ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার পচে গেছে, দুর্গন্ধযুক্ত হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, আজকে যে সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ, সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদের দুর্নীতির কথা বলা হচ্ছে, তারা কার সৃষ্টি, কাদের সৃষ্টি?
মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) এক আলোচনা সভায় এমন প্রশ্ন তোলেন তিনি। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪৩তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এ আলোচনা সভা আয়োজন করা হয়।
দেশ রক্ষায় ভূ-রাজনীতিসহ বিশ্ব পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে ঐক্যবদ্ধ শক্তি নিয়ে এগুতে হবে বলে মনে করেন বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, “আমরা মনে করি, এই দেশ জাতিকে রক্ষা করতে হলে আমাদের নতুন চিন্তাভাবনা নিয়ে এগুতে হবে। সেই চিন্তাভাবনার মধ্যে দেশের মানুষ, পৃথিবী, ভূ-রাজনীতি সবগুলোকে সঙ্গে নিয়ে সুনির্দিষ্টভাবে এগিয়ে যেতে হবে।
“দেশের সকল দেশপ্রেমিক মানুষ, সকল রাজনৈতিক শক্তি ও দেশকে যারা ভালোবাসেন তাদের ঐক্যবদ্ধ শক্তিকে সাথে নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে; দেশ ও জাতিকে ভয়াবহ দানবের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য।”
জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপি ঘোষিত ১৫ দিনের কর্মসূচির প্রথম দিন দলটির সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের উদ্যোগে এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, “১৯৭১ সালে জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণায় অনুপ্রাণিত হয়ে দেশবাসীর মতো আমিও সেদিন মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম।
“আমাদের তো বয়স হয়ে গেছে। এখন কী আর রাইফেল ধরতে পারব? আমরা কি রাস্তায় এখন মারামারি করতে পারব? পারব না। আমাদের এখন দরকার ইয়াং জেনারেশন। যখন যুদ্ধে ছিলাম তখন সবাই তরুণ-যুবক ছিলাম। মাথার মধ্যে দেশ স্বাধীন করা ছাড়া অন্য কিছু ছিল না। কে কী হবে, না হবে সেটা নয়- দল মত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে গিয়েছিল- একমাত্র গোল ছিল দেশকে স্বাধীন করতে হবে। এখন সেই সময় এসে গেছে।”
তখন দেশ স্বাধীন করার লড়াই করতে হয়েছিল, এখন দেশ রক্ষার জন্য লড়াই করতে হবে বলে মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, “এদেশ বাঁচাতে হবে, সেই লড়াই এখন। এই লড়াইয়ে যদি আমরা পরাজিত হই, তাহলে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাব।”
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “রাজনীতি একটি বিজ্ঞান, রাষ্ট্র বিজ্ঞান। রাষ্ট্র বিজ্ঞানের সেই কাজগুলো আমাদের করতে হবে। বিজ্ঞান সম্মতভাবে আমাদের এগুতে হবে। জিয়াউর রহমানের যে ১৯ দফা, সেটাকে অনুসরণ করতে হবে।”
সম্প্রতি সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের ওপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। তার দুর্নীতিকে প্রধান কারণ হিসেবে দেখিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর। আর সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদের অবৈধ সম্পদ জব্দের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
এসব বিষয় ইঙ্গিত করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আজকে সাবেক সেনাপ্রধান আজিজের কথা বলা হচ্ছে…আজিজ কার সৃষ্টি, কাদের সৃষ্টি? উনার তো পদত্যাগ করা উচিত। চতুর্দিকে তাদের দুর্নীতির খবর বেরিয়ে আসছে। শুধু ঢাকা শহরে না মফস্বল শহরে ও তাদের দুর্নীতির খবর বেরিয়েছে। দুর্নীতির টাকার ভারে তাদের মারা পড়ার অবস্থা হয়েছে। সাবেক একজন ভূমি প্রতিমন্ত্রীর লন্ডনে নাকি তার তিন শতাধিক বাড়ি রয়েছে।
“এরা পচে গেছে…দুর্গন্ধযুক্ত হয়ে গেছে…একেবারেই দুর্গন্ধযুক্ত। যতই মুখে কথা বলুক, যা-ই কথা বলুক, আসলে তো এদের কোনও অস্তিত্ব নেই। এক এক করে সব জায়গায় প্রকাশ হচ্ছে।”
এই আজিজের অবস্থান ছিল কোথায়, কোথায় নিয়ে আসা হয়েছে—প্রশ্ন তুলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আজকে বেনজীর আহমেদ কার সৃষ্টি? তার হাজার হাজার লুটের ইতিহাস বেরোচ্ছে।
“একটা-দুইটা নয়, এ রকম অসংখ্য ঘটনা, চতুর্দিকে তাকিয়ে দেখবেন, তাদের দুর্নীতি ছাড়া আর কিছু নেই। শুধু ঢাকাতে নয়, আপনারা যারা মফস্বলে বাস করেন, সব জায়গায় একই অবস্থা। তাদের তথাকথিত নির্বাচনে তথাকথিত এমপি যা আছে, তারা নিমজ্জিত টাকার ভারে।”
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এরা পচে গেছে, দুর্গন্ধযুক্ত হয়ে গেছে। যতই কথা বলুক, এদের কোনও অস্থিত্ব নেই। তার প্রমাণ একেক করে সব জায়গায় হচ্ছে। দুর্নীতি ছাড়া আর কিছু নেই, এরা আকণ্ঠ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত।”
একজন ব্যর্থ লোকের গল্প শুনিয়ে ক্ষমতাসীন সরকার প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, “সময় হয়ে গেছে। ঘোরাঘুরি অনেক করেছেন, এখন দয়া করে ঘোরাঘুরি বন্ধ করেন। সঠিকভাবে যেন দাফন-কাফন হয়, মানুষ যাতে মনে রাখে, সেভাবে চিন্তাভাবনা করে সিদ্ধান্ত নেন।”
দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, “এখানে কথা বলা বিপদ, এখানে আন্দোলন করাও বিপদ। কিন্তু এই বিপদকে কাঁটিয়ে উঠে আমাদের সাহস করে রুখে দাঁড়াতে হবে। আমাদের যে ন্যায্য দাবি দায় করতে হবে।
“অর্থাৎ আমরা তো অন্য কিছু চাই না, আমরা শুধুমাত্র নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই, সেই নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। তার জন্য আমাদের আন্দোলন অবশ্যই বহাল থাকবে শুধু নয়; তীব্র থেকে তীব্রতর হবে।”
“তারেক রহমানের নেতৃত্বে এতদূর এসেছি। নানা নিপীড়ন নির্যাতন করা হলেও আমাদের লোকগুলো কাউকে টানতে পারেনি; একজন ছাড়া আর কাউকে টানতে পারেনি” বলেন বিএনপি মহাসচিব।