Beta
বুধবার, ২৬ মার্চ, ২০২৫
Beta
বুধবার, ২৬ মার্চ, ২০২৫

মাসুদ পেজেশকিয়ানে কি বদলাবে ইরান

ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান।
ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান।
[publishpress_authors_box]

ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন সংস্কারপন্থী প্রার্থী মাসুদ পেজেশকিয়ান, যিনি দেশে মধ্যপন্থী নীতি এবং পশ্চিমের সঙ্গে সীমিত হলেও সম্পৃক্ততার সমর্থক। তিনি ইরানের ‘শত্রু‘দের সঙ্গে পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনার পক্ষপাতী এবং একে দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা সমাধানের উপায় হিসেবেও দেখেন।

অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক উভয় ক্ষেত্রেই উত্তেজনার মধ্যে থাকা ইরানের এক গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনে কট্টরপন্থী প্রতিদ্বন্দ্বী সাঈদ জালিলিকে পরাস্ত করেছেন পেজেশকিয়ান। মধ্যপ্রাচ্যে তীব্র আঞ্চলিক উত্তেজনা এবং পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে পশ্চিমাদের সঙ্গে আলোচনা স্থবির থাকার মধ্যে তার এই বিজয়কে গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।

ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতা, অভ্যন্তরীণ অসন্তোষ, ভঙ্গুর অর্থনীতি এবং চিরশত্রু ইসরায়েলের সঙ্গে সরাসরি সংঘর্ষের সম্ভাবনার মুখে দেশের দায়িত্ব পেলেন পেজেশকিয়ান। জাতীয় ‘ঐক্য ও সংহতির’ পাশাপাশি বিশ্ব থেকে ইরানের ‘বিচ্ছিন্নতা’ দূর করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন।

নির্বাচনে জয়ের পরপরই প্রথম বক্তব্যে তিনি বলেন, “আমরা সবার কাছে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেব। আমরা সবাই এই দেশের মানুষ এবং দেশের অগ্রগতির জন্য সকলের প্রচেষ্টাকে কাজে লাগাতে হবে।”

সব ইরানির কাছ থেকে ঐক্য ও সমর্থনের আবেদন করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে এক বিবৃতিতে পেজেশকিয়ান লিখেছেন, “ইরানের প্রিয় জনগণ, নির্বাচন শেষ হয়েছে এবং এটি আমাদের কাজের শুরু মাত্র।

“আপনাদের সমর্থন, সহানুভূতি এবং বিশ্বাস ছাড়া আমাদের সামনের কঠিন পথ প্রশস্ত হবে না। আমি আপনাদের দিকে আমার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছি এবং আমার মর্যাদার নামে শপথ করছি যে, আমি আপনাদেরকে এই পথে একা ছেড়ে যাব না। আপনারাও আমাকে একা ছেড়ে যাবেন না।”

দ্বিতীয় ধাপের ভোটের আগে প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের বিতর্কে তিনি বলেছিলেন, “প্রাথমিক সমস্যাটি হল দৃষ্টিভঙ্গি: আমরা কি বিশ্বের সঙ্গে আমাদের সমস্যাগুলো সমাধান করতে চাই? আমি বিশ্বাস করি, দেশের সমস্যা সমাধানের জন্যও আমাদের অবশ্যই এই অচলাবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।”

মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে, গাজা থেকে লেবানন এবং ইয়েমেন পর্যন্ত, ইরানের মিত্র সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো ইসরায়েল ও তার মিত্রদের ওপর আক্রমণ করছে। আমেরিকান সামরিক ঘাঁটিগুলোকে হুমকি দিচ্ছে এবং লোহিত সাগর দিয়ে বৈশ্বিক জাহাজ চলাচল ব্যাহত করছে।

এপ্রিলে সিরিয়ার দামেস্কে ইরানি কূটনৈতিক ভবনে ইসরায়েলি হামলার পর তেহরান ইসরায়েলের উপর প্রথম সরাসরি সামরিক হামলা চালায়। এর মধ্য দিয়ে গত কয়েক বছরব্যাপী চলমান তাদের ছায়া যুদ্ধ প্রকাশ্যে আসে।

দেশে এখনও বহু ইরানি ২০২২ সালে ‘নৈতিকতা পুলিশের’ হেফাজতে কুর্দি তরুণীর মাশা আমিনির মৃত্যুর পর বিক্ষোভের উপর নৃশংস সরকারি দমন-পীড়নের ফল ভুগছেন। ওই গণবিদ্রোহের পর সরকার আরও কঠোর হয়। অনেক প্রতিবাদকারীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় এবং কঠোর পোশাকবিধি অমান্যকারী নারীদের শাস্তিও বাড়ানো হয়।

ক্রমবর্ধমান সামাজিক অস্থিরতার পাশাপাশি অর্থনৈতিক সঙ্কটও গভীরতর হয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারাভিযানে দেশের শাসক শ্রেণির মুখেও চ্যালেঞ্জগুলোর কিছু বিরল স্বীকৃতি মিলেছে। এ থেকে বোঝা যায়, চ্যালেঞ্জগুলো কতটা গুরুতর হয়ে উঠেছে।

ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ইরান প্রকল্প পরিচালক আলি ওয়ায়েজ বলেছেন, “পরিস্থিতি এমন একটি পর্যায়ে পৌঁছেছে যেখানে একে উপেক্ষা করা অসম্ভব।

“রাষ্ট্র এবং সমাজের মধ্যে ব্যবধান এমন একটি পর্যায়ে পৌঁছেছে, যেখানে এটি এখন আর লুকিয়ে রাখা সম্ভব নয়।”

তবে প্রশ্ন উঠেছে, যেখানে সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতার সিদ্ধান্ত রাষ্ট্রের সবক্ষেত্রেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বলে গণ্য হয়, সেখানে পেজেশকিয়ান কতটা পরিবর্তন আনতে পারবেন?

কে এই মাসুদ পেজেশকিয়ান

ইরানের সাবেক সংস্কারবাদী প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ খাতামির অধীনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে কাজ করা পেজেশকিয়ান একজন প্রশিক্ষিত হার্ট সার্জন এবং এমপি। ২০০৯ সালের গণতন্ত্রপন্থী বিক্ষোভ এবং ২০২২ সালে দেশটির কুখ্যাত নৈতিকতা পুলিশের দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে তিনি জনপ্রিয় হন।

ইরানের কঠোর পোশাকবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে নৈতিকতা পুলিশের হাতে ২২ বছর বয়সী কুর্দি তরুণী মাশা আমিনির মৃত্যুতে ২০২২ সালে বিক্ষোভের বিশাল তরঙ্গে কেঁপে উঠেছিল ইরান। তিনি ওই বিক্ষোভ দমনে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির কঠোর ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা করেন।

এর প্রতিবাদ জানিয়ে পেজেশকিয়ান ইরানের আইআরআইএনএন টিভির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “এটা আমাদেরই দোষ। আমরা শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে ধর্মীয় বিশ্বাস বাস্তবায়ন করতে চাই। এটা বৈজ্ঞানিকভাবে অসম্ভব।”

তিনি আরও বলেছিলেন, “এর জন্য আমি কিছুটা দায়ী, বিশিষ্ট ধর্মীয় পণ্ডিত এবং মসজিদগুলো কিছুটা দায়ী এবং ইরানি সম্প্রচার কর্তৃপক্ষও কিছুটা দায়ী।

“সেই মেয়েটিকে ধরা, মারধর করা এবং অবশেষে তার দেহ তার পরিবারের কাছে তুলে দেওয়ার পরিবর্তে প্রত্যেকেরই উচিৎ এগিয়ে আসা এবং দায়বদ্ধ হওয়া।”

নিজেকে সব ইরানিদের প্রার্থী হিসেবে উপস্থাপন করে প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর বিতর্কে তিনি বলেছিলেন, “আমার সমর্থকদের মধ্যে বাম এবং ডান উভয়ই, এমনকি যারা নামাজ পড়ে না, তারাও রয়েছে।”

১৯৯৪ সালে এক গাড়ি দুর্ঘটনায় স্ত্রী ও তার এক মেয়ে সন্তানকে হারানোর পর থেকে পেজেশকিয়ান তার বেশিরভাগ সময় রাজনীতিতে উৎসর্গ করেন। এরপর আর তিনি বিয়ে করেননি এবং তার বাকি দুই ছেলে ও এক মেয়েকে একা হাতে বড় করেন।

৬৯ বছর বয়সী পেজেশকিয়ান জাতিগতভাবে মিশ্র একটি পরিবার থেকে এসেছেন। তার বাবা আজেরি এবং মা কুর্দি। ইরানের রাষ্ট্রীয় ভাষা ফারসি তার মাতৃভাষা নয়। এজন্য তার সমর্থকদের অনেকে মনে করেন, তিনি ইরানকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারবেন। তিনি নিজেও জনগণ এবং সরকারের মধ্যে দূরত্ব দূর করার প্রতিশ্রুতি দেন।

গত সপ্তাহে এক সমাবেশে তিনি বলেছিলেন, “ক্ষমতাবানরা যাদের দেখেনি এবং যাদের কণ্ঠ শোনা যায় না, তাদের দিকে তাকানোর জন্য আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করব। আমরা এই দেশ থেকে দারিদ্র্য, বৈষম্য, যুদ্ধ, মিথ্যা ও দুর্নীতি দূর করে দেব।”

ইরানের আগের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি ছিলেন কট্টরপন্থী।

কতটা পরিবর্তন আনতে পারবেন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কিছুটা স্বাধীনতা পেলেও চূড়ান্ত কর্তৃত্ব সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতার হাতেই থাকে, যিনি রাষ্ট্রের সকল বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেন।

তারপরও বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রেসিডেন্ট পদে তার মতো একজন মধ্যপন্থী মুখ ইরান ও পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে আলোচনার সুযোগ তৈরি করতে পারে।

অভ্যন্তরীণভাবে, পেজেশকিয়ান কিছু সামাজিক পরিবর্তনও করতে পারেন, যেসব বিষয়ে তিনি নির্বাচনী প্রচারের সময় জোর দিয়েছিলেন; যদিও বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, এই ধরনের পদক্ষেপগুলো নিশ্চিত নয়।

লন্ডনের থিঙ্ক ট্যাঙ্ক চ্যাথাম হাউসের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা কর্মসূচির পরিচালক সানাম ওয়াকিল বলেছেন, পেজেশকিয়ান ক্ষমতা পাওয়ায় রাতারাতি ইরানের সব নীতি বদলে যাবে এমন সম্ভাবনা কম।

“তবে পেজেশকিয়ান এটা স্পষ্ট করেছেন যে, তিনি সম্ভবত আরও কম দমন-পীড়নমূলক একটি পরিবেশ তৈরির জন্য বিদ্যমান সিস্টেমের মাধ্যমে এবং এর মধ্যেই কাজ করার চেষ্টা করবেন।”

ওয়াকিল বলেন, তিনি গ্যারান্টি দেননি যে, তিনি সব বদলে ফেলতে পারবেন। কারণ তিনি নিজেও জানেন যে, ইরানে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা সীমিত।

“তবে তিনি সামাজিক স্বাধীনতার জন্য আরেকটু বেশি জায়গা যোগ করতে পারবেন।”

পেজেশকিয়ানের জয়ে খুশি হওয়া রা’না রাজাবি নামের এক নারী বলেন, “সত্যি বলতে, আমি আশা করি জীবনযাত্রার ব্যয় কমবে এবং তরুণরা সহজেই চাকরি পাবে। এটাই আমার চাওয়া, আমার অন্য কোনও বিশেষ অনুভূতি নেই।”

তিনি আরও আশা করেন, “কেউ তাদের ধরে নিয়ে যাওয়ার ভয় ছাড়াই নারীরাসহ লোকে আরও সহজে রাস্তায় চলাফেরা করতে পারবে।”

ভোটে জয়ের পর পেজেশকিয়ানের সমর্থকদের উল্লাস।

তবে অন্যান্য বিষয় পরিবর্তন করা আরও কঠিন হতে পারে, বিশেষ করে ইরানের পররাষ্ট্রনীতি।

পেজেশকিয়ান এমন এক সময়ে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করছেন, যখন তার দেশ গাজা যুদ্ধ এবং পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে ইসরায়েল ও তার পশ্চিমা মিত্রদের সঙ্গে উত্তেজনা বৃদ্ধিতে জড়িয়েছে।

মাত্র তিন মাস আগে গাজা যুদ্ধে হামাসকে সহায়তার দরুন ইরান ও ইসরায়েল প্রথমবারের মতো সরাসরি পরস্পরের ওপর হামলা চালায়। ইসরায়েল এখন লেবাননে ইরানের প্রধান আঞ্চলিক সহযোগী হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে যুদ্ধের সম্ভাব্য দ্বিতীয় ফ্রন্ট খোলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

গত সপ্তাহেও ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে বাগযুদ্ধ হয়। জাতিসংঘে ইরানি মিশন বলেছিল, ইসরায়েল লেবাননের বিরুদ্ধে পূর্ণ মাত্রার সামরিক আগ্রাসন শুরু করলে একটি ধ্বংসাত্মক যুদ্ধ শুরু হবে।

এক্সেও এক পোস্টে ইরানি মিশন বলে, “প্রতিরোধের সমস্ত ফ্রন্টের সম্পূর্ণ সম্পৃক্ততাসহ সব বিকল্প আমাদের টেবিলে রয়েছে।”

এর জবাবে ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ প্রতিক্রিয়া জানান এই বলে যে ‘অন্যকে ধ্বংসের হুমকি দেওয়া কোনও দেশের সরকার নিজেও ধ্বংস হওয়ার যোগ্য’।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পেজেশকিয়ান ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কের বর্তমান গতিপথ পরিবর্তন করবেন বলে আশা করা যায় না।

তিনি ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর কুদস ফোর্সের প্রধান জেনারেল কাসেম সোলায়মানিরও প্রশংসা করেন, যিনি ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় নিহত হন।

ভোটের আগের প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর বিতর্কে তিনি বলেন, “আমি তাকে জাতীয় গর্বের উৎস এবং আমাদের শত্রুদের কাঁটা হিসেবে বিবেচনা করি।”

২০২২ সালে মাশা আমিনির মৃত্যুর পরে আইনপ্রণেতা মাসুদ পেজেশকিয়ান লিখেছিলেন, “একটি মেয়েকে তার হিজাবের জন্য গ্রেপ্তার করা এবং তারপরে তার মৃতদেহ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা ইসলামী প্রজাতন্ত্রে অগ্রহণযোগ্য।”

কিন্তু কয়েকদিন পরে যখন দেশব্যাপী বিক্ষোভ এবং সমস্ত ভিন্নমতের উপর রক্তক্ষয়ী দমন-পীড়ন শুরু হয়, তখন তিনি আবার ভিন্ন অবস্থান নেন। তখন তিনি আবার সতর্ক করেন যে, যারা সর্বোচ্চ নেতাকে অপমান করছে, তারা সমাজে দীর্ঘস্থায়ী ক্রোধ এবং ঘৃণা ছাড়া কিছুই তৈরি করবে না।

নারীদের অধিকার এবং হিজাব আইনের কঠোর প্রয়োগ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে পেজেশকিয়ান বলেছিলেন, তিনি বাধ্যতামূলক পোশাকবিধির সঙ্গে একমত। তিনি জানান, তার পরিবারের নারীরাও লম্বা, ঢিলেঢালা কালো পোশাক দিয়ে মাথা থেকে পায়ের আঙুল পর্যন্ত পুরো শরীরকে ঢেকে রাখেন। তবে ইরানে নারীদের পোশাকবিধি যেভাবে জোর করে প্রয়োগ করা হয়, তা নিয়েও তিনি প্রশ্ন তোলেন।

প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর বিতর্কের সময় তিনি বলেন, “নারীরা যে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক এবং শুধু পরিবারের স্বার্থে সৃষ্ট, এই দৃষ্টিভঙ্গিটি পরিবর্তন করা দরকার।

“অর্থনীতিতে, বিজ্ঞানে এবং শিল্পে পুরুষদের সঙ্গে নারীরাও ছিল এবং আছে। আমাদের উচিৎ তাদেরকে তাদের অবস্থানে ফিরিয়ে দেওয়া।”

পেজেশকিয়ানের এই স্ববিরোধী অবস্থান ইরানের শিয়া মতাবলম্বীদের মধ্যে একজন সংস্কারবাদী রাজনীতিবিদ হওয়ার দ্বৈততাকে সামনে তুলে ধরে। একজন সংস্কারবাদী পরিবর্তনের জন্য শুধু চাপ দিতে পারেন, কিন্তু সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির তত্ত্বাবধানে থাকা ব্যবস্থাকে কখনোই আমূল চ্যালেঞ্জ করেন না।

সংস্কারপন্থী মাসুদ পেজেশকিয়ানকে পছন্দ করেন পশ্চিমারা।

পশ্চিমের কাছে বন্ধুভাবাপন্ন মুখ

পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো এই নির্বাচনের মাধ্যমে ইরানের সঙ্গে তাদের সম্পর্কে পরিবর্তনের আশা না করলেও পেজেশকিয়ান অবশ্যই তাদের পছন্দের প্রার্থী। কারণ তাদের ধারণা, তিনি উত্তেজনা আর বাড়াবেন না।

ইরানের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ নতুন প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ানের একজন গুরুত্বপূর্ণ মিত্র, তিনিও একজন সংস্কারপন্থী। তিনিই প্রায় এক দশক আগে ইরানের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের তুলনামূলকভাবে উষ্ণ সময়ের তত্ত্বাবধান করেছিলেন। তার সময়ই পশ্চিমাদের সঙ্গে ইরানের ২০১৫ সালের পারমাণবিক সমঝোতা চুক্তিটি হয়। নতুন প্রেসিডেন্টের অধীনে ফের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পদের জন্য তার নামও আলোচনায় উঠেছে।

তবে জারিভ ইরানি যুবকদের মধ্যে জনপ্রিয় হলেও পশ্চিমাদের প্রতি অত্যধিক বন্ধুত্বপূর্ণ হওয়ার কারণে কট্টরপন্থীদের সমালোচনার মুখে রয়েছেন।

হোসেইন ইমানি নামে তেহরানের এক বাসিন্দা বলেন, “পেজেশকিয়ান প্রেসিডেন্ট হওয়ায় পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাগুলো প্রত্যাহার করা হবে এবং এটি মানুষের জন্য খুবই ভালো হবে।

“পেজেশকিয়ান সম্পর্কে আপাতত আমার একটি ইতিবাচক মনোভাব আছে। তবে শর্ত হল তিনি যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তাকে তা পূরণ করতে হবে।”

প্রেসিডেন্ট পদের জন্য প্রচার চালানোর সময়, তিনি সীমিত সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংস্কার এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনার কথা বলেন। যাতে তারা ইরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা দেশটির অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দিয়েছে।

তবে নির্বাচনের আগে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লাহ আলী খামেনি পশ্চিমাদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করতে চাওয়াদের নিন্দা করেছেন। পেজেশকিয়ানও প্রকাশ্যে বলেছেন, পররাষ্ট্রনীতির বিষয়ে তিনি খামেনির সঙ্গে মতবিরোধে জড়াবেন না। ফলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে জারিফের পুনর্নিয়োগও অনিশ্চিত।

পেজেশকিয়ান শুধু সীমিত কিছু পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ইরানের আইনসভার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন। কিন্তু ইরানের সর্বোচ্চ নেতা খামেনির অধীনে দেশটির ধর্মতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থাকে কখনও চ্যালেঞ্জ করেননি।

তথ্যসূত্র : সিএনএন, ওয়াশিংটন পোস্ট, এপি

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত