Beta
বৃহস্পতিবার, ৩ অক্টোবর, ২০২৪
Beta
বৃহস্পতিবার, ৩ অক্টোবর, ২০২৪

এমপক্স কী, কেন জরুরি অবস্থা জারি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার

বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে এমপক্সের একটি অতিসংক্রামক নতুন ধরন। ছবি: বিবিসি।
বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে এমপক্সের একটি অতিসংক্রামক নতুন ধরন। ছবি: বিবিসি।
Picture of সকাল সন্ধ্যা ডেস্ক

সকাল সন্ধ্যা ডেস্ক

আফ্রিকার কিছু অঞ্চলে এমপক্সের প্রাদুর্ভাব ঘিরে আন্তর্জাতিক উদ্বেগের প্রেক্ষাপটে বিশ্বজুড়ে জনস্বাস্থ্যগত জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।

পূর্বে মাঙ্কিপক্স নামে পরিচিত অত্যন্ত সংক্রামক রোগ এমপক্সের প্রথম প্রাদুর্ভাব ঘটে গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কঙ্গোতে। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৪৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে।

রোগটি এখন মধ্য ও পূর্ব আফ্রিকার আরও কয়েকটি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। বিজ্ঞানীরা রোগটির একটি নতুন রূপের দ্রুত ছড়িয়ে পড়া এবং এর উচ্চ মৃত্যুর হার নিয়ে উদ্বিগ্ন।

ডব্লিউএইচও প্রধান তেদরোস আধানম ঘেব্রেইসাস বলেছেন, আফ্রিকাজুড়ে এবং তার বাইরেও রোগটির আরও ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা খুবই উদ্বেগজনক।

তিনি বলেন, “এই প্রাদুর্ভাব বন্ধ করতে এবং জীবন বাঁচাতে একটি সমন্বিত আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া অপরিহার্য।”

এর আগে ২০২২ সালেও এমপক্সের প্রাদুর্ভাবের প্রেক্ষাপটে জনস্বাস্থ্যগত জরুরি অবস্থা জারি করেছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

এমপক্স একটি ছোঁয়াচে রোগ। যৌন মিলন, ত্বকের সংস্পর্শ এবং খুব কাছে এসে কথা বলা বা শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার মাধ্যমেও এই রোগ ছড়ায়।

রোগটি ফ্লুর মতো উপসর্গ, যেমন ত্বকের ক্ষত সৃষ্টি করে, যা মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। এই রোগে মৃত্যুহার ৪ শতাংশ, অর্থাৎ আক্রান্ত প্রতি ১০০ জনের মধ্যে চারজনের মৃত্যু হয়।

ভ্যাকসিনের মাধ্যমে সংক্রমণ প্রতিরোধ করে এর প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের বা যারা সংক্রামিত ব্যক্তির ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে এসেছেন তাদের ভ্যাকসিন নিতে হবে।

এমপক্সের দুটি প্রধান ধরন রয়েছে— ক্ল্যাড-১ ও ক্ল্যাড-২।

২০২২ সালে যে ধরনের এমপক্সের প্রাদুর্ভাবের প্রেক্ষাপটে জনস্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছিল, তা ছিল ক্ল্যাড-২ ধরনের। এটি একটু হালকা ধরনের।

এবার মূলত ক্ল্যাড-১ এমপক্সের প্রাদুর্ভাব ঘটেছে। এটি মারাত্মক। এর আগেরবার ক্ল্যাড-১ এমপক্সে আক্রান্তদের ১০ শতাংশ পর্যন্ত মারা গিয়েছিল। অর্থাৎ, এতে মৃত্যুর হার দ্বিগুণেরও বেশি।

গত বছরের সেপ্টেম্বরের দিকে ভাইরাসটিতে পরিবর্তন আসে। মিউটেশনের ফলে ক্ল্যাড-১বি নামের একটি নতুন ধরন সৃষ্টি হয়। এটি অনেক দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।

নতুন এই ধরনটিকে একজন বিজ্ঞানী ‘এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বিপজ্জনক’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।

চলতি বছরের শুরু থেকে ডিআর কঙ্গোতে ১৩ হাজার ৭০০ জনেরও বেশি এমপক্সে আক্রান্ত হয়েছে, যাদের মধ্যে অন্তত ৪৫০ জন মারা গেছে।

সেখান থেকে রোগটি বুরুন্ডি, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, কেনিয়া ও রুয়ান্ডাসহ আফ্রিকার অন্যান্য দেশেও ছড়িয়ে পড়েছে।

২০২২ সালের জুলাইয়ে এমপক্সের হালকা ধরন ক্ল্যাড-২ ইউরোপ ও এশিয়াসহ প্রায় ১০০টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল।

সেবারই প্রথম ভাইরাসটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, সে সময় ৮৭ হাজারেরও বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছিলেন, মৃত্যু হয়েছিল ১৪০ জনের।

সে সময় রোগটি প্রধানত সমকামী পুরুষদের মধ্যে কেন্দ্রীভূত ছিল। সেবার ঝুঁকিতে থাকা রোগীদের টিকা দেওয়ার মাধ্যমে রোগটি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।

মঙ্গলবার আফ্রিকা সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের বিজ্ঞানীরাও জনস্বাস্থ্যগত জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন।

সংস্থাটির প্রধান জিন কাসেয়া সতর্ক করেছেন, যদি রোগটি প্রতিরোধে অবিলম্বে পদক্ষেপ না নেওয়া হয় তাহলে বর্তমান প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।

তিনি বলেন, “এবারের হুমকি মোকাবিলায় ও রোগ নির্মূল করার প্রচেষ্টায় আমাদের অবশ্যই সক্রিয় এবং আক্রমণাত্মক হতে হবে।”

এমপক্স আসলে কী

এমপক্স (পূর্বে মাঙ্কিপক্স নামে পরিচিত) ভাইরাসজনিত একটি রোগ। ভাইরাসটি মাঙ্কিপক্স ভাইরাস নামে পরিচিত। এটি গুটিবসন্ত ভাইরাস পরিবারের একটি ভাইরাস।

এমপক্সে আক্রান্ত ব্যক্তিদের অন্যান্য উপসর্গের সঙ্গে ফুসকুড়িও হয়। ফুসকুড়ি নিরাময়ের আগে শুকনো খোল তৈরিসহ বেশ কয়েকটি ধাপের মধ্য দিয়ে যায়। তবে এমপক্স চিকেনপক্সের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়।

এমপক্স ‘জুনোটিক’ রোগ। অর্থাৎ এটি মানুষ থেকে অন্যান্য প্রাণী বা অন্যান্য প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে ছড়াতে পারে। এটি মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকার কিছু অংশের একটি স্থানীয় রোগ বা সেখানে প্রায়ই দেখা যায়।

এই অঞ্চলে বসবাসকারী ছোট ইঁদুর, বানর এবং অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীর মধ্যে যে ভাইরাসটি এমপক্স সৃষ্টি করে তা পাওয়া গেছে।

আবিষ্কার ও ইতিহাস

মাঙ্কিপক্স ভাইরাস ১৯৫৮ সালে আবিষ্কৃত হয়েছিল। সেসময়ে গবেষণার জন্য ধরে বানরদের আবাসস্থলে পক্স-সদৃশ রোগটির দুবার প্রাদুর্ভাব ঘটেছিল। প্রাথমিকভাবে রোগটিকে ‘মাঙ্কিপক্স’ নামকরণ করা সত্ত্বেও রোগের উৎস অজানাই থেকে যায়।

বিজ্ঞানীদের ধারণা, আফ্রিকান ইঁদুর এবং অ-মানব প্রাইমেট (বানরের মতো) প্রাণীদের দেহে ভাইরাসটি আশ্রয় নেয় এবং সেখান থেকেই মানুষকে সংক্রামিত করে থাকতে পারে।

মানুষের দেহে এমপক্সের প্রথম সংক্রমণের ঘটনা কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রে ১৯৭০ সালে রেকর্ড করা হয়। ২০২২ সালে এমপক্স সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।

তার আগে বিশ্বের অন্যান্য জায়গায় এমপক্সে আক্রান্তের ঘটনা বিরল ছিল। এর আগে সাধারণত ভ্রমণ বা এমপক্স আছে এমন অঞ্চল থেকে আমদানি করা প্রাণীর মাধ্যমে রোগটি ছড়াত।

ভাইরাসের প্রকারভেদ

দুই ধরনের মাঙ্কিপক্স ভাইরাস রয়েছে— ক্ল্যাড-১ এবং ক্ল্যাড-২। ক্ল্যাড-১ ভাইরাসে আক্রান্তে গুরুতর অসুস্থতা এবং মৃত্যুহার বেশি। এই ভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ পর্যন্ত মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। তবে সাম্প্রতিক প্রাদুর্ভাবে মৃত্যুর হার কম ছিল।

২০২২ সালে শুরু হওয়া এমপক্সের বিশ্বব্যাপী প্রাদুর্ভাবের পেছনে দায়ী ছিল হল ক্ল্যাড-২। এটির সংক্রমণ কম গুরুতর এবং ৯৯.৯ শতাংশেরও বেশি মানুষ বেঁচে যায়।

দুটি ধরনই সংক্রামিত কোনও পশুর সরাসরি সংস্পর্শ, আক্রান্ত মানুষের ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শ, দূষিত পদার্থের সংস্পর্শের মাধ্যমে ছড়াতে পারে।

গুরুতর রোগের ঝুঁকি

এমপক্স বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রাণঘাতী না হলেও এতে কিছু মানুষের গুরুতর অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি আছে। যাদের মধ্যে রয়েছে— গুরুতরভাবে দুর্বল রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন মানুষ, ১ বছরের কম বয়সী শিশু, ক্রনিক একজিমায় আক্রান্ত মানুষ ও অন্তঃসত্ত্বা নারী।

প্রতিরোধের উপায়

এমপক্সের মতো দেখতে ফুসকুড়ি, এমপক্স ভাইরাস বহনকারী প্রাণীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা এবং ত্বক থেকে ত্বকের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা।

যৌন মিলনের সময় বা সামাজিক মেলামেশার সময় সাবধানতা অবলম্বন করা।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী টিকা নেওয়া।

তথ্যসূত্র: বিবিসি

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত