Beta
শনিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৪
Beta
শনিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৪

বাইডেনের বিকল্প হতে পারেন কারা

Biden and all
[publishpress_authors_box]

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে নিয়ে সংশয় কাটছেই না ডেমোক্র্যাট শিবিরের। একের পর এক বৈঠক করেও নিজ দলের দাতাগোষ্ঠী, সমর্থক ও কর্মীদের আশ্বস্ত করতে পারছেন না বাইডেন।

শুরুতে নাম প্রকাশ না করে অনেক ডেমোক্র্যাট নেতা যুক্তরাষ্ট্রের মিডিয়াগুলোতে বাইডেনের বিরুদ্ধে উষ্মা প্রকাশ করেন। কিন্তু এখন রাখঢাক না রেখেই খোলাখুলি অনেক ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্টের বয়স, স্বাস্থ্য, মানসিক অবস্থা ও তার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। আর এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে রাজ্য থেকে রাজ্যে ছুটে বেড়াচ্ছেন বাইডেন।

প্রশ্ন তোলা ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে আছেন প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য ম্যাসাচুসেটসের সেথ মল্টন, অ্যারিজোনার রাউল গ্রিজালভা, ইলিনয়ের মাইক কুইগলি ও মিনেসোটার অ্যাঞ্জি ক্রেগ।

ডেমোক্র্যাটদের একটা বড় অংশই চায় না বাইডেন নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করুক। তারা চায় বাইডেন সরে দাড়াক এবং সেখানে যোগ্য কেউ প্রার্থী হোক। নিউ ইয়র্ক টাইমস থেকে শুরু করে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালও ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে বিকল্প প্রার্থী হিসেবে এগিয়ে রেখেছিল।

কিন্তু সম্প্রতি বিকল্প প্রার্থী তালিকায় নাম আসছে সাবেক ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামার নাম। যদিও তিনি একাধিকবার এমন সম্ভাবনার কথা নাকচ করে দিয়েছেন।। তবে সম্প্রতি হওয়া একাধিক জরিপ বলছে, মিশেল ওবামা প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হলে তিনি ট্রাম্পের চেয়ে সাত পয়েন্টে এগিয়ে থাকবেন।

সম্ভাব্য প্রার্থী যারা

কমলা হ্যারিস

মিশেল ওবামার পরেই শক্তিশালী বিকল্প হলেন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস। ৫৯ বছর বয়সী এই সাবেক আইনপ্রণেতা ও ক্যালিফোর্নিয়ার সেনেটরের আবেদন আছে যুক্তরাষ্ট্রের তরুণ ভোটারদের কাছে। এমনকি দেশটির কৃষ্ণাঙ্গ ও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কাছেও তার গ্রহণযোগ্যতা কম নয়।

গর্ভপাতের অধিকার নিয়ে দীর্ঘদিন আইনি লড়াই চালানোর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের নারীদের মধ্যে কমলা হ্যারিসের অবস্থান ভালো। ডেমোক্র্যাট নেতা অ্যাডাম শিফ মনে করেন, কমলা হ্যারিস নির্বাচনে দাড়ালে তার জয় নিশ্চিত।

কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে, বাইডেন বা ট্রাম্পের তুলনায় কমলার গ্রহনযোগ্যতার রেটিং ভালো নয়। ইপসোস জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৪৩ শতাংশ কমলাকে ভোট দেওয়ার পক্ষে। অন্য অরেক জরিপ বলছে, কমলার গ্রহনযোগ্যতার রেটিং মাত্র ৩৭ শতাংশ।

গ্যাভিন নিউজম

বাইডেন-কমলার দীর্ঘদিনের মিত্র ক্যালিফোর্নিয়ার বর্তমান গভর্নর গ্যাভিন নিউজম। মিশিগান ও পেনসিলভানিয়াতে এবার তিনি বাইডেনের হয়ে প্রচারেও অংশ নেন। নিউজম আগে থেকেই বলে আসছেন যে, তিনি ২০২৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দাঁড়াবেন। কিন্তু এখন বাইডেনের নড়বড়ে পারফরমেন্সের কারণে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে তার নাম সামনে আসছে।

অনেকেই কমলা-নিউজম জুটিকে নভেম্বরের নির্বাচনে দেখতে চাইছেন। ইপসোসের হিসাবে নিউজমের গ্রহনযোগ্যতা রেটিং ৩৯ শতাংশ।

গ্রেচেন এসথার হুইটমার

মিশিগানের গভর্নর গ্রেচেন এসথার হুইটমার হলেন ডেমোক্রেট শিবিরের স্টার রাজনীতিক। টানা দুইবার তিনি গভর্নরের দায়িত্ব পালন করছেন। ২০২০ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে কভিড-১৯ লকডাউন নিয়ে বাদানুবাদের কারণে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন তিনি।

২০২৮ সালের নির্বাচনে হুইটমার প্রেসিডেন্টের পদে দাঁড়াবেন, এমন গুঞ্জন অনেকদিনের। কিন্তু এখন জরিপকারী প্রতিষ্ঠান ইপসোস বলছে, ডেমোক্র্যাট শিবির যদি তাকে বাইডেনের জায়গায় প্রার্থী করে, সেক্ষেত্রে ৩৬ শতাংশ ভোটার তাকে ভোট দেবেন। তবে হুইটমারকে কোন ডেমোক্র্যাট প্রতিনিধিরা সমর্থন দেবেন, তা এখনও নিশ্চিত নয়।

জেবি প্রিজকার

২০১৯ সাল থেকে ইলিনয়ের গভর্নরের দায়িত্ব পালন করছেন জেবি প্রিজকার। ট্রাম্পের মুখোমুখি দাড়িয়ে কড়া ও কৌশলী ভাষায় কথা বলার ক্ষমতার জন্য তিনি পরিচিত। নিউ ইয়র্কের আদালতে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যখন ফৌজদারি মামলার যুক্তিতর্ক চলছিল, তখনই নতুন করে আলোচনায় আসেন প্রিজকার। তিনি আদালত প্রাঙ্গনেই ট্রাম্পের উদ্দেশে আক্রমণাত্মক বক্তব্য দেন।

প্রিজকার ট্রাম্পকে একজন ‘অপরাধী’ ও ‘একজন বৃদ্ধ লোক যার গায়ের রং কমলা, যিনি আদালতে বিচারের সময় ঘুমিয়ে পড়েছিলেন’ বলে আক্রমণ করেন। যুক্তরাষ্ট্রের ধনী পরিবারের সন্তান প্রিজকার রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে অনেকটা উদার। তিনি গর্ভপাত, নূন্যতম মজুরি ও স্বাস্থ্যসেবা খাতের উন্নয়ন দিয়ে প্রায়ই বক্তব্য রাখেন। ইপসোসের মতে, ৩৪ শতাংশ ভোটার প্রিজকারকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখতে চান।

যশ সাপিরো

পেনসিলভানিয়ার গভর্নর যশ সাপিরো আগে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল। ২০২২ সালে আটলান্টিক সুইং স্টেট থেকে নির্বাচিত হন তিনি। তখন থেকেই তার গ্রহণযোগ্যতার রেটিং বেশ ভালো। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বেশ সরবও তিনি। তবে জাতিগতভাবে ইহুদি হওয়ায় তার প্রতি ডেমোক্রেটদের দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা। কারণ তিনি ইসরায়েলের সমর্থক। সিয়েনা কলেজের জরিপ অনুসারে, তার গ্রহণযোগ্যতার রেটিং ৫৭ শতাংশ।

কী হবে দাতারা পিঠটান দিলে

নির্বাচনের এতো কাছে এসে প্রার্থী বদলানো বেশ ঝক্কি ও ঝুঁকির ব্যাপার। কিন্তু অবস্থার প্রেক্ষাপটে এমন হতেও পারে। আর এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন ডেমোক্র্যাট দাতাগোষ্ঠী।

বাইডেনের প্রচার ক্যাম্পেইনের আইনজীবী স্টিভ রবার্টস দ্য হিলকে জানান, বাইডেনের জায়গায় কমলা দাঁড়ালে দাতাগোষ্ঠী তাকে সমর্থন করবে। কিন্তু অন্য কেউ দাঁড়ালে দাতারা অর্থ নাও দিতে পারে।

এরই মধ্যে দাতাদের কয়েকজন বাইডেনকে সরে যেতে আহ্বান জানিয়েছেন। এর মধ্যে অর্থ লেনদেনবিষয়ক প্রতিষ্ঠান পেপালের সাবেক সিইও উইলিয়াম বিল হ্যারিস একজন। তিনি ২০২০ সালে বাইডেনের ক্যাম্পেইনে ৬ লাখ ২০ হাজার ডলার দেন।

গত সপ্তাহে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বাইডেনকে সরে যেতেই হবে।

হ্যারিসের নেতৃত্বে দাতাদের একটি দল রয়েছে। দলটি ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থীদের মধ্যে একাধিক বিতর্কের জন্য ২০ লাখ ডলার অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বলা হচ্ছে, এতে করে অন্য প্রার্থীকে নির্বাচিত করার ক্ষেত্র তৈরি হতে পারে।

অনেক দাতা আবার অর্থ দেওয়া বন্ধেরও হুমকি দিয়েছেন। আর এতে শুধু বাইডেন নয়, পুরো পার্টিই চাপে পড়েছে।

হলিউডের পরিচালক ও ডেমোক্র্যাট দাদা ডেমন লিন্ডেলফ সোশাল মিডিয়া এক্সে লিখেছেন, “যখন তারা আপনাকে অর্থের জন্য টেক্সট পাঠায়, তখন আবার টেক্সট করুন যে আপনি তাদের একটি পয়সাও দিচ্ছেন না। প্রার্থী পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত আপনি আপনার মন পরিবর্তন করবেন না।”

তবে আপাতত বাইডেনের প্রচারের সবচেয়ে বড় দাতারা মুখ খোলেননি। ওয়েবসাইট ওপেনসিক্রেটস অনুসারে, পলিটিক্যাল অ্যাকশন গ্রুপ ফিউচার ফরওয়ার্ড ইউএসএ অ্যাকশন, ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফার্ম গ্রেলক পার্টনার্স ও সেকোইয়া ক্যাপিটাল হলো বাইডেনের শীর্ষ তিন দাতা।

বাইডেনকে সরানোর প্রক্রিয়া

শিকাগোতে আগস্টের ১৯ থেকে ২২ তারিখ পর্যন্ত ডেমোক্র্যাটিক ন্যাশনাল কনভেনশন হবে। এর আগে বাইডেন সরে গেলে পার্টি অন্য কাউকে তার জায়গায় দাড় করাতে বাধ্য হবে। ১৯৬৮ সালের নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদের এমনটা করতে হয়েছিল। তখন কনভেনশনের কয়েক সপ্তাহ আগে মূল প্রার্থী সেনেটর রবার্ট এফ কেনেডিকে হত্যা করা হয়।

ডেমোক্র্যাটিক পার্টি সংবিধানের ২৫তম সংশোধনীর মাধ্যমে বাইডেনকে নির্বাচন থেকে সরে যেতে বাধ্য করতে পারে। এতে বলা আছে, প্রেসিডেন্ট মারা গেলে, অক্ষম হলে বা পদত্যাগ করলে ভাইস প্রেসিডেন্ট তার দায়িত্ব গ্রহণ করবেন।

ভিপি ও কংগ্রেসের সংখ্যাগরিষ্ঠ ডেমোক্র্যাটরা হাউস ও সেনেটের স্পিকারের কাছে প্রেসিডেন্ট উপযুক্ত নন এবং তাকে অপসারণ করা উচিত বলে আইনটির প্রয়োগ দাবি করতে পারেন। প্রেসিডেন্ট চাইলে এর বিরুদ্ধে অবস্থানও নিতে পারেন। কিন্তু ভিপি এবং অধিকাংশ আইন প্রণেতারা একমত না হলে বিষয়টি কংগ্রেসে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে রাখা হবে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত