Beta
রবিবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২৫
Beta
রবিবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২৫

দেশের বাইরে যারা, তাদের দেশত্যাগে কেন নিষেধাজ্ঞা

মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল ও ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গে শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল ও ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গে শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
[publishpress_authors_box]

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। তিনি এখনও সেখানেই রয়েছেন। তাকে ফেরত পেতে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে ভারত সরকারকে চিঠিও দেওয়া হয়েছে। ফলে তিনি যে ভারতে রয়েছেন, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। ভারত সরকারও তা স্বীকার করেছে।

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার পরিবারের অন্য সদস্যরাও বিদেশে। তার বোন শেখ রেহানা যুক্তরাজ্যে, ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় যুক্তরাষ্ট্রে, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল ভারতে। তাদের বিদেশে অবস্থানের খবর সবারই জানা।

কিন্তু বিদেশে থাকা তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন আবেদনের পর আদালতের কাছ থেকে সাড়াও পেয়েছে। মঙ্গলবারই ঢাকার একটি আদালত তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।

দেড় দশ ধরে প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে থাকা শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির নানা অভিযোগ নিয়ে তদন্ত চালাচ্ছে দুদক, তার অংশ হিসাবে এই নিষেধাজ্ঞা চাওয়া হয়।

দুদকের উপপরিচালক মনিরুল ইসলাম লিখিত আবেদনে বলেন, “শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, ছোট বোন শেখ রেহানা ও তার ছোট বোনের মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক ও অন্যান্যের বিরুদ্ধে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের নামে প্রায় ৫৯ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের একটি অভিযোগ দুর্নীতি দমন কমিশনে অনুসন্ধানাধীন রয়েছে।

“অনুসন্ধানকালে বিশ্বস্ত সূত্রের মাধ্যমে জানা যায়, অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ সপরিবারে গোপনে দেশ ত্যাগ করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। তারা দেশ ত্যাগ করে বিদেশে পালিয়ে গেলে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ রেকর্ডপত্র প্রাপ্তিতে ব্যাঘাত সৃষ্টি হবে। তাছাড়া সার্বিক অনুসন্ধানকাজে বিঘ্ন সৃষ্টিসহ সমূহ ক্ষতির কারণ রয়েছে। এ অবস্থায় অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধান কার্যক্রমের স্বার্থে তাদের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা একান্ত প্রয়োজন।”

শুধু শেখ হাসিনা পরিবারই নয়, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের অনেক মন্ত্রী, এমপি, নেতাও বিদেশে পালিয়ে যান আগস্টের পর, তাদের বিভিন্ন দেশে দেখাও গেছে। তাদের অনেকের ক্ষেত্রেও দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা এসেছে আদালত থেকে।

যে শেখ হাসিনা আট মাস আগে দেশ ছেড়েছেন এবং যাদের বিদেশে থাকার কথা সবার জানা, তাদের দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে এমন আবেদন কৌতুহল জাগায় অনেকের মনেই। দেশছাড়া ব্যক্তিদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা হাস্যকরও ঠেকে কারও কারও কাছে।

ঢাকার আদালতের এক আইনজীবী নাম প্রকাশ না করার শর্তে সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “শেখ হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার ৮ মাসের মাথায় নিষেধাজ্ঞার আদেশ আসা বিষয়টি আসলে হাস্যকর।

“এতে সাধারণ মানুষের কাছে আদালতের প্রতি একটি নেগেটিভ মেসেজ যায়। এজন্য বিচার ব্যবস্থাকে আরও সচেতন হতে হবে। ডাক্তার আসার পূর্বে রোগী মারা গেল- এমন ঘটনা যেন না ঘটে।”

এবিষয়ে সংশ্লিষ্ট আদালতের কোনও কর্মকর্তা কোনও ধরনের মন্তব্য করতে রাজি হননি।

দুর্নীতি দমন কমিশন কার্যালয়।

দুদক কেন আবেদন করে

যাদের আবেদনে আদালত দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে, সেই দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবীরা বলছেন, তাদের অবস্থান আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত নয় বলে তারা এই আবেদন করেন।

দুদকের কৌঁসুলি মীর আহমেদ আলী সালাম সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “রাষ্ট্রপক্ষ বিভিন্ন গণমাধ্যমের মারফতে জানতে পারেন, শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা দেশ ছেড়েছেন। কিন্তু কোথায় আছেন কেউও সঠিক করে বলতে পারেন না। রাষ্ট্রের কাছে ডকুমেন্টারি কোনও এভিডেন্স (সাক্ষ্য-প্রমাণ) নেই।

“যতক্ষণ পর্যন্ত রাষ্ট্রের কাছে প্রমাণিত নয় যে তারা দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের দেশত্যাগের নিষেধাজ্ঞা চাইতে পারে দুদক।”

অ্যাডভোকেট সালাম জানান, মামলা দায়েরের সময়ই আসামিদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে থাকেন তারা। ফলে তাও শুনানিতে চলে আসে।

“যখন দুর্নীতির অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, তখনই প্রসিডিওর অনুযায়ী তাদের দেশত্যাগের নিষেধাজ্ঞা চাওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে তাদের কেউ যদি দেশে আসেন আর ফেরত যেতে পারেন না।”

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের দেড় থেকে দু’শতাধিক নেতা-কর্মীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চাওয়া হয়েছে।

“তাদের অধিকাংশই দেশের বাইরে অবস্থান করছে বলে আমি শুনেছি। তবে রাষ্ট্রের কাছে প্রমাণিত না হওয়ায় ধরে নেবেন, তারা দেশের মধ্যে অবস্থান করছে।”

আইনজ্ঞরা বলছেন, মামলা বা অনুসন্ধান চলাকালীন যে কোনও ব্যক্তির দেশত্যাগের নিষেধাজ্ঞা চাইতে পারেন দুদক। আদালত চাইলে স্বপ্রণোদিত হয়েও বিভিন্ন ধরনের নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থানের খবর সরকারেরও জানা থাকার পর তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আবেদন কেন করা হলো- সেই প্রশ্নে দুদকের মুখপাত্র (মহাপরিচালক) মো. আক্তার হোসেন কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।

তবে দুদকের উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “দুর্নীতির অভিযোগ সংশ্লিষ্ট কোনও ব্যক্তি বা আসামির বিরুদ্ধে যখন রাষ্ট্রীয় কিংবা আন্তর্জাতিকভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়, তখন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনগত সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয়। কারণ ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনগত কোনও প্রক্রিয়া বাকি রয়েছে, এমন কোনও প্রশ্ন যাতে না ওঠে।

“সেসব দিন বিবেচনা করেই দেশের বাইরে থাকা সত্ত্বেও শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত