পৃথিবীর ভবিষ্যত নিয়ে হালে নিজের উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ক। প্রজনন হার কমে যাওয়া রোধে সবাইকে সচেতন হতেও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
দ্য স্ট্যান্ডার্ড বলছে, এমনকি সন্তান উৎপাদনে উৎসাহ দিতে তিনি নিজের শুক্রাণু দিতেও চেয়েছেন বন্ধুদের।
ট্রাম্পের বিএফএফ বা ‘বেস্ট ফ্রেন্ড ফরএভার’ ইলন মাস্কের বয়স এখন ৫৩। এরমধ্যে একাধিক নারীর গর্ভে জন্ম নেয়া তার সন্তানের জন্য বাড়ি বানিয়েছেন। ইলন মাস্ক তার এই অদ্ভুত পরিবারের কলেবর বাড়াবেন বলেও মনে করছে দ্য স্ট্যান্ডার্ড। অর্থাৎ আরও অনেক নারীর গর্ভে জন্ম নেবে ইলন মাস্কের সন্তান।
ইলন মাস্ক এখন ১২ সন্তানের জনক; এদের মধ্যে একজন নেভাদা, যে শিশুকালেই মারা যায়। এই ১২ সন্তানের মা হলেন তিন জন নারী।
বড় পরিবারকে ‘ভালো দৃষ্টান্ত’ বলে মনে করেন মাস্ক। তার বিশ্বাস, “মানুষ বেশি বেশি সন্তান না নিলে সভ্যতা ধ্বংস হয়ে যাবে।”
যুক্তরাষ্ট্রের আদমশুমারি ব্যুরো অনুসারে নতুন বছরের শুরুতে বিশ্বে জনসংখ্যা ৮০৯ কোটি ছুঁয়েছে।
অথচ ইলন মাস্ক মনে করছেন, পৃথিবীতে পর্যাপ্ত মানুষ নেই।
“জন্মহার কমে আসা সভ্যতার জন্য বড় বিপদ ডেকে আনবে। আমি আশা করি, সবাই পরিবারের পরিসর বাড়াবেন এবং যারা ইতোমধ্যে পরিবারে বেশি সন্তান নিয়েছেন তাদের অভিনন্দন জানাবেন।”
ইলন মাস্কের সন্তানদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে দ্য স্ট্যান্ডার্ডের প্রতিবেদন।
নেভাদা আলেক্সজান্ডার মাস্ক
মাস্কের প্রথম স্ত্রী হলেন কানাডীয় লেখক জাস্টিন উইলসন। তারা বিয়ে করেছিলেন ২০০০ সালের জানুয়ারি মাসে। এই দম্পতির প্রথম সন্তান নেভাদা জন্মের পর ১০ সপ্তাহ বয়সে মারা যায়। এই ঘটনা ২০০২ সালের। এরপর মাস্ক দম্পতি ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন (আইভিএফ) পদ্ধতির কথা ভাবেন। আইভিএফ হচ্ছে, ডিম্বাণু ও শুক্রাণু নিয়ে টেস্টটিউবে বাচ্চা হওয়ানোর প্রক্রিয়া।
গ্রিফিন মাস্ক এবং ভিভিয়ান জেনা উইলসন
আইভিএফ পদ্ধতিতে জাস্টিন ২০০৪ সালের এপ্রিলে জমজ সন্তানের জন্ম দেন; এদের একজনের নাম গ্রিফিন, অন্যজন ভিভিয়ান।
ভিভিয়ানের নাম আগে জেভিয়ার আলেক্সজান্ডার মাস্ক ছিল। পরে তিনি নিজেকে ট্র্যান্সজেন্ডার ঘোষণা দেন এবং বাবার বদলে মায়ের নাম নিজের সঙ্গে জুড়ে নেন।
কারণ হিসেবে তিনি বলেছিলেন, “একটি হলো লৈঙ্গিক পরিচয় স্পষ্ট করা। আর অন্যটি হচ্ছে জন্মদাতা বাবার সঙ্গে কোনোভাবেই নিজেকে জড়িয়ে রাখার ইচ্ছে নেই আমার।”
২০২০ সালে ধনকুবের প্রযুক্তি ব্যবসায়ী মাস্ক টুইটারে লিখেছিলেন, “আমি ট্রান্সজেন্ডারদের সমর্থন করি। যদিও এসব পরিচিত শব্দ একভাবে নান্দনিক দুঃস্বপ্নের মতো মনে হয়।”
কাই, স্যাক্সেন এবং ডাইমিয়ান মাস্ক
জমজ সন্তানের পর তিন সন্তানের বাবা-মা হলে মাস্ক দম্পতি। তখন তাদের দাম্পত্য জীবনের আট বছর চলছে। ২০০৬ সালের জানুয়ারি মাসে জন্ম হওয়া তিন ছেলে সন্তানই আইভিএফ পদ্ধতিতে হয়েছিল। ওই তিন ছেলে সন্তান এখন ১৬ বছর পূর্ণ করেছে।
সন্তানদের নিয়ে ৪৯ বছর বয়সী জাস্টিন বলেন, “আমার প্রায় সব বেকার সময় আমার ছেলেদের সঙ্গেই কাটানো হয়, এবং তারা আমার জীবনের ভালোবাসা।”
তবে জাস্টিন এবং মাস্কের মধ্যে সম্পর্ক তত সহজ ছিল না। ২০০৮ সালে বিবাহ বিচ্ছেদ হয় তাদের মধ্যে। ২০১০ সালে তিনি মারি ক্লেয়ার পত্রিকায় লেখা নিবন্ধে বলেছিলেন, মাস্কের কাছে তিনি একজন ’স্টার্টার স্ত্রী’ ছিলেন এবং তাদের সম্পর্ক স্বাস্থ্যকর ছিল না।
বিয়ের আসরে দুজনের একসঙ্গে নাচের সময় জাস্টিনকে মাস্ক বলেছিলেন, তাদের সম্পর্কে মাস্ক ‘আলফা’ চরিত্র পালন করবেন অর্থাৎ সবসময় তার কথাই প্রাধান্য পাবে।
এক্স এই এ-১১ মাস্ক
কানাডীয় পপ তারকা চেলসি মারিয়া গ্রাইমসের আরেক নাম ক্লেয়ার এলিস বুশে। মাস্ক এবং গ্রাইমসের প্রেম শুরু হয় ২০১৮ সালের মে মাস থেকে।
এর আগে মাস্কের সঙ্গে আমেরিকান বিজ্ঞান কল্পকাহিনী ভিত্তিক ওয়েস্টওয়ার্ল্ড সিরিজের ব্রিটিশ অভিনেত্রী তালুলাহ জেন রিলের দুইবার বিয়ে ও বিচ্ছেদের পর্ব সম্পন্ন হয়েছে। আবার মার্কিন অভিনেত্রী অ্যাম্বার হার্ডের সঙ্গেও সম্পর্ক হয়েছিল তার।
৩৪ বছর বয়সে গ্রাইমস ছেলে সন্তানের জন্ম দেন ২০২০ সালের মে মাসে। মাস্ক ও গ্রাইমস তাদের সন্তাদের নাম রাখেন এক্স এই এ-১১। শুরুতে তারা সন্তানের নাম রেখেছিলেন ‘X Æ A-12’, যা ইংরেজি বর্ণমালায় নেই জানিয়ে ক্যালিফোর্নিয়ার আদালত নাকচ করে দেয়। এরপর মাস্ক ও গ্রাইমস দম্পতি তাদের সন্তানকে সংক্ষেপে এক্স ডাকা শুরু করেন।
২০২০ সালের জুলাই মাসে এক সাক্ষাৎকারে মাস্ক বলেন, “সন্তান লালনের ক্ষেত্রে আমি পেছনের আসনে বসেছি।
“গ্রাইমস আমার চেয়ে অনেক বড় ভূমিকা রাখছে এখন। তার মতো ব্যতিক্রম মানুষের সঙ্গে আমার কখনও পরিচয় হয়নি।”
“আমাদের সন্তান বড় হলে আমারও সন্তানের জন্য অনেক কিছু করার জায়গা তৈরি হবে।”
এক্সা ডার্ক সিডেরেল
২০২১ সালে গ্রাইমস ও মাস্কের বিচ্ছেদ ঘটে। তবে ওই বছর ডিসেম্বরে সারোগেসি পদ্ধতিতে তাদের মেয়ে সন্তানের জন্ম হয়, যার নাম রাখা হয় এক্সা ডার্ক সিডেরেল। তবে মাস্ক তার এই সন্তানকে ডাকেন ওয়াই নামে।
তাও টেকনো মেকানিকাস
গ্রাইমস ও মাস্কের আরও এক সন্তান জন্ম নেয় ২০২২ সালে সারোগেসি পদ্ধতিতে। এই সন্তানের নাম রাখা হয় তাও টেকনো মেকানিকাস।
যদিও ভ্যানিটি ফেয়ারের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে মাস্কের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে গ্রাইমস খোলামেলাভাবেই বলেন, “আমি হয়তো তাকে প্রেমিক বলতে পারি। কিন্তু আমরা আলাদা বাড়িতে থাকি। আমরা ভালো বন্ধু।
“আমরা একজন আরেকজনকে সবসময় দেখি। কিন্তু আমরা আমাদের কাজেই ব্যস্ত থাকি। বাইরে কেউ এসব বুঝবে এমনটা আমি কখনই আশা করি না।”
“আমাদের মধ্যে এমন হওয়াটাই সবচেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত। আমাদের যার যার মতো স্বাধীন হয়ে যাওয়া জরুরি।”
এই সাক্ষাৎকার প্রকাশের পর গ্রাইমস টুইট করে মাস্কের সঙ্গে তার বিচ্ছেদের পথে হাঁটার কথা ঘোষণা করেন।
জমজ স্ট্রাইডার ও অ্যাজুর
গ্রাইমস ও মাস্কের সন্তান এক্সা জন্মের এক মাস জন্ম শিভন জিলিস ও মাস্কের জমজ সন্তান জন্ম নেয়।
মাস্কের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই কাজ করেছেন জিলিস। এখন তিনি ইলন মাস্কের মালিকানাধীন নিউরালিংকের পরিচালক। এই প্রতিষ্ঠানে নিউরোলজিকাল ডিজঅর্ডারের চিকিৎসায় ব্যবহার করতে বিশেষ ধরনের যন্ত্র বানানো নিয়ে কাজ চলছে। এই প্রকল্পে মাস্ক হলেন কো-চিফ এক্সিকিউটিভ।
এই যুগলের যমজ সন্তান স্ট্রাইডার ও অ্যাজুরের নাম বদলের জন্য আদালতে পিটিশন করা হয়েছে। মাস্ক ও জিলিস চাইছেন সন্তানের নামের শেষে বাবার নাম যোগ করতে।
নাম ঠিক হয়নি যে সন্তানের
মাস্ক ও জিলিস গত বছর আরও একবার সন্তানের মুখ দেখেন। যদিও সন্তানের নাম ও লৈঙ্গিক পরিচয় এখনও ঘোষণা করেননি তারা।
শোনা যাচ্ছে, সন্তানদের জন্য যে বিশাল বাড়ি মাস্ক বানিয়েছেন তাতেই উঠেছেন জিলিস। সবাই মিলে এক সঙ্গে থাকা নিয়ে মাস্কের যে ভাবনা, তাতে এভাবে এখন পর্যন্ত জিলিস সাড়া দিয়েছেন বলে জানাচ্ছে দ্য স্ট্যান্ডার্ড।