Beta
বৃহস্পতিবার, ১ মে, ২০২৫
Beta
বৃহস্পতিবার, ১ মে, ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিন কার্ডধারীদের জন্য হতাশার বার্তা দিলেন ভ্যান্স

statue of liberty
[publishpress_authors_box]

নিউ ইয়র্কের কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির গ্রিন কার্ডধারী গ্র্যাজুয়েট ছাত্র মাহমুদ খলিলকে তার দেশ সিরিয়ায় ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নিয়ে আলোচনা যখন তুঙ্গে, ঠিক সেসময় যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্সের মন্তব্য অভিবাসন ঘিরে বিতর্ককে ফের উসকে দিয়েছে।

তিনি বলেছেন, গ্রিন কার্ডধারীদের চিরকাল যুক্তরাষ্ট্রে থাকার অধিকার নেই। তারা কতদিন থাকবেন, তা ঠিক করবেন দেশের প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

গত ৯ মার্চ খলিলকে তার বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাপার্টমেন্ট থেকে গ্রেপ্তার করে যুক্তরাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা ইউএস ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের (আইসিই) সদস্যরা।

ফিলিস্তিনের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের পক্ষে সোচ্চার ২৯ বছর বয়সী এই সিরীয় ছাত্রের বিরুদ্ধে তাদের অভিযোগ, হামাসের সঙ্গে যোগাযোগ আছে তার।

গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসনের প্রতিবাদে গত বছর কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ সংগঠিত করেছিলেন খলিল। কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়ে।

আইসিই খলিলকে গ্রেপ্তারের পর জানিয়েছে, পররাষ্ট্র দপ্তরের নির্দেশে খলিলের গ্রিন কার্ড প্রত্যাহার করে তাকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কার করা হবে।

এরপর থেকেই শুরু হয় যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী বসবাসের অনুমতি পাওয়া কাউকে বিতাড়ন করা যায় কি না, এনিয়ে উত্তপ্ত আলোচনা, যাতে বৃহস্পতিবার রাতে ঘি ঢালেন ভাইস প্রেসিডেন্ট ভ্যান্স।

সেদিন যুক্তরাষ্ট্রের রক্ষণশীলদের প্রিয় টেলিভিশন চ্যানেল ফক্স নিউজের দ্য ইনগ্রাহাম অ্যাঙ্গেল নামের এক টক শো অনুষ্ঠানে হাজির হন তিনি। সেখানে গ্রিন কার্ডধারীদের পরিষ্কার বার্তা দেন ভাইস প্রেসিডেন্ট।

তিনি তাদের উদ্দেশে বলেন, “এই ‘স্থায়ী’ শব্দটিকে আপনাদের বোকা বানাতে দেবেন না। একজন গ্রিন কার্ডধারীর যুক্তরাষ্ট্রে থাকার অধিকার সীমাহীন নয়।

“এটা বাক স্বাধীনতার বিষয় নয়, বরং এটি জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়। তবে তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, আমেরিকার জনগণ হিসেবে আমরা কাকে আমাদের জাতীয় সম্প্রদায়ে যোগ দেওয়ার অনুমতি দেব, তা ঠিক করা।”

সাধারণত গ্রিন কার্ড পাওয়া বিদেশিরা যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস ও কাজ করার অধিকার পায়। তবে টক শোটিতে ভ্যান্স জোর দিয়ে বলেন, চিরকাল বসবাসের অধিকার গ্রিন কার্ড দেয় না।

এরপর তিনি আরও স্পষ্ট করে বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী যদি সিদ্ধান্ত নেন, অমুক গ্রিন কার্ডধারী ব্যক্তি এই দেশে আর থাকতে পারবেন না, তাহলে সেই ব্যক্তি এখানে বসবাসের আইনি অধিকার হারাবেন। বিষয়টি ঠিক এতটাই সহজ।”

গ্রিন কার্ডধারীদের অধিকার ও দায়িত্ব

যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব ও অভিবাসী পরিষেবা বিভাগের (ইউএসসিআইএস) মতে, গ্রিন কার্ডধারী ব্যক্তিরা যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করার সময় নির্দিষ্ট কিছু অধিকার পান। একই সঙ্গে তাদের কিছু দায়িত্বও পালন করতে হয়।

অধিকারের মধ্যে আছে-

১. যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাস- যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা বহিষ্কারযোগ্য অপরাধ করছেন

২. নিরাপত্তাজনিত কারণে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের জন্য সংরক্ষিত নির্দিষ্ট কিছু পদ ছাড়া যেকোনো পদে কাজ করার অনুমতি

৩. আইনি সুরক্ষা-কেন্দ্রীয়, অঙ্গরাজ্য ও স্থানীয় আইনসহ দেশটির সব ধরনের আইনে তাদের সুরক্ষা দেওয়ার কথা বলা আছে

দায়িত্বের মধ্যে আছে-

১. অঙ্গরাজ্য ও স্থানীয় আইনসহ যুক্তরাষ্ট্রের সব আইন মেনে চলা

২. আয়কর রিটার্ন দাখিল করা

৩. গণতান্ত্রিক সরকারকে সমর্থন দেওয়া-যদিও তারা নির্বাচনে ভোট দিতে পারেন না, তবে তাদের কাছ থেকে গণতান্ত্রিক আচরণ প্রত্যাশা করা হয়

৪. বিশেষ পরিষেবার জন্য নিবন্ধন-১৮ থেকে ২৫ বছর বয়সী পুরুষদের সম্ভাব্য সামরিক পরিষেবার জন্য নিবন্ধন

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

বিক্রির পাল্লায় গ্রিন কার্ড

যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিন কার্ড নামের সোনার হরিণকে সম্প্রতি বিক্রির পাল্লায় তোলেন ট্রাম্প। ধনী বিদেশিদের ৫০ লাখ ডলারের (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৬০ কোটি টাকা) বিনিময়ে নাগরিকত্ব দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন তিনি।

গত ফেব্রুয়ারিতে ট্রাম্প জানান, নাগরিকত্ব পেতে বিদেশিদের কাছে একটি বিশেষ কার্ড বিক্রি করা হবে, যার নাম হবে গোল্ড কার্ড। এই কার্ড তাদের গ্রিন কার্ডের সমান অধিকার দেবে।

ধনী বিদেশিদের নাগরিকত্ব দেওয়ার এই উদ্যোগে ১০ লাখ গোল্ড কার্ড বিক্রির চিন্তা-ভাবনা ট্রাম্প করছেন বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর আসে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের ধারণা, অর্থের বিনিময়ে নাগরিকত্ব দেওয়া হলে জাতীয় ঋণ পরিশোধ করা সম্ভব হবে।

তিনি জানান, বর্তমানে চালু থাকা ইবি-৫ অভিবাসী বিনিয়োগকারী ভিসা কর্মসূচি বাতিল করে এর পরিবর্তে গোল্ড কার্ড চালু করা হবে।

তিন দশকের বেশি সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিন কার্ড পেতে বা স্থায়ী বাসিন্দা হতে বিদেশিরা এই কর্মসূচির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে বড় অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ করে আসছেন, যা দেশটিতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি বা সংরক্ষণে ভূমিকা রাখে।

অর্থাৎ যদি কোনও বিদেশি যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবসা-বাণিজ্যে অর্থ বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দেন, তাহলে তাকে সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস ও কাজ করার অনুমতি দেওয়া হয়।

এই কর্মসূচি বাতিল করে গোল্ড কার্ড কমসূচি হাতে নিতে যাচ্ছেন ট্রাম্প।

তথ্যসূত্র : দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত