প্রকাশনার জনপ্রিয়তা সত্ত্বেও চিদাভেনজি একে ঐতিহ্যগত প্রকাশনার জন্য হুমকি বলে মনে করেন না।
তিনি বলেন, “হোয়াটসঅ্যাপে প্রকাশনার মান ধরে রাখা যায় না। তাই এটি প্রকাশনা শিল্পের জন্য গুরুতর কোনও হুমকি হতে পারবে না।”
চিদাভেনজির ভাষায়, “প্রকাশনা একটি অত্যন্ত সংবেদনশীল ক্ষেত্র, যেখানে গুণগত মান নিশ্চিত করার জন্য শক্তিশালী যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া প্রয়োজন। হোয়াটসঅ্যাপে যে কেউ ভােলা বা খারাপ যে কোনও কিছু প্রকাশ করতে পারে।”
তিনি বলেন, প্রকাশনা শিল্পও দেশের অর্থনৈতিক দুর্যোগ থেকে রেহাই পায়নি। জিম্বাবুয়ে একটি দীর্ঘস্থায়ী অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে রয়েছে, যার প্রধান বৈশিষ্ট্য উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি। এতে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে, বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি এবং ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব দেখা দিয়েছে।
চিদাভেনজি বলেন, “প্রকাশনা সাধারণত একটি অভিজাত ব্যবসা এবং সীমিত আয়ের একটি বাজারের উপর নির্ভর করে যা রুটি এবং মাখনের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে। লোকে তাদের দৈনন্দিন সব চাহিদা মেটানোর পর যদি হাতে টাকা থাকে তাহলেই শুধু বই কেনে।”
তার মতে, ঐতিহ্যগত প্রকাশনা বিভিন্ন অর্থনৈতিক সংকটের শিকার হয়েছে। এমনকি এ থেকে রেহাই পায়নি শিল্পের সবচেয়ে লাভজনক পাঠ্যপুস্তক প্রকাশনাও। এর জন্য পাইরেসিও দায়ী।
প্রাথমিকভাবে বইয়ের ব্যাপক অবৈধ ফটোকপির ফলে এই শিল্পের মৃত্যু হয়েছে, যা দেশে মহামারী পর্যায়ে পৌঁছেছে। এটি একটি কার্যকর প্রকাশনা শিল্পকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে।
বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি
নতুন ডিজিটাল প্রকাশকদের জন্য কপিরাইট এবং বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তির অধিকারও উদ্বেগের কারণ হতে পারে। কারণ তাদের কাজের অনুলিপি সহজেই আশেপাশে শেয়ার করা যায়।
আইটি বিশেষজ্ঞ জ্যাকব এমটিসি আল জাজিরাকে বলেন, “জিম্বাবুয়ের কপিরাইট আইন হোয়াটসঅ্যাপের মতো ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে প্রকাশিত সাহিত্যিক কাজগুলোর ওপরও প্রযোজ্য।
“জিম্বাবুয়ের কপিরাইট এবং প্রতিবেশী অধিকার আইন লেখকদের অধিকার রক্ষা করে। যারা তাদের কাজগুলো অনলাইনে বা মেসেজিং অ্যাপের মাধ্যমে প্রকাশ করে তারাও এর আওতায় রয়েছেন।”
তিনি বলেন, লেখকরা তাদের কপিরাইট আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠা করতে এবং প্রয়োগ করা সহজ করতে জিম্বাবুয়ে কপিরাইট অফিসে তাদের কাজ নিবন্ধন করতে পারেন।
“লেখকরা তাদের কাজগুলো কীভাবে ব্যবহার করা যাবে সে সম্পর্কে স্পষ্ট শর্তাবলী অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন। যেমন অনুমোদন ছাড়া শেয়ার বা বিতরণ নিষিদ্ধ করা।”
এছাড়া লেখকরা অননুমোদনহীন অনুলিপিগুলো ট্র্যাক করতে তাদের কাজগুলোতে শনাক্তযোগ্য মেটাডেটা এম্বেড বা ওয়াটারমার্ক দিতে পারেন।
তবে চিদাভেনজি বলেছেন, জিম্বাবুয়েতে বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তির অধিকার সংক্রান্ত অপরাধ মোকাবেলা করার জন্য ব্যাপক আইনি উপকরণ থাকলেও তার প্রয়োগ খুব কম।
স্ব-প্রকাশনা পদ্ধতি বেছে নেওয়া লেখকদের ক্রমবর্ধমান সংখ্যা জিম্বাবুয়ের প্রকাশনা শিল্পে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এনেছে। উদীয়মান এবং স্বল্প পরিচিত লেখকরাই হোয়াটসঅ্যাপ প্রকাশনা পদ্ধতি ব্যবহার করেন বেশি। তবে এনগিরাজির মতো কিছু হোয়াটসঅ্যাপ লেখকও ব্যাপক জনপ্রিয়তা এবং আপেক্ষিক সাফল্য অর্জন করেছে।
জিম্বাবুয়ের সবচেয়ে প্রতিভাবান এবং প্রতিষ্ঠিত লেখকরা আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মাধ্যমেই তাদের বই প্রকাশ করেন। কারণ এতে তারা রয়ালটিসহ নানা ক্ষেত্রেই বেশি সুবিধা পান। আন্তর্জাতিক ভাবে প্রকাশনা তাদের বিশ্বব্যাপী খ্যাতি গড়ে তুলতেও সাহায্য করে।
কিন্তু বেশিরভাগ লেখকের পক্ষেই তা সম্ভব হয় না। বিশেষ করে নতুন লেখক, যারা বিকল্পের দিকে ঝুঁকেছেন।
চিদাভেনজি বলেন, “হোয়াটসঅ্যাপে বই বিক্রি করে আর কতইবা বিক্রি করা যায়? একটি বাড়ি বা আবাসিক স্ট্যান্ড কেনার জন্য যথেষ্ট আয় কি করা যায়? এটা অসম্ভব।”
তবে ধেওয়া বলেন, হোয়াটসঅ্যাপে ধারাবহিকভাবে স্ব-প্রকাশনা তাকে আরও দক্ষ লেখক বানিয়েছে। এর মাধ্যমে তিনি তার প্রিয় স্থানীয় গল্পগুলোকে আরও বেশি শ্রোতাদের সঙ্গে শেয়ার করার সুযোগ পান।
“আমি চাই বাকি বিশ্ব এবং এর জনগণ আফ্রিকান হিসেবে আমাদের সংস্কৃতি এবং গ্রামীণ এলাকায় আমরা কালো মানুষ হিসেবে কীভাবে বাস করি তা জানুক ও ভালোবাসুক।”
তিনি মনে করেন, হোয়াটসঅ্যাপ তাকে সাহিত্যিক হিসেবে খ্যাতি এনে দিতে পারে।
ধাওয়া বলেন, “আমি ‘শোনা’ ভাষার জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক প্যাট্রিক চাকাইপার মতো সাহিত্যিক সাফল্য এবং স্বীকৃতি অর্জন করতে চাই।”
তথ্যসূত্র : আল জাজিরা