Beta
বুধবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২৪
Beta
বুধবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২৪

প্রকল্পে দুর্নীতি কেমন করে হতো, জানল শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি

কর্ণফুলী টানেল
আওয়ামী লীগ সরকার আমলে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে চালু হয় টানেল, যা অপ্রায়েজনীয় ছিল বলে অন্তর্বর্তী সরকারের এক উপদেষ্টার মত। ফাইল ছবি : সকাল সন্ধ্যা
[publishpress_authors_box]

আওয়ামী লীগের দেড় দশকের শাসনকালে উন্নয়ন প্রকল্পের নামে যে দুর্নীতি হয়েছে, আমলাদের কাছ থেকে তার স্বীকারোক্তি পাওয়ার কথা জানিয়েছেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

বিগত সরকারের দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান এই তথ্য জানানোর পাশাপাশি বলেছেন, আমলারা দাবি করেছেন যে তাদের মধ্যে কতিপয় ব্যক্তি এই লুন্ঠনে ছিলেন, বাকিরা ‘রাজনৈতিকভাবে জিম্মি’ হয়ে পড়েছিলেন।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে তিন মাস আগে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশের সিদ্ধান্ত নিয়ে সেই কাজের জন্য কমিটি গঠন করে দেয়।

সিপিডির সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য নেতৃত্বাধীন সেই কমিটির সদস্যরা রবিবার পরিকল্পনা কমিশনে সরকারের ৩২ জন সচিবসহ উচ্চ পদস্থ ৮৫ কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করে।

বৈঠক শেষে দেবপ্রিয় সাংবািদকদের বলেন, গত সরকারের সময়কালে যে উন্নয়নের বয়ান দেখানো হত, তার মধ্যে দুর্নীতি ছিল। কমিটির পক্ষ থেকে সরকারি প্রকল্পের ভেতর দিয়ে লুণ্ঠন প্রক্রিয়ায়ে প্রশাসনের ভূমিকা জানতে চাওয়া হয়েছিল।

 “সচিবরা বলেছেন যে উন্নয়ন প্রশাসনের ভেতরে কিছু সুবিধাভোগী আমলা, তার সাথে ব্যবসায়ী এবং তার সাথে রাজনীতিবিদ। এই ত্রি-সংযোগের ফলে অনেক সময় প্রকল্প চয়ন, প্রণয়ন, ব্যবস্থাপনা, বাস্তবায়ন এবং মূল্যায়ন সবক্ষেত্রেই এই সমস্যাগুলো পরবর্তীতে দেখা গেছে।”

প্রশাসন আইনি কাঠামো ও দায়বদ্ধতাকে অতিক্রম করে এই অনিয়মে জড়িত হয়েছিল কি না, সেই প্রশ্ন আমলাদের কাছে রাখে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি।

দেবপ্রিয় বলেন, “উনারা বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতাকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেছেন, প্রশাসন সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিকভাবে জিম্মি অবস্থার ভেতরে ছিল।

“তবে কেউ কেউ বলেছেন, এর ভেতরেও কেউ কেউ সাহস নিয়ে যারা দাঁড়িয়েছেন। তারা সেই ক্ষেত্রে কিন্তু ব্যত্যয় করতে পেরেছেন। একেবারেই যে তারা পারেননি, তা না। আবার কেউ কেউ বলেছেন, আমরা দাঁড়ানোর ফলে অনেক ক্ষেত্রে তাদের পেশাগতভাবে অনেক ক্ষতি হয়েছে। তাদের পেশা জীবনের অগ্রসর হওয়ার ক্ষেত্রে তাদের সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।”

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। ফাইল ছবি

দেবপ্রিয়র ভাষ্য, “আমরা জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে, আপনাদের যে পেশাগত সমিতি আছে, সেটা কেন ভূমিকা পালন করল না আপনাদের সুরক্ষা দেওয়ার জন্য?

“তারা বলেছেন যে সমিতিও রাজনীতিকীকরণের কবলে পড়েছিল এবং তাদের নেতৃত্ব সুবিধাবাদী চলমান রাজনীতির অংশ হিসেবে থাকায় তারা সেখান থেকে কোনও ধরনের পেশাগতভাবে বা দলগতভাবে বা যৌথভাবে কোনও সুরক্ষা পান নাই।”

উন্নয়ন প্রকল্পগুলো রাজনৈতিক বিবেচনায় নেওয়া হতো বলেও সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটিকে।

দেবপ্রিয় বলেন, “উনারা বলতে চেয়েছেন, প্রকল্প চয়ন প্রকল্প প্রস্তুত করার ক্ষেত্রে ওনারা রাজনৈতিক প্রভাবে প্রভাবিত হয়েছেন এবং সেই প্রকল্প পরবর্তীতে একাধিকবার সংশোধিত হয়েছে, অর্থায়নের পরিমাণ বেড়েছে, সময়ের পরিমাণ বেড়েছে।”

প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের ক্ষেত্রেও অনেক সময় ইচ্ছাপ্রণোদিতভাবে সমীক্ষাকে দুর্বল করা হতো বলেও দাবি করেন সচিবরা।

দেবপ্রিয় বলেন, “আরেকটা কথা উনারা বলেছেন, ওপরের বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে পেশাগতভাবে যে আমলাতন্ত্র ছিল, তাকেও ভেঙে ফেলা বা ভঙ্গুর করে ফেলা হয়। আবার অনেক সময় রাজনীতিকীকরণ করে গোষ্ঠী করা হয়।”

বৈঠকে হাইটেক পার্ক, কর্ণফুলী টানেলসহ জ্বালানি খাত, সামাজিক সুরক্ষা খাতের বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হয়।

 ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় সরকারের ভূমিকা, বিশেষ করে পরিচালক মনোনয়ন, তাদের ভূমিকা কী থাকবে, তা নিয়েও আলোচনা হয় বৈঠকে।

দেবপ্রিয় বলেন, বাংলাদেশের আগামী দিনের উন্নয়নের জন্য একটা পেশাদারি উন্নয়ন ব্যবস্থাপনা খুবই দরকার। সেখানে সক্ষম স্বাধীন এবং যোগ্য পেশাজীবীদের ভূমিকা কেন্দ্রীয়ভাবে এবং স্থানীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

সচিবরা স্বাধীনভাবে কাজ করার দাবি করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, পেশাগত দায়িত্বপালনের ক্ষেত্রে অন্যায়-অবিচার থেকে সুরক্ষা চেয়েছেন তারা।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত