Beta
সোমবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৪
Beta
সোমবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৪

বিশ্ব ব্যাংকসহ কে কত দিচ্ছে বাংলাদেশকে

মঙ্গলবার ঢাকার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদুলায়ে সেক। ছবি : পিআইডি
Picture of সকাল সন্ধ্যা প্রতিবেদন

সকাল সন্ধ্যা প্রতিবেদন

ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেসব সংস্কার বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সেক্ষেত্রে এগিয়ে এসেছে বিশ্বের বড় অর্থায়ন সংস্থা ও দেশ।

গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার, বন্যা সহায়তা, উন্নত বায়ুর মান ও স্বাস্থ্যের জন্য বিশ্বব্যাংক ২ বিলিয়নের বেশি দেওয়ার কথা জানিয়েছে। পাশাপাশি বিদ্যমান কর্মসূচির প্রতিশ্রুত সহায়তা থেকে পরামর্শক্রমে আরও প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার পুনঃব্যবহার করা যাবে বলে সংস্থাটি উল্লেখ করেছে।

আর ব্যাংক ও আর্থিক খাতের সংস্কার কাজে সহায়তায় এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) দেড় বিলিয়ন ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। অবশ্য এই খাতের সংস্কারে মোট আড়াই বিলিয়ন ডলার পাওয়া যাবে, যার মধ্যে এক বিলিয়ন ডলার থাকছে বিশ্বব্যাংকের।

নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতের উন্নয়নে জার্মানি আগামী ১০ বছরে বাংলাদেশকে ১০০ কোটি ইউরো দেবে, যার মধ্যে চলতি বছরের জন্য দেড় কোটি ইউরো রয়েছে।

ছাত্র-শ্রমিক-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্বে আসে। এরপর রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা ও গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলো সংস্কারে উদ্যোগ গ্রহণের দাবি উঠেছে।   

গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলো সংস্কারে গত ১১ সেপ্টম্বর ৬টি কমিশন গঠনের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের মাসপূর্তি উপলক্ষ্যে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বার্তাকে প্রতিফলিত করার জন্য সাংবিধানিক সংস্কারের প্রয়োজন থেকে প্রাথমিকভাবে ছয়টি কমিশন গঠন করা হচ্ছে।

এসব সংস্কার উদ্যোগের প্রশংসা ও সরকারের পাশে থাকার কথা অঙ্গিকার ব্যক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ ও বিশ্বের বিভিন্ন দাতা সংস্থা।

বাংলাদেশকে নতুন করে ২ বিলিয়ন ডলার দেবে বিশ্বব্যাংক

বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার উদ্যোগগুলো যাতে বাস্তবায়নযোগ্য হয়, সেজন্য চলতি অর্থবছরে দুই বিলিয়নের বেশি ডলার সহায়তা দেবে বিশ্বব্যাংক।

মঙ্গলবার ঢাকার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদুলায়ে সেক এ সহায়তার কথা বলেন।

মঙ্গলবার ঢাকার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদুলায়ে সেক। ছবি : পিআইডি

বিশ্বব্যাংক চলতি অর্থবছরে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার, বন্যা সহায়তা, উন্নত বায়ুর মান ও স্বাস্থ্যের জন্য প্রায় ২ বিলিয়ন ডলারের নতুন অর্থায়ন দেবে বলে জানান সেক।

তিনি বলেন, “আমরা আপনাকে (ড. ইউনূস) যত তাড়াতাড়ি ও যতটা সম্ভব সহায়তা করতে চাই। বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক প্রয়োজনে সহায়তা করবে।  

“নতুন প্রতিশ্রুতি ছাড়াও, বিশ্বব্যাংক সরকারের সঙ্গে পরামর্শক্রমে বিদ্যমান কর্মসূচি থেকে আরও প্রায় অতিরিক্ত ১ বিলিয়ন ডলার পুনঃব্যবহার করবে।”

বিদ্যমান প্রকল্পগুলোর অর্থ পুনর্বিন্যাস হলে চলতি অর্থবছরে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে যে সহজ শর্তে ঋণ ও অনুদান দেবে তার পরিমাণ বেড়ে প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়াবে বলে জানান সেক।

বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ প্রধান বলেন, সেসব সংস্কার বাস্তবায়ন করা হবে, যা বাংলাদেশ ও তরুণদের জন্য ‘গুরুত্বপূর্ণ’। আর এসব মানুষের মধ্যে প্রতি বছর কর্মবাজারে যোগ দেওয়া ২০ লাখ তরুণও রয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ প্রধানকে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ১৫ বছরের চরম অপশাসনের পর বাংলাদেশের নতুন যাত্রায় সংস্কার ও সহায়তায় জন্য বিশ্বব্যাংক যে ঋণ দেবে, সেক্ষেত্রে নমনীয়তা থাকতে হবে।  

তিনি বলেন, “এই ছাই থেকে বেরিয়ে আমাদের নতুনভাবে গঠন করতে হবে। আমাদের বড় ধাক্কা দরকার, এবং আমাদের ছাত্রদের স্বপ্নপূরণে মনোযোগী হতে হবে।

“আমার পরামর্শ, আমাদের সাহায্য করুন। আমাদের অংশ হোন।”

ড. ইউনূস দুর্নীতিবাজদের পাচার করা অর্থ পুনরুদ্ধারে বিশ্ব ব্যাংককের প্রযুক্তিগত সহায়তা চান। 

‘আপনাদের কাছে চুরি হওয়া সম্পদ ফিরিয়ে আনার প্রযুক্তি আছে’ উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, বিশ্বব্যাংকের বিশেষজ্ঞ সহায়তার প্রয়োজন হবে ‘শূন্য দুর্নীতির বাংলাদেশ’ গড়তে।

পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে বাংলাদেশকে সাহায্য করার ব্যাপারে সম্মত হয়ে সেক বলেন, “আমরা আপনাকে সাহায্য করতে পেরে খুশি।” 

বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে তথ্যের স্বচ্ছতা ও অখণ্ডতা, কর সংগ্রহে প্রযুক্তিকরণ এবং আর্থিক খাতের সংস্কারের ক্ষেত্রেও সাহায্য করতে চায় বলে জানান আবদুলায়ে সেক।

ব্যাংক খাত সংস্কারে আড়াই বিলিয়ন ডলার বিশ্ব ব্যাংক ও এডিবির

ব্যাংক ও আর্থিক খাত সংস্কারে বাংলাদেশকে আড়াই বিলিয়ন বা ২৫০ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে বিশ্ব ব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক; যার মধ্যে বিশ্বব্যাংক দেবে ১০০ কোটি, এডিবি দেবে ১৫০ কোটি ডলার।

রবিবার সংস্থা দুটির প্রতিনিধিরা বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করে এই ঋণ সহায়তার প্রস্তাব দেন। পরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

হুসনে আরা বলেন, বাংলাদেশের ব্যাংক ও আর্থিক খাত সংস্কারে তিন শর্তে ১০০ কোটি ডলার ঋণ সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিশ্ব ব্যাংক। তবে প্রাথমিকভাবে পলিসি সহায়তার জন্য ৭৫ কোটি ডলার দেবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। ডিসেম্বরে এই সহায়তা পাওয়া যাবে।

এছাড়া ইনভেস্টমেন্ট লোন ও গ্যারান্টি ফ্যাসিলিটি হিসেবে আরও ২৫ কোটি ডলারের ঋণ সহায়তা দেওয়ার কথা জানিয়েছে বিশ্ব ব্যাংক। তবে তা পেতে আরও সময় লাগবে।

তিনি আরও বলেন, “এডিবি প্রথম দফায় ৫০ কোটি ডলার সহায়তা দেবে। পরবর্তী কয়েক দফায় বাকি অংশটুকুও ছাড় করবে সংস্থাটি।”

এসব ঋণ পেতে বাংলাদেশকে কিছু শর্ত পালন করতে হবে জানিয়ে মুখপাত্র বলেন, যার মধ্যে রয়েছে বেসরকারি খাতে অ্যাসেস ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি গঠন, আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে খেলাপি ঋণের নতুন সংজ্ঞা নির্ধারণ এবং নতুন গঠিত টাস্কফোর্সের অডিট ফার্মের কার্যবিবরণী।

এসব শর্তের ৫০ শতাংশ এরই মধ্যে সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলেও জানান হুসনে আরা।

এর আগে অর্থ মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে বৈঠক করে এডিবির প্রতিনিধি দল জানিয়েছে, বাজেট সহায়তার অংশ হিসেবে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশকে ৪০ কোটি ডলার ঋণ দেবে সংস্থাটি। এছাড়া ব্যাংক ও আর্থিক খাতের সংস্কারের জন্য আগামী বছরের মার্চের মধ্যে আরও ৫০ কোটি ডলার দেওয়ার প্রস্তাব করেছে।

আহসান এইচ মনসুরের সঙ্গে বৈঠকে বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন প্রোসপারিটি প্র্যাকটিস গ্রুপের রিজিওনাল ডাইরেক্টর ম্যাথিউ এ ভার্ঘিস।

বিকালে যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব ও অর্থ দপ্তরের  আন্ডার সেক্রেটারি ব্রেন্ট নেইম্যানের সঙ্গে বৈঠক করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। সেখানে সামষ্টিক অর্থনীতির উন্নয়নেরে বিষয়ে আলোচনা হয়।

যেখানে মূল্যস্ফীতি, পাচার হওয়া অর্থ ফেরানো ও প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা পূরণসহ বিভিন্ন বিষয় আলোচনায় স্থান পায়। আর্থিক খাত সংস্কারে সহযোগিতা পাওয়ার আশ্বাসও দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

জার্মানি বাংলাদেশকে ১০০ কোটি ইউরো দেবে

নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতের উন্নয়নে জার্মানি আগামী ১০ বছরে বাংলাদেশকে ১০০ কোটি ইউরো দেবে; এ অর্থের মধ্যে চলতি বছরের এক কোটি ৫০ লাখ ইউরো রয়েছে।

মঙ্গলবার পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান তার মন্ত্রণালয়ের কার্যালয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূত আখিম ট্রস্টারের সঙ্গে বৈঠকের পর এ কথা জানান।

উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের সঙ্গে বৈঠকে জার্মান রাষ্ট্রদূত আখিম ট্রস্টার।

উপদেষ্টা বলেন, উভয় দেশ বেসরকারি খাত, গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও সুশীল সমাজের মতো নন-স্টেট অ্যাক্টরদের সঙ্গে জ্ঞান বিনিময় ও সহযোগিতা জোরদার করবে। এই সহযোগিতায় ক্ষুদ্র জাতিগত সংখ্যালঘু, নারী ও যুবকদেরও সম্পৃক্ত করা হবে।

বৈঠকে উপদেষ্টা ও রাষ্ট্রদূত পরিবেশ সুরক্ষা, নদী পরিচ্ছন্নতা প্রকল্প এবং জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমনে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা জোরদার করার বিষয়ে আলোচনা করেন। তারা টেকসই উন্নয়ন প্রকল্পে সম্ভাব্য সহযোগিতা, পরিবেশ ও জলবায়ু সম্পর্কিত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সবুজ প্রযুক্তি গ্রহণের বিষয়েও আলোচনা করেন। বিশেষ করে প্রযুক্তি স্থানান্তর ও পরিবেশগত স্থায়িত্ব প্রকল্পে সহযোগিতার জন্য আরও উপায় অন্বেষণে একটি পারস্পরিক চুক্তির মধ্য দিয়ে বৈঠকটি শেষ হয়।

তিন বছরে ৪ থেকে ৫ বিলিয়ন ডলার দেবে আইএসডিবি

আগামী তিন বছরে একটা প্যাকেজ কর্মসূচির আওতায় বাংলাদেশকে ৪ থেকে ৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেবে ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংক (আইএসডিবি)। বিভিন্ন খাতের জন্য এ অর্থ দেবে জেদ্দাভিত্তিক এই আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি।

মঙ্গলবার দুপুরে সচিবালয়ে আইএসডিবির রিজিওনাল হাব ম্যানেজার নাসিস সোলাইমানের সঙ্গে অনুষ্ঠিত সৌজন্য বৈঠকের পর উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ তথ্য জানান।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, নাসিস সোলাইমান তাকে জানিয়েছেন সম্প্রতি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাটসহ ভৌত অবকাঠামো নির্মাণে এ ঋণ দেওয়া হবে। প্রান্তিক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের পাশাপাশি আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণেও ঋণের অর্থ ব্যয় করা যাবে। এছাড়া জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতেও ঋণ দেবে ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংক।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত