সকাল সন্ধ্যা: ২০১৮ সালে সরকারি চাকরিতে কোটাবিরোধীরা চেয়েছিলেন কোটার সংস্কার। সে সময় সিভিল সার্ভিসে উত্তীর্ণদের ৫৬ শতাংশ কোটায় এবং বাকি ৪৪ শতাংশ মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ হতো। আন্দোলনকারীরা ৫৬ থেকে কোটা ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবি করেছিলেন, এমনকি তারা ১৫ শতাংশ পর্যন্ত কোটা মেনে নিতে রাজি ছিলেন। কিন্তু সরকার তখন পুরোপুরি কোটা তুলে দিল। সরকারি চাকরিতে কোটা পুরোপুরি তুলে দেওয়া ঠিক হয়েছে কি না?
রোকেয়া কবীর: বাংলাদেশে আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম সুস্পষ্ট একটা উদ্দেশ্য নিয়ে— একটা বৈষম্যমুক্ত সমাজ, বৈষম্যমুক্ত দেশ গঠনের জন্য। কিন্তু এটা সত্যি যে আমাদের সমাজে এখনো বহু ক্ষেত্রেই বৈষম্য রয়ে গেছে। ফলে সমাজের নানা স্তরে নানাভাবে পিছিয়ে থাকা, অনগ্রসর জনগোষ্ঠীকে টেনে তুলতে শিক্ষা ও চাকরির ক্ষেত্রে কোটা ব্যবস্থা চালু করা হয়।
আমাদের মনে রাখতে হবে, অনগ্রসর জনগোষ্ঠীকে বিশেষ সুযোগ দেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশের সংবিধানে সুস্পষ্ট নির্দেশনা আছে। একইভাবে মনে রাখতে হবে কোটা হচ্ছে বৈষম্য নিরসনের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটা পন্থা। জাতিংঘে এ বিষয়ে একটা রেজ্যুলিউশন আছে— যে সব জাতি বা জনগোষ্ঠী কিংবা শ্রেণি বা লিঙ্গের মানুষজন পিছিয়ে আছে তাদেরকে কোটা সুবিধা দেওয়ার মাধ্যমে ধীরে ধীরে উন্নততর অবস্থায় নিয়ে আসতে হবে।
ফলে এটা স্পষ্টভাবেই আমাদের বলতে হবে যে, কোটা ব্যবস্থায় কোনও অসঙ্গতি থাকলে সেটা সংস্কার করতে হবে, কিন্তু নির্বিচারে সব কোটা বাতিল করে দেওয়া কোনওভাবেই ঠিক হয়নি।
সকাল সন্ধ্যা: কোটা পুরোপুরি বাতিল করে দেওয়ার কাজটি হয়েছিল সচিব কমিটির মাধ্যমে। কোটা বাতিল করার সময় কি ভারত-পাকিস্তান-শ্রীলংকা-নেপালের মতো আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোতে সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা কিংবা অন্যান্য দেশের বাস্তবতার সঙ্গে কোনও তুলনামূলক বিশ্লেষণ করা হয়েছিল? বা তেমনটা করা দরকার ছিল বলে মনে করেন কি?
রোকেয়া কবীর: প্রতিবেশী দেশ বা বিশ্বের অন্যান্য দেশের দৃষ্টান্ত থেকে আমরা অবশ্যই শিখতে পারি। কিন্তু এটাও মনে রাখতে হবে, সব দেশই নিজ নিজ বাস্তবতা ও প্রয়োজনীয়তার সাপেক্ষে নিজেদের দেশের জন্য আইন করে।
রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা বা দেশের জন্য আইন বানানোর কাজটা জনপ্রতিনিধিদের। তারা জাতীয় সংসদের মাধ্যমে সেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। আর এসব সিদ্ধান্ত প্রয়োগের কাজটি প্রশাসন বা আমলাতন্ত্রের মাধ্যমে হয়ে থাকে। কিন্তু আমাদের এখানে দেখা যাচ্ছে, আমলাদের পরিচালনা করার ক্ষেত্রে আমাদের রাজনীতিবিদরা এখনও যথাযথভাবে প্রশিক্ষিত না। তারা এখনও অনেক বিষয় জানেন না। ফলে রাজনীতিবিদরা আমলাদের দ্বারা ইনফ্লুয়েন্সড হয়েও অনেক সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন। এখন সচিবরা জাতির স্বার্থ না দেখে নিজেদের সুযোগ-সুবিধা স্বার্থ দেখায় ব্যস্ত। এসব কারণেই দেশে এতসব ভুলভাল সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।
আপনাকে একটা উদাহরণ দিই। কদিন আগে ফরেন মিনিস্ট্রিতে আমাদের একটা মিটিং ছিল— ‘উইমেন পিস এন্ড সিকিউরিটি’ এর একটা ন্যাশনাল একশন প্ল্যান নিয়ে। জাতিসংঘের প্রতিনিধি এটার প্রধান সমন্বয়ক এবং আমাদের পররাষ্ট্র সচিব ছিলেন চেয়ারপারসন। চেয়ারপারসন আমাকে বললেন, আপনার ‘ফায়ারি স্পিচ’ আমরা শুনতে চাই। কারণ এর আগে সম্পত্তিতে নারীর উত্তরাধিকার নিয়ে একটা বৈঠক ছিল, সেখানে আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব পর্যায়ের একজন বললেন— ‘‘সম্পত্তিতে নারীর উত্তরাধিকারের বিষয়টা বদলানো যাবে না, কারণ এটা মুসলমানের দেশ, আমাদের ধর্মীয় আইন আছে, সংস্কৃতি আছে।” তখন আমি বললাম, ‘‘রাখেন আপনার মুসলমানের দেশ, রাখেন আপনার কালচার। এই ভাষাতেই বললাম। আপনার কালচার কি কেবল নারীর ওপরই প্রযোজ্য হবে? আমরা কি মুক্তিযুদ্ধ করে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছি কেবল পুরুষদের জন্য! নারীরা ঘরে বসে থাকবে? তাহলে আমাদের এই বৈঠকে ডাকছেন কেন? আর আপানারা উইমেন পিস এন্ড সিকিউরিটির মিটিং করছেন কেন? আপনারা স্যুট-কোট পরে আসছেন। স্যুট-কোট কবে বাংলাদেশের কালচার হলো? স্যুট-কোট পরে এই গরমের মধ্যে আপনারা উচ্চমাত্রায় এসি চালাচ্ছেন, যেখানে প্রাইম মিনিস্টার বারবার বলছেন ইলেক্ট্রিসিটির ব্যবহার কমাতে। আমরা এখানে তেরো জন নারী আছি, তিনজন সালোয়ার-কামিজ পরা আর বাকি সবাই শাড়ি পরেছি। শাড়ি আমাদের দেশের কালচার, সালোয়ার-কামিজও আমাদের কালচার হয়ে গেছে। আপনারা কেন পাজামা-পাঞ্জাবি পরে আসেন নাই? আপনারা কেন এখনও ব্রিটিশ কালচার ধরে রাখছেন? আমার এই বক্তব্যের পর আইন মন্ত্রণালয়ের তারা আর কিছু বলেন নাই। তো এই হলো আমাদের আমলাদের অবস্থা।
সকাল সন্ধ্যা: আমরা দেখলাম সব কোটা তুলে দেওয়ার পর ৩৯তম বিসিএস থেকে এখন পর্যন্ত নারী, আদিবাসী ও প্রতিবন্ধীদের সরকারি চাকরি পাওয়ার হার আগের চেয়ে উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে। এরকম হাতে নাতে ফল পাওয়ার পরও আমরা সমাজে পিছিয়ে থাকাদের ক্ষমতায়নে নারী কোটা, আদিবাসী কোটা বা প্রতিবন্ধী কোটা পুনর্বহালে সরকারের কোনও উদ্যোগ দেখলাম না। অথচ সংবিধানের ২৯ অনুচ্ছেদ অনুসারে অনগ্ররদের বিশেষ সুবিধা দেওয়ার সুস্পষ্ট নির্দেশনা আছে। অবশ্য, কোটা বাতিল করে দেওয়ার বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে এবং বিষয়টি এখনও বিচারাধীন। আপনি বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন?
রোকেয়া কবীর: আমাদের সংবিধানে যেমন আছে তেমনি জাতিসংঘের রেজ্যুলিউশনেও এটা আছে এবং বাংলাদেশ সেখানে সিগনেটরি। ফলে এই নির্দেশনা বাস্তবায়নে আমাদের বাধ্যবাধকতা আছে।
সকাল সন্ধ্যা: এখন আবার সব কোটা বাতিল করে কেবল মেধার ভিত্তিতে প্রার্থী বাছাইয়ের দাবিতে আন্দোলন হচ্ছে। আমরা দেখছি সেই আন্দোলনে ছাত্রদের সঙ্গে বিপুল সংখ্যক ছাত্রীরাও রাস্তায় নামছে এবং তারা নানারকম দাবি লেখা প্ল্যাকার্ড বহন করছে।
রোকেয়া কবীর: আমি মনে করি, তরুণ-তরুণীদের এমন মানসিকতা, এমন চিন্তা-চেতনার প্রকাশের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তোলা দরকার। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কী শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে সেটা নিয়ে ভাবা দরকার। এটা আমূল পরিবর্তন করা দরকার। এখানে এখনও ব্রিটিশ আমলের, উপনিবেশিক আমলের শিক্ষা চলছে… একটা স্বাধীন দেশের শিক্ষা এরকম হতে পারে না। না হলে কীভাবে একটা প্ল্যাকার্ডে লেখা থাকতে পারে যে— ‘‘কোটা দিয়ে কামলা চাইনা, মেধা দিয়ে আমলা চাই’’।
এই যে মানসিকতা, কামলা বা শ্রমিক শ্রেণিকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা, যারা নিজেদের মেধাবী মনে করছে তারা কীভাবে এমন কথা বলে, এমন কথা প্ল্যাকার্ডে লিখে? এটা তো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা তরুণ-তরুণীদের বক্তব্য হতে পারে না। তথাকথিত আমলা হওয়ার আগেই কামলাদের ঘৃণা করছে এরা কারা? তার মানে হলো, সরকারি চাকরি পাওয়ার আগেই এরা দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষকে অবজ্ঞা করতে শুরু করে দিয়েছে। অথচ, আমাদের দেশের মূল চালিকাশক্তি এখনও দেশের শ্রমিকশ্রেণি বা ওদের ভাষায় ‘কামলা’রাই। দেশের শীর্ষ রপ্তানিখাত তৈরিপোশাক শিল্পের শ্রমিকরা আমাদের ফরেন কারেন্সি আয় করতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখছে, প্রবাসী শ্রমিকরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে আমাদের রেমিটেন্স বা বৈদেশিক মুদ্রা পাঠাচ্ছে। এর সঙ্গে আছে দেশের ইনফর্মাল সেক্টরের লাখো-কোটি শ্রমিক-কৃষক আর ছোট ছোট শিল্প বা ব্যবসায় নিয়োজিত মানুষরা।
এই কামলারাই আমাদের দেশটাকে টিকিয়ে রাখছে, দেশটার উন্নতি করছে কামলারাই, আমলারা নয়। কিছু সৎ কর্মকর্তা বাদ দিয়ে বেশিরভাগ আমলাই করাপ্টেড। আমরা এখনও একটার পর একটা বড় বড় দুর্নীতির খবর পাই, বিদেশে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচারের খবর পাই। এই দুর্নীতি লুটপাটে কামলারা নয়, আমলারা জড়িত। এমনকি দেখা যাচ্ছে রাজনীতিবিদদের চেয়েও লুটপাট-অর্থপাচারে আমলারা বেশি এগিয়ে আছে। আমার প্রশ্ন হলো, আমরা তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছেলে-মেয়েদের কী শিক্ষা দিচ্ছি?
সকাল সন্ধ্যা: আন্দোলনরত তরুণ-তরুণীরা বিশেষত তরুণীরা কেন নারী কোটা বহাল রাখার পক্ষে কথা বলছেন না, নারী হয়েও তারা নারী কোটার বিরোধিতা করছেন কোন যুক্তিতে? আপনারা দীর্ঘদিন ধরে নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছেন, সেই অভিজ্ঞতা থেকে বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
রোকেয়া কবীর: আপনি যে প্রশ্নটা করলেন যে নারী হয়েও এখনকার তরুণীরা কেন নারী কোটা বাতিল চাচ্ছে, এটার কারণ হলো এই মেয়েরা মনে করছে যে আমরা তো শিক্ষার সুবিধাটা পেয়েই গেছি, আর কারও জন্য আমাদের কিছু করার দায়িত্ব নাই। অথচ, এই মেয়েরা বুঝতে পারছে না যে, এই দেশে নারীর শিক্ষা, নারীর কর্মসংস্থানের জন্য কত দীর্ঘদিন ধরে আমাদের সংগ্রাম করতে হয়েছে। আমাদের আগের প্রজন্মকে এই সংগ্রাম করতে হয়েছে, সেই পথ ধরে আমাদের প্রজন্মকে কাজ করতে হয়েছে, আমাদেরকে অস্ত্র হাতে মুক্তিযুদ্ধ করতে হয়েছে একটা বৈষম্যমুক্ত সমাজ, বৈষম্যমুক্ত দেশ প্রতিষ্ঠায়। এই মেয়েরা হয়তো মনে করছে যে, দেশের লাখো-কোটি নারী ওদের ভাষায় ‘কামলা’ হয়ে থাকলে, গার্মেন্টসের শ্রমিক হয়ে থাকলে সমস্যা নাই, মেয়েদের দেশ চালানোর দরকার নাই, প্রশাসন চালানোর দরকার নাই, রাজনীতি করার দরকার নাই। এটা খুবই দুঃখজনক।
দেখুন, এই মেয়েরা তো বটেই, ছেলেরাও এখন যে মানসিকতায় বেড়ে উঠেছে, এরা এটা ভুলে যায় যে এরা পাবলিক মানি দিয়ে লেখাপড়া করেছে। জনগণের টাকায় পড়ালেখা করেছে। ফলে যে ব্যবস্থায় জনগণের বা দেশের মানুষের বৃহত্তর স্বার্থ নিশ্চিত হবে, সমাজে জাতি-ধর্ম-বর্ণ-নারী-পুরুষ-ধনী-গরিব নির্বিশেষে সব মানুষের জন্য আমরা সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারব সেই পথেই যে আমাদের সংগ্রাম করতে হবে এটা এরা বুঝতে পারছে না।
এখন যে মেয়েরা বলছে যে আমরা অনগ্রসর না অগ্রসর! তারা এই কথাটা কীভাবে বলছে? এখনও দেশের ৮২-৮৫ শতাংশ নারী নানারকম নিপীড়ণ-নির্যাতনের শিকার নিজেদের ঘরের ভেতরেই, আর বাইরে গেলে তো কথাই নাই। এটা আমার কথা না বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রতিবেদন। এই মেয়েরাই রাস্তাঘাটে ইভটিজিংয়ের শিকার হয়, বাসে উঠতে গেলে চিমটি খায়, বোরখা পরে চলাফেরা করলেও রেহাই পায় না। এরপরও এরা কী করে এই কথা বলে! যাদের এই সচেতনতা নাই, যারা মানুষ হিসেবে নিজেদের আত্মমর্যাদা প্রতিষ্ঠার লড়াই করছে না, তাদেরকে আমরা পাবলিক মানি খরচ করে কেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বা অন্য কোনও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াবো? এরা কি জানে না বাংলাদেশের জনসংখ্যার অর্ধেক নারী আর এই নারীরাই নানাভাবে দেশের সবচেয়ে অনগ্রসর জনগোষ্ঠী। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া মেয়েরা নারী কোটার বিপক্ষে যাবে, তথাকথিত প্রগতিশীলরা নারী কোটার বিপক্ষে যাবে এটা মেনে নেওয়া যায় না।
এই মেয়েরা মনে হয় চোখে ঠুলি পড়ে আছে! হয়তো, স্বার্থান্বেষী নানা মহল তাদের এমন ভুলপথে পরিচালিত করছে। হয়তো ধর্মীয় মৌলবাদী গোষ্ঠীর এখানে ইন্ধন আছে, দক্ষিণপন্থীদের ইন্ধন আছে। তারাই তো চায় যে নারীরা ঘরে বন্দী হয়ে থাকুক, লেখাপড়া না করুক চাকরিবাকরি না করুক। যারা নারীর কোটা বাতিল করতে চায়, যারা মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করতে চায় তাদের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক, আমরা তাদের ওপর ভরসা করতে পারি না।
সকাল সন্ধ্যা: কোটাবিরোধী আন্দোলনে সবচেয়ে বেশি বিরোধিতা হয়েছে মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে। মুক্তিযোদ্ধা কোটা ছিল ৩০ শতাংশ। এক্ষেত্রে দেখা গেছে, পর্যাপ্ত প্রার্থী না থাকার কারণে এই কোটা খালি পড়ে থাকতো। অন্যদিকে, মুক্তিযোদ্ধা কোটাকে কীভাবে যৌক্তিকীকরণ করা যায় সেটা নিয়েও কথা হচ্ছে। প্রশ্ন আসছে যিনি নিজে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সরকারি চাকরির সুবিধা নিয়েছেন তার সন্তানও সেই সুবিধা পাবে কি না? বা যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কোটায় চাকরি পেয়েছেন তার নাতিও কোটা সুবিধা পাবে কি না? বিষয়টিকে কীভাবে সমাধান করা যায় বলে মনে করেন?
রোকেয়া কবীর: শোনেন, ভুলে যাবেন না যে মুক্তিযোদ্ধা কোটার আগে নারী কোটার বিরোধিতা হয়েছে এই দেশে। এখনও সেই বিরোধিতা আমরা দেখছি। এটা দুঃখজনক।
বাংলাদেশে আমরা মুক্তিযোদ্ধা কোটারও বিরোধিতা দেখছি। অথচ পৃথিবীর বহু দেশই তাদের যুদ্ধবীরদের জন্য নানারকম সন্মাননা ও বিশেষ সুযোগ সুবিধা দিয়ে থাকে। খেয়াল করার মতো বিষয় হলো, নিজের জাতির মুক্তিযুদ্ধ তো অনেক বড় ব্যাপার, আমেরিকা বা যুক্তরাষ্ট্র তারা তো ভিয়েতনামে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেনি, তারা সেখানে দখলদার ছিল, সেই ভিয়েতনাম যুদ্ধে আহত-নিহতদের জন্য আর যারা যুদ্ধ করে বেঁচে ফিরেছে তাদের জন্য যুক্তরাষ্ট্র কত সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে। অথচ আমাদের দেশে যারা নিজের দেশ স্বাধীন করার জন্য লড়াই করেছে তাদেরকে আমরা সন্মান জানাতে, তাদের পরিবারগুলোকে সুবিধা দিতে নারাজ। এটা কেমন কথা?
আমাদের মুক্তিযুদ্ধ কিন্তু হয়েছে গেরিলাযুদ্ধ, জনযুদ্ধের মতো, এখানে বেশিরভাগ মুক্তিযোদ্ধাই দেশের সাধারণ মানুষ—কৃষক, শ্রমিক, জনতা। এই মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারগুলোই দেশের সাধারণ মানুষের পরিবার। লেখাপড়া বলেন, চাকরির সুবিধা বলেন, এমন বেশিরভাগ পরিবারগুলোর মানুষ সেসব সুযোগ থেকে বঞ্চিত ছিল। অথচ এই মানুষরাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশ স্বাধীন করেছে। আজকে আমরা দেখছি, স্বাধীন বাংলাদেশে ব্যবসায়ীরা আর আমলারাই সকল সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে। তাদের বেশিরভাগের সন্তানরা তো দেশে লেখাপড়াও করে না। তাহলে আমরা কেন মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তানদের জন্য লেখাপড়া আর চাকরিতে কোটার সুবিধা রাখতে পারবো না, কেন আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি এইটুকু কৃতজ্ঞতাও জানাতে পারবো না। এটা তো আমাদের জাতীয় কর্তব্য।
সকাল সন্ধ্যা: সকাল সন্ধ্যাকে সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
রোকেয়া কবীর: আপনাকে এবং সকাল সন্ধ্যাকেও ধন্যবাদ।